হাতমাম মাকদিয়্যা ১
লিখেছেন লিখেছেন মুহাম্মদ_২ ২০ জুলাই, ২০১৩, ০৩:৪৪:৫২ দুপুর
মহাশূন্যে ভাসমান পৃথিবী নামক এই অনন্য গ্রহে প্রথম মানবের বিচরণ কত আগে শুরু হয়েছিল তার সঠিক দিনক্ষণ আসমান-জমিন আর আদি মানব আদমের স্রষ্টা এক আল্লাহ্ই বলতে পারেন। একই পিতার (৪.১, ৬.৯৮, ৭.১৮৯, ৩৯.৬, ৪৯.১৩) শতকোটি সন্তান সহস্র রূপে পৃথিবীর প্রতি প্রান্তে আজ ঐক্যের বিপরীতে সীমাহীন বৈষম্যই ঘোষণা করছে। অসংখ্য জাতি ইতোমধ্যে সময়ের স্রোত পেরিয়ে বিস্মৃত অতীতে পরিণত হয়েছে। অনেক সম্প্রদায় আর সভ্যতাকে ধ্বংস করা হয়েছে (অলাক্বদ আহলাকনাল ক্বুরুনা মিং ক্ববলিকুম লাম্মা জলামু-৬.৬, ৭.৪, ৭.১৩৭, ৮.৫৪, ১০.১৩, ১৭.১৭, ১৯.৯৮, ২১.১১, ২১.৯৫, ২২.৪৫, ২৩.৪১, ২৩.৪৪, ২৫.৩৬, ২৫.৩৮-৩৯, ২৮.৪৩, ২৮.৭৮, ২৯.৩৮-৩৯, ৩২.২৬, ৩৬.৩১, ৩৮.৩, ৪৩.৪, ৪৪.৩৭, ৪৬.২৭, ৪৭.১০, ৪৭.১৩, ৫০.৩৬, ৫১.৪৬, ৫৩.৫০-৫২, ৫৪.৫১, ৬৯.৫-৬, ৭৭.১৬, ৯১.১৪)। আল্লাহ প্রশ্ন করেন: হাল তুহিচ্ছু মিংহুম মিং আহাদিন আও তুছমায়ু লাহুম রিকঝা -তুমি তাদের কাউকে দেখতে পাও কি? অথবা তাদের কোন মৃদু শব্দ শুনতে পাও কি? সত্যকে প্রত্যাখ্যান করার কারণে এই যে এত এত ধ্বংসযজ্ঞ আর তার পুন পুন উল্লেখ করে মহা পরাক্রমশালী মা’বুদ আমাদের কাছে জানতে চান: ফাহাল মিম্ মুদ্দাকির (৫৪.৫১)– এগুলো নিয়ে ভাববার কেউ আছো কি? আমি ‘কালো’র পাশেই বসা জনৈক ‘সাদা’ আদম সন্তানটি কোন এক দূর অতীতে যে একই যোগসূত্রে বাধা ছিল তা মনে করবার কোন তাগিদই আজ আমরা আর বোধ করিনা। বিজ্ঞানের যাদুদন্ড দিয়ে ইতিহাসের আস্তাকুড় ঘেঁটে সত্যের কতটুকুই বা উদ্ধার করা যায়। যিনি অগ্রপশ্চাr সকল জ্ঞানকে, আর সকল সৃষ্টিকে পরিবেষ্টন করে আছেন (অছিয়া রব্বি কুল্লা শাইয়্যিন ইলমা-৬.৮০, ৭.৮৯, ২০.৯৮; ইন্না রব্বাকা আহাতা বিন্নাছি-১৭.৬০, ৪১.৫৪, ৮৫.২০; ২.২৫৫, ৬.৫৯, ৩৫.১১, ৪১.৪৭) তিনি বলেন: অল্লাজিনা মিম্ বা’দিহিম, লা ইয়া’লামুহুম ইল্লাল্লাহ্ (১৪.৯) – “এবং তাদের (নূহ সম্প্রদায়, আ’দ ও সামুদ জাতি) পর যারা ছিল, তাদেরকে আল্লাহ্ ভিন্ন কেউই জানে না।“আরও বলা হয়েছে: হে নবী, এমন অনেক নবী-রাসূল আমি প্রেরণ করেছি যাদের কথা এই কিতাবের দ্বারা তোমাকে জানানো হয়েছে, এছাড়াও অনেক নবী-রাসূল আছে যাদের কথা তোমাকে জানানো হয়নি (৪.১৬৪)। অলাক্বদ আলিমনাল মুসতাক্বদিমীনা মিংকুম অলাক্বদ আলিমনাল মুসতা’ক্ষিরিন (১৫.২৪)- তোমাদের পূর্বে যারা ছিল আমি তাদেরকে জানি, আর তোমাদের পরে যারা আসবে তাদেরকেও আমি জানি।
আমাদের ভ্রান্তিবিলাস তখনো কাটে না যখন জীবন সায়াহ্নে এসে ভাবি: ‘সাগর তীরে নুড়ি কুড়াইতেছি’। আমরা নো-ম্যানস্ ল্যান্ডের ক্ষণিক নিরাপদ অবস্থানে গিয়ে উপনীত হই যখন এই উপলব্ধির উন্মেষ ঘটে যে, ‘শুধু এতটুকুই জানি যে, আমি কিছুই জানি না’, বা কারো এহেন আফসোস তৈরি হয়: ‘মা’লুম হুয়া কেহ্ কুছ না মা’লুম হুয়া’। এমন অনেক বিষয় রয়েছে যে সম্পর্কে আমাদের মোটেই জ্ঞান নেই কিন্তু আমরা তর্ক-বিতর্ক করে থাকি (ফালিমা তুহাজ্জুনা ফিহা লাইসা লাকুম বিহি ইলমুন; অল্লাহু ইয়া’লামু অআংতুম লাতা’লামুন-৩.৬৬; ২৪.১৯)।
কিন্তু মহাপ্রজ্ঞাময় আল্লাহ্ বলেন: ইন্নি আ’লামু (নিঃসন্দেহে আমি জানি-২.৩০, ২.৩৩, ১৫.২৪; আল্লাহু আ’লামু-৩.৩৬, ৩.১৬৭, ৪.২৫, ৪.৪৫, ৫.৬১, ৬.৫৮, ৬.১২৪, ১২.৭৭, ১৬.১০১, ১৮.২৬, ২২.৬৮, ৬০.১০, ৮৪.২৩)। তিনি বলিষ্ঠ ঘোষণা করেন: আমি অবশ্যই জানি (নাহনু/লানাহনু আ’লামু-১৭.৪৭, ১৯.৭০, ২০.১০৪, ২৩.৯৬, ৫০.৪৫)। ইন্না রব্বাকা হুয়া আ’লামু-৬.১১৭, ৬.১১৯, ১৬.১২৫, ২৮.৫৬, ৩৯.৭০, ৪৬.৮, ৫৩.৩০, ৫৩.৩২, ৬৮.৭। আরও পরিষ্কার করে বলা হয়: লা তা’লামুহুম, নাহনু না’লামুহুম (৯.১০১) - তুমি তাদের জান না; আমি তাদের জানি। “আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি এবং তার হৃদয়ে যে অছঅছা্র উদয় হয়, তা আমি অবগত আছি। আমি তার গ্রীবাস্থিত ধমনী থেকেও অধিক নিকটবর্তী (অনাহনু আক্বরবু ইলাইহি মিং হাবলিল অরিদ)”-৫০.১৬। সেই মহান সত্তার সন্নিধান হতেই আমাদের তরফে জ্ঞান আসে (২.১২৯, ২.১৫১, ২.২৩৯, ৯৬.৩-৫)। ‘আল্লামাল ইংসানা মা’লাম ইয়া’লাম (৯৬.৫)- (তিনি) মানুষকে ঐ সকল বিষয় শিক্ষা দিয়েছেন যা সে জানত না। সেই সমান্তরালে অবস্থান নিয়ে আমরা যখন বলি আমাদের জানাজানি ঠিক ততটুকুই যা তিনি তাঁর নবী-রাসূলগণের মাধ্যমে আসমানি কিতাব দিয়ে আমাদের জানিয়েছেন, তখন স্বস্তি আর নিরাপদ বোধ করি। তখনই প্রশান্তি লাভ ঘটে।
কে আছে এমন যে দাবী করতে পারে যে সে মানুষ আর আসমান-জমিন সৃষ্টি করেছে? দ্বিতীয় কে আছে এমন যে ঘোষণা করতে পারে: আমিই জীবন দান করি, মৃত্যু ঘটাই আর আমারই দিকে সকলের প্রত্যাবর্তন-৫০.৪৩। কে আছে যে স্বত্ব ঘোষণা করে যে নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলে যা কিছু আছে, সবই তাঁরই কর্তৃত্বাধীনে (২.২৮৪, ৩.১০৯, ৩.১২৯, ৪.১২৬, ৪.১৩১-১৩২, ৫৩.৩১, ৫৯.১, ৬১.১, ৬২.১, ৬৪.১) আর সকল সৃষ্টি তাঁরই মহিমা ঘোষণা করে, তাঁর সামনে মস্তক অবনত করে দেয় (মানুষের মধ্যকার বিভ্রান্তরা ছাড়া-২২.১৮, ২৪.৪২)। কে আছে যে বলতে পারে, সকল কিছু ধ্বংস হয়ে যাবার পরও সবকিছুর মালিকানা তাঁরই থাকবে (অলিল্লাহি মিরাছুছ্ ছামাঅতি অল আরদি-৩.১৮০, ১৫.২৩, ইন্না নাহনু নারিছুল আরদা অমাং আলাইহা অইলাইনা ইয়ুরজাউন-১৯.৪০, ১৯.৮০)? কে আছে, আল্লাহ ব্যতীত?
বিগত কয়েক শতাব্দীতে বিশ্বের ‘মুক্তবুদ্ধির’ প্রবক্তারা যে মহা গ্রন্থ কুরআনের মহা বিস্ময়কর আলোটাকে ধারণ করতে পারল না সেটা এক বড় দীনতা। হয়ত মহাকালের বিচারে এসময়টুকু এতটা পর্যাপ্ত নয়। সম্পূর্ণ বিপরীত স্রোতে কেউ কেউ অবশ্যই উদ্যোগী হয়েছেন, তরী তীরে ভেড়াতে পারেন নি। পার্থিব এটিকেট (বিত্বরিক্বতিকুমুল মুসলা-২০.৬৩) শেষ পর্যন্ত বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল যেভাবে ঘটেছিল পূর্ববর্তী অনেক জাতি ও ব্যক্তি বিশেষের জন্য।
কে আছে তারচে’ অধিক নির্বোধ আর নিজ সত্তার উপর সর্বাধিক জুলুমকারী (১৮.৫৭, ৩৯.৩২) যে সেই মহান, মহাবিজ্ঞানময় আল্লাহর শরণ নেয় না – যিনি বলেন তিনিই জানেন। তারচে’ বড় হঠকারী আর কূপমণ্ডূক কে আছে যে এই জমিনে কুরআনের সত্য প্রকাশিত হবার পর তা থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখে -(বাল কায্যাবু বিল হাক্বি লাম্মা জায়াহুম ফাহুম ফি আমরিম্ মারিজ- ৬.৫, ১০.৭৭, ১৮.৫৭, ২৯.৬৮, ৩৪.৪৩, ৪৬.৭, ৫০.৫)? সত্যের সাথে সংহতি প্রকাশ করে না- আর সে অহংকারী ও বিমুখ হয়, হক্বের ব্যাপারে স্বেচ্ছা নীরবতা অবলম্বন করে আত্মতুষ্টির রসদ ফেরি করে (২.১৩০, ২.১৩৭, ৩.২০, ৩.৩২, ৪.৮০, ৫.৪৯, ৫.৯২, ৬.৪৬, ৯.৩, ৯.১২৯, ১১.৫৭, ১৫.৮১, ১৬.২২, ১৭.৪১, ১৮.৫৭, ২১.১, ২১.১০৯, ২৬.৫, ৩১.৭, ৩২.২২, ৪১.৪, ৪৬.৩, ৫০.৯, ৫৩.৩৩, ৫৪.২, ৬০.৬, ৬৩.৫, ৬৪.৬, ৬৪.১২, ৬৯.১৭, ৭২.১৭, ৭৪.২২, ৭৪.৪৯, ৮৮.২৩, ৯২.১৬, ৯৬.১৩; আরও বহু)। স্রষ্টা প্রদত্ত মেধা দিয়ে প্রাপ্ত যশ, খ্যাতি আর পুরষ্কারের ভিড়ে চাপা দিয়ে রাখে স্বীয় প্রভুকেই, আর তাঁর বাণীকে।
আমি ‘মহাজ্ঞানী’, কিন্তু আমার জ্ঞান যদি সকল মহাজ্ঞানীর যিনি অভিভাবক তাঁর বয়ান-বিবৃতি থেকে বিসদৃশ হয়, তখন আমার সেই যাবতীয় অর্জন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হতে বাধ্য (৪.১৪৭)। এ সম্পর্কে কুরআনের ভাষ্য: “যারা তাদের প্রতিপালকের সাথে কুফরি করে, তাদের কর্মসমূহ ছাইভস্মের মত যার উপর দিয়ে ঝড়ের দিনে প্রবল বায়ু বয়ে যায়। যা তারা উপার্জন করেছিল তার কোন অংশই তাদের কাজে আসে না। এটাই ঘোরতর বিভ্রান্তি”-১৪.১৮। আল্লাহ্ তাঁর রাসূলকে বলেন: “তুমি বলে দাও, আমি কি তোমাদেরকে তাদের সংবাদ দেব, যারা কর্মের দিক দিয়ে খুবই ক্ষতিগ্রস্ত। তারা ঐসব লোক, যাদের প্রচেষ্টা পার্থিব জীবনে বিফল হয়েছে, অথচ তারা মনে করে যে, তারা উত্তম কাজ করেছে। তারা এমন লোক, যারা তাদের পালনকর্তার নিদর্শনাবলী এবং তাঁর সাথে সাক্ষাতের বিষয় অস্বীকার করে। ফলে তাদের কর্ম নিষ্ফল হয়ে যায়। অতএব কিয়ামতের দিন তাদের জন্য আমি কোন ওজনই দাড় করব না। জাহান্নামই তাদের প্রতিফল; যেহেতু তারা কাফের হয়েছে এবং আমার নিদর্শনাবলী ও রাসূলগণকে বিদ্রূপের বিষয় রূপে গ্রহণ করেছে”- ১৮.১০৩-১০৬। তাদের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে আরও বলা হয়েছে: “ইয়্যাদয়ুনা মিং দুনিহি ইল্লা ইনাসা, অইয়্যাদয়ুনা ইল্লা শাইত্বনাম মারিদা - তারা আল্লাহর পরিবর্তে শুধু নারীর (দেবীর) আরাধনা করে এবং শুধু অবাধ্য শয়তানের পূজা করে। যার প্রতি আল্লাহ অভিসম্পাত করেছেন”- ৪.১১৭।
শয়তান মানবজাতির কমন দুষমন; প্রকাশ্য ও ঘোষিত শত্রু (আদুয়্যুম মুবিন-২.১৬৮, ২.২০৮, ৬.১৪২, ৭.২২, ১২.৫, ১৭.৫৩, ৩৬.৬০, ৪৩.৬২, )। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা শয়তানকে আসুরিক শক্তি হিসেবে চিহ্নিত করে বুঝতে চায়। সকল মানুষের স্রষ্টা এক এবং অদ্বিতীয় আল্লাহ পাক (একমেবাদ্বিতীয়ম- এক ছাড়া দ্বিতীয় নেই) উদাত্ত আহ্বান জানান: “হে মানুষ, নিশ্চয় আল্লাহর ওয়াদা সত্য (ইন্না অ’দাল্লহি হাক্কুন)। সুতরাং, পার্থিব জীবন যেন তোমাদেরকে প্রতারিত না করে। এবং সেই প্রবঞ্চক যেন কিছুতেই তোমাদেরকে আল্লাহ সম্পর্কে প্রবঞ্চিত না করে। শয়তান তোমাদের শত্রু; অতএব তাকে শত্রু রূপেই গ্রহণ কর। সে তার দলবলকে আহবান করে যেন তারা জাহান্নামী হয়” (৩৫.৫-৬, ৩১.৩৩, ৫৭.১৪) – ফালা তাগুর্রান্নাকুমুল হায়াতুদ্দুনিয়া অলা ইয়া গুর্রান্নাকুম বিল্লাহিল গুরুর।
কিয়ামতের কথা উল্লেখ করে আল্লাহ অগ্রিম হুশিয়ারি করেন: “এই দিবস সত্য। অতঃপর যার ইচ্ছা, সে তার পালনকর্তার কাছে ঠিকানা তৈরি করুক। আমি তোমাদেরকে আসন্ন শাস্তি সম্পর্কে সতর্ক করলাম, যেদিন মানুষ প্রত্যক্ষ করবে যা সে সামনে প্রেরণ করেছে এবং কাফের বলবে: হায়, আফসোস-আমি যদি মাটি হয়ে যেতাম”-৭৮.৩৯-৪০। পাক কুরআনে বিশ্বাস ও প্রত্যাবর্তনের ব্যাপার চূড়ান্ত হুশিয়ারি উচ্চারিত হয়: “অতএব, যারা এই কালামকে মিথ্যা বলে (অমাইয়্যু কাজ্জিবু বিহাজাল হাদিস), তাদেরকে আমার হাতে ছেড়ে দাও, আমি এমন ধীরে ধীরে তাদেরকে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাব যে, তারা জানতে পারবে না। আমি তাদেরকে সময় দেই। নিশ্চয় আমার কৌশল মজবুত”-৬৮.৪৪-৪৫। “আল্লাহ ব্যতীত আর কোনোই উপাস্য নেই। অবশ্যই তিনি তোমাদেরকে সমবেত করবেন কেয়ামতের দিন, এতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। তাছাড়া আল্লাহর চাইতে বেশী সত্য কথা আর কার হবে”-৪.৮৭।
“হে মানব সমাজ! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তার থেকে তার সঙ্গিনীকে সৃষ্টি করেছেন; আর বিস্তার করেছেন তাদের দু’জন থেকে অগণিত পুরুষ ও নারী। আর আল্লাহকে ভয় কর, যাঁর নামে তোমরা একে অপরের নিকট যাচঞ্ঝা করে থাক এবং আত্নীয় জ্ঞাতিদের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন কর। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের ব্যাপারে সচেতন রয়েছেন”- ৪.১। “হে মানব জাতি! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর এবং ভয় কর এমন এক দিবসকে, যখন পিতা পুত্রের কোন কাজে আসবে না এবং পুত্রও তার পিতার কোন উপকার করতে পারবে না। নিঃসন্দেহে আল্লাহর ওয়াদা সত্য। অতএব, পার্থিব জীবন যেন তোমাদেরকে ধোঁকা না দেয় এবং আল্লাহ সম্পর্কে প্রতারক শয়তানও যেন তোমাদেরকে প্রতারিত না করে”- ৩১.৩৩।
মানবজাতিকে তাদের গোঁড়ার ইতিহাসও স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে, বলা হয়েছে তোমাদের সকলের পৃথিবীতে আবির্ভাব একই ব্যক্তি থেকে (খলাক্বকুম্/আংশায়াকুম মিন্নাফসিও অহিদা- ৪.১, ৭.১৮৯, ৩৯.৬, ৬.৯৮; ইন্না খলাক্বনাকুম্ মিং জাকারিও অউংছা- ৪৯.১৩), আসলে তোমরা সবাই একই উম্মত (উম্মাতাও অহিদাতা – ২.২১৩, ১০.১৯, ২১.৯২, ২৩.৫২) ছিলে।
“সকল মানুষ একই জাতি সত্তার অন্তর্ভুক্ত ছিল। অতঃপর আল্লাহ তা’য়ালা পয়গম্বর পাঠালেন সুসংবাদদাতা ও ভীতি প্রদর্শনকারী হিসাবে। আর তাঁদের সাথে অবতীর্ণ করলেন সত্য কিতাব, যাতে মানুষের মাঝে বিতর্কমূলক বিষয়ে মীমাংসা করতে পারেন। বস্তুত: কিতাবের ব্যাপারে অন্য কেউ মতভেদ করেনি; কিন্তু পরিষ্কার নির্দেশ এসে যাবার পর নিজেদের পারস্পরিক জেদবশতঃ তারাই করেছে, যারা কিতাব প্রাপ্ত হয়েছিল। অতঃপর আল্লাহ ঈমানদারদেরকে হেদায়েত করেছেন সেই সত্য বিষয়ে, যে ব্যাপারে তারা মতভেদ লিপ্ত হয়েছিল। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা, সরল পথ বাতলে দেন”- ২.২১৩।
ব্যক্তিগত বিদ্বেষের কারণে যেমন এক পিতার সন্তানদের মধ্যে বৈরিতা আর বিভক্তি চলে আসে, তখন তারা তাদের প্রভুকেও খণ্ডিত করে ছাড়ে। বাংলায় চালু আছে: দশচক্রে ভগবান ভুত। সেই একই পারস্পরিক বিদ্বেষ (বাগইয়াম বাইনাহুম-২.২১৩, ৩.১৯, ৪২.১৪, ৪৫.১৭) মানবজাতিকে আর তার ধর্মাদর্শকে শতধা বিচ্ছিন্ন করেছে।
আল্লাহ যদি চাইতেন, এই বিভক্তিকে মিটিয়ে দিতে পারতেন, সবাইকে এক উম্মতের (৫.৪৮, ১১.১১৮, ১৬.৯৩, ৪২.৮) অঙ্গীভূত হতে বাধ্য করতে পারতেন। কিন্তু প্রত্যেকে যাতে তার স্বাধীন ইচ্ছার প্রয়োগ করে নিজেই স্রষ্টার পক্ষ থেকে সেই কাজটি সম্পন্ন করে তাই সেটা তিনি করবেন না, কেননা ‘লা ইকরহা ফিদ্ দ্বীন’ (২.২৫৬)- ধর্মে কোন জবরদস্তি নেই।
অবিশ্বাসে পাথরের টুকরোগুলো আর কতকাল শব্দ করবে? প্রতিনিধিত্বের সুমহান দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েও এই আমাদের দ্বারা তার কোনই হক্ব আদায় হল না। আর কতকাল মানবসভ্যতা মিথ্যার ঘানি টেনে যাবে? আর কতকাল, কত শতাব্দী? কত সহস্র প্রজন্মকে জাহান্নামের বিনিময়ে তাগুতের দাসত্ব (২.২৫৭, ৪.৫১-৫২, ৪.৬০, ৪.৭৬, ৫.৬০, ১৬.৩৬, ৩৯.১৭) করে যেতে হবে? আর কত সহস্র বছরের মেয়াদ পেরুলে পৃথিবী আর তার অধিবাসীদের বুদ্ধির এই পরিপক্বতা অর্জিত হবে যে, শেষপর্যন্ত ‘বহুর’ দাসত্ব করতেই হয়, অতএব শতসহস্র মিথ্যার দাসত্ব না করে এক আল্লাহর দাসত্ব করাই বেহতর। এবার পাষাণহৃদয়গুলো বিগলিত হোক - যিনি চেয়ে আছেন অপার স্নেহে তার জন্য। আমাদের এবার নাম লিখবার সময় হয়েছে। শেকড় থেকে বিচ্ছিন্নতার কতকাল পেরিয়ে গেল। “শান্ত সন্ধ্যা, স্তব্ধ কোলাহল, নিবাও বাসনা বহ্নি নয়নের নিড়ে, চল ধীরে ঘরে ফিরে যাই”।
চলবে....
বিষয়: বিবিধ
১৪৩২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন