মেয়ের চোখের জলে রক্তেভেজা বাবার গল্প

লিখেছেন লিখেছেন Mujahid Billah ০৮ মে, ২০১৭, ১২:৫২:৩৬ রাত

বাবার কোলে শুয়ে কত কথা, কত গল্প। মাঝেমধ্যে একটুখানি খুনসুটি। মেয়ের কথায় এক সময় বিরক্ত হয়ে বাবা মমতাজড়ানো কণ্ঠে বলতেন, ‘তুই না বড় হয়েছিস! আর কত আমার কোলে শুয়ে ঘুমাবি।’ কিন্তু কী করা। বাবা-মেয়ের আজন্ম বাঁধন কি সহজেই ছেঁড়া যায়?

কিন্তু এ বাঁধন যে কত সহজে ছিঁড়ে যায় তা দশ বছরের শিশু নোভার চেয়ে বোধ করি আর কেউ ভালো বলতে পারবে না।

বলছিলাম শনিবার ঘাতকের বুলেটে প্রাণ দেওয়া মিরপুরের মধ্য পীরেরবাগের শেয়ার ব্যবসায়ী জিয়া হায়দারের ছোট মেয়ে মনিপুর স্কুলের ষষ্ঠশ্রেণীর ছাত্রী কাজী তানহা হায়দার নোভার কথা।

বাবার কোলে মাথা রেখে না ঘুমালে যার ঘুমই আসতো না। সব আবদার, অভিযোগ, অনুযোগ আর অভিমানে ছিলো যাকে কেন্দ্র করে, সেই বাবাই চিরঘুমের দেশে হারিয়ে গেছে।

দুপুরে যে বাবা মাথার চুল ধরে দুষ্টুমি করছিলেন, যার সাথে খুনসুটির পর্ব শেষ করে বাসা থেকে বেরিয়ে গেছে, বিকেলে বাসায় ফিরে মার মুখে তার খুনের কথা শুনতে হবে- এটা কোন নিয়ম?

অথচ এটিই এখন এ শহরের একটি অলিখিত নিয়ম। এ নিয়ম ভাঙ্গার কোন উদ্যোগ বা সাহস যেন কারোরই নেই।

নোভা কোন নিয়ম বোঝে না। শুধু বোঝে তার প্রিয় বাবা আর কোন দিন কোলে তুলে মাথার এলোমোলো লম্বা চুলগুলো যতœ নেওয়ার তাগিদ দেবে না।

বাসা থেকে কোচিংয়ে যাওয়ার সময় বলবেনা, ‘সাবধানে যেও মা।’

শনিবার বিকেল চারটার দিকে নিহত জিয়া হায়দারের বাসায় গিয়ে দেখা যায় শোকের মাতম। বড় মেয়ে বাকরুদ্ধ। আত্মীয়দের কোন চেষ্টাই তার মুখ থেকে কথা বের করতে পারছে না।

কিছুক্ষণ পর ছোট মেয়ে নোভা কোচিং থেকে বাসায় ঢুকে কয়েক মিনিট পরিবেশ বোঝার চেষ্টা করলো। ক্ষণিক পরেই বুঝতে আর বাকি রইল না যে তার সব শেষ।

বাবা বলেই এক চিৎকার দিয়ে সোফায় বসে পড়ে। তারপর আর কোন কথা নেই। অনেকক্ষণ পর একটু স্বাভাবিক হয়ে উপরের কথাগুলো বাংলানিউজকে জানায় সে।

চোখ মুছতে মুছতে সে বলে, ‘আমার আব্বু কারো সাথে ঝগড়া করতো না। সবাই তাকে মানতো। কিন্তু কেন তাকে খুন করেছে আমরা জানি না।’

এটুকু বলেই আবারও চিৎকার দিয়ে দৌড়ে আরেকটি ঘরে চলে যায়।

এর আগে নোভা আরো জানায়, দুপুর আড়াইটার দিকে কোচিংয়ে যাওয়ার সময় তার বাবাকে নিচে কয়েকজন মানুষের সাথে কথা বলতে দেখা গেছে। তাদের কয়েকজন ওই এলাকারই।

বাংলাদেশ সময়: ২২০৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১,২০১২

বিষয়: বিবিধ

৭৪৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File