বিশ্বময় বাবা আদম ও মা হাওয়ার নির্যাতিত, শোষিত ও অত্যাচারিত নর, নারী, যুবক, কিশোর ও শিশুরা - তোমাদের চূড়ান্ত বিজয় ও মুক্তির সুসংবাদ।

লিখেছেন লিখেছেন মুহাম্মদ_২ ২০ এপ্রিল, ২০১৪, ১১:৩৯:৪৮ সকাল

বিশ্বের স্রষ্টা প্রতিপালক, শয়তানের খন্ডিত জাতিসত্তামূলক সকল বৈষম্য বিভক্তির সীমা ও সীমান্ত মুছে এক জাতি ও এক মানব সমাজ গড়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

আদম সন্তান নর-নারীর মধ্যে কোনো বৈষম্য নেই। কিন্তু বৈশিষ্ট অবশ্যই আছে।

শয়তানের জারজ সন্তানেরা নারী-পুরুষের বৈশিষ্ট মানেনা।এরা বিশ্বে জাতি-গোষ্ঠির নামে সন্ত্রাস সৃষ্টি করে ধরার স্বর্গকে নরকে রূপান্তরিত করেছে।

নারী-পুরুষের স্বেচ্ছাচারী যৌনাচার দিয়ে এরা এইড্স্, এইচ,আই,ভির ঘাতক মহামারী সৃষ্টি করে মানবজাতিকে গ্রাস করতে দৈত্য-দানবের রূপ ধারণ করেছে।

ঘর ও সংসার ভাঙ্গা নারীদের পেছনে কুকুরের মতো ধাবিত পুরুষরা এ ধ্বংস যজ্ঞের মাতা-পিতা।

এখনো এ বেশ্যা নারী ও নরদের সংখ্যা সুশীলদের তুলনায় নগন্য। কিন্তু এরা সরকার ও প্রচার মাধ্যম প্রায় দখল করে নিয়েছে। তা সত্বেও এদের স্বর্গীয় পারিবারিক জীবন নেই বলে এরা প্রায় ভাসমান বেশ্যা।

বাংলাদেশের সংসদ ভবনের ভেতরে বাইরে, উত্তর দক্ষিন প্লাজা, চন্দ্রিমা উদ্যান, রমনা পার্ক ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ছাড়াও নব্য প্রপার্টি ডেভলপারদের নির্মিত, ধানমন্ডি, গুলশান,বনানী,বারিধারা ও ডিওএইচএস্ এবং উত্তরার বহুতল ভবন প্লাজাগুলো বাংলাদেশের দেহে ক্যান্সার। একে এ মুহুর্তে নির্মূল করতে হবে।ইতমধ্যেই প্রমানিত হয়েছে যে, দেশের দূর্নীতিপরায়ণ শাসক ও আমলারা জাতীয় সম্পদের ৩৬ হাযার কোটি টাকা প্লাজাগুলোতে ফ্ল্যাট নির্মাণে বাৎসরিক বিনিয়োগ করছে।

বিলাস বহুল বাড়ীও ফ্ল্যাট ভাড়া হলে তাতে দেহ ভাড়া হবেই। দেহ ভাড়া নারী ও নরকে বেশ্যা বানায়। বাড়ী ভাড়া বাড়ীকে বেশ্যালয়ে রূপান্তরিত করে।“হোটেল ব্রোথেল” এর তা থেকে জন্ম।

“বাড়ী বাসের জন্য”,“জমি চাষের জন্য”। বাড়ী কখনো ভাড়ার জন্য নয়। জমিও জমিদারী, জোতদারীর নিমিত্ত¡ নয়।জমি যে চাষ করবে, তার। বাড়ী যে বাস করবে, তার। দেহ ভাড়া নাই, বাড়ী ভাড়া নাই ও জমি ভাড়া নাই।

“আল আরদু লিল­াহি, ওয়া লিমান আহ্ইয়াহা”। জমি আল­াহ্র ও যে চাষ করবে, তার। “আল বাইতু লিসাকিনিহি”।

বাড়ী বসবাসকারীদের জন্য। ভাড়ার জন্য নয়।

“আল্ মান্যিলু ইয়াখ্দিমুহু আহলুহু”। বাড়ীর কাজ বাড়ীর লোকেরা করবে। চাকর-বাকর, ঝি-বুয়ারা করবেনা। অর্থ পুঁজি ভাড়া হবেনা।পুঁজি ভাড়াই সূদ। পুঁজি ভাড়া দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও সকল শোষণের মা।সাধারণ ব্যাংক ব্যবসায়ীরা আপন মায়ের সাথে ব্যভিচারী । ইসলামের নামে ব্যাংক ব্যবসায়ীরা কাবা ঘরের ছাদে মায়ের সাথে ব্যভিচারকারী। সঞ্চয়পত্র সহ প্রাইজ বন্ড ও ব্যাংকে অর্থ রেখে তার সূদ খায়, সূদের লেনদেন করে, তারা ন্যুন ৩৬টি ব্যভিচারে লিপ্ত।(রাসূল সঃ মাসনাদে আহমাদ,খন্ড-৫,পৃষ্ঠা-২২৫)

দেশে বেতনভূক সরকার থাকবেনা, যেমন পরিবারে বেতনভূক পিতা-মাতা ও স্বামী-স্ত্রী হয়না। হলেই সবাই বেশ্যা হয়ে যায়।

মূলধণের জাকাত ও লভ্যাংশের এক পঞ্চমাংশ ব্যতীত কোনো কর ও ট্যাক্স থাকবেনা। তবেই সম্পদের সুসম বন্টন হয়ে দারিদ্র্য বিমোচন হবে।

বিশ্বের শোষিত নর-নারী, যুবক কিশোররা, তোমরা স্রষ্টার কোলে তাঁর বিধানে প্রত্যাবর্তন করো। অচিরেই বিশ্ব শোষণের টুইন টাওয়ার যেভাবে ধ্বংস হয়েছে, ঠিক সেভাবেই বিশ্ব সন্ত্রাসের জমজ ভাই বুশ-বিন লাদেনের চক্রের পতন হবে।

আহবানে:ইমামুদ্দীন মুহাম্মাদ তোয়াহা বিন হাবীব।

বিষয়: বিবিধ

৩০৮২ বার পঠিত, ২১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

210573
২০ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ০১:৩৮
নূর আল আমিন লিখেছেন : ওরা মানুষ নয়
210598
২০ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ০২:১৫
শিশির ভেজা ভোর লিখেছেন : পৃথিবীতে সবাই সমান।
210870
২০ এপ্রিল ২০১৪ রাত ০৯:২০
সঠিক ইসলাম লিখেছেন : আপনার বইটা এখনো পেলাম না।
211449
২১ এপ্রিল ২০১৪ রাত ১১:২৬
সঠিক ইসলাম লিখেছেন : আপনার বইটির ৩৫ পৃষ্ঠা পর্যন্ত পড়লাম। আপনি যেভাবে খোলাফায় রাশেদীন থেকে শুরু করে অধিকাংশ সাহাবাগণকে মুনাফিক-মুশরিক আখ্যায়িত করছেন, এ সকল ইতিহাসের ভিত্তি কি ? রেফারেন্স ছাড়া এ সকল গাজাখুরী গল্প দিয়েই কি বিশ্ব জয় করে ফেলবেন ? পরিশিষ্টে কিছু কিতাবের নাম দিয়েই দায়িত্ব খালাস। আপনার প্রতিটি তথ্যের রেফারেন্স দিয়ে লিখতে হবে, নচেত এ বই কেউ ই গ্রহণ করবে না।
২২ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ০৭:৪৭
159951
মুহাম্মদ_২ লিখেছেন : সঠিক ইসলাম সালাম নেবেন।প্রতিটি তথ্যের রেফারেন্স উপরোক্ত মূল বই গুলোতে দাগানো অবস্থায় আমার কাছে আছে। আপনি চাইলে দেখাতে পারি ।
211595
২২ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ০৭:৫৬
মুহাম্মদ_২ লিখেছেন : পরিশিষ্টে কিছু কিতাবের নাম দিয়েই দায়িত্ব খালাস নয়। সবগুলো মূল কিতাব মক্কায় থাকাকালীন(১৯৭২-১৯৮১ সালে প্রায় দশ লক্ষ টাকা মূল্যমানের, তৎকালীন) কিনে নিয়ে এসেছি এবং পড়ে মার্ক করে রেখেছি।
211887
২২ এপ্রিল ২০১৪ সন্ধ্যা ০৭:২৮
সঠিক ইসলাম লিখেছেন : আপনার বইটি পুরোটা পড়ে মন্তব্য করব। কিন্তু আমাকে এটি বলেন যে, মুয়াবিয়া (রা.) সহ আপনি কাতিবে ওহীদেরকে নিয়ে যেরুপ কালারিং করার চেষ্টা করেছেন তাতে কুরআনের সত্যতা কতটুকুইবা অবশিষ্ট থাকে। যারা কুরআন-হাদীস লিপিবদ্ধ করেছেন তারাই যদি পক্ষপাতের দোষে দুষি হন তবে তাদের লিখিত কুরআন-হাদীসের আর কোন ভিত্তি থাকে কি ? আপনি কিছু হাদীসে বিশ্বাস করেন আবার কিছু হাদীসে বিশ্বাস করেন না, আপনার বিশ্বাস অবিশ্বাসের মাপকাঠি কি ? কোন উসুল দিয়ে আপনি হাদীস এর সত্য মিথ্যা যাচাই করেন ?

আর রেফারেন্স আপনার নিজের কাছে থাকলে কি আপনার বই এর গ্রহণযোগ্যতা পাবে নাকি বইতেই রেফারেন্স উল্লেখ করতে হবে ? আপনার বিদঘুটে তথ্যগুলো কোন কিতাবের কোন পৃষ্ঠায় আছে ডিটেইলস রেফারেন্স সহ বইটিকে পরিমার্জন করার অনুরোধ করছি। আগে আপনার বইটি পড়ে নেই, দেন বাকি মন্তব্য করব।
211918
২২ এপ্রিল ২০১৪ রাত ০৮:৪৫
মুহাম্মদ_২ লিখেছেন : জ্বি ভাই, আামি আশা করি বইটি পুরোটা পড়েই মন্তব্য করবেন। যে হাদীস টি কুরআনের সাথে মিল তা গ্রহণ করি আর যেটি কুরআনের স্পষ্ট বিপরীত তা গ্রহন করি না। আমার দৃঢ় বিশ্বাস আপনি বই টি আ্দ্যোপান্ত পড়লে প্রশ্ন কমে যাবে। আর একটি কথা আপনি কি আল ইমামাহ ওয়াস সিয়াসাহ নামক বইটি পড়েছেন? এই একটি বইতেই আপনি অনেক তথ্য পাবেন।
211998
২২ এপ্রিল ২০১৪ রাত ১০:৫২
সঠিক ইসলাম লিখেছেন : না ভাই, এ গাজাখোরী বই পড়া সম্ভব নয়। আপনি স্পষ্ট করে বলুন আবু বকর (রা.), ওমর (রা.), ও তাদের কন্যাদয় আয়েশা ও হাফসা (রা.) সম্পর্কে আপনার মতামতটা স্পষ্ট করে বলুন।
212002
২২ এপ্রিল ২০১৪ রাত ১০:৫৪
সঠিক ইসলাম লিখেছেন : তাদের ব্যাপারে আপনার যে নেগেটিভ অভিমত দেখলাম, তাতে এই বই পড়া সম্ভব নয়। আপনি আগে রেফারেন্স দেন, কোথায় আপনি তাদের সম্পর্কে এ দু:সাহসিক অপবাদ পেলেন ?
১০
212005
২২ এপ্রিল ২০১৪ রাত ১০:৫৫
সঠিক ইসলাম লিখেছেন : যে আয়েশা (রা.) এর প্রশংসায় পবিত্র কুরআনে দশটি আয়াত অবতীর্ণ হয়েছে আপনি সে আয়েশা (রা.) কে বলছেন ফেরাউনের স্ত্রীর মত। আপনি তো দেখছি আব্দুল্লাহ ইবনে উবাইকেও ফেল করে দিলেন !
২৩ এপ্রিল ২০১৪ রাত ০৩:১২
160378
সঠিক ইসলাম লিখেছেন : টাইপো : লূত আ. এর স্ত্রীর মত*
১১
212007
২২ এপ্রিল ২০১৪ রাত ১০:৫৭
সঠিক ইসলাম লিখেছেন : যাদের মাধ্যমে পবিত্র কুরআন আমাদের নিকট পৌছিয়েছে তাদেরকে দোষী করে আপনি মূলত পবিত্র কুরআনের সত্যতাকেই চ্যালেঞ্জ করছেন, নাস্তিকরাও এত ভয়ানক নয়।
১২
212008
২২ এপ্রিল ২০১৪ রাত ১০:৫৯
সঠিক ইসলাম লিখেছেন : আপনি রেফারেন্স ছাড়া আষাঢ়ে গল্প ফাদার তালে আছেন। পারলে রেফারেন্স দিয়ে ব্লগ বা বই লিখুন।
১৩
212077
২৩ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ০৬:২৬
মুহাম্মদ_২ লিখেছেন : আবু বকর (রা.), ওমর (রা.), ও তাদের কন্যাদয় আয়েশা ও হাফসা (রা.) সম্পর্কে আপনি সুরা হুজরাত ও সুরা তাহরীম যথাক্রমে ৪৯ ও ৬৬ নম্বর সুরা সবকটি তাফসীরসহ পড়লেই উপরোক্ত তথ্যগুলো পেয়ে যাবেন।
১৪
212078
২৩ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ০৬:২৯
মুহাম্মদ_২ লিখেছেন : এবার আমরা সূরা হুজুরাতের শিক্ষায় যাবো। বোখারী মুসলিম থেকে আরম্ভ করে সকল হাদীস ও তাফ্সীর গ্রন্থে একবাক্যে উল্লেখ রয়েছে যে, এ সূরাটি আবু বকর ও উমরের অশোভন আচরণের বিরুদ্ধে তাদের সংযত করার জন্য অবতীর্ণ হয়েছে। ঘটনা সমূহ এ ভাবে হাদীস ও তাফসীরে বর্ণনা করা হয়। ইব্ন্ কাসীর, তাবারী, শাওকানী ও কুরতবী এবং মাদীনা মুনাওয়ারা থেকে অতি সম্প্রতি প্রকাশিত আবু বকর জাবির আল জাযাইরী রচিত আইসারুত্ তাফ্াসীর একযোগে বর্ণনা করেছে, যে সুরা হুজুরাত আবু বকর ও উমর সম্পর্কে অবতীর্ণ হয়েছে। আমরা প্রথমে সূরা হুজুরাত শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পাঠ করে তারপর সূরা মুহাম্মাদের মতো বিষয় ভিত্তিক তার আলোচনা ও পর্যালোচনা করবো। এ সূরায় মোট আয়াত ১৮টি।

সূরা হুজুরাত (১) হে ঈমানদাররা, তোমরা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের সামনে বাড়বে না। আল্লাহ্কে ভয় করো। আল্লাহ সব শোনেন সব জানেন। (২) হে ঈমানদাররা, তোমরা রাসূলের স্বরের উর্ধে তোমাদের স্বরকে উচু করবেনা। তোমাদের নিজেদের মাঝে যেভাবে উচ্চস্বরে কথা বলে থাকো, রাসূলের সাথে সে ভাবে কথা বলবেনা। তাতে তোমাদের অজান্তেই তোমাদের সকল আমল ঝরে যাবে। (৩) আল্লাহ্র রাসূলদের সামনে যারা নিচু স্বরে কথা বলে, তাদের অন্তর আল্লাহ্র নিকট তাক্বওয়ার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও মহাপুরস্কার। (৪) যারা তোমাকে ঘরের বাইর হতে ডাকে, তাদের অধিকাংশই নির্বোধ। (৫) তুমি ঘর থেকে বের হওয়া পর্যন্ত যদি ওরা ধৈর্য্য ধারণ করতো, তাহলে তা তাদের জন্য কল্যাণকর হতো। আল্লাহ্ পরম ক্ষমাশীল ও দয়ালু। (৬) হে ঈমানদাররা, কখনো কোনো মন্দ লোক যদি তোমাদের নিকট কোনো সংবাদ নিয়ে আসে, তাহলে তা ভালো ভাবে যাচাই করে নিবে। পাছে তার কথা মতো কোনো সম্প্রদায়ের ক্ষতি সাধন করে কৃতকর্মে লজ্জিত হতে না হয়। (৭) তোমরা সর্বদা মনে রাখবে যে, আল্লাহ্র রাসূল তোমাদের মাঝে বিদ্যমান। অধিকাংশ ব্যাপারে রাসূল তোমাদের কথা মানলে তোমাদেরই ক্ষতি হবে। কিন্তু আল্লাহ্ তোমাদের অন্তরের ঈমানকে পছন্দনীয় করে তাতে তোমাদের অন্তরকে অলঙ্কৃত দেখতে চান। এবং তিনি তোমাদের অন্তরে ঈমানহীনতা, পাপাচার ও অবাধ্যতাকে ঘৃনাই করেছেন। এ গুণাবলীর লোকেরাই সঠিক পথপ্রাপ্ত। (৮) এ ভাগ্য আল্লাহ্র দান ও অনুগ্রহ। আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ বিচারক। (৯) কখনো দু’পক্ষ মু’মিন বিবাদে লিপ্ত হলে তাদের মাঝে সমঝোতার চেষ্টা চালাও। তাতে যদি এক পক্ষ অপর পক্ষের ন্যায়ের সীমা লঙ্ঘন করে, তাহলে আল্লাহ্ নির্দেশ পালনে রাজী হওয়া পর্যন্ত সীমা লঙ্ঘনকারীদের বিরূদ্ধে অস্ত্র ধারণ করো। অতপর যদি তারা ন্যায়ের দিকে ঝুঁকে, তাহলে ন্যায়নীতি অনুযায়ী তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দিও। আল্লাহ্ ন্যায় বিচারকদের ভালোবাসেন।
(১০) জেনে রাখো, মুমিনরা পরস্পর শুধু ভাই। তাই সর্বদা এ ভ্রাতৃত্বের বাঁধনকে সুদৃঢ় করতে সচেষ্ট থাকবে। যদি রহমতে বাস করতে চাও, সর্বদা আল্লাহকে ভয় করবে। (১১) হে ঈমানদাররা, তোমরা তোমাদের কোনো পুরুষ স¤প্রদায় অপর পুরুষ সম্প্রদায়কে হেয় করবে না। হতে পারে ওরা এদের চেয়ে উত্তম। তদ্রূপ কোনো নারী স¤প্রদায়ও অপর কোনো নারী স¤প্রদায়কে তুচ্ছ করবে না। হতে পারে তুচ্ছকারিনীদের চেয়ে তুচ্ছকৃতরা উত্তম। তোমরা একে অপরের প্রতি কটাক্ষ করবেনা। তোমরা পরস্পরকে মন্দ উপাধিতে ডাকবে না। ঈমানের পর এ সমস্ত নীচতা ঘৃণ্য। এ স্বভাব থেকে যারা তওবা করবেনা, তারাই যালিম। (১২) হে ঈমানদাররা, অধিকাংশ বাজে চিন্তাকে পরিহার করে চলবে। এর মধ্যে কিছু অনুমান পাপ। তোমরা গুপ্তচরবৃত্তি করবেনা। করো পশ্চাতে কারো প্রতি মিথ্যারোপ করবেনা। কেউ যদি তার মৃত ভাইয়ের মাংস খায়, তাকে যেমন অপসন্দ করো, এ কাজটি তদরূপ অপছন্দীয়। আল্লাহ্কে ভয় করে এসব থেকে তওবা করো। দেখবে আল্লাহ্ পরম দয়ালু, তওবা গ্রহণকারী। (১৩) হে মানবজাতি, আমি তোমাদের সবাইকে এক নর ও নারী থেকে সৃষ্টি করেছি। তারপর শুধু পরিচয় বহনার্থে তোমাদের বিভিন্ন গোত্র ও পরিবারে বিভক্ত করেছি। স্মরণ রাখবে, তোমাদের মধ্যে যে সব চেয়ে বেশী আল্লাহকে ভয় করে, সে-ই তোমাদের মাঝে সর্বোত্তম। অবশ্যই আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ খবর রাখেন। (১৪) আরবরা বলছে “আমরা ঈমান এনেছি”। হে রাসূল, তুমি ওদের বলে দাও, “তোমরা আদতে ঈমান আননি। বরং তোমরা বল, আমারা আত্মসমর্পন করেছি” কারণ এখনো তোমাদের অন্তরে ঈমান প্রবেশ করেনি। ঈমান তখনই প্রবেশ করবে, যখন তোমরা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করবে। তখন তোমাদের আমলের কোনো ঘাটতি হবেনা। অবশ্যই আল্লাহ্ পরমদয়ালু ক্ষমাশীল।” (১৫) একমাত্র খাঁটি ঈমানদার ওরাই, যারা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের উপর ঈমান স্থাপনের পর আর কোনো প্রকার দ্বিধা দ্বন্দে ভুগেনা, অতঃপর স্বীয় সকল স¤পদ ও প্রাণ দিয়ে আল্লাহ্র পথে জিহাদ করে, এরাই ঈমানের দাবীতে সত্যবাদী। (১৬) এর বাইরে যারা ঈমানের দাবী করে, তাদের অসার দাবী সম্পর্কে রাসূল তুমি বলে দাও, “তোমরা কি গায়ের জোরে আল্লাহ্কে তোমাদের ধর্ম শিখাতে চাও?” আল্লাহ্তো আকাশ পাতালের সকলের খুঁটি নাটি সম্পর্কে জানেন। আল্লাহ্ সর্ব বিষয়ে সম্যক অবহিত। (১৭) হে রাসূল, আরবরা কি বলতে চায় যে, তারা ইসলাম গ্রহণ করে তোমাকে কৃতার্থ করেছে? কখ্খনো নয়। রাসূল, বরং তুমি ওদের বলে দাও, “তোমরা ঈমান এনে আমাকে ধন্য করেছো ভেবো না” বরং তোমরা ঈমানের দাবীতে সত্য হলে তোমাদেরই বলতে হবে, “আল্লাহ্ই আমাদের ঈমানের পথ প্রদর্শন করে ধন্য করেছেন”। (১৮) পরিশেষে হে ঈমানদাররা, তোমরা জেনে রাখো, আল্লাহ্ আকাশ পাতালের সকল গোপন জানেন। তোমরা যে যেখানে যে ক্ষণে যা করো, তিনি তা দূরবিক্ষণ করেন। “হুজুরাত বা পর্র্দার আড়ালের” এই সূরাটি ঈমানদার মাত্রের মনের সকল পর্দা দূর করে দেয়। আর দুর্বল ঈমানদার ও নাম সর্বস্ব ঈমানদারদের মনের পর্দা ক্বিয়ামতের পূর্বে দূর হবার নয়। সূরা মুহাম্মাদের ২৪নং আয়াতে বর্ণিত সকল তালা ওদের অন্তরে ঝুলছে। আল্লাহ্র ক্বোরআনে যাদের অন্তর খোলে, সে মু’মিন ভাইদের নিয়ে আমি সকল বর্ণিত দৃশ্যপটে বিচরণ করতে যাচ্ছি। আল্লাহ্ আমাদের অন্তর খুলে দিন। রাব্বিশ্রাহলী সাদ্রী ওয়া ইয়াস্সিরলী আম্রী। এ সূরার প্রারম্ভে মূখ্য ঘটনাকে কেন্দ্র করে আল্লাহ্ তাঁর রাসূল সঃ এর হিজরতের আট নয় বছর পর তাঁর বিদায়ের পূর্বক্ষণে তাঁর চার পার্শে¦ জমায়েত আরবদের ঈমানের সালতামামী ও হালখাতা প্রকাশ করেছেন। মতান্তরে মক্কা বিজয়ের পর বা বিদায় হজ্জের পর এ সূরা অবতীর্ণ হয়। (১) আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের আগে বাড়বেনা। (২) রাসূল সঃ এর কণ্ঠস্বরের উর্ধ্বে কন্ঠস্বর চড়াবেনা। (৩) তাঁর সামনে নীচু স্বরে আদবের সাথে কথা বলতে হবে। তা’ না করলে সকল আমল ফুস্। সে যেই হোক। আবু বকর, উমর, আমি বা তুমি। চৌদ্দশ বারো বছর আগের ঘটনা হোক। বা চৌদ্দশ বারো বছরের পর আজকের ঘটনা হোক । এ তিনটি ঘটনা আবু বকর ও উমরের দ্বারা ঘটেছে। এর একটিও যায়দ, বেলাল, আম্মার, সুহাইব, সালমান ও উসামাহরা ঘটায়নি। ইতিহাসের কোথাও একটি ঘটনাও দেখা যায়নি যে মস্তাদআফ্দের কেউ আল্লাহ্ ও রাসূলের আগে বেড়েছে। রাসূল সঃ এর সামনে গলা চড়িয়েছে বা তাঁর সাথে সামান্যতম বেয়াদবী করেছে! এরা কি ক্বোরেশী আবু বকরদের চেয়ে কম মেধা ও বুদ্ধি সম্পন্ন ছিলো? এ মুস্তাকবিরদের বাদ দিয়ে রাসূল সঃ কেনো মস্তাদআফ্দের যুদ্ধের সেনাপতি নিয়োগ করে আবু বকর ও উমরদের তাদের অধীনে সাধারণ সৈনিকরূপে যুদ্ধে পাঠাতেন? এসব কি আল্লাহ্র রাসূলের খেয়াল খুশিমতো ছিলো? না আল্লাহ্র হুকুম? রাসূল সঃ তো আল্লাহ্র হুকুম ব্যতীত স্বীয় খেয়াল খুশির বশবর্তী হয়ে কিছু করতেন না! এর সঠিক উত্তর বের করে ঈমান নবায়ন করে তারপর রাসূল সঃ এর আদর্শে বিশ্বে ইসলামের গণজাগরণের ডাক দিতে হবে। তা না হলেই ওঁতপাতা ইয়াহুদী, ব্রাহ্মণ, ক্বোরেশী, তুর্কী, মুঘল ও পাঠানদের প্রেতাত্মারা আন্দোলনকে পুনঃ ভিন্ন খাতে ও ভিন্ন পথে চালিত করবে। যেমনটি হযরত মূসা, ঈসা ও মুহাম্মাদ সঃ এর পর ইয়াহুদী, খৃষ্টান ও ক্বোরেশীরা করে বিশ্ব রহমতকে লা’নতের দিকে ঠেলে দিয়েছে। খাতামুন নাবিয়্যীন সঃ এর রিসালাতের সমাপনীর সময়। ক্বেয়ামত পর্যন্ত আর কোনো নবী রাসূল আসবেন না। তাই রিসালাতের শেষ শিক্ষা দেয়া হয়েছে এ সূরাতে। বদরের যুদ্ধের পর আবু বকর ও উমর আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল সঃ এর অগ্রগামী হয়ে যুদ্ধ বন্দিদের ব্যাপারে সংকট ও সমস্যার সৃষ্টি করে, যেমনটি সূরা মুহাম্মাদের পর্যালোচনায় বলা হয়েছে। এবার ইয়ামেন থেকে বনী তামীমের প্রতিনিধিদল মদীনায় রাসূল সঃ এর দরবারে ইসলাম গ্রহণ করে বায়আতের জন্য উপস্থিত হয়েছে। অন্যান্যদের সাথে আবু বকর ও উমরও দরবারে উপস্থিত। তদের কাজ ছিলো রাসূল সঃ কি করেন, তা’দেখা ও তা’ শিখা। বোখারী বর্ণনা করছে যে রাসূল সঃ এর দরবারের শিষ্টাচার বর্জন করে আবু বকর রাসূল সঃ কে বলে “কা’কা ইব্ন্ মা’বাদকে এদের আমীর নিযুক্ত করুন”। তা’দেখে উমর বলে উঠে, “না, আকরা ইব্ন্ হাবিসকে আমীর নিয়োগ করুন”। এরপর আর যায় কোথা? আবু বকর উমরকে বলে উঠে, তুমি আমার বিরুদ্ধাচারণ করছো। উমর আরেক হাত বেড়ে আবু বকরের উপর চড়াও হয়। এভাবে রাসূল সঃ এর দরবারে দু’ক্বোরেশী বাক বিতন্ডা আরম্ভ করলে সাত আসমানের উপর থেকে অহি নাযিল হয়ে এদের স্বরূপ উদঘাটিত হয়। তারপরও এরা শিক্ষা গ্রহন করেনি রাসূল সঃ এর সঙ্গে থেকে। এ যদি হয় নিকটবর্তিদের অবস্থা, তা’হলে বহিরাগত বেদুঈনদের ব্যবহার কি হতে পারে? এদের দু’কন্যা রাসূলের ঘরে। সে সুবাদে এরা সময় অসময় এসে রাসূল সঃ কে ঘরের বাহির থেকে ডাকাডাকি করতো। কুরতবী বর্ণনা করছে যে মা হাফসা ও আয়শা যখন রাসূলের মধুপান, যয়নাবের সাথে সময় কাটানো ও মারিয়া কিব্তিয়ার সাথে ঘনিষ্ঠতার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে, তখন আল্লাহ্র রাসূল সঃ অতীষ্ঠ হয়ে “ইলা” তালাক করে প্রায় একমাস কাল স্ত্রীদের থেকে পৃথক হয়ে আলাদা বাস আরম্ভ করেন। পরে যখন আল্লাহ্ তাঁর প্রিয় রাসূলকে স্ত্রীদের তালাকের অনুমতি দিয়ে অহী নাযিল করেন, তখন উমরের টনক নড়ে। কারণ, এ ঘটনার প্রথম ঘটক মা হাফসা, পরে সে মা আয়শাকে সহযোগী করে রাসূল সঃ এর গৃহ ত্যাগের পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। উমরের মেয়ের মাধ্যমে ঘটনাটির মূল উৎস উমর জানতো। বিচিত্র নয় যে এ ধরনের ঘটনার পেছনে এদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ইংগিত ও সমর্থনও থাকতো। কারণ তখন রাসূল সঃ এর জয়ের পালা। এ জয়ের ঢেউএ চড়ে গোত্রীয় প্রাধান্য বিস্তারে ভবিষ্যতের সম্ভাবনা উজ্জল করনার্থে রাসূল সঃ এর ঘরে কন্যাদের ব্যবহার মোটেও বিচিত্র নয়। বরং পরবর্তী ঘটনাবলী চোখে আঙ্গুল দিয়ে তাই প্রমাণ করে। তালাকের ইখতিয়ার সম্বলিত অহি নাযিলের খবর জানা জানি হয়ে গেলে উমর উদ্বিগ্ন হয়ে উঠে। দীর্ঘ একটি মাস তার কন্যা, আবু বকরের কন্যার সাথে মিলে রাসূল সঃকে ঘর ছাড়া করার ঘটনাটি কি চাট্টিখানী কথা? এতে তো আল্লাহর আরশ কেঁপে উঠেছে। উমর তড়িঘড়ি রাসূল সঃ এর বাসস্থানে এসে তাঁর খাদেম রাবাহ্কে বলে যে সে রাসূল সঃ এর সাক্ষাৎ প্রার্থী। রাবাহ রাসূল সঃকে খবর দিলে তিনি উমরকে অনুমতি দেননি প্রথম বারে। উমরের বর্ণিত রাওয়ায়েতেই প্রমাণ হয় যে সে ব্যাপারটি পূর্ব থেকেই জানতো। রাসূল সঃ যে “ইলা” করেছিলেন, তা’ গোটা মাদীনায় জানাজানি হয়ে গিয়েছিলো। তাই সে বুঝেছিলো তালাক হলে মা হাফসারই তালাক হবে প্রথম। তারপর হবে মা আয়শার। তাই দ্বিতীয় বারও প্রত্যাখ্যাত হওয়ায় তৃতীয় বার রাবাহকে ডাকাডাকি করে। তারপর রাসূল সঃ এর সামনে প্রবেশ করে। উমরের বর্ণনা মতেই জানা যায় যে, সে বিভিন্ন প্রসঙ্গ তুলে বিমর্ষ রাসূলকে হাসিয়ে তালাক থেকে তার মেয়েকে রক্ষা করার প্রয়াস পায়। এ ব্যাপারে সূরা তাহরীমের আলোচনায় আরো তথ্য সংযোগ করা হবে। উমরের মতো ব্যক্তিরাই যদি রাসূলকে হুজরার বাইর থেকে ডেকে ব্যতিব্যস্ত করে তোলে, তাহলে নির্বোধ মরুবাসীরা রাসূল সঃকে ডাকাডাকি করে কতই না পীড়া দিতো? এ অশোভন পীড়ার মূলেও ক্বোরেশী বুজুর্গরা? কই বেলাল, আম্মাররা তো কখনো এ কাজ করেনি! এ আচরণ ও স্বভাবের ফলে আমাদের কথিত বুজুর্গ সাহাবীরা আল্লাহ্র তাক্বওয়ার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়নি। প্রমাণ ৩ নং আয়াত। পরবর্তীতেও এরা একই ভুলের পুনরাবৃত্তি করেছে দেখা যায়। মুহাদ্দিসদের পরিভাষায় আবু বকর ও উমরকে বোখারী মুসলিমে শাইখাইন অর্থাৎ দু’গুরু রূপে আখ্যায়িত করা হয়। এ ঘটনার পর মুহাদ্দিসদের বর্ণনা মতে উমর নাকি এমন মৃদুভাষী হয়ে গিয়েছিলো যে উমরের মুখের কাছে কান না নিলে উমরের কথা শুনা যেতো না। কিন্তু বোখারীর “কিতাবুল ইতিসাম বিল্ কিতাব ওয়াস সুন্নায়” বর্ণিত হাদিস তা’সন্দেহাতীত খন্ডন করে দেয়। তাতে বর্ণিত আছে যে, রাসূল সঃ তার মৃত্যুশয্যায় তার ক্বোরেশী সাহাবীদের হাবভাবে ইন্তেকালের পূর্বে খুব চিন্তিত হন। কারণ তারা উসামাহ্র নেতৃত্ব মেনে নিতে চাচ্ছিলো না। যেমনটি তার পূর্বে মুতার যুদ্ধে যায়দের নেতৃত্ব মেনে নিতে আপত্তি করেছিলো। উসামাহ্র নেতৃত্ব মেনে নিতে এবার আপত্তি করায় রাসূল সঃ স্পষ্ট করে বলে দিলেন, “তোমরা যে যে উসামাহ্র নেতৃত্বে যুদ্ধে যাবেনা, তাদের উপর আল্লাহ্র লা’নত”। (আল মিলাল্ ওয়ান্ নিহাল) এ পরিস্থিতিতে মৃত্যুর পূর্বক্ষণে আল্লাহ্র রাসূল সঃ বলেন, “একটুকরা কাগজ নিয়ে এসো, তাতে আমি আমার শেষ কথা লিখিয়ে দেই, যা’তে তোমরা আমার মৃত্যুর পর বিপথগামী না হও।” কতইনা দুঃখ এবং পরিতাপের বিষয় যে, হতভাগারা সে মুহুর্তেও রাসূল সঃ এর নির্দেশ মানলোনা। কাগজ না দিয়ে তারা বাক বিতন্ডায় লিপ্ত হলো রাসূলের শয্যার পাশে। উমর বলে, কাগজ দিয়ে দরকার নেই। রাসূল মাথা ব্যথায় অস্থির। অপর রাওয়ায়েতে আছে, মৃত্যু যন্ত্রণায় প্রলাপ বকছেন। উমর নাকি এ-ও বলেছে যে রাসূল সঃ এর পর ক্বোরআনই যথেষ্ট। উমর কি রাসূল সঃ এর চেয়ে ক্বোরআন বেশী বুঝে ফেলেছিলো? তা না হলে সূরায়ে হুজুরাতে যা নিষেধ করা হয়েছিল, উমর তার পূনরাবৃত্তি কেনো ঘটালো, যে তাঁর মৃত্যুশয্যার পাশে উচ্চস্বরে এমন হট্টগোল বাধিয়ে ছিলো যে সে মুহুর্তে রাসূল সঃ উমরকে বলেছেন, “আমার পাশে বিতন্ডা করোনা, এখান থেকে বের হয়ে যাও?” উমর যদি ক্বোরআন এতো বুঝে ফেলে থাকে তা’হলে রাসূল সঃ এর ইন্তেকালের পর কিরূপে বলে যে রাসূল মারা যাননি? তিনি মূসা আঃ এর ন্যায় আল্লাহ্র কিতাব আনতে গিয়েছেন। তিনি আবার ফেরৎ আসবেন। যেমন মূসা আঃ এসেছিলেন। হযরত মূসা কি তার দেহ রেখে গিয়েছিলেন? রাসূল সঃ এর লাশ মুবারকতো উমরদের সামনে বিদ্যমান ছিলো! রাসূল কী কিতাব আনতে যাবেন? সে যাবত কি ক্বোরআন নাযিল হওয়া পূর্ণ হয়ে যায়নি? তাহলে কোন্ কিতাবের কথা বলে ছিলো যে, আমাদের জন্য আল্লাহ্র কিতাবই যথেষ্ট, কাগজ দেওয়ার প্রয়োজন নেই? উমরের এ কথাই কী বুঝায় যে, “যারা বলে যে রাসূল মৃত্যু বরণ করেছেন, তারা মুনাফিক?” আল্লাহ্, রাসূল ও ক্বোরআন সবই ভুল!? আবু বকর, উমর ও মুহাদ্দিসরা ঠিক, এতো হয় না। সাধু সাবধান! তা’না হলে সবকুল হারাবে। এবার যাওয়া যাক ৬নং আয়াতে। এতে বলা হয়েছে, “হে বিশ্বাসীরা, সাবধান! কোনো ভ্রষ্ট ব্যক্তি (ফাসিক) যদি কোনো কথা বলে তা বিশ্বাসের পূর্বে তার সত্য মিথ্যা ভালো করে যাচাই করে নিবে। তা না করলে তোমরা এমন ভুল করবে যে সে জন্য আজীবন অনুশোচনা করলেও তার ক্ষতিপূরণ হবে না।” কে এই ভ্রষ্ট ফাসিক্ব ব্যক্তিটি? এ লোকটিও এক ক্বোরেশী, উসমানের সতালো ভাই ওয়ালিদ ইব্ন্ উক্বা ইব্ন্ আবি মুয়ীত। এ লোকটির পিতা উকবা সেই ব্যক্তি যাকে বদরের যুদ্ধ থেকে ফেরৎ আসার পথে রাসূল পথিমধ্যে তার শিরোচ্ছেদ করে মরুভ‚মিতে ফেলে আসেন। এ লোকটি উসমানের মায়ের দ্বিতীয় স্বামী। মক্কায় এ কাফেরটি রাসূল সঃ কে এমন কষ্ট দেয় যে, যুদ্ধবন্দি হওয়ার পর তাকে ক্ষমা করা হয়নি আল্লাহ্র নির্দেশে। এ কেউটে সাপের বাচ্চাকে এনে উসমান রাসূল সঃ এর দরবারে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে। সাপের বাচ্চা কি কখনো কল্যাণকর হয়? হয়না। তারই প্রমাণ দেয় ওয়ালিদ। রাসূল সঃ মুসলিম গোত্র বনী মুস্তালিক থেকে বাইতুল মালের যাকাত আনতে তাকে পাঠান। সে ষড়যন্ত্রমূলক মধ্যপথ থেকে ফেরৎ এসে রাসূল সঃ কে মিথ্যা বলে যে, বনী মুস্তালিকরা তাকে যাকাত দেয়ার পরিবর্তে হত্যা করতে উদ্যত হয়েছে। ঈমান আনার পর যাকাত দানে অস্বীকৃতি জানানো অমার্জনীয় অপরাধ। তাই রাসূল সঃ আলীর নেতৃত্বে তাদের শাস্তি বিধানের জন্য সৈন্য বাহিনী প্রেরণ করেন। আলী গিয়ে দেখতে পায় যে, বনী মুস্তালিকের লোকেরা যাকাত একত্র করে রাসূলের দূতের আগমনের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষমান। আলী সে পরিস্থিতিতে সন্দেহে পড়ে রাসূল সঃ কে বিস্তারিত ঘটনা জানায়। তখন আল্লাহ্ অহি নাযিল করে বনী মুস্তালিকের সততার পক্ষে সাক্ষ্য দেন। অপরদিকে সাপের বাচ্চা ওয়ালিদ পালিয়ে গিয়ে মক্কায় রাসূল সঃ এর নামে মিথ্যা ও কুৎসা রটায়। রাসূল সঃ তার সম্পর্কে নির্দেশ জারী করেছিলেন যে ওকে যেখানেই পাবে, তার শিরোচ্ছেদ করবে। এমনকি কাবার গিলাফে ঝুলন্ত তওবারত পেলেও তাকে ক্ষমা করা যাবেনা। কারণ সে মুস্লিম উম্মার মধ্যে হত্যাযজ্ঞের ষড়যন্ত্রের পাপে পাপিষ্ঠ।” এ ঘটনার সাথে তথা কথিত সিহাহ্ সিত্তা ও তাফ্সীর এবং তারিখের কিতাবসমূহে আরেকটি লোকের নাম উল্লেখ রয়েছে। তার নাম আব্দুল্লাহ ইব্ন্ আবি সারাহ। এটিও উসমানের আরেক সতালো ভাই, ক্বোরেশী ও বনী উমাইয়া গোত্রভূক্ত। এটাকেও উসমান এনে নবী সঃ এর দরবারে অনুপ্রবেশ করিয়েছিলো। বলা হয়, রাসূল সঃ নাকি এ ইব্ন্ সারাহ্কে দিয়ে কখনো অহী লিপিবদ্ধ করিয়েছেন। এ লোকটিও রাসূল সঃ এর দরবারে প্রতারণামূলক কুকর্ম করে পালিয়ে যায়। মক্কায় গিয়ে সে প্রচার করে যে, সে অহী লিপিবদ্ধ করার সময় “আলীমুল হাকীমের” স্থানে “আযীযুন হাকীম” এবং আরো অনেক উল্টা পাল্টা লিখে ক্বোরআনকে বিকৃত করেছে। এ নরাধম আরো প্রচার করেছে যে সে নাকি বিকৃত করার পর তা রাসূল সঃ কে পুনঃ পড়িয়ে শুনালে নাকি রাসূল সঃ বলেছেন, “ঠিক আছে”। এতে সে মক্কাবাসী তার গুরুদের বুঝাতে চেয়েছে যে মুহাম্মাদ সঃ আসলে রাসূল ছিলেন না। তার নবুওত দাবী মিথ্যা। এ আব্দুলাহ ইব্ন্ সারাহ ক্বোরআনে বর্ণিত অপর “ফাসিক্ব”। রাসূল সঃ একেও হত্যা করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। উসমান খলিফা হয়ে ইব্ন্ সারাহকে মিসরের সর্বময় ক্ষমতাধর গভর্ণর বানায় এবং ওয়ালিদ ইব্ন্ উক্বা ইব্ন্ আবি মুয়ীতকে গুরুত্বপূর্ণ ইরাকের শাসক নিয়োগ করে। ওয়ালিদ বাইতুল মালের অর্থে ইরাকে মদ্যপান ও নর্তকীদের আড্ডা জমাতো। কিন্তু একদিন মাতাল অবস্থায় ফজরের নামাজ তিন রাকাত পড়ালে তাতে মুক্তাদীরা আপত্তি করলে সে জানায়, “আপত্তির কী আছে, তোমরা আরো বেশী পড়তে চাইলে আসো, যতো রাকাত চাও পড়িয়ে দিচ্ছি”। তার এ আচরণের বিরুদ্ধে ইরাকবাসী মুস্লিমদের পক্ষ থেকে আব্দুল্লাহ ইব্ন্ মাস্উদ উসমানকে বিস্তারিত লিখে জানালে উসমান ইবনে মাসউদকে মদীনায় তলব করে মস্জিদে নববীর চত্ত¡রে মারওয়ানসহ তাকে শারীরিক ভাবে অত্যাচার করে। মা আইশা এর প্রতিবাদ করলে উসমান মা আয়শাকে নূহ্ ও ল‚তের স্ত্রীর সাথে তুলনার আয়াত পড়ে অপদস্থ করে। সেই শারীরিক অত্যাচারের কিছুদিন পর রাসূল সঃ এর প্রিয়তম সঙ্গী ইব্ন্ মাসউদ মৃত্যু বরণ করে। অপর দিকে ইব্ন্ সারার অত্যাচারে অতীষ্ঠ হয়ে মিসরবাসী প্রতিবাদের ঝড় তোলে।
এ হলো ক্বোরআনে বর্ণিত ফাসিক্বদের ক্রিয়া-কলাপ, যা রাসূল সঃ এর বিশ্ব রহমতের রিসালাতকে পরিবর্তন করে ক্বোরেশী, উমাইয়া ও আব্বাসী সাম্রাজ্যবাদে রূপান্তর করে বিশ্বমানবতার দ্বীনকে কলঙ্কিত করেছে। এখন ক্বোরআনে বর্ণিত রাসূল সঃ এর সুন্নায় পুনঃ প্রত্যাবর্তন না করলে বর্তমানে নামধারী মুসলমানদের আল্লাহ্ ধরাপৃষ্ঠ থেকে নির্মূল করে অন্য কোনো জাতিকে তাঁর দ্বীনের চ‚ড়ান্ত উত্থান ও বিজয়ের জন্য নিয়োগ করবেন। যার ইশারা তিনি সূরা মুহাম্মদের শেষ আয়াতে দিয়েছেন। সূরা মুহাম্মদের পর সূরা হুজুরাত দিয়ে সে পথের দিকদর্শন উপস্থাপন করা হচ্ছে। তাই অত্যন্ত মনোযোগ সহকারে পাঠকদের বইয়ের এ অধ্যায় পড়তে ও বুঝতে হবে। স‚রা হুজুরাতের নবম আয়াতের মর্মে মুমিনদের মধ্যে সৃষ্ট বিরোধ ভাইদের বিরোধের মতো মিটাতে হবে। ভ্রাতৃত্বে ফাটল ও ভাঙ্গন সৃষ্টির মাধ্যমে কখনো নয়। দশম আয়াতে তা আরো স্পষ্ট করে আল্লাহ বলেছেন, “হে মু’মিনরা সাবধান! তোমরা ঈমানদাররা শুধু পরস্পর ভাই। যদি রহমতে বাস করতে চাও, তা’হলে যে কোনো মূল্যে ভ্রাতৃত্বের বাঁধন দৃঢ় থেকে দৃঢ়তরো করার প্রচেষ্টায় থাকবে। এ পথে তাক্বওয়ার কোনো বিকল্প নেই।” ত্রয়োদশ আয়াতে আল্লাহ্ ইসলামী ভ্রাতৃত্বে ফাটল ও ভাঙ্গন সৃষ্টির কারণ সমূহ বলে দিয়েছেন। তা’হলো ঈমানদাররা কখনো সাম্প্রদায়িক উপহাস ও ঠাট্টা করবেনা। পুরুষও না নারীও না। কখনো ইবলিস শয়তান তার মানুষ সন্তানদের দ্বারা কোনো মু’মিন নর নারাীর মনে ঠাট্ট্রা উপহাসের উদ্রেক করা মাত্রই তাকে শয়তানের প্ররোচনা মনে করে ভাবতে হবে যে আমার যে ঈমানী ভাই বা বোন সম্পর্কে আমার অন্তরে যে তাচ্ছিল্য বা উপহাসের উদ্রেক হয়েছে, তাতো ঠিক নয়। হতে পারে আমদের অজান্তে তারা আমাদের চেয়ে আল্লাহ্র দরবারে ঈমান ও আমলে অগ্রগামী। তা হলে রোজ ক্বেয়ামতে আমার বা আমাদের পরিণাম কি হবে? আল্লাহ মনের গোপন অবস্থা সব জানেন। শয়তানের প্ররোচনা মানুষকে বর্ণ ও গোত্রবাদী বানিয়ে অভিশপ্ত করে। যেমনটি শয়তান নিজে বর্ণবাদী হয়ে চির অভিশপ্ত হয়েছে। তাই আল্লাহ্ ইবলিসকে “ফাসিক” বলেছেন। ঈমান আনার পর ফাসেকী হলো নিকৃষ্টতম পাপ। ঈমান আনার পর যারা তাদের অতীত গোত্র ও বর্ণবাদী ফাসেক্বী থেকে তওবা না করে, তাদের ঈমান অসার। মূলতঃ এরা যালিম। (আয়াত-১১) অমূলক অনুমান ও চিন্তা থেকে মানুষের অন্তরে শয়তানী ধ্যান ধারণার জন্ম হয়। এটাই পাপের বীজ। এ থেকে অন্যের ছিদ্রানে¦ষণ ও পরচর্চার উদ্ভিদ জন্মায়। এ কাজটিকে আল্লাহ্ মৃত ভাইয়ের মাংস খাওয়ার সম ঘৃণ্য কাজ বলেছেন। কারো অন্তরে যখনই এ ধরনের শয়তানী কুমন্ত্রণার উদ্রেক হয়ে ঈমানী সংহতির পরিপন্থি কোনো কাজ করার পর স্মরণ হতেই তখনই তওবা করে ঈমানে প্রত্যাবর্তন না করা পর্যন্ত সে আর মু’মিন থাকবে না। ত্রয়োদশ আয়াতে আল্লাহ গোটা মানব জাতিকে তাদের শ্রেষ্ঠত্বের শাশ্বত মানদন্ড বলে দিয়েছেন এ বলে যে, “হে মানবজাতি, আমি তোমাদের একজোড়া নর-নারী থেকে উৎস করে শুধু মাত্র পরিচয়ের নিমিত্তে বিভিন্ন গোত্র ও পরিবারে বিভক্ত করেছি। কিন্তু আমি আল্লাহর নিকট তোমাদের সমষ্টি থেকে একমাত্র অধিক মুত্তাক্বী ব্যক্তি, সবচেয়ে বড় সম্মানী। স্মরণ রাখবে, আল্লাহ্ সব খবর রাখেন।” এখানে অতীব গুরুত্ব সহকারে একটি বাক্য লক্ষ্য করতে হবে। তা’হলো আল্লাহ্ তোমাদের “মুত্তাকী ব্যক্তিরা” বলেননি। বলেছেন মুত্তাকী “ব্যক্তিটি”। এর তাৎপর্য হলো, আল্লাহ্র নিকট বেশী সংখ্যার কোনো মূল্য নেই। মানুষের মতো মানুষ একটি হলেই কোটি কোটি আধা মানুষ ও অমানুষ থেকে যথেষ্ট। পেছনের ৯, ১০, ১১, ১২ ও ১৩ নং আয়াতের একটু বিচার বিশ্লেষণে যাওয়া যাক। সূরাটি প্রচলিত মুসলিম জাতির দু’শেখ ও “খাইয়ারান” আবু বকর ও উমরকে নিয়ে অবতীর্ণ। রাসূল সঃ আদ্যপান্ত সূরা মুহাম্মদের ভিত্তিতে মদীনায় আনসার ও মুহাজিরদের মধ্যে ভ্রাতৃত্বের অবিভাজ্য ঐক্য স্থাপন করেন। সে বন্ধনকে দশ বছর ধরে আরো দৃঢ় করে পৃথিবী থেকে বিদায় নেন। তাঁর লাশ মুবারক এখনো দাফন করা হয়নি। তিরিশ হাযার সৈন্যের বাহিনী দাঁড় করিয়ে, স্বহস্তে পতাকা বেঁধে, মুহাজির ও আনসার সবার উপর উসামাহ্ বিন যায়দকে সেনাপতি নিয়োগ করেন। যারা তাঁর এ নিয়োগের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছে, প্রচন্ডমাথা ব্যথা ও জ্বর নিয়ে শির মুবারকে পট্টি বেঁধে তিনি অন্যের কাঁধে ভর করে দু’বার মিম্বারে উঠে তাদের তীব্র ভাষায় ভর্ৎসনা করেন। এবং তারপরও যারা উসামাহ্র নেতৃত্বে যুদ্ধে যাবে না, তাদের রাসূল সঃ লা’নত করে যান। ইসলামে যুদ্ধের ইমামতের মর্যাদা শান্তির ইমামতের উর্ধ্বে। কারণ, শান্তির দু‘রাকাত, তিন রাকাত বা চার রাকাত সালাতের ইমামতী যে কেউ করতে পারে। কিন্তু জিহাদের ময়দান, যেখানে জানমাল সবকিছু দিয়ে ইমামতের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়, সে ইমামতী কি ইমামতে “ক্বোবরা” বা সর্ববৃহৎ ইমামতী নয়? এই বইয়ের প্রথম পাতায় আল্লাহ্ তাঁর শেষ নবীকে পাঠানোর উদ্দেশ্য ব্যক্ত করে যে বিবরণ দিয়েছেন, তা’ সন্নিবেশিত করা হয়েছে। এখানে সে আয়াতটির মূলে ক্ষণিকের জন্য আমাদের ফিরে যেতে হবে। তা’হলে বিষয়টি সন্দেহাতীতভাবে স্পষ্ট হবে। আল্লাহ্ বলেছেন যে, তিনি তাঁর বিশেষ ক্রিয়ায় বিশ্বের নির্যাতিত, অর্থাৎ তাঁর বিশেষ পরিভাষায় “মুস্তাদআফদের ঈমাম বানাবেন।” তাও আবার পৃথিবীর ফিরআউন ও হামানদের শ্রেণীর মুস্তাক্বিরদের উপর সর্বময় ক্ষমতা দিয়ে। গোটা পৃথিবীর একচ্ছত্র উত্তরাধিকার দেবেন তিনি মুস্তাদআফ্দের। আয়াতটিতে বলা হয়েছে ঃ وَنَجْعَلَهُمْ أَئِمَّةً وَنَجْعَلَهُمُ الْوَارِثِينَ - وَنُمَكِّنَ لَهُمْ فِي الْأَرْضِ وَنُرِيَ فِرْعَوْنَ وَهَامَانَ وَجُنُودَهُمَا مِنْهُم مَّا كَانُوا يَحْذَرُونَ
অর্থাৎ তাদের ইমাম বানিয়ে গোটা পৃথিবীর কর্তৃত্বে অধিষ্ঠিত করে উত্তরাধিকার দান করা হবে। এবং বিশ্বময় ফিরআউন, হামান ও তাদের স্বৈর সেনাবাহিনীকে পরাজিত করে বিশ্বকে তাদের পরিণতি স্বচক্ষে দেখানো হবে। রাসূল সঃ মক্কার নব্য ফিরআউনের অত্যাচারে মক্কা ত্যাগ করে মক্কা থেকে প্রায় সত্তর মাইল পূর্বে তায়েফে হিজরত করেন যায়দকে নিয়ে। তায়েফের ফেরআউনের অত্যাচারে উভয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় কোনো প্রকার প্রাণে বেঁচে এক বনে আশ্রয় নিয়ে মুস্তাদআফদের প্রভূ আল্লাহ্র নিকট মক্কা ও তায়েফের ফিরআউনদের বিরুদ্ধে ফরিয়াদ জানান। يا رب, يا رب المستضعفين، أنت ربي ইয়া রাব্বাল মুস্তাদআফীন আন্তা রাব্বী, হে মুস্তাদআফদের প্রভু, আপনি আমার প্রভু! আল্লাহ তার মুস্তাদআফ রাসূল ও তাঁর মুস্তাদআফ্ সঙ্গী যায়দকেও ক্ববুল করে নেন। তাই তিনি কোরআনে উল্লেখ করেছেন। وَإِذْ تَقُولُ لِلَّذِي أَنْعَمَ اللَّهُ عَلَيْهِ وَأَنْعَمْتَ عَلَيْهِ এই সেই যায়দ, যাকে তুমি পুরস্কৃত করেছো। আমিও তাকে পুরস্কৃত করেছি। এ পুরস্কারটি কী? যায়দকে দাসদশা থেকে মুক্ত করা? যায়েদ তো মূলে দাস ছিলোই না! সে তো মক্কার ক্বোরেশদের চেয়েও শিক্ষা-দীক্ষা ও সভ্যতায় সমৃদ্ধ বনী কালবের এক অপহৃত ব্যক্তি! বিশ্বকোষ পড়লে দেখা যায় যে ইয়াহুদী-খৃষ্টান, যারা আখেরী নবী সঃকে নবীরূপে স্বীকৃতি দেয়না, তারা লিখছে, মুহাম্মদ তার সঙ্গী যায়দের নিকট থেকে তাওরাত ও বাইবেলের বর্ণনা শুনে তার উপর ভিত্তি করে ক্বোরআন রচনা করে নবুওতের দাবি করেছে। যায়দের গোত্র যেহেতু শিক্ষা দীক্ষায় উন্নত ইয়াহুদী-খৃষ্টানদের প্রতিবেশী ছিলো, তাই তারা পূর্ববর্তী ইব্রাহীম, মূসা ও ঈসার ধর্মাবম্বীদের সংস্পর্শে এসে জ্ঞানে এতো সমৃদ্ধ হয়েছিলো যে অপর এক ব্যক্তিকে নবী দাবী করার মতো তথ্য সরবরাহ করেছে! রাসূল সঃ ও ইসলামের শত্রু হলেও যায়দের গোত্র স¤পর্কে ইয়াহুদীদের বর্ণনা থেকে যায়দের মন মানসিকতার মান ও পরিমাণ আঁচ করা যায়। বরং আমরা মু’মিনরা শত্রুদের বর্ণনা থেকে এ ধারণা পোষণ করবো যে ইয়াহুদী-খৃষ্টান প্রতিবেশীদের নিকট থেকে প্রাপ্ত তাওরাত ও বাইবেলের ইংগিত থেকে যায়দ খাতামুন নাবিয়্যীন সঃ কে চিনে তাঁর প্রতি সর্বপ্রথম ঈমান এনে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূল কর্তৃক পুরস্কৃত হয়েছে। তায়েফের হিজরতে আল্লাহর রাসূল সঃ ও তাঁর সহচর যায়দ মুস্তাদআফের মঞ্জুরী পেয়ে মাদীনায় হিজরত করে মাদীনায় মুস্তাদআফদের রাষ্ট্রের পত্তন করেন। দশ বছরের সংগ্রামে মক্কা ও তায়েফের মুস্তাক্বিরদের আল্লাহর সাহায্যে রাসূল পরাজিত করেন। মেরাজে দেখানো অভিশপ্ত বৃক্ষ মক্কাবাসী উৎপাটিত হয়। إِنَّ رَبَّكَ أَحَاطَ بِالنَّاسِ “অবশ্যই তোমার প্রতিপালক মক্কার লোকদের ঘিরে ফেলেছেন” এর অর্থ বাস্তবায়িত হলো। তারপর শুরু হলো সিরিয়ার ফিরআউনের বিরুদ্ধে অভিযান। এর উদ্বোধন করালেন রাসূল তাঁর প্রিয় যায়দকে দিয়ে। রাসূলের আদেশে তিন হাজার সৈন্য নিয়ে লক্ষাধিক শত্রুর বিরুদ্ধে লড়ে শাহাদাত বরণ করে যায়দ প্রমাণ করলো যে, যায়দই সে সিদ্দীক, যা হওয়া অন্য কোনো গোত্রবাদীর ভাগ্যে জোটেনি। ঈমানের ক্ষেত্রেও প্রথম, শাহাদাত বরণেও প্রথম! এ-ই না হলো খাঁটি সিদ্দীক! যায়দের সঙ্গে রাসূল সঃ এর আদেশ পালন করে ধন্য হলো ক্বোরেশী মুহাজিরদের দিকপাল জা’ফর ইব্ন আবি তালিব ও আনসারদের নয়নমনি আবদুল্লাহ ইব্ন রাওয়াহা। রাসূল সঃ এর মিশন শেষ প্রান্তে। আল ক্বোরআনের শ্রেষ্ঠ চিকিৎসক খাতামুন নাবিয়্যীন নিকৃষ্ট রোগাক্রান্ত জাতির মাঝে প্রেরিত হন। ঔষধ উদ্ভাবন করে তার ব্যবহার বিধির প্রশিক্ষণ দিয়ে আল্লাহর বাণী শুনান তিনি। وَنُنَزِّلُ مِنَ الْقُرْآنِ مَا هُوَ شِفَاءٌ وَرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِينَ وَلَا يَزِيدُ الظَّالِمِينَ إِلَّا خَسَارًا
“আমি আল্ ক্বোরআন দিয়ে ঈমানদার জনগোষ্ঠীর রোগ নিরাময় ও রহমত অবতীর্ণ করলাম। কিন্তু মানব জাতির মধ্যে যারা যালিম, ক্বোরআন তাদের উত্তরোত্তর ধ্বংস বিধান করবে।” (সূরা বনী ইসরাঈল-৮২) মু’মিন হলে ক্বোরআন শিফা ও রহমত। যালিমদের জন্যে ক্বোরআন আজরাঈলের চরমপত্র। ক্বোরআনই আহ্সানুল হাদীস, আস্দাকুল হাদীস ও আসাহ্হুল হাদীস। অর্থাৎ সবচেয়ে সত্যকথা ও সর্বোত্তমবাণী। কিন্তু এ ক্বোরআনকে গিলাফ্ ও জুযদানে ঢুকিয়ে রাসূল সঃ এর কিছু কিছু সত্য কথোপথন বা বাণীর সাথে অজস্র মিথ্যা বিবেক বুদ্ধি বিবর্জিত উদ্ভট বানোয়াট কিস্যা কাহিনী রচনা করে যারা তাকে “সিহাহ সিত্তা” বা সবচেয়ে সত্য ছয় কিতাব নামকরণ করে ইসলাম ও তার শেষ রাসূলের শিক্ষা থেকে মাবনজাতিকে বিপথগামী করেছে, সে ইবলিসের মানব সন্তানদের স্বরূপ উদঘাটন না করলে বিপন্ন মানবতার মুক্তির সন্ধান দেয়া যাবে না। তাই ক্বোরআনকে শক্ত হাতে ধরে তার কষ্টিতে রাসূল সঃ এর সত্যবাণী সমূহ বাছাই ও যাচাই করে ধর্মবেসাতী মোল্লাহ মৌলবীদের সর্বপ্রথম উৎখাত করতে হবে। তারপরই খাঁটি ও হালালভোগী আলেমদের নিয়ে ক্বোরআন ও সহীহ্ সুন্নার আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। তা না হলে ক্বোরেশী, হাশেমী, সাইয়েদ, শিয়া, সুন্নী, বাঙ্গালী, হিন্দি, পাকিস্তানী, আফগানী, ইরানী ও সৌদী প্রভৃতি দাজ্জালরা পুনঃ ইসলামী আন্দোলনকে ঠিক সেভাবে বিপথে চালিত করবে, যেভাবে রাসূলের বিদায়ের পর আরব বর্বর ও তাদের ক্রীতদাস মুহাদ্দিস ও মুফাস্সিররা করেছে। ন্যাড়া যেমন বেলতলায় শুধু একবারই যায়, দ্বিতীয়বার যায়না, তদরুপ আমি আমাকে ও আমার মু’মিন ভাইদের দ্বিতীয়বার শির্ক ও বিদ্আতের জালে ফাঁসাতে চাইনা। তাই কথাকে বারবার “ফাবি আইয়ে আলা’য়ে রাব্বিকুমা তুকাযযিবান” এর মতো পুনরাবৃত্তি করছি। ক্বোরআনের শিক্ষায় ক্বোরআনে ফেরত আনার জন্য আমার এ লেখা। তাই এতে ক্বোরআনের মতো পুনরাবৃত্তি করা হচ্ছে তা’ মনে রেখে এ রচনাকে পড়তে ও বুঝতে হবে। তারপরই এর বক্তব্যকে ধারণ করার যোগ্যতা হবে। এ যোগ্যতা স¤পন্ন বাহিনীর প্রয়োজন আমার। অযোগ্য লোকদের নিয়ে আমার পরিবার গড়ে উঠবেনা। রাসূল সঃ এর আদর্শে যারা ক্বোরআনকে ধারণ করে যায়দ, বেলাল, আম্মার, সুহাইব, সালমান ও উসামাহ হবে, আমি তাদের সঙ্গী হয়ে আল্লাহর সামনে উপস্থিত হতে কৃতসংকল্প। ক্বোরেশী, উমাইয়া, আব্বাসী, মুঘল, পাঠান, শিয়া, সুন্নী বা হানাফী, হাম্বলীদের পথ, আমার পথ নয়। তাই সাহাবী তাবেঈদের ভেড়ার পালদের অন্ধ সনদ শুধু প্রত্যাখ্যানই করিনা, বরং আমি তাকে তাওহীদ, রিসালাত, ক্বোরআন ও রাসূলদের বুঝার পথে সবচেয়ে ক্ষতিকর বাধা মনে করি। হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে ক্বোরেশী, উমাইয়া ও আব্বাসী দজ্জাল এবং তাদের প্রেতাত্মা তুর্কী ও মোঘল সাম্রাজ্যবাদের কেনা তথাকথিত মুহাদ্দিস বা হাদীস বর্ণনাকারীরা নিজ নিজ প্রভুদের দাজ্জালীকে বৈধতা দান করে তাকে পরবর্তী সম্ভাব্য সংস্কার আন্দোলনের বুলডোজার থেকে রক্ষার জন্য একটি নির্লজ্জ অভিনব প্রথা চালু করে গিয়েছে
১৫
212080
২৩ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ০৬:৩৪
মুহাম্মদ_২ লিখেছেন : তাহলো তাদের প্রথায় রাসূল সঃ এর বাণী বর্ণনা ও প্রচার করতে হলে যে কোনো হাদীস বর্ণনাকারীকে তার পূর্বের বর্ণনাকারী হয়ে রাসূল সঃ পর্যন্ত পৌছাতে হয়। তা’ না হলে নকি হাদীস বুঝা বর্ণনা করা যাবে না। কি চমৎকার নির্লজ্জ প্রতারণার বেড়াজাল! অথচ রাসূল সঃ এর বিদায়ের দিন থেকে দীর্ঘ নব্বই বছর যাবৎ একটানা তাঁর শিক্ষাকে ত্যাগ করে ক্বোরআনকে বর্জন করে, মুস্তাদআফ্ ও মাদীনাবাসী আনসরাদের ইসলামী রাষ্ট্রীয় জীবন থেকে উৎখাত ও নির্মূল করে ক্বোরেশী ও উমাইয়া সাম্রাজ্যের অভিশাপ দিয়ে ইস্লামকে বিকৃত ও কলঙ্কিত করে দীর্ঘ নব্বই বছর পর হাদীস লেখা ও বর্ণনার প্রথা চালু করা হয়। আব্বাসীরা এসে তাদের পাপাচারকেও বৈধতা দেয়ার জন্য এ সিল্সিলা চালু রাখে। তাদের নামে খুত্বার প্রচলন করে যায়। যা’ চৌদ্দশ ছরের পুরানো মিথ্যার বোঝাকে বহন করে আজো আমাদের কাঁধে বংশ পর¤পরায় নিক্ষেপ করছে। ভাবতে কেমন আশ্চর্য লাগে যে আজ চৌদ্দশ বছর পরও প্রত্যেক জুমা বা ঈদের খুতবায় শুধু দশজন ক্বোরেশী ব্যক্তির নাম নেয়া হয়। অথচ আল্লাহ পৃথিবীর বুক থেকে ক্বোরেশী তথা আরবদের সাম্রাজ্যকে শুধু নির্মূল ও নিশ্চিহ্ন করেই ছাড়েননি, মক্কা মাদীনা থেকে আরম্ভ করে আজ বিশ্ব কোথাও কোনো মস্জিদেও কোনো ক্বোরেশী ইমামতের দাবীদার ইমামের অস্তিত্ব নেই। তারপরও বোখারী মুসলিমদের “আল আইম্মাতু মিন ক্বোরেশ” ইমাম ও নেতা শুধু ক্বোরেশ বংশীয় হতে হবে, চালু থাকবে? কী বলো মুহাদ্দিস সাহেবরা? মসজিদের ইমামরা কি বলো? তোমরা ক্বোরেশ বংশীয় না হয়ে যে নামাজের ইমামতী করছো, তা’কি বৈধ হচ্ছে? ইমামতী ছাড়বে, না বলবে যে, “আল আইম্মাতু মিন ক্বোরেশ” মিথ্যা? তোমরা কি ইয়াযীদ ও মারওয়ানের সিলসিলার ইমাম? ক্বোরেশী সিলসিলার ইমাম তালিকায় ৫, ৬ ও ৭ নং ইমাম হলো মুয়াবিয়া, ইয়াযিদ ও মারওয়ান। নূহ, ইব্রাহীম, মূসা, ঈসা, ও মুহাম্মদ সঃ দের ইমামত মুস্তাদআফদের ইমামত। তাঁরা সবাই বাবা আদম আঃ এর সন্তান। তিনি মাটির সৃষ্ট। তাঁর সন্তানদের মধ্যে মুত্তাক্বীতম ব্যক্তিটিই সর্বোত্তম সম্মানী। কোনো বংশ ও বর্ণের কোনো পার্থক্য বা বৈষম্য নেই তাতে। এটাই ইসলাম। ইসলামী ঈমানের রশি ধারণ করে মুসলিম, মু’মিন, ইমাম, মুহাদ্দিস ও মুফাসসির হতে হয়। যেমন পূর্বের নবীদের রশি ধরে রাসূল সঃ খাতামুন নাবিয়্যীন হয়েছিলেন। তদ্রূপ যায়দ, আম্মার, বেলাল, সালমান, সুহাইব, উসামাহরা স্ব-স্ব গোত্র ও বর্ণ বিসর্জন দিয়ে রাসূল সঃ এর অনুসারী হয়েছিলো। তাদের প্রতি যখনই রাসূল সঃ অমনোযোগী হয়েছিলেন তখনই অহী নাযিল হয়েছে, وَلَا تَعْدُ عَيْنَاكَ عَنْهُمْ “ওদের চোখে চোখে রাখো, ওদের থেকে চোখ নামাবেনা।” (সূরা কাহ্ফ-২৮) ইতিহাসে একটি ঘটনাও এদের ব্যাপারে দেখা যায় না যে এরা কখনো আল্লাহ ও রাসূলের সীমা অতিক্রম করেছে, বা রাসূল সঃ এর দরবারে উচ্চস্বরে কথা বলেছে। বা নিজ বংশ বা গোত্রের টান টেনেছে। অপর দিকে ক্বোরেশী খলীফা ও ইমাম এবং তাদের কন্যাদের ব্যাপারে কঠোর ভাষায় পূর্ণপূর্ণ সূরা নাযিল হয়েছে, “আল্লাহ ও রাসূলের অগ্রগামী হবে না, রাসূলের স্বরের উপর গলা চড়াবেনা। তাঁর সাথে নিজেদের মধ্যে যেমন বেপরওয়া কথা বলো, তেমন বলবেনা। তাঁকে বাহির থেকে ডাকাডাকি করবেনা এবং এরা তো নূহ ও লূতের স্ত্রীদের ন্যায়” ইত্যাদি। তাই বংশানুক্রমিক সিলসিলা মুমিন ও মুত্তাকী মানব গোষ্ঠীর ধর্ম নয়। ওটা ইব্লিস ও তার সিলসিলার ধর্ম। ইবলিসের জ্বিন ও মানব সন্তানরা কখনো সিলসিলার বাইর হতে পারবেনা । তারা ক্বেয়ামত পর্যন্ত ঐ সিলসিলায় চলবে। কারণ, তাদের দিয়ে আল্লাহ্ জাহান্নাম বা নরক পূর্তি করবেন বলে ঘোষণা করেছেন। তাই সিলসিলার বেপারীরা সাবধান! সিলসিলার খদ্দের, মুরীদ ও আশেকরাও সাবধান! বুঝ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তওবা করে তাওহীদ ও রিসালাতের সকল সিলসিলার শেকল ছিঁড়ে ফেরৎ না আসলে তোমাদের খবর আছে। তোমাদের দ্বারা জাহান্নামের উদর পূর্তি হবে? প্রাসঙ্গিক অত্যাবশ্যকীয় কথা বলে পুনঃপুনঃ সূরা হুজুরাতে ফেরৎ যাচ্ছি। কারণ এ সূরাই আবু বকর উমরসহ ক্বোরেশী ও অক্বোরেশী মুস্তাকবির আরবদের ঈমানের চুলচেরা বিবরণ দিচ্ছে। তাও সাত আসমানের উর্ধ্ব থেকে অহী নাযিল হয়ে। কোনো সাহাবী, তাবেঈ, মুফাস্সির ও মুহাদ্দিসের বর্ণনায় নয়। এখানে প্রত্যেক মুক্তিকামী আদম সন্তান, নর কি নারী, তাকে সর্বদা স্মরণ রাখতে হবে যে, আল্লাহর নিকট মর্যাদার একমাত্র মাপকাঠি হলো, তাক্বওয়া। বর্ণ, বংশ বা জাতপাত নয়। إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِندَ اللَّهِ أَتْقَاكُمْ
রাসূল সঃ এর বিদায়ের পূর্বে এ সূরা অবতীর্ণ হয়। তাও এর মূল ব্যক্তিদ্বয় আবু বকর ও উমর। এরাই তাক্বওয়ার মানদন্ডের বাইরে, আল্ আইম্মাতু মিন্ ক্বোরেশ বলে সকল মু’মিনদের বাদ দিয়ে ক্বোরেশী খেলাফত, ইমামত ও সাম্রাজ্যবাদের পত্তন করে। যার ফলে ক্বোরেশীরা পরিবার রূপে ভূপৃষ্ঠ থেকে নির্মূল হওয়া পর্যন্ত এরাই ইসলামের নামে সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে সকল প্রকারের কুকর্ম করে আল্লাহর আখেরী নবীর দ্বারা পূর্ণ করা দ্বীনকে কলঙ্কিত করে। এ সর্বনাশ কি কোনো লঘু পাপ যা স¤পর্কে হাল্কাভাবে দু’চার লাইন লিখে ছেড়ে দিলেই মুসলিম উম্মার উপর প্রলেপিত পাপ মুছে যাবে? কখনো নয়। তাই আসো। ঈমানদার বান্দারা, আমরা অন্তর দিয়ে ক্বোরআনে ডুব দেই। এ সূরার ১৪নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, “হে রাসূল! আরবরা বলে আমরা ঈমান এনেছি। তুমি বলো, তোমরা আদৌ ঈমান আনোনি। তোমরা শুধু পরাজয় দেখে আত্মসমর্পন করেছো। এটাই বলা তোমাদের সমীচীন। এখনো তোমাদের অন্তরে ঈমান প্রবেশ করেনি। এখন থেকে তোমরা যদি সঠিক অর্থে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করো, তা’হলেই তোমাদের আমল গৃহীত হবে, তোমাদের আমলের কিছুই আল্লাহ্ বাদ দিবেন না। অবশ্যই আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু।” এখানে অতিগুরুত্ব সহকারে একটি আরবী শব্দ স্মরণে রেখে তা সর্বদা মনে রাখতে হবে। তা’ হলো “আল্ আ’রাব”। এর সোজা ও সরল অর্থ হলো, “আরবরা”। এ শব্দটি দিয়ে যে আরবরা গোটা মানবজাতির ইতিহাসে এক অদ্বিতীয় মিথ্যার জাল বুনে বিশ্বকে প্রতারণা করে আসছে, তাকে ¯পষ্ট ভাবে তুলে ধরা, বর্তমানে বিপন্ন মানব জাতির উদ্ধার ও মুক্তির জন্য ততটুকু প্রয়োজন, যতটুকু কা’বাকে ক্বোরেশী কাফের মুশরিকদের তিনশত ষাট দেবদেবীর প্রতিমা থেকে পবিত্র করে আখেরী নবী সঃ কে পুনঃ নূহ, ইব্রাহীম, মূসা ও ঈসা, আঃ দের তাওহীদ ও রিসালাতের কেন্দ্রে পরিণত করতে প্রয়োজন হয়েছিল। তাই বাবা আদম আঃ ও মা হাওয়ার সন্তানদের এ অধ্যায়টি আদম সৃষ্টির লগ্নে ইবলিস শয়তানের চক্রান্তের ঘটনার মতো গুরুত্ব দিয়ে বুঝে পড়তে হবে। অন্যথায় ইব্লিসের বানানো সম্মুখ পশ্চাৎ ও ডান বামের চার দেয়ালীর খাঁচায় আবদ্ধ থেকে আদম সন্তানদের জাহান্নামের উদরপূর্তি করতে হবে। যেমনটি অভিশপ্ত ইব্লিস সেদিন ঘোষণা করেছিলো। তাই চলো আমরা সবাই একবার কায়মনে “আউযু বিল্লাাহি মিনাশ্ শাইতানির রাজীম” পড়ে শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে আঁটঘাট বেঁধে এ অধ্যায়টি পড়ি ও বুঝি। ইতিহাসের রাস্তার এ মোড়টি যে বা যারা সঠিকভাবে বুঝতে সক্ষম হবে, তাকে এবং তাদের পৃথিবীর সকল জ্বীন শয়তান ও তাদের মানব সন্তানেরা একত্র হয়েও বিভ্রান্ত করতে পারবেনা। ফলে এরাই পৃথিবীর কাঙ্খিত ইমাম মাহ্দী ও তাঁর সৈনিক হয়ে বিশ্বের তাগুত মুস্তাক্বিরদের করাল গ্রাস থেকে মুস্তাদআফ্দের মুক্তির পথ দেখাতে সক্ষম হবে। ইন্শা আল্লাহ। ১৯৭২ সালের ডিসেম্বর মাসে আল্লাহ্ সুবাহানাহু ওয়া তায়ালা আমাকে যখন কোনো পূর্ব পরিকল্পনা ছাড়াই হঠাৎ করে বাংলাদেশ থেকে পবিত্র মক্কা নিয়ে যান, তখন মক্কা পৌছে ইব্রাহিম আঃ ও মুহাম্মাদ সঃ দের আদর্শ ও লক্ষ্যহীন হজ্বের মেলা দেখে আমার ষষ্ঠ অনুভুতি জেগে উঠে। বিশেষ করে গয়া-কাশির পান্ডাদের আরবী সংস্করণ মুয়াল্লেম ও মুতাওয়েফদের কান্ডকারখানা দেখে আমি দস্তুর মতো বিস্মিত হয়ে যাই। তার সাথে পরবর্তী বছরগুলোতে আরো বেদনাদায়ক তথ্যাদির যোগ হয় বিশ্বের তথাকথিত ইসলামী আন্দোলনের নেতা নামের ভিক্ষুকদের দেখে। এরা প্রত্যেকেই নিজ নিজ দেশের ইসলামবিরোধী সরকারসমূহের কার্যকলাপের ফিরিস্তি বর্ণনা করে আরবদের তেলের পয়সার কিছু উচ্ছিষ্ট লাভ করে মক্কা ও মদীনাকে ইয়াহুদী খৃষ্টান চক্রের হাতে তুলে দেয়া আরব রাজা বাদশাদের ব্যাপারে নিজ নিজ দেশের জনগণকে বিভ্রান্ত করে। যার ফলে বিশ্বের ইসলামী পূনর্জাগরণের প্রত্যাশী মানবগোষ্ঠির আজ এ দুর্দশা। ইখওয়ানুল মুসলিমীনদের নেতা হাসানাল হুদাইবী, পাকিস্তানের জামাতী নেতা আবূল আ’লা মওদুদী ও ভারতের আবুল হাসান নাদভী প্রভৃতি ও তাদের পার্শ্বচরদের ক্রিয়াকলাপ আমাকে বিধ্বস্ত করে ফেলে। আমি দেশে ফেলে যাওয়া বিধবা মা, তিন এতিম ভাই, একবোন ও ষাটদিন বয়সের একটি কন্যাসহ স্ত্রীর বিরহ ব্যথা মক্কা মদীনার বন্দিদশা দেখে প্রায় ভুলে যাই। শুরু হয় আমার নতুন দিক দর্শনের অধ্যায়। চক্ষু বিস্ফোরিত হয়ে দেখি আরব দাজ্জালদের ভিক্ষা সংগ্রহ করে ইসলামী আন্দোলনের(?) নেতাদের ইয়াহুদী খৃষ্টানদের ইউরোপ আমেরিকায় হিজরতের (?) ইবলিসী তামাশা। তারা স্বপরিবারে ঐ সমস্ত দেশে গিয়ে তাদের সন্তানদের পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট যৌন বিকৃত সহশিক্ষায় শিক্ষিত করে দেশে এসে ইসলাম ও তাগুত ত্যাগের লেক্চার দেয়। একেই হয়তো “ভূতের মুখে রাম নাম জপ” বলে অভিহিত করা হয়েছে। রাসূল সঃ এর ভবিষ্যদ্ববাণীর চূড়ান্ত দাজ্জালের পূর্বে এ ক্ষুদে দাজ্জালেরা দেশে এসে তাদের ও তাদের সন্তানদের আসল গুরু, ইয়াহুদীদের গণতন্ত্রের রাজনীতি করে। বরং তাদের সন্তানদের উলঙ্গ মেয়েদের সাথে সহশিক্ষার ন্যায় এরা বেপর্দা বেআব্রু নারী নেত্রীদের আঁচল তলে আশ্রিত রাজনীতি করে। আরবদের কাছ থেকে ভিক্ষা করে আনা অর্থে ইয়াহুদী ধনলিপ্সা ও ভোগবাদের ব্যাঙ্ক-বীমা প্রতিষ্ঠা করে সম্ভাব্য ইসলামী নেতৃত্বদানে যোগ্য যুব শক্তিকে লক্ষ্যচ্যুত করে তাদের মূল “ইলাহ্” ইবলিসের শাগরেদ বানায়। এসব বিকৃতির মূলে “বনী আদম” অর্থাৎ আদম সন্তানদের তাদের আল র্কোআনে বর্ণিত “তাক্বওয়ার” জাতীয়তা ত্যাগ করে বর্ণবাদী জাতীয়তায় বিভক্ত হওয়া। তার সর্ব নিকৃষ্ট দৃষ্টান্ত হলো ইব্রাহীম ও মূসা আঃদের আদর্শ ত্যাগ করে ইয়াহুদী হওয়া এবং আখেরী নবী সঃ এর মুস্তাদআফ্ ঐক্যকে জবাই করে তার স্থলে ‘‘আল্ আইম্মাতু মিন্ ক্বোরেশ'” চালু করা। এর পেছনে ইবলিসের যে আঠা কাজ করেছে, তা’হলো “আরব” শব্দের উৎপত্তি , আরবজাতি ও আরব জাতীয়তার মূল স¤পর্কে দীর্ঘ চৌদ্দশ বছর ধরে মিথ্যা প্রচার। আল্লাহ্ কর্তৃক তাঁর কিতাব আল্ কোরআন রক্ষিত না থাকলে আজ আমাদের সে মিথ্যা থেকে বের হওয়ার কোনো পথ থাকতোনা। সূরা মুহাম্মাদ ও সূরা হুজুরাত মানব জাতির হারানো পথ ফিরে পাওয়ার মাইল ফলক, আসমানী রিসালাত। হুজুরাতে আল্লাহ্ প্রণীত আভিধানিক বণর্না পড়ে তার সাথে সূরা তওবায় বর্ণিত আরবদের চার শ্রেণী বিভাগ পড়ার পর আরবজাতির আরবী ভাষার চূড়ান্ত দু’শীর্ষ অভিধান তাজুল আরুস্ ও লিসানুল আরবের “আরব” ধাতুর বিশেষণ পড়লেই দিবালোকের ন্যায় আখেরী নবী সঃ এর বিদায়ের পর মুসলিম উম্মার বর্তমান অবস্থার কারণ ¯পষ্ট হয়ে যাবে। এখান থেকে পূর্ণ উপলব্ধি সহকারে কালেমায়ে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ'” পড়ে মিল্লাতে ইব্রাহিম ও রিসালাতে মুহাম্মাদীতে প্রবেশ করা মাত্র বিশ্ব মুস্তাদ্আফীনের সূরা কাসাসের ৫ নং আয়াতে ওয়াদাকৃত ইমামতি ও জামাতের সূর্য উদিত হবে। فَلَا تَحْسَبَنَّ اللَّهَ مُخْلِفَ وَعْدِهِ رُسُلَ ‘‘তোমরা কক্ষনো রাসূলদের সাথে কৃত আল্লাহ্র ওয়াদার এদিক ওদিক হবে কল্পনা করবেনা”। (সূরা ইব্রাহীম-৪৭) এবার আমরা আল ক্বোরআনের অভিধানে আরব ও আরবী বর্ণবাদের মূলে প্রবেশ করছি। রাব্বিশ্রাহলী সাদ্রী , রাব্বি যিদ্নী ইল্মা। মিথ্যার জাল দেখতে জটিল হলেও তা’মূলত মাকড়সার জালের মত দুর্বল। আঘাত করলেই হাওয়া হয়ে যায়। তার চিহ্নও থাকেনা। مَثَلُ الَّذِينَ اتَّخَذُوا مِن دُونِ اللَّهِ أَوْلِيَاءَ كَمَثَلِ الْعَنكَبُوتِ اتَّخَذَتْ بَيْتًا وَإِنَّ أَوْهَنَ الْبُيُوتِ لَبَيْتُ الْعَنكَبُوتِ لَوْ كَانُوا يَعْلَمُونَ
যারা আল্লাহ্র পরিবর্তে অন্য কাকেও অভিভাবকরূপে গ্রহণ করে, তাদের এ’কাজটি মাকড়সার ন্যায়। নিজ কল্পনায় জাল বুনে। অথচ মাকড়সার এ’ঘর দুর্বলতম । হায়! যদি তারা বুঝতো! (আন্কাবুত-৪১) অভিশপ্ত ইয়াহুদীদের পর অবশ্যই “আল আইম্মাতু মিন ক্বোরেশ” এর মিথ্যার উপর বানানো আরব জাতীয়তা, আরবী সাম্রাজ্যবাদ, আরবী সাহিত্য ও কাব্য কবিতা মাকড়সার জাল। তার দিন শেষ। খাতামুন নাবিয়্যীন মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সঃ এর রিসালাতের দ্বারা হক্ব পূর্ণরূপে বিকাশ লাভ করেছে এবং অসত্য বা বাতিল চিরতরে তার কৌৎসিত্ব নিয়ে নগ্ন হয়েছে। جَاءَ الْحَقُّ وَزَهَقَ الْبَاطِلُ إِنَّ الْبَاطِلَ كَانَ زَهُوقًا অতএব বাতিলকে মিটে যেতে হবেই। ( বনী ইস্রাঈল- ৮১) মক্কা বিজয়ের পর যখন জাযিরাতুল আরব; বা আরব দ্বীপের বর্বর অধিবাসীরা দেখলো যে সূরায়ে ক্বাসাসে বর্ণিত আল্লাহ্র ঘোষণা অনুযায়ী মুস্তাদআফ্দের ইমামত ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার পথে আর কোনো প্রতিরোধ টিকবেনা, তখন আরবরা চারদিক থেকে দলে দলে মাদীনা এসে মুস্তাদআফদের চূড়ান্ত আদর্শ নবীর হাতে আত্মসমর্পন করে আত্মরক্ষার প্রয়াস পেতে লাগ্লো। এ প্রক্রিয়াকেই আল্লাহতায়লা ক্বোরআনুল কারীমে إِذَا جَاءَ نَصْرُ اللَّهِ وَالْفَتْحُ وَرَأَيْتَ النَّاسَ يَدْخُلُونَ فِي دِينِ اللَّهِ أَفْوَاجًا বলে বর্ণনা করেছেন। “যখন আল্লাহর সাহায্যে বিজয় সংঘটিত হবে, তখন দেখবে যে ঢেউয়ের মতো চারদিক থেকে জনগন আল্লাহ্র দ্বীনে প্রবেশ করবে”। (সূরা নাস্র-১,২) এখানে লক্ষ্য করতে হবে যে, দ্বীন আল্লাহ্র। রাসূলের দ্বীন নয়। সকল নবী রাসূলরা আল্লাহ্র একমাত্র দ্বীন ইসলামের অনুসারী। তাদের কোনো পৃথক দ্বীন নেই। একমাত্র কাফের ও মুশ্রিকদের পৃথক পৃথক বহু দ্বীন রয়েছে। বাবা আদম আঃ থেকে রোজ ক্বেয়ামত পর্যন্ত ঈমানদার জনগোষ্ঠির একমাত্র দ্বীন ইসলাম। তাতে কোনো ব্যত্বয় নেই। রাসূল সঃ এর কাজ শেষ। তাঁর উস্ওয়ায়ে হাসানা বা উত্তম আদর্শের মডেল দাঁড় করা হয়ে গিয়েছে। যায়দকে মুহাজির ও আনসারদের উপর নেতৃত্ব দিয়ে রাসূল সঃ তাঁর কথিত সাহাবাদের ঈমানের বাছনী বা টেষ্ট পরীক্ষা নিলেন। তাতে বহু লোকের মূল চেহারা প্রকাশ পেয়ে যায়। আল্ ক্বোরআনে আল্লাহ্ কর্তৃক প্রশংসিত রাসূলের আজীবনের পরীক্ষিত যায়দের নেতৃত্ব মেনে নিতে যারা আপত্তি তুলেছিলো, তারা কি সত্যিকারে ঈমান এনেছিলো? এ প্রশ্নের সদুত্তর খুঁজে পেতে হবে। তা’ না হলে খাঁটি ঈমান আনা দুষ্কর হবে। মুতা বা মৌতার অভিযানের পর মক্কা ও তায়েফ জয় হয়। তারপর তাবুকের অভিযান। এ অভিযানই রাসূল সঃ এর নেতৃত্বে মু’মিনদের শেষ যুদ্ধ অভিযান। ঠিক এর মাঝেই সূরায়ে হুজুরাত নাযিল হচ্ছে। তাতে আল্লাহ্ আবু বকর ও উমরদের ধোলাই করে অন্যান্যদের জন্য আচরণবিধি বর্ণনা করেছেন। তাতে বলে দিচ্ছেন যে, তাক্বওয়ার মানদন্ডে কারো কোনো আলাদা বৈশিষ্ট্য নেই। ত্বাকওয়াহীন অবস্থায় আরবরা চারদিক থেকে ঢলের মতো মদীনায় আসছে। এখন যদি সুবিধাবাদী ঈমানের দাবীদারকে সত্যবাদী ঈমানদারদের থেকে পৃথক ভাবে চিহ্নিত করা না হয়, তা'হলে তো রাসূল সঃ এর বিদায়ের পর মক্কবাসী আরবরা তাই করবে, যা পূর্বে ইয়াহুদীরা করেছে ? আল্লাহ্ তাঁর রাসূলকে নির্দেশ করলেন সত্যকে নির্দ্বিধায় বলতে। আল্লাহ্ তাঁর বাচন ধারায় বলছেন, “আরবরা বলছে, আমরা ঈমান এনেছি। রাসূল তুমি বলে দাও, তোমরা আসলে ঈমান আনোনি। তোমরা বিজয় দেখে শুধু আত্মসমর্পন করেছো। এখনো তোমাদের অন্তরে ঈমান প্রবেশ করেনি। এ মৌখিক ঈমান এনে যদি তোমরা বাস্তবরূপে আল্লাহ্ ও রাসূলের আনুগত্য করো, তবেই তোমরা ঈমানদার রূপে গৃহীত হবে। তখন আল্লাহ্ তোমাদের আমলের কোনো অংশই প্রত্যাখান করবেন না। তিনি দয়ালু ক্ষমাশীল।” (হুজুরাত-১৪)। আরব দ্বীপটিই শুধু আরব ভূখন্ড। এর ভগ্নাংশ হলো দক্ষিন পূর্বে ইয়ামেন, পূর্ব উত্তরে ইরাক, উত্তর পশ্চিমে সিরিয়া ও ফিলিস্তিন এবং পশ্চিমে লোহিত সাগর। তার বাইরে মিশর, সিরিয়া, তিউনেশিয়া ও মরক্কো প্রভৃতি সব আফ্রিকা। এদের আরবী দাবী মিথ্যা ও অমূলক। রাসূল সঃ এর রিসালাতের ইসলামের পরিবর্তে ক্বোরেশী আরবদের মুস্তাকবিরির সাম্রাজ্য বিস্তার আরম্ভ হলে এ সকল আফ্রিকান কাফ্রিরা বিজিত হয়ে তাদের উপনিবেশবাদী প্রভূদের সাথে জাতবদল করে আরবী বা আরব হয়ে যায়। যেমন বর্তমানে এ্যালেক্স হিলীর “দি রুট্স” এর বৃটেনবাসী কৃষাঙ্গরা কথায় কথায় “উয়ী বৃটিশার্স” বলে। রাসূল সঃ এর রিসালাতের দু’শ বছর পূর্বে বর্তমান আরবী আলিফ, বা, তা, ছা অক্ষরে লিখিত কোনো আরবী ভাষার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়না। হিজাযবাসী দরিদ্র, মরুদস্যু ও মেষপালক আরবরা কখনো শাসক বা সংগঠিত জাতি ছিলো না। তারা যুগ যুগ ধরে সমৃদ্ধ দক্ষিণ পূর্বের ইয়ামেনী, ক্বাহ্তানী, আদনানী ও এরামদের দ্বারা শাসিত হয়েছে, কখনো উত্তর পূর্বের বেবিলোন ও কেলেডোনিয়ানদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়েছে। আবার কখনো পশ্চিমের গাস্সানী ও নাবাতীদের দ্বারা বশিভূত হয়েছে। এদের কখনো স্বরাজ বা স্বাধীন সংগঠিত সত্তা ছিলোনা। পূর্ব দক্ষিণের ইয়ামেনী কাহ্তানীদের ঐশ্বর্য্য ও সমৃদ্ধির উৎস ছিলো তাদের পূর্ব পাড়ের ভারতীয় পণ্য ও তার সওদাগরী আয়ের উপর ভিত্তি করে। উত্তর পূর্বের ইরাকী সীমান্তবাসীদের সমৃদ্ধির প্রধান উৎস ছিলো পারস্য সাম্রাজ্য ও তার প্রভাবাধীন অঞ্চলের ঐশ্বর্যভিত্তিক এবং পশ্চিম সীমান্তে ছিলো গ্রীক ও রোমানদের সাম্রাজ্যের প্রভাবে প্রভাবাহ্নিত। আরব দ্বীপের মূল ভূখন্ডের মধ্যবর্তি এলাকায় বসবাসকারী আরবরা মূলতঃ ছিলো তাদের চারদিকের তদানিন্তন শক্তিধর প্রতিদ্বন্দ¡ীদের যুদ্ধ বিগ্রহ থেকে পালানো আত্মরক্ষাকারী গোত্র ও দলছুটরা। এদের মাঝে অনেক ঐ সমস্ত সমাজের অপরাধীও ছিলো, যারা স্বদেশ থেকে পালিয়ে মরুভূমিতে অভয়ারণ্য গড়ে ছিলো। প্রথম শ্রেণীভূক্তরা মেষ পেলে যাযাবর জীবন যাপন করতো, এবং দ্বিতীয় শ্রেণীর লোকেরা শ্রমবিমূখ কামচোর মরুদস্যূ ছিলো। কাফেলা লুট করা এবং রাতের অন্ধকারে জন বসতিতে আক্রমন করা এদের উপজিব্য ছিলো। মানুষ ধরে তাদের দাসদাসীরূপে বিক্রয়ে এদের বিবেকে বাধতোনা। মক্কার দাসদাসীদের হাট এদের অন্যতম প্রধান কেন্দ্র ছিলো। হিজায ও নজ্দবাসীদের আরবী ভাষাও কোনো স্বতন্ত্র ভাষা নয়। হযরত নূহ আঃ এর পুত্র সামের বংশধরদের যে একাধিক ভাষা ছিলো, সে স্যামেটিক ভাষা সমূহের একটির অপভ্রংশই হলো আরবী ভাষা। ইয়ামেনী ক্বাহতানীদের মধ্যে যে প্রচলিত ভাষা ছিলো, তারই একটি “মূলছুট” ভাষা হলো মক্কার ক্বোরেশী ও হিজাযীদের ভাষা। যেটি পরবর্তীতে স্বতন্ত্র আরবী ভাষার রূপ নেয়। এ ভাষার অতীতের কোনো নির্ভরযোগ্য লিখিত প্রমাণও নেই। আজ পর্যন্ত আবিস্কৃত হয়নি। এদের ভাষা চর্চাও মূলতঃ মৌখিক গল্প, রাতের আড্ডা ও কাব্য ভিত্তিক ছিলো। অধিকাংশ কাব্যই ছিলো যৌন বিকৃত অশ্লীলতা পূর্ণ। সে ধরনের কাব্যের সর্বকালে অনস্বীকার্য প্রমাণই হলো “সাবআ’মুয়াল্লাক্বা” বা ঝুলানো সপ্তক। এ নির্লজ্জ্য বিকৃত মানসিকতার কবিতামালাটি আল্লাহ্র ঘর কা’বার দেয়ালে ঝুলানো হয়েছিলো। আরো আশ্চর্যের বিষয় যে, এ ঘৃণ্য বিকৃতির কাব্য মালাগুলো ধর্মীয় বিদ্যালয়-মাদ্রাসা গুলোতে উচ্চ পর্যায়ের আরবী সাহিত্য বলে শতশত বছর ধরে পড়ানো হতো, এবং সম্ভবতঃ এখনো হচ্ছে। ক্বোরআন ও হাদীসের সাথে এগুলোকে পাঠ্য করেই ইসলাম ও তার শেষ নবী সঃ কে আরবী ধর্ম ও আরবী রাসূল বানানো হয়েছে, এবং পরবর্তীতে উমাইয়া, আব্বাসী, ক্বোরেশী খলীফা নামের ল¤পটদের প্রাসাদ ষড়যন্ত্র ও নারী ও সূরার পাপকে লঘু পাপ বানানো হয়েছে। “আমি আরবী, আমার ভাষা আরবী, ক্বোরআনের ভাষা আরবী এবং জান্নাতের ভাষাও আরবী” বলে রাসূল সঃ এর নামে মিথ্যা হাদীস প্রচারিত হয়েছে। আরব ও আরবী শব্দের উৎপত্তি, আরবী ভাষা ও জাতীয়তার ইতিহাস স¤পর্কে সঠিক জ্ঞান অর্জন করতে আগ্রহীদের আমি লিসানুল আরব, তাজুল আরূস্, বিংশ শতাব্দীর বিশ্বকোষ ও বর্তমানে সৌদীআরবের স্কুল কলেজের পাঠ্য পুস্তক “তারীখূল্ আরাবিয়্যুল ক্বাদীম ওয়াস্সীরাতুন্ নাবাবিয়্যাহ্” পড়তে বলবো। তাতে বিষয়টি ¯পষ্ট ভাবে বুঝে আসবে। বিশেষ করে শেষোক্ত বইটি চমৎকার। উক্ত তথ্য সূত্র পড়ে তারপর ক্বোরআন পড়া মাত্র দিবালোকের ন্যায় ১৪১২ বছর ধরে লুক্বায়িত সত্য উদ্ভাসিত হবে। আল্লাহ্র অশেষ রহমতে আখেরী নবী সঃ কে মক্কায় প্রেরণ করে “আরাবিয়্যুম মুবীনে” ক্বোরআন নাযিল না হলে আজ আরবদের ভাষার নাম নিশানাও পৃথিবীর বুকে থাকতো না। আদ, সামূদ ও আইকাবাসীরা যেমন পৃথিবী থেকে আল্লাহ্র আযাব ও গজবে বিলুপ্ত হয়েছে, তাই আরবদের ব্যাপারে ঘটতো। যেমনটি আল্লাহ্র দ্বীন ও রাসূল সঃ এর প্রতিষ্ঠিত আদর্শকে বিকৃত করার ফলে উমাইয়া, আব্বাসী, মূঘল, তুর্কী ও তাতারীদের ব্যাপারে ঘটেছে। আল্লাহ্ মক্কার ক্বোরেশদের সতর্ক করে বলেছেন, وَكَذَّبَ الَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ وَمَا بَلَغُوا مِعْشَارَ مَا آتَيْنَاهُمْ “হে রাসূল, মক্কাবাসীদের পূর্বের জাতিরাও আমার রাসূল ও রিসালাতের অমান্য করেছিলো। স¤পদ ও সমৃদ্ধিতে তোমার জাতি তাদের এক দশমাংশও পৌছেনি।” (সূরা সাবা-৪৫) আমি তাদের ধরা পৃষ্ঠ থেকে এমন নিশ্চিহ্ন করেছি যে কোথাও তাদের নাম নিশানাও নেই। অন্ধ বিশ্বাসে আরবদের বানোয়াট ইতিহাস পড়লে মনে হয় তারাই ধরা পৃষ্ঠে প্রাচীনতম জাতি। যেনো বাবা আদম ও নূহেরও পূর্বপুরুষ! অথচ ভারতবর্ষের মহেনজোদারো, হরপ্পা, তক্ষশিলা ও ময়নামতির ধ্বংসস্তুপে আরবদের চেয়ে হাজারো বছর পূর্বের মুস্তাকবিরদের ধ্বংসাবশেষ আবিস্কৃত হয়ে আছে। আরবদের অভিশপ্ত প্রতিবেশী ইয়াহুদীরা নিজেদের আল্লাহ্র সন্তান ও প্রিয়জন বলে দাবী করে ধ্বংস হয়েছে। তাদের পরিণাম রাসূল সঃ এর মুখে অহি মারফত শোনার পরও আরবরা তাদের অতীত শিক্ষা সংস্কৃতির এমন গাঁজাখোরী কাহিনী রচনা করে, যা পড়লে মনে হয় যেনো তারা বাবা আদম ও নূহ আঃ দেরও আলিফ-বা-তা-ছা-শিক্ষা দিয়েছে। অথচ তারা আল্লাহ্র নিরক্ষর খাতামুন নাবিয়্যীন সঃ এর উপর নাযিল হওয়া ক্বোরআনের একটি সূরা বা তদৃশ কয়েকটি আয়াতও রচনা করতে ব্যর্থ হয়েছে। মিথ্যাভিজাত্যের ঘোড়ারোগে পাওয়া ইবলিসের ভাবশিষ্য ও সন্তান আদ, সামূদ, এরাম, নমরূদ ও ফিরাউনদের অনুকরণে আরব ক্বোরেশীরা সে সবই করলো, যাদের লোমহর্ষক পরিণাম তারা নামাজে পাঠ করেছে প্রায় আটশ বছর ধরে। আল্লাহ্ তাঁর ক্বোরআনকে নিজ দায়িত্বে সংরক্ষণ করে মানব জাতির চুড়ান্ত মুক্তি আন্দোলনের পথ উম্মুক্ত রেখেছেন। এখন বিপন্ন মানব জাতির ইচ্ছা। তারা চাইলে মুক্তির পথ বেছে নিতে পারে। চাইলে জাহান্নামেও আত্মাহুতি দিতে পারে। এখন গোটা মানব জাতি ধ্বংসের কানায় দাঁড়ানো। আর একটি ভুল পদক্ষেপই কাম তামাম করে দিবে। সে দুঃস্বপ্নময় পরিণাম থেকে পরিত্রাণের পথ নির্দেশ দেয়ার একটি স্পষ্ট সঠিক প্রচেষ্টা এ লেখনী। চৌদ্দশ বারো বছর যাবৎ জমা হওয়া ভুল ও ভ্রান্তির মরিচা সাফ্ করার জন্য আমাকে অনিচ্ছা সত্বেও প্রেম-প্রীতি ও তোষণ-পোষণের মিষ্টি ভাষা বাদ দিয়ে অত্যন্ত অপ্রিয় ক্ষয়িঞ্চু ভাষা ও বাগধারা বেছে নিতে হয়েছে। কারণ মিষ্টি ভাষায় পাপিষ্ঠ আত্মার মরিচা ঝরেনা। তাই আল্লাহ্ তাঁর রাসূল সঃ কে সতর্ক করেছেন, তোমার মক্কাবাসী মুস্তাকবিররা আশা করে যে, তুমি তাদের ব্যাপারে সত্য প্রকাশে এতটুকু “তেল” মাখন লাগিয়ে তোষামুদ করো। তা হলে তদ্রুপ তারাও তোমার ব্যাপারে “তেল” মাখন প্রয়োগ করবে। খবরদার তুমি তা কখনো করবে না।
فَلَا تُطِعِ الْمُكَذِّبِينَ - وَدُّوا لَوْ تُدْهِنُ فَيُدْهِنُونَ -وَلَا تُطِعْ كُلَّ حَلَّافٍ مَّهِينٍ - هَمَّازٍ مَّشَّاءٍ بِنَمِيمٍ - مَّنَّاعٍ لِّلْخَيْرِ مُعْتَدٍ أَثِيمٍ - عُتُلٍّ بَعْدَ ذَٰلِكَ زَنِيمٍ
“কখনো তুমি মিথ্যুকদের কথা শুনবেনা। এরা চায় যে, তুমি ওদের তেল মাখো, তাহলে ওরাও তেল মাখবে। এরা মিথ্যা শপথকারী নিকৃষ্ট। অবিরত কুৎসা রটনাকারী, ভাল কাজে বাধা দানকারী, সীমালঙ্ঘনকারী পাপিষ্ঠ। কর্কশ এবং বিজন্মাও। (ক্বলম-৮-১৩) আরবীতে তেল, মাখন, গ্রীজ ও তদৃশ পিচ্ছিলকারী জিনিসকে “দুহ্ন্” বলা হয়। “আল হাক্কু র্মুরুন” সত্য অবশ্যই তেতো। সত্যের ধারক, বাহক ও প্রচারকরা কখনো সত্য প্রকাশে দ্বিধার শিকার হবে না। আল ক্বোরআনের “মুজিয এবং মু’জিযা” বা তার সর্বকালের অপ্রতিদ্বন্দি¡তার একটি অকাট্য প্রমান আমি এখানে তুলে ধরছি। তা’হলো আল্ ক্বোরআনে আরবদের বহুবচন “আল আ’রাব” ব্যতীত অন্য কোনো দ্বিতীয় শব্দ নেই। অর্থাৎ আরববাসী একব্যক্তি “আরবী” এবং বহু বচন আরবরা “আল আ’রাব”, অথচ আল ক্বোরআনে আরবী ঘোড়া ও উটের বহু প্রতিশব্দ রয়েছে। অথচ কি তাজ্জবের বিষয় যে আরবের বহু বচন “আল আ’রাব”, ব্যতীত অন্য কোনো প্রতিশব্দ নেই! ক্বোরআনে মুস্তাদআফীন ব্যতীত অপরাপর সকল আরবদের ‘আল আ’রাব’ নাম করে আল্লাহ্ তাঁর রাসূল সঃ কে জানিয়ে দিয়েছেন যে, “আরবরা ঈমান আনেনি। ওরা কেবল আত্মসমর্পন করেছে মাত্র”। এরপর তারা মুস্তাদআফ্দের ইমামতের অধীনে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করলেই তাদের ইসলামে প্রবেশ স্বার্থক হবে। অন্যথা সব বিফল। যায়দ ও উসামাহর আমারাত ও ইমামাত তারই পরীক্ষা। যে পরীক্ষায় রাসূল সঃ এর ইন্তেকালের পর আরবরা ফেল্ করেছে।
ইসলামে সত্য প্রতিষ্ঠায় আত্মরক্ষার সংগ্রাম ও প্রচেষ্টা “জিহাদ”। সে অর্থে ইসলামী আন্দোলন প্রতিরক্ষামূলক জিহাদ। আগ্রাসী যুদ্ধবাজী ইসলামে নেই। তাওহীদ প্রতিষ্ঠায় সামনের বাধা অপসারণ করার সসীম যুদ্ধ ইসলামে বৈধ। যা সত্য প্রতিষ্ঠায় আত্মরক্ষা। সত্যের ছত্রছায়ায় আত্মপ্রতিষ্ঠা ও গোত্রীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার কোনো বৈধতা ইসলামে নেই। আল্লাহ্র কোনো নবী রাসূল তা করেননি। আখেরী নবী সঃ এর বদর, উহুদ, আহ্যাব, মক্কা বিজয়, তায়েফ অভিযান ও মৌতায় যায়দের নেতৃত্বে জা’ফর ও ইব্ন রাওয়াহাদের প্রেরণ, সবই সত্য প্রতিষ্ঠায় আত্মরক্ষার সমর নীতি। তাঁর মৃত্যুশয্যায় উসামাহর বাহিনী গঠন ও তার প্রেরণ তারই ধারাবাহিকতা মাত্র। কিন্তু আবু বকর উমরদের “আল্ আইম্মাতু মিন ক্বোরেশ” ভিত্তিক অভিযানসমূহ সত্যের ছত্রছায়ায় আত্মপ্রতিষ্ঠা, গোত্র ও জাতীয় প্রতিষ্ঠার নামান্তর। এবং তারপর উমাইয়া আব্বাসীদের যুদ্ধবিগ্রহ সত্যের নামাবলী পরে নির্লজ্জ বর্বরদের রক্ত পিপাসু পাশব ভোগবাদের লড়াই বই কিছুই নয়। এটাকেই আল্লাহ্ সূরা মুহাম্মদের ১২ নং আয়াতে অপূর্ব শব্দ ও বাক্য শৈলীতে বর্ণনা করেছেন। আয়াতের প্রথমার্ধে রাসূল সঃ ও তার মুস্তাদআফ্দের জিহাদ ও দ্বিতীয়ার্ধে পরবর্তীদের চরিত্রের চিত্রাঙ্কন করেছেন। রাসূল সঃ এর ভাষায় ওদের “মুলকুন আদুদ্” কুকুরে কামড়ানো সাম্রাজ্যবাদ বলে অভিহিত করেছেন। আরবী ভাষা, সাহিত্য ও ব্যাকরণে কিছু শব্দের একবচন ও তার বহুবচনের নমুনা নিম্নে দেয়া হলো।
মূলধাতু একবচন অর্থ রূপান্তর বহুবচন অর্থ
نبط নাবাতুন নাবাতী نباط ا আন্বাতুন নাবাতীরা
حدث হাদাসুন্ ঘটনা أحداث আহ্দাসুন ঘটনাবলী
قول ক্বাউলুন কথা أقوال আক্বওয়ালুন কথাসমূহ
حال হালুন অবস্থা أحوال আহ্ওয়ালুন অবস্থাবলী
صوت সাওতুন শব্দ أصوات আসওয়াতুন শব্দাবলী
مال ্ মালুন সম্পদ أموال আমওয়ালুন স¤পদসমূহ
خبر খাবরুন সংবাদ أخبار আখ্বারুন সংবাদসমূহ
عرب আরাবুন আরব (?) أعراب আ’রাবুন্ আরবরা (?)
মু’মিনরা অন্যায়কারীদের তোষামোদ করতে পারেনা। আল্লাহ্ তাঁর রাসূলকে দিয়ে আমাদের তা শিখিয়ে দিলেন। তাই আমি আমার এ লিখনীতে ঈড়ৎৎড়ংরাব বা ক্ষয়কারী বাগধারা ব্যবহার করেছি। যাতে ১৪১২ বছরের মিথ্যার ধ্বংসস্তুপ খনন করে মহেঞ্জোদারো হরপ্পার মতো সত্যের নিদর্শন বের করা যায়। বোখারীর বর্ণনা অনুযায়ী দেখা যায় যে, আবু বকর ও উমরের আচরণের বিরুদ্ধে সূরা হুজুরাত অবতীর্ণ হওয়ার পরও রাসূল সঃ এর মৃত্যুশয্যায় কাগজ কলম চাইলে উমর পুনঃ সে একই দৃশ্যের সৃষ্টি করে। অপর দিকে বোখারীর বর্ণনায়ই আমরা দেখতে পাই যে মদীনার সাবিত ইব্ন্ কায়স্ আন্সারী কোনো কারণে কখনো রাসূল সঃ এর সাথে উচ্চ স্বরে কথা বলেছিলো। সূরা হুজুরাত নাযিল হলে সে আনসারী মনোবেদনায় বিধ্বস্ত হয়ে ঘরে বসে যায়। দু’হাটুর মাঝে মাথা নিচু করে অনুশোচনায় ভেঙ্গে পড়ে। ক’দিন যাবৎ রাসূল সঃ তাকে দেখতে না পেয়ে তার স¤পর্কে লোকদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। জনৈক আনসারী জানায় যে সে গিয়ে রাসূল সঃ কে সাবিত্ ইব্ন্ কায়সের সংবাদ জানাবে। সে গিয়ে সাবিতকে ঐ অবস্থায় দেখতে পায়। সাবিত জানায় যে তার জীবন বরবাদ হয়ে গিয়েছে। তার পরিণাম জাহান্নাম। কারণ, সে রাসূল সঃ এর সামনে স্বর উচু করে কথা বলেছে। রাসূল সঃ তার অবস্থা জানতে পেরে তাকে খবর পাঠান যে আল্লাহ্ তার তওবা ক্ববুল করেছেন। সে জাহান্নামের পথ থেকে প্রত্যাবর্তন করেছে। মক্কার মুহাজির মুস্তাকবির ও মাদীনার আনসারী মুস্তাদআফদের মাঝে এ পার্থক্য বরাবরই দেখা যায়। রাসূল সঃ এর সাথে যে বা যারা যে যুগ ও যে জায়গায় বেআদবী করবে, তাদের আমল বরবাদ ও নিস্ফল। এ’টাই ক্বেয়ামত পর্যন্ত সকল ঈমানদারদের জন্য শিক্ষা। রাসূলরা রাসূল। তাঁদের পরিবার পরিজন, পিতা হোক, মা হোক, স্ত্রী হোক, শ্বশুর শ্বাশুড়ী হোক, হোক ভাই বোন, সবার জন্য একই নির্দেশ। রাসূলকে রাসূলের মতো মানতেই হবে। “পীর মানেনা মা’য়, পীর মানেনা গাঁয়, ও পীর মানেনা ঘরের জানানায়” এ সূত্র এখানে অচল। যারা করবে, তারা ইব্রাহীম আঃ এর পিতা, নূহ আঃ এর স্ত্রী ও পুত্র এবং লূত আঃ এর স্ত্রীর শ্রেণীভূক্ত। নবী রাসূলদের পিতা-মাতা, তাঁদের পিতা মাতা অবশ্যই। তাঁদের স্ত্রীরা সে সুবাদে “উম্মাহাতুল মোমেনীন” বা ঈমানদারদের মা, যদি তারা নিজেরা ঈমানদার হয়। তারা নবুওত রিসালাতের মা নয়। আল্লাহ্র দ্বীন মানায় তারা সবাই আল্লাহ্র দাস-দাসী। না মানলে তাদের জন্য দ্বিগুন শাস্তি, যেমন মানলে দ্বিগুন পুরস্কার। তাই সকল আব্বাজান, আম্মাজান, দাদাজান, দাদীজান, নানাজান, নানীজান, সাবধান! যৌন তাড়নায় পিতা-মাতা ও স্বামী-স্ত্রী হওয়া আলাদা। আর ঈমানী তাগিদের আত্মীয় হওয়া আলাদা। প্রথম শ্রেণী রক্তীয়। দ্বিতীয় শ্রেনী আত্মীয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে রক্তীয়রা দ্বীন ইসলামের শত্রু। আত্মীয়রা দ্বীন ইসলামের ভাই। “ইন্নামাল মু’মিনুনা ইখ্ওয়াহ্” মু’মিনরাই শুধু ভাই ভাই, সূরা হুজুরাতের ব্যতিক্রমহীন শিক্ষা। তাই, ক্বোরেশে ক্বোরেশে ভাই ভাই, আরবে আরবে ভাই ভাই, হিন্দি হিন্দি ভাই ভাই ও বাঙ্গালী বাঙ্গালী ভাই ভাই, আল্লাহ্ ও রাসূলদের শিক্ষায়, নাই নাই!? এ মহান সত্য জানা ও মানা ইসলাম ও ঈমান। মনে প্রাণে না মেনে ঠেলায় পড়ে গ্রহণ করা হলো ইসলাম। অর্থাৎ আত্মসমর্পন। তাই আল্লাহ্ অন্তর্যামী বলেন,
قَالَتِ الْأَعْرَابُ آمَنَّا قُل لَّمْ تُؤْمِنُوا وَلَٰكِن قُولُوا أَسْلَمْنَا وَلَمَّا يَدْخُلِ الْإِيمَانُ فِي قُلُوبِكُم
“আরবরা বলেছে যে, আমরা ঈমান আনলাম, ঈমান এনেছি। তুমি বলো, বরং তোমরা ঈমানহীন আত্মসমর্পণ করেছো। এখনো তোমাদের অন্তরে ঈমান প্রবেশ করেনি।” (সূরা হুজুরাত-১৪) এ’ আরবরা কি সকল আরব দ্বীপবাসী? না বেদুঈনরা শুধু? “আল্ আইম্মাতু মিন ক্বোরেশ”এর প্রবক্তা নব্য ক্বোরেশী সাম্রাজ্যবাদীরা আরবী ব্যাকরণ ও বাগধারা পাল্টিয়ে সাত আসমানের উপর থেকে নাযিল হওয়া তাদের চেহারাকে আবৃত করার লক্ষ্যে নিজেরা সোজা হয়ে তওবা করে খাঁটি ঈমানদার না হয়ে আল্লাহর কালামকেই বাঁকা করার নিস্ফল প্রয়াস পেয়েছে। ফলে তারা নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে। কিন্তু আল্লাহর কিতাব স্বস্থানে দাঁড়িয়ে আছে, وَإِن تَتَوَلَّوْا يَسْتَبْدِلْ قَوْمًا غَيْرَكُمْ ثُمَّ لَا يَكُونُوا أَمْثَالَكُم “যদি তোমরা মুখ ফিরাও, তোমাদের বদলিয়ে অন্য জাতিকে উন্নত করবো, যারা তোমাদের স্বভাবের হবে না” কে চূড়ান্ত সত্য প্রমাণ করতে। কি আশ্চর্যজনক এ ক্বোরআনুম মাজীদুন ফী লাউহিম মাহফুজ! কার সাধ্য লৌহে মাহফুজে রক্ষিত ক্বোরআনকে বদলায়? যারাই একে বদলাতে চাইবে,
১৬
212081
২৩ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ০৬:৩৭
মুহাম্মদ_২ লিখেছেন : তারাই বদলী হয়ে যাবে। কই আদ, সামূদ, এরাম, মূঘল, ও পাঠান মুস্তাকবির সাম্রাজ্যবাদীরা? আরবী ব্যাকরণের সাধারণ নিয়ম হলো মূল ধাতুর প্রথমে আলিফ্ এবং শেষ অক্ষরের পূর্বে আলিফ্ যোগ করলেই একবচন থেকে বহু বচন হয়ে যায়। যেমন أنباط، نبط এবং أعراب عرب। কিন্তু মানুষ যখন তার মৌলিক উপাদান হারিয়ে ফেলে, তখন সে মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে নিজের কথায়ই ধরা খেয়ে যায়। তাজুল আরুস্ ও লিসানুল আরবের প্রনেতাদ্বয় তাদের পূর্বে প্রচলিত মিথ্যাকে বাঁচাতে গিয়ে নিজেদের কথায় ধরা পড়ে যায়। অন্যান্য প্রতি শব্দের গঠন ও সন্ধি বিচ্ছেদ তারা ঠিকই করে। আরব শব্দের কাছে গিয়েই তাদের পা পিছলে যায়। তাও মৌখিক। প্রমাণ ভিত্তিক নয়। মুখে তাদের জড়তা। কথায় কোনো প্রত্যয় নেই। বলে যে “নাবাত” থেকে যেমন “আন্বাত” হয়, তেমন হয়তো “আরব” থেকে “আ’রাব” হবে না। কেনো? কারণ কথিত আছে যে, বিজয়ের পর কিছু বেদুঈন রাসূল সঃ এর নিকট সাদ্ক্বা যাকাৎ চাইতে এসেছিলো! তারাই আ’রাব। কি চমৎকার মিথ্যা কথা! আল্লাহ ক্বোরআনে বলেছেন, আরবরা বলছে, আমরা ঈমান এনেছি। এখানে তো “সাদ্ক্বা যাকাত নিতে এসেছে” উল্লেখ নেই? এখানে গোটা আরব জাতির ঈমানী দৈন্যতার ¯পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। তাও আল ক্বোরআনের ভাষায়। তারপর আরো ব্যাখ্যার্থে আল্লাহ বলছেন, “রাসূল! বলে দাও, তোমরা ঈমান আনোনি। তোমরা শুধু নিজেদের পরাভূত অবস্থায় সমর্পন করেছো। এখনো তোমাদের অন্তরে ঈমান প্রবেশ করেনি।” এখানে আছে যাকাৎ সাদ্ক্বার কোনো ইংগিত? ব্যাপারটি হয়েছে, “ঠাকুর ঘরে কে? আমি কলা খাই না।” নিজের কথাই প্রমাণ করলো যে, সে কলা খেতেই মন্দিরে প্রবেশ করেছে। ভাষার স্বাতন্ত্র্যে আরবী ভাষা রাসূল সঃএর জন্মের অতিরিক্ত একশত বছর পূর্বে স্বাক্ষরে পৃথক ভাবে আত্মপ্রকাশ করে। তার পূর্বে ইয়ামেনী কাহ্তানীদের অধীনে তাদেরই “মিস্মারী” বর্ণমালায় আরবী লিখিত ও পঠিত হতো। তারপর ক্রমবিকাশে হিজায ও নজদবাসীরা পৃথক বর্ণমালা আলিফ্-বা-তা-ছা দিয়ে তাদের ভাষা চর্চা আরম্ভ করে। রাসূল সঃ এর রিসালাত প্রাপ্তি ও ক্বোরআন নাযিলের পূর্ব পর্যন্ত এ আরবী আঞ্চলিক ভাষা রূপে আরবদের গোত্রীয় খুনাখুনী, এক গোত্রের উপর অপর গোত্রের মিথ্যা আস্ফালন, দেব-দেবীর পুজা, প্রেম গাথা ও অশ্লীল কাব্যেই সীমিত ছিলো। কা’বা ঘরের দেয়ালে ইমরুল ক্বাইসদের ঝুলানো “সাব্আ মূয়াল্লাক্বা” তার অন্যতম প্রমাণ। যা পূর্বেও উল্লেখিত হয়েছে।
রাসূল সঃ খাতামুন নাবিয়্যীন মুহাম্মদ সঃ এর উপর অবতীর্ণ ক্বোরআন ও তার দ্বীনই আরবদের সাত আকাশের ধন। ক্বোরআন ও তার বাগধারা এবং তার ধ্বজা দ্বীনকে ধরেই ওদের সত্যিকার উন্মেষ হয়েছিলো। পরে সূরা তওবায় বর্ণিত ৯৭ আয়াতে অধঃপতিত হয়ে আরবরা রাসূল সঃকে আরবী, ইসলামকে আরবী দ্বীন এবং প্রায় আল্লাহ্কেই (?) আরবী করনের ধৃষ্ঠতা পূর্ণ মহাপাপের পরিণামে বর্তমানে ইয়াহুদী-খৃষ্টানদের পিঞ্জিরায় আবদ্ধ। পৃথিবীর প্রত্যেক শয়তানে ভরকরা জাতিরাই ভাষা ও গোত্রের মূর্তি তৈরী করে নিজেদের অভিশপ্ত করেছে, করছে। মুসলমান নামধারী স¤প্রদায় তাদের কালেমায় “আশ্হাদু আন্না মুহাম্মাদন আব্দুহু ওয়া রাসূলুহু” অর্থাৎ “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে মুহাম্মাদ সঃ আল্লাহর দাস ও রাসূল” বলার পরও ভেবে দেখে না, কই, মুহাম্মদ সঃ এর তো আরবী, ক্বোরেশী, হাসেমী, সুন্নী বা শিয়া হওয়ার কোনো উল্লেখ দূরে থাক, তার ইংগিতও নেই কালেমায়। মৃত ব্যক্তিদের নামে মুস্তাকবির ইবলিসের মানব সন্তান ও শিষ্যরা এ কাজটি করে থাকে। ধর্মীয় ব্যক্তি, নবী রাসূলদের নামে পূর্বে ইয়াহুদীরা এ পাপের মহাগুরু। আখেরী নবী সঃ এর বিদায়ের পর ঐ বিদাআতকে পুনঃ প্রতিষ্ঠায় ক্বোরেশী চার খলিফা, বারো খলিফা, বারো ইমাম, আশারা মুবাশ্শারা ও জুমার খুৎবায় পঠিত দশচক্র তার গুরু, এবং বর্তমান বিশ্বে সরল বিশ্বাসে গড্ডালিকায় ভাসা সাধারণ মুসলমানরা তাদের শিষ্য। এখানে হাস্য¯পদ হলেও আমাদের ক্ষুদ্র বাংলাদেশের একটি অতি সা¤প্রতিক সিন্ড্রমের দৃষ্টান্ত তুলে ধরা যেতে পারে। বর্তমানে পত্র পত্রিকা এবং ব্যানারে পোষ্টারে দেখা যায় “হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী শেখ মুজিব”। মুজিবের মৃত্যুর পর জন্মানো এ চাটুকার কায়েমী স্বার্থবাদী শ্রেণী ভেবেও দেখালোনা যে ওদের উচ্চারিত নামটির প্রথমেই শেখ শব্দটি রয়েছে। এটি একটি অবাঙ্গালী শব্দ। মুজিবুর রহমানের আত্মীয় কাজী মাহবুব উল্লাহ রচিত বই “সেই যে আমার নানা রঙের দিনগুলি” পড়লে যে কোনো বিবেকবান পাঠক বুঝবে যে, শেখ মুজিবের পূর্ব পুরুষ বাহির থেকে আসা এক ব্যক্তি ছিলো। অধ্যাপক গোলাম আযমের দাদার বাবা শেখ সুফী শাহাবুদ্দিনও বাংলার বাহির থেকে আসা এক সাধক ব্যক্তি ছিলো। বড়জোর দেড় দু’শ বছর পূর্বে এরা মুস্তাকবির মুসলিম নামধারী শাসক মুঘল পাঠান দস্যুদের অধর্ম ও অত্যাচারে দেশ ত্যাগ করে বাংলাদেশে এসে যায়দ, বেলাল, আম্মার, সুহাইব ও সালমানদের সাম্যের ইসলামের আদর্শ নিয়ে তা প্রচার করেছে। মনে রাখতে হবে যে তখন ক্বোরেশী মন্দিরবাদীদের ন্যায় ব্রাহ্মণ্য বর্ণবাদ ও হিন্দু বৈষম্যবাদের যাঁতাকল এদেশের মুস্তাদআফ্দের নি®েপষিত করেছিলো। ফরীদপুরে শেখ মুজিবের পূর্ব পুরুষদের হিন্দুদের সাথে দস্তুর মতো লড়াই করে অস্তিত্ব টিকাতে হয়েছে এ কথা প্রয়াত শেখ মুজিব এক একান্ত সাক্ষাতে আমার কাছে উল্লেখ করেছে। সে সাক্ষাতে অধ্যাপক গোলাম আযমের প্রয়াত চাচা শফিকুল ইসলাম উপস্থিত ছিলো। তারা দু’জন কলকাতায় পড়া লেখার সময় একত্র মুসলিম ছাত্রলীগ করেছে। এর উল্লেখ পরে এক প্রসঙ্গে কিছুটা বিস্তারিত লিখবো আশা করি। এখানে প্রসঙ্গের সাথে সামঞ্জস্য রেখে উল্লেখ করছি, যে জাতীয় জীবনে হীনস্বার্থকে পাকাপোক্ত করার জন্য যারা শেখ মুজিবকে হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী বলে গলাবাজী করছে, তাদের খোঁজ নিলে দেখা যাবে যে, তাদের সন্তান সন্তুতিরা ইংরেজী মাধ্যমে লেখা পড়া করছে। ইউরোপে আমেরিকায় বসবাস করছে, ঘরে বাংলার চেয়ে অনেক বেশী হিন্দী ও ইংরেজী ডেক বাজাচ্ছে এবং সে তালে তালে নারী পুরুষ নির্বিশেষে বানরের মতো দেহ ও হাত পা নাড়াচ্ছে। জাতীয়তাবাদের পুরাতন সুরার স্বাদ ও গন্ধ সব যুগে এক। তা’ ইয়াহুদী, খৃষ্টান, আরবী ও বাঙ্গালী যা-ই হোক। ঈমানের সাথে চোখ বন্ধ করার যাদের যোগ্যতা রয়েছে, তা'রা দিব্যি দেখতে পায় যে, প্রয়াত নবী রাসূল ও তাঁদের অনুসারী মানুষরা যেমন মহা তৃপ্তিতে অপর পাড়ে চ‚ড়ান্ত পুরস্কার লাভের জন্য ক্বেয়ামতের অপেক্ষা করছেন, তেমনি মানুষকে পৃথিবীতে রক্ত, বর্ণ, গোত্র, ভাষা, ও রাষ্ট্রীয় সীমান্তে বিভক্ত ও আবদ্ধকারী মৃত ইয়াহুদী, খৃষ্টান, আরব, তুর্কী, মুঘল, পাঠান, ব্রাহ্মণ্যবাদী ও বাঙ্গালী প্রভৃতির আত্মা চরম আযাব ও উৎকণ্ঠায় কৃত পাপের জন্য অনুতাপ ও আর্তনাদ করছে, এবং মহাবিচারের দিনের মহাবিপদের কথা ভেবে, মাত্র আর একটি বার পৃথিবীতে তাদের কৃত কর্মের প্রায়শ্চিত্তের জন্য ফেরত আসতে বিলাপ করছে। فَلَوْ أَنَّ لَنَا كَرَّةً فَنَكُونَ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ “যদি আর একটি বার আমাদের পুনঃ পৃথিবীতে পাঠানো হতো, তাহলে আমরা অবশ্য অবশ্যই খাঁটি ঈমানদার হয়ে ফিরতাম।” (সূরা শুআ’রা-১০২) আল্লাহ্ মুহাম্মদ সঃ কে শেষ নবী রূপে পাঠিয়ে তার দ্বীন ইসলামকে পূর্ণ করেছেন। মুহাম্মদ সঃ এর পূর্ণ আদর্শে যারা ঈমান আনে তারাই পূর্ণ ঈমানদার বা মু’মিন। যারা স্বার্থসিদ্ধির পথ দেখে, বা পরাজয়ের অবশ্যম্ভাবীতায় ইসলামে প্রবেশ করেছিলো, তারা সূরা হুজুরাতে বর্ণিত আল্লাহ্র পরিভাষায় اَسلمنَا “আস্লাম্না” অর্থাৎ মেনে নিলাম বা আত্মসমর্পণ করলামের আওতাভুক্ত ছিলো। পূর্ণ ঈমানে প্রবেশকারী মু’মিন ছিলোনা তারা। মক্কা বিজয়ের পর থেকে রাস‚ল সঃ এর ইন্তেকালের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত যে আরব মরুর লোকেরা ইসলামে প্রবেশ করেছিলো, তারা দু’চারজন বাদে বাদবাকীরা “আস্লাম্না” শ্রেণীভুক্ত ছিলো। একমাত্র যায়দ, বেলাল, আম্মার, সুহাইব, খাব্বাব ও সালমন শ্রেণীর মুস্তাদআফ্রাই রাসূল সঃএর মাপের পূর্ণ মুসলিম ও মু’মিন ছিলো। তাই আল্লাহ্র হুকুম, শিক্ষা ও মান দন্ডে উত্তীর্ণ মুস্তাদআফ মাতা পিতার যোগ্যতম যুবক সন্তান উসামাহ্ ইব্ন্ যায়দকে রাসূল সঃ তাঁর মৃত্যুর পূর্বে তাঁর অনুসারীদের আদর্শ আমীর ও ইমাম নিযুক্ত করে যান, এবং উসামাহর নেতৃত্ব অমান্যকারীদের অভিশাপ করে যান। এ সন্ধিক্ষণের সূ² বিচারে রাসূল সঃ এর মৃত্যুর পর প্রতিষ্ঠিত ক্বোরেশী বারো খলীফা বা বারো ইমামের উমাইয়া আব্বাসী ও সুন্নী শিয়া দাজ্জালী ফিৎনা ও তার ১৪১২ বছরের ফলাফল বুঝতে হবে। তা’ না হলে পুনঃ উসামাহ বিন্ যায়দের স্থলে বর্তমান বিশ্বে ইরানী শিয়া উত্থানের বিরুদ্ধে দাঁড় করোনো আফ্গানী তালেবানদের সুন্নী আরবী সন্ত্রাসী উসামা বিন লাদেনের বিভ্রান্তিতে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিন্ লাদেন ও মোল্লা উমররা যদি খাঁটি ইসলামী হয়ে থাকে, তাহলে তাদের ¯পষ্ট ঘোষণার মাধ্যমে সুন্নী আফগানী চক্র থেকে বের হয়ে ক্বোরেশী, আবরী, সুন্নী ও আফগানী গোত্র ও ফের্ক্বা মুক্ত হতে হবে। কারণ ইরানী শিয়া খোমেনী, খামেনীরা ১৪১২ বছর পূর্বে রসূল সঃ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত মুস্তাদআফ নেতৃত্বের মিথ্যা ধুয়া তুলে বিশ্বে ইসলামী বিপ্লবের পিয়াসীদের প্রতারিত করেছে। অতএব অত্যন্ত সতর্কতা অবলম্বন করে এবার আমাদের পা ফেলতে হবে। কারণ এবারের সফলতা যেমন ক্বেয়ামতের মতো চূড়ান্ত হবে, ব্যর্থতাও ক্বেয়ামতের পূর্বে ক্বেয়ামতের মতো চূড়ান্ত হবে। ঈমানের মূল গোড়ায় ফেরৎ নেয়ার উদ্দেশ্যেই আমি সূরা হুজুরাতের আস্মানী শিক্ষায় পাঠকদের পূনঃ নিয়ে যাচ্ছি। প্রথম শ্রেণীর ঈমানী মেধা দিয়ে এ অধ্যায়টি পড়তে ও বুঝতে সচেষ্ট হতে হবে।قَالَتِ الْأَعْرَابُ آمَنَّا قُل لَّمْ تُؤْمِنُوا وَلَٰكِن قُولُوا أَسْلَمْنَا وَلَمَّا يَدْخُلِ الْإِيمَانُ فِي قُلُوبِكُمْ
“আরবরা বলছে যে তারা ঈমান এনেছে। রাসূল বলে দাও তোমরা ঈমান আনোনি। তোমরা বরং বলো, আমরা আত্মসমর্পণ করেছি। এখনো তোমাদের অন্তরে ঈমান প্রবেশ করেনি।” এখানে “আরব দ্বীপের সকল অধিবাসীদেরই এ আয়াতে “আ’রাব” বলে সম্বোধন করা হয়েছে। কারণ, “আ’রাব” ব্যতীত আরব শব্দের অন্য কোনো বহুবচন নেই। আল ক্বোরআন দিয়ে আল্লাহ্ তার সকল সম্ভাবনা শেষ করে দিয়েছেন। পরে বর্ণ চোরেরা তাদের কুৎসিত চেহারাকে আড়াল করার নির্লজ্জ প্রচেষ্টায় যে সমস্ত মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছে, তার কোনো ভিত্তি নেই। সবই অসার।
আরবী ভাষার অমরত্ব ও চির প্রতিষ্ঠার ভিত্, আল্লাহর কালামে আল্লাহ্ আল্ ক্বোরআনে সূরা শূ’আরার ১৯৮ আয়াতে “আজমি” শব্দের বহুবচন আ’জামিয়্যীন” উল্লেখ করে স্বয়ং আল্লাহ্ সূরা ফুসসিলাতের ৪৪ আয়াতে পূনঃ আরবী বাগধারায় আরবী-আজমীর এক বচন ও বহু বচনের ব্যাকরণ বিধি বলে দিয়ে সাধারণ আরবদের চারিত্রিক বক্রতার উল্লেখ করে দেন, এবং বিশ্বের মানব গোষ্ঠীকে জানিয়ে দেন যে, “আমি যদি ক্বোরআন কোনো অনারবের উপর অবতীর্ণ করতাম এবং সে যদি তা আরবদের পড়ে শোনাতো, তা’হলে আরবরা তাতে ঈমান আনতো না।” রাসূল সঃ এর বিদায়ের পূর্বে নাযিল হওয়া দীর্ঘ সূরা তওবায় আল্লাহ্ মক্কা মদীনা ও তায়েফবাসীসহ সকল আরবদের চূড়ান্ত চিত্র অঙ্কন করে দেন চিরদিনের জন্য। তাই সূরা তওবার অপর নাম “ফাহিদা” বা কেলেঙ্কারী ও গোমর ফাঁক। আল্লাহ্র বর্ণনায় শুধু যায়দ, বেলাল ও আম্মারসহ অন্যান্য মুস্তাদআফবৃন্দ এ নিন্দাবাদ থেকে মুক্ত। স্বয়ং আল্লাহ্ই ক্বোরআনে বিভিন্ন প্রসঙ্গে বিভিন্ন স্থানে এদের প্রশংসা করে রাসূল সঃ কে সর্বদা এদের ব্যাপারে যতœবান হতে তাগিদ দেন ولا تعدوا عيناك عنهم , ওদের উপর থেকে তোমার দৃষ্টি সরাবেনা। আল্লাহ্ সূরা তওবায় দ্ব্যর্থহীন ভাষায় আরবদের প্রধানতঃ চারভাগে বিভক্ত করেন। তিন ভাগ বাদের খাতায়। একভাগ মাত্র গ্রহণের খাতায়। ১. ৯৭ আয়াতে বলা হয়, আরবরা কুফ্র ও মুনাফেক্বীতে চরম। এবং আল্লাহ্র রাসূলের উপর অবতীর্ণ দ্বীনের সীমারেখা সমূহ স¤পর্কে অজ্ঞতায় প্রথম শ্রেণীর। আল্লাহ্ সর্বজ্ঞ প্রজ্ঞাময় রূপেই আরবদের ব্যাপারেই এমত প্রকাশ করছেন। الْأَعْرَابُ أَشَدُّ كُفْرًا وَنِفَاقًا وَأَجْدَرُ أَلَّا يَعْلَمُوا حُدُودَ مَا أَنزَلَ اللَّهُ عَلَىٰ رَسُولِهِ وَاللَّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ
২. আরবদের আরেক শ্রেণী রয়েছে যারা আপাততঃ দৃষ্টিতে মুসলিম হওয়া সত্বেও আল্লাহ্র পথে দানকে জরিমানা জ্ঞান করে এবং তোমাদের বিপর্যয় চক্রের অপেক্ষায় রত। ওদের উপরই অভিশপ্ত চক্রের পতন হোক। আল্লাহ্ সর্বশ্রোতা জ্ঞানী। (৯৮) وَمِنَ الْأَعْرَابِ مَن يَتَّخِذُ مَا يُنفِقُ مَغْرَمًا وَيَتَرَبَّصُ بِكُمُ الدَّوَائِرَ عَلَيْهِمْ دَائِرَةُ السَّوْءِ وَاللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ
৩.তোমাদের চার পাশের আরবরা, এমন কি মদীনাবাসী আরবদের মাঝেও বহু মুনাফিক্ব রয়েছে। ওরা মুনাফেক্বী রোগে চিরাক্রান্ত। রাসূল, তুমি তাদের চেনো না। আমি তাদের চিনি। আমি এদের ইহকাল পরকালে দু’বার শাস্তি দেবো। তারপর তাদের কঠিন শাস্তির বিবরে নিক্ষেপ করবো। (১০১) وَمِمَّنْ حَوْلَكُم مِّنَ الْأَعْرَابِ مُنَافِقُونَ وَمِنْ أَهْلِ الْمَدِينَةِ مَرَدُوا عَلَى النِّفَاقِ لَا تَعْلَمُهُمْ نَحْنُ نَعْلَمُهُمْ سَنُعَذِّبُهُم مَّرَّتَيْنِ ثُمَّ يُرَدُّونَ إِلَىٰ عَذَابٍ عَظِيمٍ
৪. আরবদের মাঝে একশ্রেণী রয়েছে যারা সর্বান্তকরণে ঈমান এনে পরকালের উপর বিশ্বাস স্থাপন করেছে। এরাই আল্লাহ্র নৈকট্য ও রাসূলের শুভেচ্ছা অর্জনের উদ্দেশ্যে তাদের ধন স¤পদ ব্যয় করে থাকে। সবাই জেনে রাখো, এটা বাস্তবিকই তাদের আল্লাহর নৈকট্য অর্জন। অচীরেই আল্লাহ্ তাদের তাঁর রহমতের বেষ্টনীতে প্রবেশ করাবেন। অবশ্যই আল্লাহ্ দয়ালু, ক্ষমাশীল। (৯৯) وَمِنَ الْأَعْرَابِ مَن يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَيَتَّخِذُ مَا يُنفِقُ قُرُبَاتٍ عِندَ اللَّهِ وَصَلَوَاتِ الرَّسُولِ أَلَا إِنَّهَا قُرْبَةٌ لَّهُمْ سَيُدْخِلُهُمُ اللَّهُ فِي رَحْمَتِهِ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
মুহাজির ও আনসারদের মাঝে যারা এ প্রক্রিয়ার প্রতিযোগীতায় অগ্রণী এবং এদের পর যারা এ প্রক্রিয়ার সঠিক অনুসারী হবে, ক্বেয়ামত পর্যন্ত আল্লাহ্ এদের উপর তুষ্ট এবং তারাও আল্লাহ্তে তুষ্ট। আল্লাহ্ এদের সকলের জন্য নদ-নদী প্রবাহিত জান্নাত সাজিয়ে রেখেছেন। চিরদিন তারা তার বাসিন্দা হবে। এটাই হলো মহা বিজয়। (১০০) رَّضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا এ হলো আল্লাহ্র বর্ণনায় তাঁরই বান্দা আরবদের চরিত্রের চিত্র। এ চিত্রকে সঠিক তওবার মাধ্যমে ঈমান এনে আল্লাহ্ ও রাসূলের আনুগত্য দ্বারা মোছার পরিবর্তে হঠকারিতার মাধ্যমে ক্বোরআন ও পুরো আরবী বাগধারাকে বিকৃত করে আরবরা তাদের সর্বনাশ ডেকে আনে। মিথ্যা দিয়ে সত্যকে আড়াল করার অপচেষ্টায় মেতে উঠে। তারা কি আল্ ক্বোরআনের এ আয়াতেও বিশ্বাস স্থাপন করতে পারেনি যে “সত্য সমাগত, মিথ্যার নাশ আসন্ন। মিথ্যাকে অবশ্যই বিদায় নিতে হবে?”
তারপরও কি তারা বলবে যে, “মিশরীয়রা ফেরআউনী ঐতিহ্যের পূজারী” বলতে মিশরের পল্লীবাসীদের বুঝায়? কায়রো, আসয়ুত ও ইস্মাঈলিয়া প্রভৃতি শহরবাসী বুঝায় না? “বৃটিশরা উপনিবেশী” বলতে পল্লীবাসী বুঝায়, লন্ডন, বার্মিংহাম ও ম্যানচেষ্টারের নগরবাসী বুঝায় না? “আমেরিকানরা বহিরাগত দখলদার” বলতে পল্লীবাসী বুঝায়, নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন ও লস্এঞ্জেলেসবাসী বুঝায় না? “ভারতীয় ব্রাহ্মণ্যবাদীরা পৌত্তলিক” বলতে গ্রামীণ ব্রাহ্মণ্য বৈষম্যবাদ ও দেব-দেবীর পূজারী বুঝায়, দিল্লী বোম্বে ও কোলকাতাবাসী বুঝায় না? তদ্রুপ কেউ যদি বলে যে, “বাঙ্গালীরা মীরজাফরের জাত”, তাতে কি বুঝায় যে মীর জাফরের জাত শুধু গ্রাম বাংলার জনগণ, ঢাকা, কোলকাতা ও রাজশাহী প্রভৃতির নগরবাসীরা বুঝায়না? বিবেকবান মানুষ মাত্র উত্তর দেবে যে, তাতে গোটা জাতিই বুঝায়। দেশের কোনো বিশেষ শ্রেণী বুঝায় না। বরং প্রত্যেক জাতির ইতিহাসে তাদের নগরবাসীরাই সাধারণতঃ ঐতিহাসিক মন্দ কাজে নেতৃত্ব দিয়ে জাতিকে কলঙ্কিত করে। তাই আ’রাব বা আরবরা বলতে গোটা আরব জাতিই বুঝায়। বরং আল্লাহ্ ক্বোরআনুল কারীমে যে পাপাচার ও অন্যায়ের উল্লেখ করেছেন, তার নেতৃত্বে মক্কার ক্বোরেশ ও তায়েফবাসী আরব ও তাদের অনুসারী শহর ও শহরতলীর আরবরাই অগ্রণী ছিলো। মানবসাম্য ও তাওহীদের কেন্দ্র কা’বাতুল্লাহকে যে ক্বোরেশরা ৩৬০ মূর্তির ঠাকুরঘর বানিয়ে অপবিত্র করেছিলো, তারাই “আশাদ্দু কুফ্রাও ওয়া নিফাক্বার ইমাম” বা আইম্মাতুল্ কুফ্র ছিলো। বিশেষ করে সূরা হুজুরাত অবতীর্ণ হওয়ার নায়কদ্বয় আবু বকর ও উমর মক্কার কোরেশ গোত্রের দু’ ব্যক্তি ছিলো। কোনো মরুবাসী বেদুঈন ছিলো না। কথিত “ফাসিক্ব” ব্যক্তিদ্বয়ও উসমানের দু’সতালো ভাই ছিলো। তারা সবাই মক্কা নগরীবাসী ক্বোরেশী উমাইয়া গোত্রের ছিলো। সূরা হুজুরাতের ১০ ও ১১ আয়াতে মুমিনদের যে অবিভাজ্য ভ্রাতৃত্বের ঘোষণা দিয়েছেন আল্লাহ্ এবং তাকে অটুট রাখার তাগিদ দিয়ে যে নির্দেশ দিয়েছেন যে, “ঈমানদার পুরুষরা কখনো তাদের কোনো ঈমানদার ভাইকে কটাক্ষ করে কথা বলবেনা, তদরূপ কোনো ঈমানদার নারী অপর ঈমানদার নারীকে কটাক্ষ করবে না, ঈমানদার দাবীর পর এ কাজটি জঘণ্যতম পাপ, এ থেকে যারা তওবা করবে না, তারা নির্বিশেষে যালিম” এ সব নির্দেশ অমান্য করায় আমরা শহরবাসী আরবদের শীর্ষে দেখতে পাই। অন্তর বিদীর্ণকারী ব্যথা ও শোকের সাথে আমরা দেখতে পাই যে বিশ্বের রহমত, খাতামুন্ নাবিয়্যীন ইন্তেকাল করেছেন। তাঁর দেহ মোবারকও তখনো দাফন হয়নি। সাক্বিফা বনু সাআ’দায় আবু বকর, উমর মাদীনার আনসারদের সাথে বিবাদে লিপ্ত হয়ে বলছে “ক্বোরেশ থেকে ইমাম হতে হবে।” “আমরা আমীর হবো, তোমরা হবে উযির” তোমরা আমরা, আমরা তোমরা !!! সবাই মিলে “ইন্নামাল মুমিনূনা ইখওয়াহ” আর রইলো না। মদীনাবাসীর ঈমান, ত্যাগ, সহনশীলতা ও রাসূল সঃ প্রীতির সুযোগে ক্ষমতা দখলের পর ক্বোরেশী গোত্রবাদীরা, মদীনার আনসার বা অন্য কোনো অ-ক্বোরেশী মু’মিনকে কখনো নেতৃত্ব দেয়নি। ইন্না আক্রামাকুম ইন্দাল্লাহি আত্ক্বাকুম, “নিশ্চয়ই আল্লাহর নিকট তোমাদের মুত্তাক্বীতম ব্যক্তিই সবচে’ সম্মানী” শুধু ক্বোরআনেই রইলো। কার্যে পৃথিবীর মাটিতে তা আর কখনো প্রতিষ্ঠিত হলো না। রাসূল সঃ যে বলেছিলেন, “যদি আনসাররা একদিকে যায়, আর গোটা বিশ্ব অন্য দিকে যায়, তা’হলে আমি অবশ্যই আনসারদের পথ বেছে নিবো” কোথা গেলো? মুহাজির, আনসার ও ক্বোরেশ অক্বোরেশীয় বিভক্তির নায়কও তো আমরা আবু বকর ও উমরকেই দেখতে পাই! তারা দু’জন কী বেদুঈন ছিলো? মোটেও না। মাদীনায় মুসলিম নারীদের মাঝে, এমনকি খোদ আল্লাহ্র রাসূল সঃ এর ঘরে যতো ঝগড়া বিবাদ, তার প্রত্যেকটিতেই আমরা আবু বকর ও উমর কন্যা মা আয়শা ও হাফসাকে মূল ভূমিকায় দেখতে পাই। সূরা আহযাবে উল্লেখিত খোরপোষের দাবীর আন্দোলন, সূরা তাহ্রীমের রাসূল সঃ এর মধু খাওয়া, মা যায়নাবের সাথে হুজুর সঃ এর ঘনিষ্টতা এবং মা মারিয়া ক্বিবতিয়ার সাথে রাসূল সঃ মিলন নিয়ে বাড়াবাড়ি, এ সবেই তো মা আয়শা ও হাফসা মূল! তাতে সাত আকাশের উপর আল্লাহর আরশ কেঁপে উঠে। কঠোর ভাষায় অহী নাযিল হয়। মা আয়শা ও হাফ্সা কি কোনো মরুবাসী বেদুঈন ছিলো? মা খাদিজাকে গালভাঙা ও ত্বকঢিলা বুড়ী বলা, মা সাফিয়্যাকে ইয়াহুদীয়াহ বলে কটাক্ষ করা, মা যায়নাবকে ক্রীতদাসের তালাকপ্রাপ্তা বলা এবং মা মারিয়ার পেটে জন্মানো ইব্রাহীমকে রাসূল সাঃ এর ঔরসজাত না হয়ে অন্যের ঔরসজাত বলা কি সূরা হুজুরাতের ১১ আয়াতের লঙ্ঘন নয়? মা আয়শার মতো মুফাস্সির, ফক্বীহ্ ও মুহাদ্দিস এ সমস্ত কাজ কি রূপে করলো! রাহ্মাতুল্লিল আলামীন, খাতামুন নাবিয়্যীন রাসূল সঃ এর ঘরে শান্তি শৃঙ্খলা নষ্ট করে কী তারা মুস্লিম উম্মার ঘরে ঘরে অশান্তির বীজ বপন করে যায়নি? ইনশাআল্লাহ সূরা তাহ্রীমের আলোচনায় তথ্য সূত্রসহ এ বিষয়ে আরো আলোচনা করবো। বারাকাহ্, যায়দ, মা খাদিজা, বেলাল, আম্মার, ইবন্ মাসউদ, সুহাইব, খাব্বাব, মুসআব্ ও সালমান প্রভৃতির ন্যায় যারা স্বীয় অস্তিত্বের সবটুকু বিসর্জন দিয়ে ঈমান এনে তাতে দৃঢ়তার পরিচয় দিয়েছে, সে সমস্ত মুস্তাদ্আফদের ঈমানের প্রশংসায় স্বয়ং আল্লাহ্ তা’আলা পঞ্চমুখ। আল্লাহ্ এ শ্রেণীর ভাগ্যবান বান্দাদের স¤পর্কে সূরা হুজুরাতের ১৫ নং আয়াতে বলেন, “ঈমানের দাবিতে সত্যবাদী তারাই, যারা আল্লাহ ও রাসূলের উপর ঈমান আনার পর কোনো প্রকার দ্বিধা দ্বন্দের রোগে ভোগে না। পরন্তু এরাই খাটি।” এরা গোত্ররোগ, বর্ণরোগ, ব্যক্তি স্বার্থ ও স্বজন তোষণ প্রভৃতি থেকে উর্ধ্বে উঠে আল্লাহ্কে গ্রহণ ও রাসূলকে বরণ করে। তাই আমরা হাদীস বা ইতিহাসের কোথাও একটি মাত্র ঘটনাও দেখিনা যে রাসূল সঃ এর রিসালাতের বিজয় শুরু হলে যায়দ, আম্মার, বেলাল, ইবন মাসউদ ও সুহাইবরা তাদের জ্ঞাতি গোষ্ঠীকে টেনে দল ভারি করার চেষ্টা করেছে। যায়দের গোত্র বনী কাল্ব এতো বড় গোত্র ছিলো যে শিক্ষা, দীক্ষা ও ধন স¤পদে কোনো দিক দিয়েই তখনকার ছোট বসতি মক্কাবাসীর চেয়ে তারা পিছিয়ে ছিলো না। বরং এখনো সৌদী আরব, ইরাক, ইয়ামেন ও সিরিয়ায় বনু কালবের বহু লোক রয়েছে। বরং বর্তমানে কোথাও ক্বোরেশ ও বনু উমাইয়ার কোনো চিহ্ন খুঁজে পাওয়া যায় না।
১৭
212082
২৩ এপ্রিল ২০১৪ সকাল ০৬:৩৯
মুহাম্মদ_২ লিখেছেন : তদ্রূপ আম্মার, বেলাল ও সুহাইবদেরও ভাই বেরাদার ছিলো। কিন্তু ঈমানী আত্মীয়তার ভ্রাতৃত্বে প্রবেশ করার পর ইতিহাসে এদের কোনো রক্তীয় স্বজনদের উল্লেখ পাওয়া যায়না, এরাই রাসূল সাঃ এর পর তাঁর সুন্নাহ বা আদর্শের নমুনা। অপর দিকে রাসূল সঃ-এর ইন্তেকালের সঙ্গে সঙ্গেই ক্বোরেশী, হাশেমী ও উমাইয়া গোত্রবাদ গোখ্রা সাপের ফণা তুলে ইসলামী উম্মার ভিতকে দংশন আরম্ভ করে। যার বিষে ১৪১২ বছর পরও আমরা কাতরাচ্ছি এবং আল্লাহ্র দরবারে তাঁর রাসূলের আদর্শের বিশ্ব বিপ্লবের নেতৃত্ব দানের ইমামদের অপেক্ষা করছি। ১৪১২ বছরের ধ্বংসস্তুপ খনন করে সত্যিকার রাসূল সঃ-এর আদর্শ খুঁজছি, যাতে আমরা যথার্থ ইমানের যথার্থ অনুসারী হতে ভুল না করি। রাসূল সঃ ও তাঁর মুস্তাদআফ্ অনুসারীদের ঈমানের মানদন্ডে মু’মিন না হয়ে যারাই ঈমানের দাবীদার হবে, আল্লাহ তাদের তিরস্কার করেন এ বলে যে এরা স্বয়ং আল্লাহকে তাদের ধর্ম শিখায়! মাটির সৃষ্ট আদমের সন্তান হয়ে আল্লাহর বর্ণিত তাক্বওয়ার মানদন্ড উপেক্ষা করে ক্বোরেশী, উমাইয়া ও হাশেমী প্রভৃতি কুফরীর ফলে চেঙ্গিজ, হালাকু, তৈমুর ও ক্রুসেডারদের হাতে নির্বংশ হওয়ার পরও আরবরা তাদের ধারায় জাহিলিয়্যাত বর্জন করেনি। বরং ইয়াহুদী খৃষ্টানদের চেয়েও নিকৃষ্ট চরিত্রের হওয়ায় আল্লাহ্ বর্তমানে ওদের ইস্রাইলীদের মতো একটি ক্ষুদ্র রাষ্ট্র দিয়ে আযাব দিচ্ছেন। তাক্বওয়ার চার দেয়ালের বাইরে কোনো ঈমান নেই। জাতীয়তা ও গোত্রবাদের প্রবক্তাদের ধর্ম, জাতীয়তা ও গোত্রবাদ। পূর্বেও এরা মু’মিন ও মুসলিম ছিলোনা। এখনো নেই। ভবিষ্যতেও হবে না। বাবা আদমের সন্তানদের তাক্বওয়ার মানদন্ডেই ঈমানদার হতে হবে। জাতীয়তা ও গোত্র স্বাতন্ত্র্যের দাবীদার হওয়া মাত্রই তারা ইবলিসের মানব প্রজন্ম। এদের জন্ম ও স¤পদে ইবলিস অংশ গ্রহণ করেছে। وَشَارِكْهُمْ فِي الْأَمْوَالِ وَالْأَوْلَادِ (সূরা বনি ইস্রাইল-৬৪) ভাষা, জাতি, বর্ণ, প্রজাতি, ভৌগলিক সীমা ও রাষ্ট্রীয় সীমা সহ সকল বিভক্ত সত্তায় বিশ্বাসী জাতি “রাব্বুল আলামীন” আল্লাহ ও “রাহমাতুল্লিল আলামীন” রাসূলের “একস্রষ্টা এক সৃষ্টির দ্বীন” ইসলাম বহির্ভ‚ত জাতি। আদি মানব আদম আঃ ও তাঁর সন্তান মানব জাতির সৃষ্টিলগ্নের শত্রু শয়তান ইবলিস এদের “ইলাহ্” এবং প্রভু। গোত্রবাদী ইয়াহুদী খৃষ্টান ও তাদের মিত্র বর্তমান আরববিশ্ব মসীহুদ্দাজ্জালের অগ্রসেনা। বিশ্বে ইসলামী উত্থানের চূড়ান্ত নেতা ইমাম মাহদীর এরা হবে সম্মিলিত শত্রু। আখেরী রাসূল সঃ কে যারা সব কিছু বিসর্জন দিয়ে গ্রহণ না করে ভিতরে ভিতরে গোত্র ও জাতীয়তাবাদকে লালন করেছে এবং আজও করছে, তারা ১৪১২ বছর পরও এক জাত ও গোষ্ঠী। হোক না তারা আরবী, ক্বোরেশী, সাইয়েদ, মোঘল, তুর্কী বা পাঠান! আল্লাহ তাঁর রাসূল সঃ কে মক্কার ক্বোরেশদের হাত থেকে রক্ষা করেছেন। তায়েফে তাঁর সঙ্গী যায়দকে সহ রক্ষা করেছেন। প্রাণ নিয়ে হিজরতের সময় গারেসওরে সঙ্গী আবু বকরও দৃঢ়তার পরীক্ষায় যখন বিচলিত হলো, তখন আল্লাহ তাঁর রাসূলের উপর “সাকীনা” নাযিল করে তাঁর বিশেষ সেনা পাঠিয়ে তাঁকে সাহায্য করেন। মক্কা বিজয়ের পর তায়েফ অভিযানেও বিশাল বাহিনী রাসূল সঃকে ফেলে পালায়। সে মুহূর্তেও আল্লাহ তাঁর বিশেষ “সাকীনা” অবতীর্ণ করেন তাঁর রাসূলের উপর। এভাবেই আল্লাহ কাফেরদের পরাজিত ও লাঞ্ছিত করেন। কতিপয় মুস্তাদআফ্ ব্যতীত অন্যদের রাসূল সঃ তাক্বওয়ার মানদন্ডে পূর্ণ মুমিন পাননি। আল্লাহ্ তাঁর প্রিয় নবী সঃকে জানিয়ে দিলেন, সাবধান! আরবরা ঈমান আনেনি। কেবলমাত্র আত্মসমর্পণ করেছে। সাবধান! এরা শুধু তোমাকেই নয়, আসমান ও জমীনের সকল গোপন জানা আল্লাহ্কেও তারা তাদের ধর্ম শিক্ষা দিতে চাইবে। (হুজুরাত-১৬) হে রাসূল সাবধান! পূর্ণ ঈমান না এনে যে তারা শুধু আত্মসমর্পণ করেছে, তাতেই তারা বলবে যে, “আমরা যতটুকু ইসলাম গ্রহণ করেছি, তাতেই আমরা আপনাকে কৃতার্থ করেছি। কারণ তা না হলে আপনিও বিজয়ের মুখ দেখতেন না”। রাসূল বলে দাও ! “তোমরা ইসলাম গ্রহণ করে আমাকে ধন্য করোনি। তোমরা যদি সত্যিই ঈমানের দাবিতে সত্যবাদী হও, তা হলে তোমরা স্বীকার করবে যে আল্লাহ্ই তোমাদের উপর কৃপা করেছেন যে তিনিই দয়া করে তোমাদের ঈমানের পথ প্রদর্শন করেছেন”। (হুজুরাত-১৭) সত্যি কি ক্বোরেশ ও আরবরা খাতামুন নাবিয়্যীন সঃ এর রিসালাতকে ইচ্ছায় অনিচ্ছায় যতটুকু গ্রহণ করেছিল, তাতে তারা কি আদৌ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের কোনো উপকার করেছিল? না, আল্লাহ্ তাদের আদ ও সামূদের মতো স¤পূর্ণ নির্মূল নিশ্চিহ্ন না করে মিল্লাতে ইব্রাহীমের কাবাকে মূর্তি খানায় রূপান্তরকারী নিকৃষ্ট রুগ্ন জাতিকে সর্বশ্রেষ্ঠ চিকিৎসক ও চিকিৎসা শাস্ত্র পাঠিয়ে তাদেরই প্রতি কৃপা করেছেন? তারপর তাদের স্বাধীন ইচ্ছা। ইচ্ছা করলে তারা ঔষধ প্রয়োগ করে রোগ মুক্ত হতে পারে। ইচ্ছা করলে ঔষধে ভেজাল করে তাদের রোগকে আরো জটিল করতে পারে। ঔষধ হলো, “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” আর ভেজাল হলো “আল্ আইম্মাতু মিন ক্বোরেশ”। বারাকাহ, যায়দ, খাদিজা, আম্মার, সুহাইব, ইব্ন্ মাস্উদ, খাব্বাব, সালমান ও উসামাহরা ঔষধ প্রয়োগ করে স¤পূর্ণ নিরোগ হয়েছিলো। তাই তাদের পূনঃ রোগাক্রান্ত হওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি। অপর পক্ষে আবু বকর, উমর, উসমান, আলী, তাল্হা, যুবাইর, আব্দুর রহমান ইবন্ আউফ এবং মা আয়শা ও হাফসাদের পূনঃ পূনঃ রোগাক্রান্ত হওয়ার প্রমাণ পাওয়া যায়। আল্লাহ্ স্বয়ং সূরা হুজুরাত, মুম্তাহানা, তাহরীম, আহ্যাব ও তওবার মতো দীর্ঘ দীর্ঘ সূরা নাযিল করে আমাদের জন্য ক্বেয়ামত পর্যন্ততার অকাট্য প্রমাণ সংরক্ষণ করেছেন। খাঁটি বা আসলের সাথে কিছু সংমিশ্রন করলে ভেজালের সৃষ্টি হয়। তারপর ভেজালকে চলতে দিলে কিছু দিন পর ভেজালের “ভে” বাদ পড়ে শুধু “জাল” রয়ে যায়। বাবা আদম আঃ থেকে ধরাপৃষ্ঠে সবচেয়ে খাঁটি কথা “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”। এ কালেমাই তাওহীদ। এ কালেমাই সকল নবী রাসূলদের রিসালাত। এ কালেমাই দুনিয়া ও আখেরাতের মুক্তি ও সফলতার একমাত্র মন্ত্র। খাতামুন নাবিয়্যীন সঃকে দিয়ে আল্লাহ্ তাঁর চূড়ান্ত আদর্শ স্থাপন করেছেন মুস্তাদআফ্ যায়দ, বারাকাহ, বেলাল, আম্মার, সুহাইব, সালমান ও উসামাহদের আনুগত্য ও অনুসরণ দিয়ে, এ কালেমা পড়া মাত্রই কোনো খাঁটি ঈমানদারের জীবন সকল বর্ণ ও গোত্রবাদের ইবলিসী পঙ্কিলতা থেকে চিরতরে পবিত্র হয়ে তার জন্য তাক্বওয়ার দুর্ভেদ্য অজেয় দুর্গ তৈরী হয়। যেমন অতীতে মুস্তাদআফ্দের হয়েছিল এবং এখনো হবে। ভবিষ্যতেও হবে। এটাই আল্লাহর অপরিবর্তনীয় সুন্নাহ বা বিধান। وَلَن تَجِدَ لِسُنَّتِ اللَّهِ تَحْوِيلًا سُنَّةَ اللَّهِ الَّتِي قَدْ خَلَتْ مِن قَبْلُ وَلَن تَجِدَ لِسُنَّةِ اللَّهِ تَبْدِيلً (সূরা ফাতহ-২৩ সূরা গাফির-৮৫, সূরা আহযাব-৬২ সূরা বনি ইসরাঈল-৭৭) আল্লাহ্ তাঁর শেষ নবীর দ্বারা দ্বীনকে পূর্ণ করে নিজের ব্যাপারে ক্বোরআনে সাক্ষ্য দিয়েছেন “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আমি ছাড়া কোনো ইলাহ্ নেই”। (আল ইমরান-১৮) রাসূল সঃ বলেছেন, বলো, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, সফল হবে। যে বলবে, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, জান্নাতে প্রবেশ করবে। এ রিসালাত পূর্ণ করে রাসূল সঃ উসামাহকে আমীর নিযুক্ত করে বিদায় নিয়েছেন। সূরা ক্বাসাস দিয়ে আল্লাহ তাই নির্দেশ করেছেন। আবু বকর উমররা তার সাথে ক্বোরেশী নেতৃত্ব যোগ করে ভেজাল করেছে। উসমান তাকে জাল দিয়ে পাকিয়েছে। আলী মৌনতা অবলম্বন করে তাতে সায় দিয়েছে। তখনো কিন্তু “আল আইম্মাতু মিন ক্বোরেশ” এর উপর “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” এর ব্যানার ঝুলছিল। কিন্তু মক্কী কুফরের মাথা আবু সুফ্ইয়ান ও হিন্দার পুত্র মুয়াবিয়া এসে “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর” ব্যানার অপসারণ করে “আল আইম্মাতু মিন ক্বোরেশ” কে শীর্ষে তুলে তার নিচে বনু উমাইয়ার সাম্রাজ্যের সংযোগ করে নিজেকে “আনা ক্বায়সারুল আরব” বলে আসল ভেজাল বাদ দিয়ে শুধু জালের প্রচলন করে। তারপর থেকে ব্যানার বদলাতে বদলাতে আব্বাসী, মুঘল, পাঠান ও তুর্কী হয়ে হাসিনা, খালেদা, বেনজীর, তানসিসেলরে ও মেঘাবতীতে এসে মুসলমানরা ঠেকেছে। তাতেও কিন্তু তাদের ঈমান যাচ্ছেনা। কারণ মূলে যে বদরের প্রতিশোধ গ্রহণকারী, হামযার কলিজা ভোগী হিন্দার পুত্র ও নাতি ক্বোরেশী পঞ্চম ও ষষ্ঠ খলিফা মুয়াবিয়া ও ইয়াযীদ! তাও আবার রাসূল সঃ এর নামে মিথ্যা হাদীস তৈরী করে? فَمَاذَا بَعْدَ الْحَقِّ إِلَّا الضَّلَالُ সত্যের পর মিথ্যা ব্যতীত আর কি হতে পারে? (সূরা ইউনুস্-৩২) “মুস্তাদ্আফুন” ব্যতীত আরবরা, নগরবাসী কি মরুবাসী, কেউ নিখাদ ঈমান আনেনি। عَرَضًا قَرِيبًا وَسَفَرًا قَاصِدًا সম্ভাব্য স্বার্থ ও অবশ্যম্ভাবী পরাজয় আঁচ করে الأعراب আল্ আ’রাব বা আরবরা আত্মসমর্পণ করে মাত্র ইসলামে প্রবেশ করেছিলো। তাও রাসূল সঃ এর পক্ষে আল্লাহ্র সাহায্য ও বিজয়ের বদৌলতে। إِذَا جَاءَ نَصْرُ اللَّهِ وَالْفَتْحُ وَرَأَيْتَ النَّاسَ يَدْخُلُونَ فِي دِينِ اللَّهِ أَفْوَاجًاযখন আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় আসবে, তখন দেখবে লোকেরা কাতারে কাতারে আল্লাহ্র দ্বীনে প্রবেশ করবে। ইসলামে প্রবেশের পর যদি হতভাগারা আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্যে ব্রতী হতো, তাহলে তাদের সৌভাগ্যের কপাল খুলতো, তাদের আমল বরবাদ হতো না। জামাল, সিফফীন ও হাররা ঘটতোনা। বাগদাদ, স্পেন, দামেশ্ক ও দিল্লীর পতন হতো না।وَإِن تُطِيعُوا اللَّهَ وَرَسُولَهُ لَا يَلِتْكُم مِّنْ أَعْمَالِكُمْ شَيْئًا তোমরা আল্লাহ ও রাসুলের আনুগত্যে ব্রতী থাকলে তোমাদের কোনো আমলই বিনষ্ট হবে না। (সূরা হুজুরাত-১৪) আল্লাহ্র বিশেষ কৃপায়ই তারা রাসূল সঃ কে পেয়েছিলো। কিন্তু মুদ্রাদোষে তারা রাহমাতুল্লিল আলামীনের মূল্যায়নে ব্যর্থ হয়েছে। আল্লাহ্ তাই তাঁর রাসূল সঃ কে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে, রাসূল সঃ যেনো আরবদের ইসলামায়নে নিজেকে কৃপায়ীত না ভাবেন। বরং তিনি যেনো ক্বোরেশী, অক্বোরেশী, আনসার, মুহাজির, শহর বা মরুবাসী সবাইকে বলে দেন যে, রাসূল সঃ কে তাদের মাঝে পাঠিয়ে আল্লাহ্ গোটা আরব জাতিকেই কৃপা করেছেন। সে কথা যেনো তারা স্মরণ রাখে। قُل لَّا تَمُنُّوا عَلَيَّ إِسْلَامَكُم بَلِ اللَّهُ يَمُنُّ عَلَيْكُمْ أَنْ هَدَاكُمْ لِلْإِيمَانِ إِن كُنتُمْ صَادِقِينَ কাল, পাত্র ও স্থান নির্বিশেষে আল্লাহ মহাকাশ ও বিশ্বের সকল গোপন তথ্যাদি জানেন। তিনি সব কিছুর পারমাণবিক পর্যবেক্ষণ করেন। পূর্বাপরের আগমনের অসার বৈশিষ্ট্য দাবি করে কেউ আল্লাহর কাছে পার পাবে না। তাক্বওয়ার পাথেয় উপার্জনের মাধ্যমেই তাঁর সন্তুষ্টি লাভ করতে হবে। এতে সফলরাই রাদিয়াল্লাহু আনহুম ওয়া রাদু আনহু। কোনো কাল ও শ্রেণীর গন্ডিতে তা সীমাবদ্ধ নয়। (সূরা হুজুরাত-১৮) إِنَّ اللَّهَ يَعْلَمُ غَيْبَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَاللَّهُ بَصِيرٌ بِمَا تَعْمَلُونَ
১৮
212193
২৩ এপ্রিল ২০১৪ দুপুর ০২:০৭
সঠিক ইসলাম লিখেছেন : রেফারেন্স ছাড়া কোন গল্পই গ্রহণযোগ্য নয়। হযরত আহমদ বিন হাম্বল (র.) বলেছেন, সিরাতের কোন ভিত্তিই নাই, ঈমাম তাবারি বলেন,বর্ননাকারীদের বর্ননা মতোই আমি লিখে থাকি। উদ্ভট কোন কিছু পাওয়া গেলে , তার জন্য আমি দায়ী নই বা আমাকে দোষ দেয়া যাবে না। আমার লেখায় সকল ভুল ও গুরুতর অসঙ্গতির দাঁয় দায়িত্ব শুধুমাত্র তাদের , যারা এই গল্পগুলো আমাকে বর্ননা করেছেন।

তাবারির "তারিখিল উমাম ওয়াল মুলুক (সকল জাতি ও রাজাদের ইতিহাস)" কে কেউ কেউ "সকল ইতিহাসের মা" বলে থাকেন। এই বইটি তিনি লিখেছিলেন হিঃ ৩য় ও ৪র্থ শতকে , অর্থাৎ রসূল গত হওয়ার ৩০০ বছর পরে। ঈমাম তাবারির মৃত্যু হয় ৩১০ হিঃ।

অতএব হাদীস ছাড়া ইতিহাসের কোন ভিত্তিই নাই যেখানে সেখানে আপনার আষাঢ়ে গল্প কিভাবে বিশ্বাসযোগ্য হবে রেফারেন্স ছাড়া ?
২৩ এপ্রিল ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:০৭
160594
মুহাম্মদ_২ লিখেছেন : আচ্ছা এরপর তাহলে হাদীস থেকেই দলীল দেব.

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File