নারীর সম্মান মর্যাদা রক্ষার্থে করনীয় (৫ম)

লিখেছেন লিখেছেন সত্যের ২৫ জুলাই, ২০১৩, ০৯:৫৫:১০ সকাল



১ম অংশ- http://www.bdtomorrow.net/blog/blogdetail/detail/6753/soter/22189 (pls click & read)

২য় অংশ- http://www.bdtomorrow.net/blog/blogdetail/detail/6753/soter/22297 (pls click & read)

৩য় অংশ-

http://www.bdtomorrow.net/blog/blogdetail/detail/6753/soter/22600 (pls click & read)

৪র্থ অংশ-

http://www.bdtomorrow.net/blog/blogdetail/detail/6753/soter/22704 (pls click & read)

হাত কব্জী পর্যন্ত ও মুখমন্ডল খোলা রাখা যাবে কি ?

(১)উম্মত জননী আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) বলেন,

আমরা রাসূলের সাথে এহরাম অবস্থায় ছিলাম, উষ্ট্রারোহী পুরুষরা আমাদের পার্শ্বদিয়ে অতিক্রম কালে আমাদের মুখামুখি হলে আমরা মাথার উপর থেকে চাদর টেনে চেহারার উপর ঝুলিয়ে দিতাম । তারা আমাদেরকে অতিক্রস করে চলে গেলে আমরা মুখমন্ডল খুলে দিতাম । (আহমাদ, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ)

আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন-ইহরাম গ্রহণকারী নারী যেন নেকাব ও হাতমোজা পরিধান না করে । (সহীহ বুখারী ৪/৬৩, হাদীস: ১৮৩৮)

এই হাদিসদ্বয় শুধু হজ্জের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য; তথাপি “চাদর টেনে চেহারার উপর ঝুলিয়ে দিতাম” আয়েশা (রাঃ) এই কথা দ্বারা বলা যায় পর পুরুষের সামনে মুখ ঢাকতে হবে ।

(২) ইমাম আবু-দাউদ তার প্রসিদ্ধ গ্রন্থ সুনানে আবু-দাউদ-এ উম্মত জননী আয়েশা (রা.) এর বর্ণনা উদ্ধৃত করেছেন, একদা আবু-বকর (রা.) তনয়া আসমা রা: পাতলা কাপড় পরিধান করে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সমীপে উপস্থিত হলে নবীজী চেহারা মুবারক অপর দিকে ফিরিয়ে হাত ও মুখমন্ডলের প্রতি ইংগিত করে আসমাকে বললেন, হে আসমা ! মেয়ে মানুষের প্রাপ্তবয়স্ক হবার পর তার মুখমন্ডল ও হাত ছাড়া শরীরের অন্য কোনো অংশই দৃষ্টি গোচর হওয়া উচিত নয় ।

মুহাম্মদ বিন সালেহ আল উসাইমিন রহ. বলেনঃ-আসমা সম্পর্কিত ঘটনাটি পর্দার বিধান অবতীর্ণ হওয়ার পূর্বেই ঘটেছে । আর পর্দার বিধান অবতীর্ণ হয়ে পূর্বের অবস্থার পরিবর্তন ঘটিয়েছে । কাজেই পরবর্তী বিধান তথা পর্দার অপরিহার্যতার বিধান অগ্রগণ্য ও পালনীয় হবে ।

(৩) বুখারি শরীফে উদ্ধৃত হয়েছে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বর্ণনা করেন, বিদায় হজের সময় তার ভ্রাতা ফজল বিন আব্বাস রা: রাসূলের সাথে সওয়ারীর পিছনে উপবিষ্ট ছিলেন, ইতিমধ্যে খুসআম গোত্রের জনৈকা মহিলা রাসূলের সমীপে উপস্থিত হলে ফজল মহিলার প্রতি তাকাচ্ছিলেন এবং মহিলাও ফজলের প্রতি দৃষ্টি প্রদান করছিল, তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ফজল ইবনে আব্বাসের চেহারা অন্য দিকে ফিরিয়ে দেন । এতে প্রতীয়মান হচ্ছে যে, মহিলাটির মূখমন্ডল খোলা ছিল ।

মুহাম্মদ বিন সালেহ আল উসাইমিন রহ. বলেনঃ মহিলাটি এহরাম অবস্থায় ছিলেন, আর এহরামরত নারীর প্রতি ইসলামের বিধান হল পরপুরুষের দৃষ্টির আওতায় না থাকলে চেহারা খোলা রাখা ওয়াজিব ।

হাফেজ ইবনে হাজার আসক্বালানী (রHappy সহীহ বুখারীর শ্রেষ্ঠতম ব্যাখ্যাগ্রন্থ ফাতহুল বারীতে এই হাদীসের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে উল্লেখ করেন, এই হাদীস দ্বারা এটাও জানা হল যে, পরনারীর দর্শন ইসলামি শরিয়তে নিষিদ্ধ এবং এমতাবস্থায় দৃষ্টি নত রাখা ওয়াজিব ।

(৪) সহীহ বুখারি ও অন্যান্য হাদীস গ্রন্থে জাবের (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কর্তৃক লোকদের নিয়ে ঈদের নামাজের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নামাজ শেষ করে লোকদেরকে আখেরাত সংক্রান্ত উপদেশ প্রদান করে বললেন,

মহিলাদের কাছে গিয়ে হৃদয়গ্রাহী কিছু উপদেশ পেশ করেন আর বলেন: হে নারী সম্প্রদায় ! তোমরা আল্লাহর পথে তারই সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে দান-দক্ষিণা কর, কেননা তোমরা অধিক হারে জাহান্নামের জ্বালানী হবে । তখন তাদের কালো বর্ণের চেহারা বিশিষ্ট জনৈকা মহিলা দাঁড়িয়ে বললেন,.....( আল হাদিস)

এতে বুঝা গেল, মহিলাটির চেহারা খোলা ছিল, আবৃত ছিল না । নতুবা জাবের রা. কিভাবে জানতে পারলেন যে, মহিলাটির চেহারা কালো বর্ণের ছিল ।

মুহাম্মদ বিন সালেহ আল উসাইমিন রহ. বলেনঃ হয়ত কালো বর্ণের মুখমন্ডল বিশিষ্ট মহিলাটি সেসব বৃদ্ধ নারীদের অন্তভুর্ক্ত ছিলেন (বাধ্যর্কের কারণে) যাদের সাথে বিবাহ বন্ধনের আশা করা যায় না । এমন নারীদের চেহারা খোলা রাখা জায়েয ।

হয়ত এই ঘটনাটি পর্দার আয়াত অবতরণের পূর্বেকার ঘটনা । কেননা,পর্দার বিধানাবলী বর্ণিত সূরা আল-আহযাব ৫ম অথবা ৬ষ্ঠ হিজরী সনে অবতীর্ণ হয়েছে । আর ঈদের নামাজ প্রবর্তিত ২য় হিজরী সনে ।

হক্বপন্থী উলামায়ে কেরাম পর্দা বিষয়ে অভিমত প্রকাশ করেন যে, ফেতনার কারণে বর্তমানে পর্দালম্বন করা ওয়াজিব । সাধারণ অবস্থায় সুন্নত এবং উম্মতজননী রাসূল পত্নীগণের পছন্দনীয় কর্ম । তারা আরো বলেন, উত্তম হল চোহারা আবৃত করা ।

এমনকি বর্তমান বিশ্বে সুপরিচিত ইসলামি ব্যক্তিত্ব, সাউদী আরবের প্রধান মুফতি, মহামান্য শায়খ আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন বায রহ. ও মুহাম্মদ বিন সালেহ আল উসাইমিন রহ. বলেনঃ চেহারা আবৃত করা অতি উত্তম ।

(http://www.islamhouse.com/ কোরআন ও সুন্নাহর আলোকে পর্দা মুহাম্মদ বিন সালেহ আল উসাইমিন রহ. সম্পাদনা: ইকবাল হোসাইন মাছুম)

পর্দার বিধান পালন করা প্রত্যেক নারী পুরুষের অপরিহার্য কর্তব্যঃ-

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বান্দাদের প্রতি তার আনুগত্যকে আবশ্যিক ও বাঞ্চনীয় করে রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আনুগত্যের অপরিহার্যতা ঘোষণা করে বলেন:

“আর আল্লাহ ও তার রাসূল কোন নির্দেশ দিলে কোন মুমিন পুরুষ ও নারীর জন্যে নিজদের ব্যাপারে অন্য কিছু এখতিয়ার করার অধিকার থাকে না; আর যে আল্লাহ ও তার রাসূলকে অমান্য করল সে স্পষ্টই পথভ্রষ্ট হবে”(সূরা আহযাব: আয়াত ৩৬)

মহান আল্লাহ আরও বলেন,

“তোমার সৃষ্টিকর্তার সপথ, তারা কিছুতেই মমিন হতে পারে না যতক্ষণ না তারা তাদের পারস্পরিক বিবাদ কলহে তোমাকে বিচারক রূপে মেনে নেয় । অত:পর তোমার মীমাংসার ব্যাপারে তারা নিজেদের মনে কিছু মাত্র কুন্ঠাবোধ করবে না এবং তা হৃষ্টচিত্তে কবুল করে নেবে” (সূরা নিসা: আয়াত ৬৫)

এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন,

তোমাদের মধ্যে কেউই মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না তার মন আমার উপস্থাপিত আদর্শের বশ্যতা ও অধীনতা স্বীকার করে নেবে (আল হাদীস)

আল্লাহ তাআলা বলেন:

“অতএব তুমি একনিষ্ট হয়ে দীনের জন্য নিজকে প্রতিষ্ঠিত রাখ । আল্লাহর প্রকৃতি যে প্রকৃতির উপর তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন । আল্লাহর সৃষ্টির কোন পরিবর্তন নেই । এটাই প্রতিষ্ঠিত দীন; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ জানে না” (সূরা রুম: আয়াত ৩০)

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন,

“প্রত্যেক নবজাত শিশু ফিতরাত তথা ইসলাম বা স্রষ্টাকে চেনার ও তাকে মেনে চলার যোগ্যতার উপরই ভূমিষ্ট হয়, কিন্তু তার পিতা মাতা (বা ইসলাম বিরোধী পরিবেশ) তাকে ইহুদী, খৃষ্টান ও অগ্নিপূজকে পরিণত করে” (আল-হাদীস)

এই হাদিসের মর্ম আমাদের অভিভাবকদের গভীরভাবে অনুধাবন করা উচিত তাদের অজ্ঞতা বা সঠিক দিক নির্দেশনা না করার কারনে আজ আমরা অনেকে ইসলামের বিধি বিধান তথা পর্দা থেকে কিভাবে বিমুখ হয়ে আছি !!

এ সম্পর্কে কবি ড. আল্লামা ইকবাল বলেছেন, “কি বুঝবে যার রগে ঠান্ডা রক্ত প্রবাহিত ? অর্থাৎ যার অনুভূতি নেই । যেখানে পর্দা নেই সেখানে প্রকৃত শিক্ষাও নেই, নতুন কি পুরাতন, নারীর মর্যাদার ও সংরক্ষক একমাত্র পুরুষই হতে পারে, যে জাতি এ বাস্তব সত্য না বুঝতে পারে তার সৌভাগ্যের সূর্য অবশ্যই অস্তমিত হবে ।”

মহান আল্লাহ বলেনঃ-

পুরুষেরা নারীদের রক্ষক ও ব্যবস্থাপক কেননা আল্লাহ একজনকে অধিক মর্যাদা দান করেছেন অপরজন থেকে এবং তারা (নারীরা) তাদের (পুরুষদের) সম্পদ ব্যয় করে (সুরা নিসা আয়াত ৩৪)

হে মুসলিম জাতী ! আল্লাহ কর্তৃক শিষ্টাচারে শিষ্টাচারী হও, আল্লাহর বিধানের অনুকরণ কর এবং তোমাদের নারীদেরকে পর্দার অন্তরালে থাকতে বাধ্য কর । এটিই হচ্ছে পবিত্রতা, প্রশান্তি ও পরিত্রাণের উপায় ।

সুতারাং আমরা, নিসন্দেহে বলতে পারি ইসলামই নারীকে যথাযথ সম্মান ও শ্রেষ্ঠত্বের মর্যাদা দিয়েছেন ।

(৫ম সমাপ্ত)

বিষয়: Contest_mother

২৯৫৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File