হুনায়েনের ঝড়

লিখেছেন লিখেছেন সুলাইমান আল উমাইর ১৬ জানুয়ারি, ২০১৪, ১১:৪৮:১২ রাত



বিজয় দান করলেন, আল্লাহ তা আলা। চূড়ান্ত বিজয়। কিন্তু নিজের দেশকে ফিরে পাওয়ার পর, আল্লাহ তা আলার ঘরকে ফিরে পাওয়ার পর, মুহাজিররা মক্কার বাতাসে নিঃশ্বাস নেওয়ার অবকাশ পেল না। না পারল আনসাররা মদিনায় ফিরতে। আল্লাহ তা আলা পরীক্ষার ময়দান সামনে এনে দিলেন, হুনায়েন।

মক্কার শিক্ষক মুয়ায বিন জাবাল রা ও মক্কার আমির আত্তাব ইবনে উসায়েদ রা চিন্তিত, তখন মক্কার অলিতে গলিতে ভাসছে মুসলমানদের হারের পয়গাম। হুনায়েন থেকে পালিয়ে আসা কিছু লোক বলতে লাগল মুহাম্মদ সা মারা গেছেন, মুসলমানরা হেরে গেছে, হাওয়াযেনরা জয় লাভ করেছে। তারা বলতে লাগল এবার মুসলমানরা তাদের পূর্বের দ্বীন গ্রহন করবে।

কিন্তু মুশ্রিকদের মুখ বন্ধ করে দিলেন আত্তাব ইবনে উসায়েদ রা। তিনি নতুন উদ্দমে বলে উঠলেন, ‘আল্লাহর রাসুল সা শহিদ হয়েছেন তো হয়েছেন, কিন্তু মহা পরাক্রমশালী আল্লাহ চিরঞ্জীব। আমরা আল্লাহ আর তার রাসুলের দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত করব ইনশাল্লাহ। তারপর শুভাকাঙ্ক্ষীরা চেয়ে রইলেন হুনায়েনের দিকে, সঙ্গে মুয়ায রা আর আত্তাব রা ও।



ফজরের জামাআতে সালাত আদায় করলেন রাসুল সা। সালাতের শেষে আহবান করলেন ১২ হাজার আল্লাহর রাস্তার মুজাহিদদের।

মুহাজির ও আনসার; সুলাইম,বনু আসাদ, বনু আব্বাস, আওস, উসমান, জিরআন গোত্র সহ ১২০০০ সৈনিক আর রাসুল সা। মুসলমানদের মধ্যে কেউ কেউ বলতে লাগল এবার তারাই জয়ী হবে কেননা তাদের সাথে আছে অসংখ্য সৈনিক। রাসুল সা এরূপ কথা শুনে অসন্তুষ্ট হলেন, এবং সকল্কে স্মরণ করিয়ে দিলেন সংখ্যাধিক্য বিজয় দান করতে পারে না, সকল ক্ষমতা তো আল্লাহ তা আলার।

রাসুল সা বর্ম পড়লেন, অগ্রবাহিনি খালিদ বিন ওয়ালিদের রা নেতৃত্তে , প্রতিরোধে সুলাইম গোত্র আর মধ্যখানে স্বয়ং তিনি নিজে। এগিয়ে গেলেন, হুনায়েনের মৃত্যুফাঁদ ভয়ানক উপত্যকার দিকে।



মালিক ইবনে আওফ, হাওয়াজেনদের সর্দার।

প্রস্তুত করলেন তার বাহিনীকে, অতর্কিত আক্রমণ করে মুসলিম সৈন্যদের জামাআতকে ছত্রভঙ্গ করে দেওয়ার জন্য। হাওয়াযেনরা দক্ষ তীরন্দাজ, হুনায়েনের উপত্যকার বিভিন্ন গোপন স্থানে মোতায়েন করলেন তাদের।

গুপ্তচর পাঠিয়ে খবর জানার চেষ্টা করলেন মুসলমান বাহিনির। কিন্তু আল্লাহ তা আলা পাঠালেন ফেরেশতা। গুপ্তচরদের সামনে দাঁড়ালেন তারা, অদ্ভুত রঙের ঘোড়াওয়ালা ছিল তারা, শ্বেতাঙ্গ।

গুপ্তচররা ফিরে আসল। তাদের চোখে মুখে বিভীশিকা খেলা করছিল। তারা বলল আমরা তো দুনিয়ার কোন রাজা বাদশার সঙ্গে যুদ্ধ করতে প্রস্তুত হইনি, আমরা প্রস্তুত হয়েছি আকাশবাসির সঙ্গে যুদ্ধ করতে, এতে আমাদের পরাজয় সুনিশ্চিত।

মালিক ইবনে আওফ ভয় পেল না। তারা যে পরাজিত হবে, হবে লাঞ্ছিত।



সঙ্কীর্ণ ভয়ংকর গিরিপথ ধরে হুনায়েনের উপত্যকা পাড়ি দিচ্ছে মুজাহিদগণ।

হঠাৎ বৃষ্টির মত তীর এসে আঘাত করল মুসলমানদের, ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ল মুজাহিদগণ। এদিক ওদিক পালাতে শুরু করল সবাই। আক্রমণ এত তীব্র গতি ধারন করল যে, কেউ কারো দিকে তাকাবার সুযোগ পেল না।

যুদ্ধের ময়দান থেকে সরলেন না সায়েদুল মুরসালিন হযরত মুহাম্মদ সা। রাসুল সা তার সাদা খচ্চরের উপর বসে সব মুসলমানদের ডাকতে লাগলেন, বলতে লাগলেন, হে লোকসকল, তোমরা যাচ্ছ কোথায়? আমার দিকে ফিরে এসো। আমি আল্লাহর রাসুল আমি আল্লার রাসুল, আমি আব্দুল্লাহ ইবনে মুহাম্মদ।

তার খচ্চরের লাগাম ধরে ছিলেন আব্বাস রা। তার সাথে ছিলেন আলী রা, আবু সুফিয়ান, উসামা ইবনে জাএদ রা, আবু বকর রা, উমর রা প্রমুখ। রাসুল হাত উঠালেন দয়াময়ের দরবারে, হে আল্লাহ আপনি আমাকে যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তা পুরন করুন। হে আল্লাহ অরা যেন আমাদের উপর জয়লাভ না করতে পারে। রাসুল সা আব্বাস রা কে বললেন, হে আব্বাস চিৎকার করে ডাক হে বায়িয়াতে রেদআওয়ান, কোথায় তোমরা?

তারা ফিরে দাঁড়ালো, বলল লাব্বাইক ইয়া রাসুলাল্লাহ।রাসুল সা নিজেও ডাকতে লাগলেন, হে খাজরায হে আল্লাহ আর তার রাসুলের সাহায্যকারীগণ, আল্লাহকে ভয় কর তোমরা তোমাদের নবির কাছে ফিরে এসো। তারপর মুহাজিরদের তারপর আনসারদের ডাকতে শুরু করলেন আব্বাস রা। রাসুল সা এর আহবানে ১০০ বীর সাহাবি এসে হাজির হলেন। তারা ঘোড়ার লাগাম টেনে ধরলেন। একে একে সবাই মুহূর্তেই যুদ্ধের ময়দানে হাযির হলেন।

রাসুল সা বললেন, আমার হাতে এক মুঠো ধুলো দাও। তারপর রাসুল সা তা ছুরে মারলেন হাওয়াযেন্দের দিকে এবং বললেন, ওদের চেহারা বিবর্ণ হোক।

আল্লাহ তা আলা মুসল্মান্দেরকে সাহায্য করলেন। প্রতিশ্রুতি রক্ষা করলেন।

হাওয়াযেন্দের প্রত্যেকের চোখ ধুলা ধূসরিত হল, আল্লাহ তা আলার অসিম কুদরতে একজনও বাকি থাকল না। মুজাহিদগণ এমন তীব্র ভাবে তাদের উপর তলওয়ার চালাতে লাগল যে শত্রুদের মধ্যে যারা পালাল তারা আর ফিরে আসার সাহস পায়নি। আল্লাহ তা আলা ফেরেশতার দ্বারা সাহায্য করলেন মুজাহিদদের। আকাশ থেকে যেন রহমতের একটা ঘন চাদর নেমে আসল, আল্লাহ তা আলার সাহায্য।



মক্কার অপেক্ষার প্রহর শেষ হল। খবর এল রাসুল সা হাওযেন্দের পরাজিত করেছেন। মক্কার মুসলমান ভাইয়েরা আনন্দে, কৃতজ্ঞতায় নত হলেন আল্লাহ তা আলার দরবারে। মুয়ায রা আর আত্তাব রা আনন্দিত হলেন। যারা ভুল খবর শুনে খুশি হয়েছিলেন তারা হলেন বিমর্ষ। আল্লাহ তা আলার দ্বীন বিজয়ী হল শয়তানি শক্তির বিরুদ্ধে।

বিষয়: সাহিত্য

৯৩৫ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

163376
১৭ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ১২:০৮
কুয়েত থেকে লিখেছেন : আল্লাহর দ্বীন বিজয় হবেই তবে আমাদেরকে মুমিন হতে হবে।
164551
১৯ জানুয়ারি ২০১৪ রাত ০৯:২৬

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File