দুই দলকে নিয়েই খেলছেন এরশাদ।।..
লিখেছেন লিখেছেন দুখু মিঞা ২০ জুলাই, ২০১৩, ০২:১৩:২৮ রাত
রাজনীতির মাঠে চৌকস খেলোয়ার জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ। কখনো আক্রমণে থেকে গোল করার চেষ্টা, কখনো মাঝ মাঠে প্লেমেকারের ভূমিকায়, আবার কখনো ডিফেন্সে খেলে জান বাঁচানোর কৌশল ভালই জানেন সাবেক এই স্বৈরশাসক।
জাতীয় সংসদ নির্বাচন এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয়ের কাছেই কদর বাড়ছে তার। আর এ সুযোগে দুদলকে নিয়েই রাজনৈতিক খেলায় মেতেছেন এরশাদ। আপাতত ক্ষমতাসীন মহাজোটের শরিক এ রাজনীতিক জোটে ‘থাকা না থাকা’ নিয়ে গত কয়েক মাসে নানা ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন। ‘মহাজোট ছাড়া সময়ের ব্যাপার মাত্র‘, ‘আগামীতে জাপা একক নির্বাচন করবে’ তার এমন বক্তব্য রাজনীতিতে বেশ উত্তাপ ছড়িয়েছে। খোরাক হয়েছে রসালো আলোচনার। এমন সব কথাবার্তার মধ্যেই গত মাসে সিঙ্গাপুর সফর করেন এরশাদ। সেখানে বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন
খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক হয়েছে তার। মিডিয়ায় এমন খবর প্রচারিত হয়। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সে সময় বলেন, ষড়যন্ত্র করতেই ওই সফরে গেছেন খালেদা জিয়া। তবে বিএনপির পক্ষ থেকে সে বৈঠকের কথা অস্বীকার করা হয়। সিঙ্গাপুর থেকে ফিরে এরশাদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও তার সংসদ কার্যালয়ে গিয়ে বৈঠক করেন। বৈঠক থেকে বেরিয়ে তিনি বলেন, আমরা এখনো তো মহাজোটেই আছি। অবশ্য মহাজোটে গিয়ে ‘কিছুই পাইনি’ অনুযোগ করে এককভাবে আগামী নির্বাচন করার ঘোষণাও দিয়েছেন এরশাদ। সর্বশেষ গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে একেবারে শেষ মুহূর্তে এরশাদ আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী এডভোকেট আজমত উল্লা খানকে সমর্থন দেন।
এর পেছনে আর্থিক টোপ ও দীর্ঘদিন আটকে থাকা একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলের সম্প্রচারে যাওয়ার ছাড়পত্রের আশ্বাসের বিষয়টি কাজ করেছে বলে গুঞ্জন রয়েছে। যদিও এরশাদ ইতোমধ্যেই ‘ইউনিয়ন ব্যাংক’ নামে একটি বেসরকারি ব্যাংকের অনুমোদন নিয়েছেন মহাজোট সরকারের কাছ থেকে। তবে এরশাদ তার ঘনিষ্ঠজনদের বলেছেন, সরকারের প্রভাবশালী একটি গোষ্ঠীর চাপ, জেলে যাওয়ার ভয় এবং ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠনের একজন সাবেক নেতা, পুঁজিবাজারে আলোচিত একজন শিল্পপতি ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষপর্যায়ের এক কর্মকর্তার অনুরোধে তিনি আওয়ামী লীগ-সমর্থিত আজমত উল্লা খানকে সমর্থন দিয়েছেন। এ নিয়ে দলের ভেতরে-বাইরে প্রচন্ড চাপের মুখে পড়েন এরশাদ। দলের ভেতরে সংকটেরও সৃষ্টি হয়। সিনিয়র বেশ কয়েকজন নেতা ইতোমধ্যে এরশাদের কাছে তাদের অসন্তোষের কথা জানান। এমন পরিস্থিতিতে এরশাদ বার্তাবাহক মারফত বিএনপির শীর্ষস্থানীয় দুজন নেতার কাছে গাজীপুরের নির্বাচনে সমর্থন দেয়ার বিষয়ে একটা ব্যাখ্যা পাঠিয়েছেন। তাতে তিনি শেষ মুহূর্তে বাধ্য হয়ে সরকার-সমর্থিত প্রার্থীকে সমর্থন দেয়ার কথা জানান এবং এতে বিএনপির নেতারা যেন ভুল না বোঝেন, সে ব্যাপারে আশ্বস্ত করেন। দলীয় সূত্র জানায়, দলটির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের বড় একটি অংশ অনেকদিন ধরে মহাজোট ছেড়ে আসার জন্য এরশাদকে নানাভাবে চাপ দিয়ে আসছেন। সিনিয়র নেতা কাজী জাফর আহমদের নেতৃত্বে এই অংশে জাপার প্রেসিডিয়ামের ৪২ সদস্যের অন্তত ৩৫ জন রয়েছেন।
এ অংশটি বিএনপিপন্থী বলে জানা গেছে। বিষয়টি ফাঁস হয়ে যাওয়ায় মহাজোটের কাছে বেকায়দায় পড়েন এরশাদ। অবশ্য এরশাদের এ ভেল্কিবাজির খেলা নতুন নয়। ক্ষমতায় থাকতে তিনি এমন ভোজবাজি অনেক দেখিয়েছেন বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা দাবি করেন। বিশ্লেষকদের দাবি, প্রেসিডেন্ট থাকাকালে শুক্রবার জুমার নামাজে হাজির হয়ে এরশাদ ঘোষণা করতেন গত রাতে তিনি স্বপ্ন দেখেছেন এ মসজিদে তিনি জুমার নামাজ আদায় করছেন। ক্ষমতার বাইরেও বিগত বিএনপি নেতৃত্বাধীন ৪ দলীয় জোট তৈরির সময় তিনি তাদের সঙ্গে ছিলেন। পরে মহাজোট গঠন হলে তিনি অনেকটা নাটকীয়ভাবে মহাজোটের মঞ্চে আসেন। বর্তমান সরকারের ক্ষমতার শেষ সময়ে তিনি মহাজোট ছাড়ার ও একক নির্বাচন করার ঘোষণা দিচ্ছেন। পরক্ষণেই তা পাল্টে ফেলছেন। যদিও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আলম হানিফ বলেছেন, এরশাদের এ অবস্থান রাজনৈতিক কৌশল। তবে ইফতার রাজনীতিতে বিএনপির পক্ষ থেকে এরশাদকে গুরুত্ব দেয়া, এরশাদের পক্ষ থেকে বিএনপিকে গুরুত্ব দেয়ায় অনেকে বলছেন, ডাল মে কুচ কালা হায়। এরশাদকে পক্ষে টানতে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির তৎপরতার মধ্যেই তার এমন অবস্থানের কারণে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রধান দুদলকে নিয়েই খেলছেন রাজনীতির মাঠের এ প্রবীণ খেলোয়াড়। বারবার তার এ অবস্থান পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে দলীয় নেতাকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে এরশাদ বলেন, আমি যা জানি, তোমরা তা জানো না, আমি যা দেখি তোমরা তা দেখো না। আমি কোনো ভুল করিনি। তিনি বলেন, অসহায় লাগে! দেশের কী অবস্থা! আমরা কোথায় চলে গেছি! দেশকে এই অবস্থা থেকে উদ্ধার করবে কে? এরশাদ মনে করেন তিনি ছাড়া আর যোগ্য দেশোদ্ধারকারী কেউ নেই। গণআন্দোলনের মুখে বাধ্য হয়ে ক্ষমতা ছেড়ে নিজের গোল সামলেছেন দীর্ঘদিন। যে যেভাবে পারে গোল দিয়েছে তাকে। জেল খেটেছেন। অসংখ্য মামলায় নাকানিচুবানি খেয়েছেন, এখনো খাচ্ছেন। কিন্তু এবার আর অন্যকে বল যোগান না দিয়ে নিজেই গোল করার স্বপ্ন দেখছেন এরশাদ।
-Weekly Khulnancha
বিষয়: বিবিধ
১০৮১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন