মৃত্যুর আগে শেষ চিঠি !!

লিখেছেন লিখেছেন Mujahid Billah ১৪ মে, ২০১৭, ১২:২৪:২০ রাত

''কোথাও পাখির শব্দ শুনি; কোনো দিকে সমুদ্রের সুর; কোথাও ভোরের বেলা র'য়ে গেছে - তবে। অগণন মানুষের মৃত্যু হ'লে - অন্ধকারে জীবিত ও মৃতের হৃদয় বিস্মিতের মতো চেয়ে আছে; এ কোন সিন্ধুর সুর: মরণের - জীবনের?''

আমি সিদ্দান্ত নিয়েছি মরে যাবো ।হাতে বেশী সময় নেই । কিভাবে আমার মৃত্যু হবে কেউ জানবে না। সবাই ভেবে নিবে আমি দূরে কোথাও হারিয়ে গেছি- একদিন হয়তো চলে আসবো । কিন্তু না ফেরার দেশ থেকে কেউ ফিরে আসতে পারে না । অনেক ভেবে চিন্তেই এক আকাশ কষ্ট বুকে নিয়ে আমাকে এই সিদ্দান্ত আমাকে নিতে হয়েছে। খুব জানতে ইচ্ছা করে- আমার মৃত্যুর পর আমার প্রিয় মানুষেরা কয়দিন আমাকে মনে চোখ ভেজাবে!মৃত্যুর সিদ্দান্ত নেওয়ার পর খুব হালকা লাগাছে । আমি জানি, যারা ইচ্ছা করে মরে যায়- তারা কাপুরুষ । কিন্তু আমার কাছের মানুষরা জানেন- আমি কখনও কাপুরুষ ছিলাম না । আমার মৃত্যু অনেকের চোখে পানি আনবে আবার অনেকের চোখে আনন্দ আনবে । আর মাত্র তিন ঘন্টা সময় আছে আমার হাতে । সাত টা সিগারেট আছে, আশা করি শেষ করে ফেলতে পারব । রবীন্দ্র সংগীত বাজছে - " এখন তোমার আপন আলোয় তোমায় চাহি রে।/ তোমায় নিয়ে খেলেছিলেম খেলার ঘরেতে।/ খেলার পুতুল ভেঙে গেছে প্রলয় ঝড়েতে"। পরপর দুইটা সিগারেট শেষ করে আমি আমার জীবনের শেষ চিঠি লিখতে বসলাম ।

মা, সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখবে আমি বাসায় নাই । দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে যাবে কিন্তু আমি আর ফিরে আসবো না ।এভাবে অনেক বছর চলে যাবে- তাও আমি আসবো না । আমি জানি তুমি এক আকাশ ভালোবাসা আর কষ্ট নিয়ে আমার অপেক্ষায় থাকবে । মা, তুমি আমার জন্য চিন্তা করো না- আমি যেখানেই থাকব ভালো থাকব । তুমি লক্ষ্মী হয়ে থেকে, আর ইন্ডিয়ান সিরিয়াল গুলো দেখা একটু কমাও। খুব রাগ লাগে । সময় মত ওষুধ খেয়ে নিও এবং টিভি দেখতে দেখতে এক ওষুধ দুইবার করে খেও না ।বিকালে টিভি না দেখে একটু ঘুম দিও । ভাবী'র সাথে ঝগড়ায় যেও না- তুমি বুঝতে চাও না কেন- ভাবী'র যুগ আর তোমার যুগ টা এক নয় । আব্বার সাথে ঝগড়া করো না । আব্বা তোমাকে অনেক ভালোবাসে । এই দেশ-সমাজ-সমাজের মানুষ গুলো আমার আত্মাকে বিষিয়ে দিয়েছে । তাই স্বেচ্ছা নির্বাসন আমি নিজেই বেছে মিলাম । আমার অনেক বন্ধু আমার খোঁজ নিতে আসবে । তাদের চা নাস্তা খাইয়ে দিবে । মাথায় হাত দিয়ে দোয়া করে দিও । ভালো থেকো- মা। আমার মা ।

''এই সব শীতের রাতে আমার হৃদয়ে মৃত্যু আসে; বাইরে হয়তো শিশির ঝরছে, কিংবা পাতা, কিংবা প্যাঁচার গান; সেও শিশিরের মতো, হলুদ পাতার মতো।''

আব্বা, এই প্রথম তোমাকে চিঠি লিখছি । কি প্রচন্ড অবাক হচ্ছো ? আমি জানি, আমি হারয়ে যাবার পর- তুমি অ সংখ্য বার এই চিঠিটি পড়বে । আব্বা, সেদিন তোমাকে রাস্তায় দেখে চিনতে পারিনি বলে কি খুব কষ্ট পেয়েছো ? যাই হোক, খবরদার মা'র সাথে আর ঝগড়া করবে না । এই চিঠি পড়ার পর থেকে সিগারেট আর খাবে না । নো নেভার । যদি খাও তাহলে আমার আত্মার কষ্ট হবে । এইবার ফেললাম তোমাকে বিপাকে । শোনো, তোমার কাছ থেকে অনেক কিছু শিখেছি । সবচেয়ে বেশী শিখেছি মানুষকে কিভাবে ভালোবাসতে হয় । নিজের দুঃখ কষ্ট কিভাবে লুকাতে হয় । মাঝে মাঝে তোমার উপর অনেক রাগ হয় । আবার সেই রাগ পানি হয়ে যায় । বাসার সবার উপর খেয়াল রেখো । আমার জন্য ভেবো না । আমি অদৃশ্য হওয়ার মন্ত্র শিখেছি । তাই অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছি । আমার খোঁজে একটা মেয়ে আসবে । মেয়েটার মাথায় হাত রেখে একটু আদর করে দিও । অদৃশ্য না হলে এই মেয়েটকেই বিয়ে করতাম । সব সময় মেয়েটার খোজ খবর রাখবে । তুমি যেমন আমার মাথার উপর বট গাছ । মেয়েটাকে প্রাচীন বিশাল বট গাছের মতন ছায়া দিও মায়া দিও । আচ্ছা, যাই তাহলে ....

''আমরা জেগেছি - তবু জাগাতে পারিনি; আলো ছিলো - প্রদীপের বেষ্টনী নেই; কাজ ছিলো - শুরু হলো না তো; তাহলে দিনের সিঁড়ি কি প্রয়োজনের? নিঃস্বত্ব সূর্যকে নিয়ে কার তবে লাভ!''

হিমি, আমার হিমি ।আমার কলিজা । খুব কষ্ট দিয়ে গেলাম তোমাকে । জানি, তুমি খুব কাঁদবে। এক আকাশ কষ্ট হবে তোমার । তোমাকে অনেক এলোমেলো কথার ভীড়ে কিছু মূল্যবান কথাও বলেছি- সেই সব কথা বুকে আঁকড়ে থেকো । আমার মা তোমাকে অনেক আদর করবে । তুমি তাদের সাথে সব সময় যোগাযোগ রাখবে । অদৃশ্যভাবে আমি সব সময় তোমার কাছেই আছি এবং থাকব । "তোমার হৃদয় আজ ঘাস :/ বাতাসের ওপারে বাতাস -/ আকাশের ওপারে আকাশ।" বোকা, মেয়ে তুমি আবার আমাকে পরাজিত মানুষের দলে আমাকে ফেলো না । যাই হোক, ছোট একটা জীবন- এখন কি করবে তুমি ? আমার স্মৃতি বহন করবে আজীবন ? নাকি অন্য কাউকে বিয়ে করে আমাকে ভুলে যাবে । তোমাকে যে আমি অনেক ভালোবাসি- কিন্তু কোনোদিন তোমাকে বলিনি । কিন্তু তুমি তোমার মহত্ত্ব দিয়ে ঠিকই বুঝে নিয়েছিলে পুরোটাই । সারা জীবনের জন্য এক আকাশ কষ্ট দিয়ে গেলাম। যাই বেবি- আমার । ভালো থেকো । অনেক ভালোবাসি ।

''আমাকে একটি কথা দাও যা আকাশের মতো সহজ মহৎ বিশাল, গভীর; - সমস্ত ক্লান্ত হতাহত গৃহবলিভুকদের রক্তে মলিন ইতিহাসের অন্তর ধুয়ে চেনা হাতের মতন, আমি যাকে আবহমান কাল ভালোবেসে এসেছি সেই নারীর।''

রাজীব নূর

বিষয়: বিবিধ

১১৬৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File