আমারে ভিক্ষা দে, আমিও তোর মতো ভিক্ষুক
লিখেছেন লিখেছেন Mujahid Billah ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৭, ০২:৩৪:০০ রাত
বসুন্ধরা পকেট গেইটের গলিতে গতকাল একা একা হাঁটছি আর আবল তাবল চিন্তা করছি। হটাৎ পিছন থেকে ছোট্ট একটি মেয়ের গলা শুনতে পেলাম। আমি একটু দাড়ালাম, মেয়েটা দৌড়ে আমার কাছে আসলো। মেয়েটির কথায় কি এক মায়াবী সুর! শুকনো ও বিবর্ণ একটা শরীর। খালি পা, অযত্নে বেড়ে ওঠা এক মাথা চুল, ময়লা ভর্তি নখ, সারা শরীরে বোঁটকা গন্ধ, পিঠে ময়লা কুড়োনোর বস্তা আর হাতে একটা ভিক্ষার থলি -
মেয়ে টা বললো ভাই বিশ টা টাকা দেন !!
কেন, বিশ টাকা দিয়া কি করবা?
বললো ভাত খাব।
আহ্, ভাত খাওয়ার জন্য বিশ টাকা চাচ্ছে মেয়েটা !! মেয়েটা কে শান্তনা দেওয়ার জন্য আপন করে বললাম দেখ আমিও তোর মতো ভিক্ষুক - আমারে ভিক্ষা দে !! এই কথাটা বলাতে তার মূখে একটু হাসি ফুটে উঠল।
পরে আমাকে বলল- আচ্ছা তাইলে ভিক্ষার থলি কই?
আমি তখন বিপদে পরলাম ভিক্ষার থলি এখন কোথায় পাই?? একটু ভাবতেই পান্জাবীর একটা পকেট দুই হাত দিয়ে ধরে বললাম এই যে আমার ভিক্ষার থলি !!
কথাটা বলা মাত্রই মেয়েটা হিঃ হিঃ করে আবার হেসে উঠল।
পরে মোষ্ঠি করে অল্প কিছু টাকা দিলাম মেয়েটার হাতে, থলিতে দিতে মন চাচ্ছিল নাহ্। খুব খারাপ লাগলেও একটু ভালো লাগছিল - যাক, মেয়েটার মূখে একটুর জন্য হলেও হাসি ফোঁটাতে পারলাম !!
•
এই তো কয়েকদিন আগে বাড়িতে যাওয়ার জন্য এয়ারপোর্ট এ এনা গাড়ীর টিকেট কেটে রাস্তা ওই পারে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছি, হঠাৎ একটা মেয়ে...
মেয়ে : আংকেল আংকেল!
(কেউ কি আমাকে ডাকছে?
না অন্য কাউকে ডাকছে )
আবার সেই একই ডাক। না ফিরে পারলাম না। চেয়ে দেখি ছোট্ট ফুট ফুটে একটি মেয়ে। বয়স বড়জোর সাত হবে। হাতে কিছু লাভ কেন্ডি। রাস্তার পাশে বসে থাকা ওর দিকে ঝুকে বললামঃ
আমি : আমাকে ডাকছ?
মেয়ে : হুম।
আমি : কিছু বলবে?
মেয়ে : আংকেল, একটা কেন্ডি কিনেন না!
আমি : অবশ্যই! কেন কিনবো না!
বলতেই মেয়েটি আমার হাতে দুটি লাভ কেন্ডি দিল।
আমি : দাম জেনেও বললাম তোমার লাভ কেন্ডি কত টাকা করে?
মেয়ে : দুই টাকা।
আমি : তুমি এগুলো কেন বেচ?
মেয়ে : এগুলো বেচে দু মুঠো খাবার জোগাই।
আমি : তোমার বাবা মা কোথায়?
মেয়ে : বাবা মারা গেছে! মাকে খুঁজে পাচ্ছি না!
আমি : তোমার ভাই বোন নেই?
মেয়ে : ভাইয়া আছে। ভাইয়াও কেন্ডি বেচে।
আমি : সে কোথায়?
মেয়ে : ঐ খানে আছে!
•
একটু দূরে বসে থাকা ওর ভাই থেকে যা শুনলাম। তাতেই হেড। বাবা ক্যান্সারের কারণে দুইমাস আগে ইহকাল ত্যাগ করেছেন। আর কয়েকদিন পরে সকালে মা আমাদের দুজনকে ঘুম পাড়িয়ে উধাও হয়ে গেলন। তখন থেকে মা কই যে উধাও হলো আর মা কে পাইলাম না, এখনো মায়ের অপেক্ষায় থাকি আমরা ভাই-বোন !!
•
মানুষ কত কষ্টে আছে! রাস্তা ঘাটে পায়চারি করলে এর কিছুটা চোখে পড়ে। এমন পথশিশু আমাদের চলাচল পথে প্রায় দেখা যায়। ওরা শুধু হাত জোর করে একটা কেন্ডি নিতে বলে বা একটা টাকার আবদার করে। ওরা কিন্তু আমাদের কাছে লাখ টাকা চায় না। মাত্র দু এক টাকা। অথচ আমরা এদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেই। একবার দয়াও হয় না ওদের প্রতি। বাস্তবে ওরা যদি আমাদের আপন কেও হত, তখন আপনি কী ফিল করতেন? তাদের প্রতি আপনার কী কোন দয়া হত না? অবশ্যই হত। তাই ওদের জন্য কিছু না করতে পারলেও ওদের দেওয়া কেন্ডিটা ফিরিয়ে দিবেন না। আপনাদের এক টাকার ফলে ওদের এক মুঠো ভাত জুটবে।
•
পথশিশু ছাড়াও তাদেরকে 'টোকাই', 'পথকলি' বা 'ছিন্নমূল' বলা হয়ে থাকে। 'অবহেলিত' শব্দটি পথশিশুদের জীবনের সঙ্গে যেন মিশে আছে, অনেক সময় যৌন নির্যাতনের মতো বিষয়গুলোর শিকার হচ্ছে মেয়ে পথশিশু'রা। যা শোনা ও দেখার মাঝেই থেকে যাচ্ছে। আর এই মেয়েশিশুরা জীবন কাটায় এক ভয়াবহ ঝুঁকিতে। একে তো পথশিশু, তারপর আবার মেয়ে। তাদের জীবনে প্রয়োজনীয় মূল্যবোধ আর তৈরি হয়ে ওঠে না শুধুমাত্র আমাদের কারণে।
•
বলা যেতেই পারে, পথশিশুদের জীবনে বাবা থেকেও যেমন বাবা নেই, মা থেকেও যেমন মা নেই, তেমনি রাষ্ট্র থেকেও তাদের জন্য নেই রাষ্ট্র ! তাদের জীবন কি এভাবেই চলবে ? তাদের মুখে কি ফুটবে না সুখের হাসি ? পথশিশু বলেই কি পেতে পারে না কারও সহানুভূতি কিংবা রাষ্ট্রীয় সাহায্য !!
বিষয়: আন্তর্জাতিক
১২৯০ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন