আগে পবিত্র কুরআন আরবীতে তিলাওয়াত করতাম, অর্থ না বুঝেই। পরবর্তীতে তরযমা পড়া শুরু করলাম। এখন শুধুই তরযমা পড়ি। এতে কি আমার তিলাওয়াত এর নেকী পাব? অনেকে বলেন আরবীতে তিলাওয়াত এর আলাদা নেকী আছে। আমি শুধু বাংলা তরযমা পড়াতে আমার নেকী কি কম হবে?
লিখেছেন লিখেছেন ইসলাম সম্পর্কে প্রশ্ন উত্তর ১০ জুলাই, ২০১৩, ০৮:৩১:৩১ রাত
আসসালামু আলাইকুম। আগে পবিত্র কুরআন আরবীতে তিলাওয়াত করতাম, অর্থ না বুঝেই। পরবর্তীতে তরযমা পড়া শুরু করলাম। এখন শুধুই তরযমা পড়ি। এতে কি আমার তিলাওয়াত এর নেকী পাব? অনেকে বলেন আরবীতে তিলাওয়াত এর আলাদা নেকী আছে। আমি শুধু বাংলা তরযমা পড়াতে আমার নেকী কি কম হবে?
জাযাকাল্লাহু খাইর।
ওয়ালাইকুমুস'সালাম,
সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহ্র জন্য।
তেলাওয়াতের নেকী পাওয়া যাবে তেলাওয়াত করলে, আর বঙ্গানুবাদ বা এর অনুবাদ বা ব্যাখ্যা পড়লে তার সোয়াব পাওয়া যাবে।
কুরআনের অনুবাদ কি? তা আমাদের জানা প্রয়োজন, কুরআনের অনুবাদ হচ্ছে কুরআনের ব্যাখ্যা। আর সেই ব্যাখ্যা আরবীতে হতে পারে আবার বিভিন্ন ভাষাতেও হতে পারে।
আরবীতে ব্যাখ্যা: যাদের আরবী ভাষায় ভাল দখল নেই তাদেরকে আরবী দিয়ে ব্যাখ্যা করে কুরআন বুঝানো হয়। যেমন: ছোট বাচ্চাদের এমনকি বড়দেরও। কুরআন তেলাওয়াত যেমন জরুরী, তেমনই জরুরী এর ব্যাখ্যা জানা।
অন্য ভাষায় ব্যাখ্যা: অন্য ভাষাতে যখনই কুরআন অনুবাদ করা হয়, তাকে বলা হয় ভাব অর্থ। কারণ এর মূল অর্থ বিদ্যমান আছে আরবীতে এবং অন্য কোন ভাষাতে এর মূল অর্থ পাওয়া সম্ভব নয়। এজন্যই বিভিন্ন জনের অনুবাদের অর্থ বিভিন্ন হয়ে থাকে। তাই আরবীতে কুরআন পড়া আর অন্য ভাষাতে অনুবাদ পড়া এক হতে পারে না।
কুরআন অবশ্যই আরবীতে তেলাওয়াত করতে হবে এবং এর ব্যাখ্যাও জানতে হবে। কারণ কুরআন আল্লাহ্ সুবহানা ওতা'আলা মানুষের হেদায়েতের জন্য পাঠিয়েছেন এবং এর ব্যাখ্যা জানা ছাড়া হেদায়েত পাওয়া সম্ভব নয়।
নেকী দুই কাজ করলেই পাওয়া যাবে, তাই দুই কাজই করতে হবে। যেকোন একটি বেছে নিলে সফল হওয়া সম্ভব নয়।
শায়েখ উসাইমিন [রহ:] -কে প্রশ্ন করা হয়ে ছিল:
কাউকে কি পুরস্কৃত করা হবে কুরআন তেলাওয়াত করলে, যদিও সে তার অর্থ না বুঝে?
তিনি বলেছেন:
কুরআন হচ্ছে বর্কতময়, আল্লাহ্ সুবহানা ওতা'আলা বলেছেন: এটি একটি বরকতময় কিতাব, যা আমি আপনার প্রতি বরকত হিসেবে অবতীর্ণ করেছি, যাতে মানুষ এর আয়াতসূহ লক্ষ্য করে এবং বুদ্ধিমানগণ যেন তা অনুধাবন করে...[সূরা সা'দ, ৩৮:২৯]
তাই মানুষকে এটা পড়তে হবে, যদিও সে এর অর্থ বুঝে বা না বুঝে। কিন্তু একজন ঈমানদার, যার এর উপর আমল করা উচিত (তার) অর্থ না বুঝে কুরআন পড়া উচিত নয়। উদাহরণ স্বরূপ, যদি কেউ Medicine পড়তে চায় এবং Medicine এর বই পড়ে, সে এর থেকে উপকৃত হবে না, যদি না সে এর অর্থ বুঝে এবং তাকে বুঝানো হয়; প্রকৃত পক্ষে সে এর অর্থ বুঝার জন্য আগ্রহী থাকবে, যেন সে তা প্রয়োগ করতে পারে। তাই তুমি কেন মনে কর কেউ আল্লাহ্ সুবহানা ওয়া'তায়ালার কিতাব মনোযোগ দিয়ে বা না অর্থ বুঝে পড়বে, যা মানুষের অন্তরের ব্যাধি দূর করে এবং প্রেরণা দেয়? এই জন্য সাহাবীরা [রা:] ১০ আয়াতের বেশি যেত না, যতক্ষণ না তারা তা শিখত এবং এর শিক্ষণীয় বিষয় জানত এবং বুঝতো কিভাবে এর উপর আমল করতে হয়। তাই তারা [রা:] কুরআন শিখতো এবং এর জ্ঞান বুঝতো এবং এর কর্ম শিখত সব এক সাথে।
একজন মানুষকে পুরস্কৃত করা হবে কুরআন পড়ার জন্য, যদিও সে এর অর্থ বুঝে বা না বুঝে, কিন্তু তার খুব আগ্রহ থাকতে হবে এর অর্থ বুঝার জন্য এবং এর জ্ঞান শিখবে তার জানা মতে কোন ভাল আলেমের কাছে থেকে। যদি তার কোন আলেমের থেকে এর শিক্ষা পাওয়ার সুযোগ না থাকে, যে তাকে শিক্ষা দিবে; সে তাহলে সহীহ তাফসীর দেখতে পারে, যেমন তাফসীর ইবনে জারীর, তাফসীর ইবনে কাসীর এবং অন্যান্য তাফসীরও দেখা যেতে পারে যা সাহাবী [রা:] এবং তাবেঈনদের [রহ:] এর বর্ণনায় লিখা।
….............. উক্তি সমাপ্ত ….............
সালাম ও দরূদ বর্ষিত হোক আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ [সা:] এর উপর, তার পরিবার এবং সাথীদের উপর।
বিষয়: বিবিধ
২২৫৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন