দাওয়াহ্ ও তাবলীগ

লিখেছেন লিখেছেন মুহাম্মদ_২ ০৮ জুলাই, ২০১৪, ০৪:৩৭:০৮ বিকাল



“দাওয়াহ্” সংক্রান্ত আয়াত আল-কুরআনে বহু (‘দাল, ‘আঈন, ওয়াও’-এই রুট থেকে ৭টি ফর্মে ২১২ বার উদ্ধৃত হয়েছে রূপান্তরিত শব্দগুলো)। দ্বীনের সকল দাঈ’র কর্তব্য দাওয়াতী কাজের জন্য ‘দু’আউন ও বুলুগুন’ সংক্রান্ত আয়াতগুলো খুঁজে ভালভাবে বুঝে নেয়া।

“তোমার পালনকর্তার পথের প্রতি আহবান কর (দাওয়াহ্) প্রজ্ঞাময় কথা ও সুন্দরতম উপদেশ দ্বারা (বিল হিক্বমাতি ওয়াল মাওয়িজাতিল হাসানাহ) এবং তাদের সাথে বিতর্ক কর পছন্দনীয় পন্থায়। নিশ্চয় তোমার পালনকর্তা ঐ ব্যক্তি সম্পর্কে বিশেষ ভাবে জ্ঞাত রয়েছেন, যে তাঁর পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়েছে এবং তিনিই ভাল জানেন তাদেরকে, যারা সঠিক পথে আছে।“ –সূরা নাহল (১৬:১২৫)

এমন কোন ঈমানের দাবীদার নেই যে বলবে, মহিমান্বিত কুরআনের চেয়ে বড় কোন ‘হিকমাহ’ এবং তার চেয়ে ভাল কোন ‘ওয়াজ’ থাকতে পারে। এই আয়াত দ্বারা বস্তুত উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে কুরআন দ্বারাই দাওয়াতী অভিযান পরিচালনা করতে- তা বুঝতে অসুবিধা হবার কথা নয়। যেমন, সূরা ক্বাফে (৫০:৪৫) বলা হয়েছে- কুরআন দ্বারা উপদেশ দাও (ফাযাক্কির বিল কুরআন)। সূরা ফুরকানে (২৫.৫২) সমাজে বিদ্যমান সকল জাহিলিয়াতের বিরুদ্ধে কুরআন দ্বারা সবচে’ 'বড় জিহাদ’ (জিহাদান কাবিরা) অব্যাহত রাখতে রাসূলকে (তাঁর প্রতি সালাম) নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

নবী-রাসূলগণ কীভাবে তাবলীগ করতেন?

নবীওয়ালা কাজঃ নবী-রাসূগলন রিসালাতের যে দায়িত্ব পালন করতেন তাকেই ‘নবীওয়ালা কাজ’ বলে বুঝানো হয়ে থাকে। নীচের আয়াতগুলো থেকে তাঁরা কীভাবে দ্বীনের কথা প্রচার তথা তাবগীগের মাধ্যমে রিসালাতের দায়িত্ব নিষ্পন্ন করতেন ‘রিসালাতুন’ ও ‘বুলুগুন’ শব্দের ব্যবহার যাচাই করে তা বোঝার চেষ্টা করি।

১. হযরত নুহের (তাঁর প্রতি সালাম) তাবলীগ নিজ ক্বওমের প্রতি

সূরা আ’রাফ (৭:৬২)

أُبَلِّغُكُمْ رِ‌سَـٰلَـٰتِ رَ‌بِّى وَأَنصَحُ لَكُمْ وَأَعْلَمُ مِنَ ٱللَّهِ مَا لَا تَعْلَمُونَ

আমি তোমাদের কাছে পৌঁছে দিই আমার প্রভুর বাণীসমূহ এবং আমি তোমাদের সদুপদেশ দিই, কারণ আমি আল্লাহ্‌র কাছ থেকে জানি যা তোমরা জানো না।

২. হযরত হুদের (তাঁর প্রতি সালাম) তাবলীগ স্বীয় ক্বওমের প্রতি (তিনটি উদ্ধৃতি)

সূরা আ’রাফ (৭:৬৮)

أُبَلِّغُكُمْ رِ‌سَـٰلَـٰتِ رَ‌بِّى وَأَنَا۠ لَكُمْ نَاصِحٌ أَمِينٌ

আমি তোমাদের কাছে পৌঁছে দিই আমার প্রভুর বাণীসমূহ, আর আমি তোমাদের জন্য একজন বিশ্বস্ত উপদেষ্টা।

সূরা হুদ (১১:৫৭)

فَإِن تَوَلَّوْا۟ فَقَدْ أَبْلَغْتُكُم مَّآ أُرْ‌سِلْتُ بِهِۦٓ إِلَيْكُمْ ۚ وَيَسْتَخْلِفُ رَ‌بِّى قَوْمًا غَيْرَ‌كُمْ وَلَا تَضُرُّ‌ونَهُۥ شَيْـًٔا ۚ إِنَّ رَ‌بِّى عَلَىٰ كُلِّ شَىْءٍ حَفِيظٌ

তথাপি যদি তোমরা মুখ ফেরাও, তবে আমি তোমাদেরকে তা পৌছিয়েছি যা আমার কাছে তোমাদের প্রতি প্রেরিত হয়েছে; আর আমার পালনকর্তা অন্য কোন জাতিকে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করবেন, আর তোমরা তাঁর কিছুই বিগড়াতে পারবে না; নিশ্চয়ই আমার পরওয়ারদেগারই প্রতিটি বস্তুর হেফাজতকারী।

সূরা আহকাফ (৪৬:২৩)

قَالَ إِنَّمَا ٱلْعِلْمُ عِندَ ٱللَّهِ وَأُبَلِّغُكُم مَّآ أُرْ‌سِلْتُ بِهِۦ وَلَـٰكِنِّىٓ أَرَ‌ىٰكُمْ قَوْمًا تَجْهَلُونَ

সে বলল, এ জ্ঞান তো আল্লাহর কাছেই রয়েছে। আমি যে বিষয়সহ প্রেরিত হয়েছি, তা তোমাদের কাছে পৌঁছাই। কিন্তু আমি দেখছি তোমরা এক মুর্খ সম্প্রদায়।

৩. হযরত সালেহ-এর (তাঁর প্রতি সালাম) তাবলীগ নিজ ক্বওমের প্রতি

সূরা আ’রাফ (৭:৭৯)

فَتَوَلَّىٰ عَنْهُمْ وَقَالَ يَـٰقَوْمِ لَقَدْ أَبْلَغْتُكُمْ رِ‌سَالَةَ رَ‌بِّى وَنَصَحْتُ لَكُمْ وَلَـٰكِن لَّا تُحِبُّونَ ٱلنَّـٰصِحِينَ

(ছালেহ) তাদের কাছ থেকে প্রস্থান করলো এবং বললঃ হে আমার সম্প্রদায়, আমি তোমাদের কাছে স্বীয় প্রতিপালকের পয়গাম পৌছিয়েছি এবং তোমাদের মঙ্গল কামনা করেছি কিন্তু তোমরা মঙ্গলকাঙ্খীদেরকে ভালবাস না।

৪. হযরত শুয়াইব-এর (তাঁর প্রতি সালাম) তাবলীগ স্বীয় ক্বওমের প্রতি

সূরা আ’রাফ (৭:৯৩)

فَتَوَلَّىٰ عَنْهُمْ وَقَالَ يَـٰقَوْمِ لَقَدْ أَبْلَغْتُكُمْ رِ‌سَـٰلَـٰتِ رَ‌بِّى وَنَصَحْتُ لَكُمْ ۖ فَكَيْفَ ءَاسَىٰ عَلَىٰ قَوْمٍ كَـٰفِرِ‌ينَ

এর পর তিনি তাদের থেকে ফিরে দাঁড়ালেন ও বললেন- ''হে আমার সম্প্রদায়! আমি তো অবশ্যই তোমাদের কাছে আমার প্রভুর নির্দেশসমূহ পৌঁছে দিয়েছিলাম আর তোমাদের সদুপদেশ দিয়েছিলাম, সুতরাং কেনই বা আমি দুঃখ করবো এক অবিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য!’’

৫. নিজ ক্বওমের প্রতি সকল নবীর (তাঁদের সবার প্রতি সালাম) তাবলীগী কার্যক্রম সম্পর্কে আল্লাহর ভাষ্য

সূরা আহযাব (৩৩:৩৮-৩৯)

مَّا كَانَ عَلَى ٱلنَّبِىِّ مِنْ حَرَ‌جٍ فِيمَا فَرَ‌ضَ ٱللَّهُ لَهُۥ ۖ سُنَّةَ ٱللَّهِ فِى ٱلَّذِينَ خَلَوْا۟ مِن قَبْلُ ۚ وَكَانَ أَمْرُ‌ ٱللَّهِ قَدَرً‌ۭا مَّقْدُورً‌ا ﴿٣٨﴾ ٱلَّذِينَ يُبَلِّغُونَ رِ‌سَـٰلَـٰتِ ٱللَّهِ وَيَخْشَوْنَهُۥ وَلَا يَخْشَوْنَ أَحَدًا إِلَّا ٱللَّهَ ۗ وَكَفَىٰ بِٱللَّهِ حَسِيبًا

আল্লাহ নবীর জন্যে যা নির্ধারণ করেন, তাতে তাঁর কোন বাধা নেই পূর্ববর্তী নবীগণের ক্ষেত্রে এটাই ছিল আল্লাহর চিরাচরিত বিধান। আল্লাহর আদেশ নির্ধারিত, অবধারিত। সেই নবীগণ আল্লাহর পয়গাম প্রচার করত ও তাঁকে ভয় করত। তারা আল্লাহ ব্যতীত অন্যকাউকে ভয় করত না। হিসাব গ্রহণের জন্যে আল্লাহই যথেষ্ট।

শেষ জমানার চূড়ান্ত তাবলীগ

পূর্বকালের সকল নবীর মতই সর্বশেষ নবীর তাবলীগ যে ব্যতিক্রম কিছু নয়, তা নীচের কুরআনী ভাষ্য মিলিয়ে নিলে সহজেই অনুধাবন করা যায়। চকচক করলে যেমন সোনা হয়না তেমনি ‘দাওয়াতে তাবলীগে’র নামে যা কিছু চলছে তা যে ইবলিসের ভেল্কি, কুরআন-প্রিয় কোন মু’মিনের বুঝতে তা সমস্যা হবার কথা নয়।

১. শেষ নবী হযরত মুহম্মদ-এর (তাঁর প্রতি সালাম) তাবলীগ সম্পর্কে আল্লাহর নির্দেশ

সূরা মায়িদা (৫:৬৭)

يَـٰٓأَيُّهَا ٱلرَّ‌سُولُ بَلِّغْ مَآ أُنزِلَ إِلَيْكَ مِن رَّ‌بِّكَ ۖ وَإِن لَّمْ تَفْعَلْ فَمَا بَلَّغْتَ رِ‌سَالَتَهُۥ ۚ وَٱللَّهُ يَعْصِمُكَ مِنَ ٱلنَّاسِ ۗ إِنَّ ٱللَّهَ لَا يَهْدِى ٱلْقَوْمَ ٱلْكَـٰفِرِ‌ينَ

হে রসূল! তোমার প্রভুর কাছ থেকে যা তোমার কাছে অবতীর্ণ হয়েছে তা প্রচার করো। আর যদি তুমি তা না করো তবে তাঁর বাণী তুমি প্রচার করলে না (অর্থাৎ নবীওয়ালা কাজ করলে না)। আর আল্লাহ্ লোকদের থেকে তোমাকে রক্ষা করবেন। নিঃসন্দেহ আল্লাহ্ অবিশ্বাসী লোকদের পথপ্রদর্শন করেন না।

২. শেষ নবী হযরত মুহম্মদ-এর (তাঁর প্রতি সালাম) তাবলীগী কার্যক্রমের ধরণ সম্পর্কে আল্লাহর শেখানো বিবৃতি

সূরা জিন (৭২:৬৭)

قُلْ إِنَّمَآ أَدْعُوا۟ رَ‌بِّى وَلَآ أُشْرِ‌كُ بِهِۦٓ أَحَدًا ﴿٢٠﴾ قُلْ إِنِّى لَآ أَمْلِكُ لَكُمْ ضَرًّ‌ۭا وَلَا رَ‌شَدًا ﴿٢١﴾ قُلْ إِنِّى لَن يُجِيرَ‌نِى مِنَ ٱللَّهِ أَحَدٌ وَلَنْ أَجِدَ مِن دُونِهِۦ مُلْتَحَدًا ﴿٢٢﴾ إِلَّا بَلَـٰغًا مِّنَ ٱللَّهِ وَرِ‌سَـٰلَـٰتِهِۦ ۚ وَمَن يَعْصِ ٱللَّهَ وَرَ‌سُولَهُۥ فَإِنَّ لَهُۥ نَارَ‌ جَهَنَّمَ خَـٰلِدِينَ فِيهَآ أَبَدًا ﴿٢٣﴾

বলঃ আমি তো আমার পালনকর্তাকেই ডাকি এবং তাঁর সাথে কাউকে শরীক করি না। বলঃ আমি তোমাদের ক্ষতি সাধন করার ও সুপথে আনয়ন করার মালিক নই। বলঃ আল্লাহ তা’আলার কবল থেকে আমাকে কেউ রক্ষা করতে পারবে না এবং তিনি ব্যতীত আমি কোন আশ্রয়স্থল পাব না কিন্তু আল্লাহ তা’আলার বাণী পৌছানো ও তাঁর পয়গাম প্রচার করাই আমার কাজ। যে আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে অমান্য করে, তার জন্যে রয়েছে জাহান্নামের অগ্নি। তথায় তারা চিরকাল থাকবে।

৩. শেষ নবী হযরত মুহম্মদ (তাঁর প্রতি সালাম) আল্লাহর নায়িলকৃত বিষয়ের তাবলীগ না করে যদি মনগড়া বিষয় রচনা করতেন তাহলে আল্লাহ তাঁর সাথে কী আচরন করতেন সে সম্পর্কে ভয়াবহতম হুশিয়ারী

সূরা হাক্কা (৬৯:৩৮-৫২)

فَلَآ أُقْسِمُ بِمَا تُبْصِرُ‌ونَ ﴿٣٨﴾ وَمَا لَا تُبْصِرُ‌ونَ ﴿٣٩﴾ إِنَّهُۥ لَقَوْلُ رَ‌سُولٍ كَرِ‌يمٍ ﴿٤٠﴾ وَمَا هُوَ بِقَوْلِ شَاعِرٍ‌ۢ ۚ قَلِيلًا مَّا تُؤْمِنُونَ ﴿٤١﴾ وَلَا بِقَوْلِ كَاهِنٍ ۚ قَلِيلًا مَّا تَذَكَّرُ‌ونَ ﴿٤٢﴾ تَنزِيلٌ مِّن رَّ‌بِّ ٱلْعَـٰلَمِينَ ﴿٤٣﴾ وَلَوْ تَقَوَّلَ عَلَيْنَا بَعْضَ ٱلْأَقَاوِيلِ ﴿٤٤﴾ لَأَخَذْنَا مِنْهُ بِٱلْيَمِينِ ﴿٤٥﴾ ثُمَّ لَقَطَعْنَا مِنْهُ ٱلْوَتِينَ ﴿٤٦﴾ فَمَا مِنكُم مِّنْ أَحَدٍ عَنْهُ حَـٰجِزِينَ ﴿٤٧﴾ وَإِنَّهُۥ لَتَذْكِرَ‌ةٌ لِّلْمُتَّقِينَ ﴿٤٨﴾ وَإِنَّا لَنَعْلَمُ أَنَّ مِنكُم مُّكَذِّبِينَ ﴿٤٩﴾ وَإِنَّهُۥ لَحَسْرَ‌ةٌ عَلَى ٱلْكَـٰفِرِ‌ينَ ﴿٥٠﴾ وَإِنَّهُۥ لَحَقُّ ٱلْيَقِينِ ﴿٥١﴾ فَسَبِّحْ بِٱسْمِ رَ‌بِّكَ ٱلْعَظِيمِ ﴿٥٢﴾

তোমরা যা দেখ, আমি তার শপথ করছি। এবং যা তোমরা দেখ না, তার- নিশ্চয়ই এই কোরআন একজন সম্মানিত রসূলের আনীত। এবং এটা কোন কবির কালাম নয়; তোমরা কমই বিশ্বাস কর। এবং এটা কোন অতীন্দ্রিয়বাদীর কথা নয়; তোমরা কমই অনুধাবন কর। এটা বিশ্বপালনকর্তার কাছ থেকে অবতীর্ণ। সে যদি আমার নামে কোন কথা রচনা করত, তবে আমি তার দক্ষিণ হস্ত ধরে ফেলতাম, অতঃপর কেটে দিতাম তার গ্রীবা। তোমাদের কেউ তাকে রক্ষা করতে পারতে না। এটা খোদাভীরুদের জন্যে অবশ্যই একটি উপদেশ। আমি জানি যে, তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ মিথ্যারোপ করবে (কুরআন ব্যতীত মনগড়া কথা প্রচার করা)। নিশ্চয় এটা কাফেরদের জন্যে অনুতাপের কারণ। নিশ্চয় এটা নিশ্চিত সত্য। অতএব, তুমি তোমার মহান পালনকর্তার নামের পবিত্রতা বর্ননা করুন।

ঈমানের মেহনত

ঈমান কী এবং কীভাবে আসে

“আমি যাদেরকে গ্রন্থ দান করেছি, যারা তা যথাযথভাবে পাঠ করে (হাক্কা তিলাওয়াতিহ), তারাই তৎপ্রতি বিশ্বাস করে। আর যারা তা অবিশ্বাস করে, তারাই হবে ক্ষতিগ্রস্ত।“- সূরা বাক্বারাহ (২:১২১)। “তোমরা বল, আমরা ঈমান এনেছি আল্লাহর উপর এবং যা অবতীর্ণ হয়েছে আমাদের প্রতি এবং যা অবতীর্ণ হয়েছে ইব্রাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকুব এবং তদীয় বংশধরের প্রতি এবং মূসা, ঈসা, অন্যান্য নবীকে পালনকর্তার পক্ষ থেকে যা দান করা হয়েছে, তৎসমুদয়ের উপর। আমরা তাদের মধ্যে পার্থক্য করি না। আর আমরা তো মুসলমান।“-সূরা বাক্বারাহ (২.১৩৬) [তুলনীয়: ৩.৮৫]

ঈমান কীভাবে মজবুত হয় বা বৃদ্ধি পায়

“যারা ঈমানদার, তারা এমন যে, যখন আল্লাহর নাম নেয়া হয় তখন ভীত হয়ে পড়ে তাদের অন্তর। আর যখন তাদের সামনে পাঠ করা হয় কালাম, তখন তাদের ঈমান বেড়ে যায় এবং তারা স্বীয় পরওয়ার দেগারের প্রতি ভরসা পোষণ করে।“- সূরা আনফাল (৮:২)

“আর যখন কোন সূরা অবতীর্ণ হয়, তখন তাদের কেউ কেউ বলে, এ সূরা তোমাদের মধ্যেকার ঈমান কতটা বৃদ্ধি করলো? অতএব যারা ঈমানদার, এ সূরা তাদের ঈমান বৃদ্ধি করেছে এবং তারা আনন্দিত হয়েছে। বস্তুতঃ যাদের অন্তরে ব্যাধি রয়েছে এটি তাদের কলুষের সাথে আরো কলুষ বৃদ্ধি করেছে এবং তারা কাফের অবস্থায়ই মৃত্যু বরণ করলো।“- সূরা তাওবা (৯:১২৪-১২৫) [আরও তুলনীয়ঃ ৩:১৭৩, ৩৩:২২, ৪৮:৪-৫, ৭৪:৩১ ইত্যাদি]।

একই ভাবে হেদায়েতও কীভাবে বৃদ্ধি পায় সে সংক্রান্ত অনেক আয়াত রয়েছে। “যারা সৎপথে চলে আল্লাহ তাদের পথপ্রাপ্তি বৃদ্ধি করেন এবং স্থায়ী সৎকর্মসমূহ তোমার পালনকর্তার কাছে সওয়াবের দিক দিয়ে শ্রেষ্ঠ এবং প্রতিদান হিসেবেও শ্রেষ্ঠ।“– সূরা মারইয়াম (১৯.৭৬) [আরও তুলনীয়ঃ ১৮:১৩, ৪৭:১৭ ইত্যাদি]

আল-কুরআনের এই জাজ্বল্যমান দিক-নির্দেশনা বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও আল্লাহর বাণীর চর্চা ও তার প্রচার-প্রচারণা ব্যতীত ‘আপত ইসলামী’ লেবাসে আচ্ছাদিত প্রচলিত ‘তাবলিগ জামাতের’ বিশ্বব্যাপী মনগড়া কথার বিপণন এক ভয়াবহ বিভ্রান্তি বৈ আর কিছুই নয়। অধিকাংশ মানুষই(কাসিরাম মিনান্নাস) কুরআনী আলোর অভাব হেতু এই জালে নিজেকে সরল মনে জড়িয়ে ধীরে ধীরে কুরআন-বিরুদ্ধ হয়ে উঠছে নিজের অজান্তেই। ‘আক্বল’ সম্পন্ন যারা আছেন তাদের উদ্দেশ্যে আল্লাহ তা’য়ালা নানাভাবে নাযিলকৃত বানী নিয়ে ভেবে দেখতে আহবান জানিয়েছেন। আবার অধিকাংশ মানুষই যে ‘বে-আক্বল(নির্বোধ)’ তাও জানিয়ে দিয়েছেন।

“আর নিঃসন্দেহে বহু মানুষ আমাদের আয়াত থেকে উদাসীন।”-(وَإِنَّ كَثِيرًا مِنَ النَّاسِ عَنْ آَيَاتِنَا لَغَافِلُونَ)-(১০:৯২)। “বরং তাদের অধিকাংশই আক্বল রাখে না।-২৯:৬৩ (بَلْ أَكْثَرُهُمْ لَا يَعْقِلُونَ)”, “কিন্তু তাদের অধিকাংশই মুর্খ(জাহেল)”(৬:১১১)-এ জাতীয় বিবৃতি কুরআনে ভুরিভুরি [আরও ৫:১০৩, ৪৯:৪]।

দ্বীন ও আখিরাতের কামিয়াবী অর্জন করতে, আল্লাহর হুকুম মানতে আগে ভালভাবে জানতে হবে কী সেই হুকুম। অনুসরনের ক্ষেত্রে তাই ‘আমীর’, ‘ওলামায়ে কেরাম’ বা ‘মুরব্বী’ নয়, কুরআনকেই ইঙ্গিত করা হয়েছেঃ “এটি এমন একটি গ্রন্থ, যা আমি অবতীর্ণ করেছি, খুব মঙ্গলময়, অতএব, এর অনুসরণ কর এবং ভয় কর-যাতে তোমরা করুণাপ্রাপ্ত হও।“– সূরা আন’আম (৬:১৫৫)

বিষয়: বিবিধ

১০৩২ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

242920
০৮ জুলাই ২০১৪ বিকাল ০৫:৩৯
নীল জোছনা লিখেছেন : Rose Rose Rose
০৮ জুলাই ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৩০
188661
মুহাম্মদ_২ লিখেছেন : আমার ব্লগে স্বাগতম।
242941
০৮ জুলাই ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:২৯
মুহাম্মদ_২ লিখেছেন : আমার ব্লগে স্বাগতম।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File