নারীর সম্মান মর্যাদা রক্ষার্থে করনীয় (৪র্থ)
লিখেছেন লিখেছেন সত্যের ২৩ জুলাই, ২০১৩, ০৯:০৩:১৪ সকাল
১ম অংশ- http://www.bdtomorrow.net/blog/blogdetail/detail/6753/soter/22189 (pls click & read)
২য় অংশ- http://www.bdtomorrow.net/blog/blogdetail/detail/6753/soter/22297 (pls click & read)
৩য় অংশ-
http://www.bdtomorrow.net/blog/blogdetail/detail/6753/soter/22600 (pls click & read)
নারীদের জন্য আল্লাহ তাআলা কুরআন মাজীদে এরশাদ করেন,
আর মুমিন নারীদেরকে বল, তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করবে । আর যা সাধারণত প্রকাশ পায় তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য তারা প্রকাশ করবে না । তারা যেন তাদের ওড়না দিয়ে বক্ষদেশকে আবৃত করে রাখে । আর তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, নিজদের ছেলে, স্বামীর ছেলে, ভাই, ভাই এর ছেলে, বোনের ছেলে, আপন নারীগণ, তাদের ডান হাত যার মালিক হয়েছে, অধীনস্থ যৌনকামনামুক্ত পুরুষ অথবা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ বালক ছাড়া কারো কাছে নিজদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে । আর তারা যেন নিজদের গোপন সৌন্দর্য প্রকাশ করার জন্য সজোরে পদচারণা না করে । হে মুমিনগণ, তোমরা সকলেই আল্লাহর নিকট তাওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার (সূরা নূর আয়াত ৩১)
এক নববধুকে উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা.-এর নিকট আনা হল, যার পরনে ছিল রঙ্গিন কিবতী চাদর । তখন উম্মুল মুমিনীন রা. বললেন, ‘যে নারী এ রকম পোশাক পরিধান করে তার তো সূরা নূরের প্রতি ঈমান নেই’(তাফসীরে কুরতুবী ১৪/২৪৪)
"হে নবী, তুমি তোমার স্ত্রীদেরকে, কন্যাদেরকে ও মুমিনদের স্ত্রীদেরকে বল, তারা যেন তাদের জিলবাবের কিছু অংশ নিজেদের উপর ঝুলিয়ে দেয় । তাদেরকে চেনার ব্যাপারে এটাই সবচেয়ে কাছাকাছি পন্থা হবে । ফলে তাদেরকে কষ্ট দেয়া হবে না । আর আল্লাহ অতীব ক্ষমাশীল, পরম দয়াময়"(সূরা আহযাব আয়াত ৫৯)
আল্লাহ তাআলা বলেন,
হে নবী-পত্নিগণ, তোমরা অন্য কোনো নারীর মত নও । যদি তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর, তবে (পরপুরুষের সাথে) কোমল কণ্ঠে কথা বলো না, তাহলে যার অন্তরে ব্যাধি রয়েছে সে প্রলুব্ধ হয় । আর তোমরা ন্যায়সংগত কথা বলবে (সূরা আহযাব: আয়াত ৩২)
এই আয়াতে কোমল কন্ঠে কথা বলতে বারন করা হয়েছে; যে সব নারী টিভি বা বিভিন্ন মজলিসে অভিনয়, নাচ-গান করেন তারা কত বড় গুনাহর কাজে লিপ্ত !!
তোমরা নিজ গৃহে অবস্থান করবে এবং প্রাক- জাহেলী যুগের মত সৌন্দর্য প্রদর্শন করো না । আর তোমরা সালাত কায়েম কর, যাকাত প্রদান কর এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর । হে নবী পরিবার, আল্লাহ তো কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতাকে দূরীভূত করতে এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে (সূরা আহযাব: আয়াত ৩৩)
মহান আল্লাহ বলেন,
“তোমরা তাদের (নবী পত্নীগণের) কাছে কিছু চাইলে পর্দার অন্তরাল থেকে চাইবে, এটা তোমাদের (নারী) ও তাদের (পুরুষ) অন্তরের জন্যে অধিকতর পবিত্রতার কারণ” (সূরা আহযাব: আয়াত ৫৩)
বৃদ্ধা নারী, যারা বিবাহের আশা রাখে না, যদি তারা তাদের সৌন্দর্য্য প্রকাশ না করে তাদের বস্ত্র খুলে রাখে । তাদের জন্যে দোষ নেই, তবে এ থেকে বিরত থাকাই তাদের জন্যে উত্তম । আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ (সূরা আন-নূর আয়াত ৬০)
আল্লাহ তাআলা বলেন,
নবীর স্ত্রীদের জন্য তাদের পিতাদের, তাদের পুত্রদের, তাদের ভাইদের, তাদের ভাইয়ের ছেলেদের, তাদের বোনের ছেলেদের, তাদের নারীদের ও তাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসীদের বেলায় (হিজাব না করায়) কোন অপরাধ নেই । আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর । নিশ্চয় আল্লাহ সকল কিছুর প্রত্যক্ষদর্শী (সুরা আহযাব আয়াত ৫৫)
উপরের আয়াত গুলো নারীদের জন্যে পর পুরুষের সমীপে পর্দার অপরিহার্যতা সংক্রান্ত সুস্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে এবং পর্দার এ বিধান পুরুষ ও নারী উভয়ের অন্তরকে মানসিক কুমন্ত্রণা থেকে পবিত্র রাখার উদ্দেশ্যে দেয়া হয়েছে, এবং আল্লাহ রাব্বুল আলমীন ইংগিত দিচ্ছেন যে, নগ্নতা ও পর্দাহীনতা হচ্ছে নোংরামী ও অপবিত্রতা । আর পর্দার অন্তরালে থাকা হচ্ছে প্রশান্তি ও পবিত্রতা ।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আইহি ওয়াসাল্লাস) বলেন:
“যখন তোমাদের (নারীদের) কারো কাছে মুক্তির জন্যে চুক্তিবদ্ধ কৃতদাস থাকে এবং তার নিকট চুক্তি অনুযায়ী মুক্তিপণ থাকে । তাহলে সে নারী কৃতদাসের সামনে পর্দা করবে” (আহমাদ, আবু দাউদ, তিরমিজি, ইবনে মাজাহ। ইমাম তিরমিজি একে সহীহ বলেছেন)
লজ্জাবোধ ।
এ মর্মে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)বলেন:
প্রত্যেক দ্বীনেরই একটি নৈতিক স্বভাব ও আখলাক রয়েছে । আর ইসলামের সেই আখলাক বা নৈতিক চরিত্রটি হচ্ছে লজ্জাশীলতা” (আল-হাদীস)
তিনি আরো বলেন, লজ্জাশীলতা হচ্ছে ঈমানের অঙ্গ আর ঈমান (এর ঠিকানা হচ্ছে) জান্নাত ।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)আরো বলেন,
“লজ্জাবোধ ও ঈমান হচ্ছে এক সাথে মিলিত ভ্রুস্বরূপ । (একটির অবর্তমানে অপরটির বিয়োগ অনিবার্য)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-নিশ্চয়ই আল্লাহ লজ্জা ও পর্দাকে পছন্দ করেন (আবু দাউদ, হাদীস: ৪০১২, ৪০১৩; সুনানে নাসাঈ ১/২০০; মুসনাদে আহমদ ৪/২২৪)
উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বলেন-"তাঁর স্বামী আল্লাহর রাসূল হযরত নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তাঁর পিতা হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর পবিত্র রওজা মোবারকে তিনি প্রায়শঃ বিনা আব্রুতে যেতেন । কিন্তু যখন হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুকেও সেখানে দাফন করা হল তখন হতে তিনি পর্দা ও আব্রু করা ছাড়া সেখানে যেতেন না ।"
হে নারী তোমরা ভেবে দেখ মৃতু ব্যক্তির কবরে বিনা পর্দায় যেতেও লজ্জা পেত আর তোমরা জীবিত মানুষের সামনে কিভাবে আস !
উম্মুল মুমিনীন উম্মে সালামা রা. বলেন, আমি একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট ছিলাম । উম্মুল মুমিনীন মায়মুনা রা. ও সেখানে উপস্থিত ছিলেন । এমন সময় আবদুল্লাহ ইবনে উম্মে মাকতুম উপস্থিত হলেন । এটি ছিল পর্দা বিধানের পরের ঘটনা । তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরা তার সামনে থেকে সরে যাও । আমরা বললাম, তিনি তো অন্ধ, আমাদেরকে দেখছেন না ! তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তোমরাও কি অন্ধ ? তোমরা কি তাকে দেখছ না ? (সুনানে আবু দাউদ ৪/৩৬১, হাদীস: ৪১১২; জামে তিরমিযী ৫/১০২, হাদীস: ২৭৭৯; মুসনাদে আহমাদ ৬/২৯৬; শরহুল মুসলিম, নববী ১০/৯৭; ফাতহুল বারী ৯/২৪৮)
অন্ধ ব্যাক্তির সামনে এই বিধান হলে যারা অন্ধ নয় তাদের সামনে কি হতে পারে !!
হযরত আয়েশা রা. ইফ্কের দীর্ঘ হাদীসে বলেছেন-আমি আমার স্থানে বসে ছিলাম একসময় আমার চোখ দুটি নিদ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়ল এবং আমি ঘুমিয়ে পড়লাম । সফওয়ান ইবনে মুয়াত্তাল আসসুলামী ছিল বাহিনীর পিছনে আগমনকারী । সে যখন আমার অবস্থানস্থলের নিকট পৌছল তখন একজন ঘুমন্ত মানুষের আকৃতি দেখতে পেল ।এরপর সে আমার নিকট এলে আমাকে চিনে ফেলল । কারণ পর্দা বিধান অবতীর্ণ হওয়ার আগে সে আমাকে দেখেছিল । সে তখন ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন বলে ওঠে, যার দরুণ আমি ঘুম থেকে জেগে উঠি এবং ওড়না দিয়ে নিজেকে আবৃত করে ফেলি । অন্য রেওয়ায়েতে আছে, আমি ওড়না দিয়ে আমার চেহারা ঢেকে ফেলি (সহীহ বুখারী ৫/৩২০; সহীহ মুসলিম, হাদীস: ২৭৭০; জামে তিরমিযী, হাদীস: ৩১৭৯)
তামীম গোত্রের কয়েকজন নারী উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা.-এর নিকট আগমন করল, যাদের পরনে ছিল পাতলা কাপড় । উম্মুল মুমিনীন তাদেরকে উদ্দেশ করে বললেন, ‘তোমরা যদি মুমিন নারী হও তাহলে এ তো মুমিন নারীর পোশাক নয় । আর যদি মুমিন না হও তাহলে তা ব্যবহার করতে পার’(মাআলিমুস সুনান ৪/৩৭৬)
হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
দুই শ্রেণীর দোযখী এখনও আমি দেখিনি । (কারণ তারা এখন নেই, ভবিষ্যতে আত্মপ্রকাশ করবে) এক শ্রেণী হচ্ছে ঐ সকল মানুষ, যাদের হাতে ষাঁড়ের লেজের মতো চাবুক থাকবে, যা দিয়ে তারা মানুষকে প্রহার করবে । (দ্বিতীয় শ্রেণী হচ্ছে) ঐ সকল নারী, যারা হবে পোশাক পরিহিতা, নগ্ন, আকৃষ্ট ও আকৃষ্টকারী; তাদের মাথা হবে উটের হেলানো কুঁজের ন্যায় । এরা জান্নাতে যাবে না এবং জান্নাতের খুশবুও পাবে না অথচ জান্নাতের খুশবু তো এত এত দূর থেকে পাওয়া যাবে (মুসলিম ২/২০৫, হাদীস: ২১২৮)
অতি প্রয়োজনে ঘর হতে বের হওয়া জায়েয । তবে কিছু আদাব ও নিয়মাবলি মেনে চলতে হবে ।
১. স্বামী বা অভিভাবকের অনুমতি গ্রহণ করবে ।
হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, যে নারী স্বামীর ঘর হতে স্বামীর অনুমতি ব্যতীত বের হয়ে যায় সে ঘরে ফিরে আসা পর্যন্ত অথবা স্বামী সন্তুষ্ট হওয়া পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা তার উপর অসন্তুষ্ট থাকেন (কানযুল উম্মাল)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “তিনজন মানুষ সম্পর্কে তোমরা আমাকে জিজ্ঞাসা কর না । (অর্থাৎ তারা সবাই ধ্বংস হবে) যথা: ক. যে ব্যক্তি মুসলমানদের জামাত থেকে বের হয়ে গেল অথবা যে কুরআন অনুযায়ী দেশ পরিচালনকারী শাসকের আনুগত্য ত্যাগ করল, আর সে এ অবস্থায় মারা গেল । খ. যে গোলাম বা দাসী নিজ মনিব থেকে পলায়ন করল এবং এ অবস্থায় সে মারা গেল ।গ. যে নারী প্রয়োজন ছাড়া রূপচর্চা করে স্বামীর অবর্তমানে বাইরে বের হল” (হাকেম, সহিহ আল-জামে: ৩০৫৮)
২.সুগন্ধি ব্যবহার করবে না ।
হযরত আবু মুসা আশআরী রা. হতে বর্ণিত এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যখন কোনো মহিলা সুগন্ধি মেখে ঘর থেকে বের হয় এবং লোকদের পাশ দিয়ে অতিক্রম করে যাতে তারা তার খুশবু গ্রহণ করে, তবে সে ব্যভিচারিণী (মুসনাদে আহমদ, হাদীস: ১৯৩৬; জামে তিরমিযী, হাদীস: ২৭৮৭; সুনানে আবু দাউদ, হাদীস: ৪১৭৪-৭৫)
“যে নারী সুগন্ধি ব্যবহার করে বাইরে বের হল, অতঃপর কোন জনসমাবেশ দিয়ে অতিক্রম করল তাদের ঘ্রাণে মোহিত করার জন্য, সে নারী ব্যভিচারিণী” (আহমদ, সহিহ আল-জামে: ২৭০১)
৩. দূরের সফর হলে একা যাবে না; বরং কোনো মাহরাম পুরুষের সাথে যাবে ।
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ভাষণে বলতে শুনেছি, কোনো পুরুষ কোনো নারীর সাথে মাহরাম ব্যক্তি ছাড়া নির্জনে অবস্থান করবে না । এবং কোনো নারী মাহরাম ছাড়া সফর করবে না (সহীহ বুখারী, হাদীস: ৩০২৬; সহীহ মুসলিম, হাদীস: ১৩৪১)
(৪র্থ চলবে ৫ম পর্যন্ত)
৫ম অংশ-
http://www.bdtomorrow.net/blog/blogdetail/detail/6753/soter/22926 (pls click & read)
বিষয়: Contest_mother
২৫২১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন