আল্লামা শফি সাহেব কি আসলেই অশ্লীল বয়ান দিয়েছেন ???
লিখেছেন লিখেছেন আবদুল্লাহ ১৩ জুলাই, ২০১৩, ১২:৪২:৩৮ দুপুর
...........................................................................
শায়খুল ইসলাম হযরত মাওলানা তকী উছমানী, আল্লাহতাঁকে দীর্ঘজীবী করুন, বড় সুন্দর লিখেছেন, ‘আশ্চর্য তামাশার বিষয় এই যে, নারী যখন ঘরে বসে স্বামী-সন্তানের সেবা করে, খাবার রান্না করে, ঘরদোর সাজায় তখন সেটা হয় পশ্চাদপদতা ও মৌলবাদিতা, পক্ষান্তরে এই নারী যখন বিমানবালা হয়ে চারশ পুরুষের জন্য ট্রে সাজিয়ে খাবার সরবরাহ করে, আর তাদের লালসা-দৃষ্টির শিকার হয় তখন সেটা হয় সম্মান ও মর্যাদা!’
(ইছলাহী মাওয়াইয, পৃ. ১৫৪)
..........................................................................
আল্লামা শফি সাহেব অশ্লীল বয়ান দেন নাই। এটা জাস্ট একটা কমিউনিকেটিভ কালচারাল গ্যাপ, বুঝার ভুল। আমি নীচে কিছুটা ব্যাখ্যার চেষ্টা করব, আগে অন্য একটা ব্লগেও লিখেছি এ নিয়ে।
আলেমওলামাগণ আল্লাহর ভয়ে আল্লাহর নির্দেশ মাথায় রেখে কোরআন-সুন্নাহর ভিত্তিতে মানুষকে আল্লাহর দ্বীনকে পৌঁছে দেন। নিজের মনগড়া কথা রাজনীতিবিদদের মত ওনাদের বলার সুযোগ নাই। তাত্বিকভাবে যা ইসলামের নির্দেশ সেটা পৌঁছানোর কাজ হল ওলামায়ে কেরামের। ইনিয়ে বিনিয়ে রাজনীতিবিদদের মতো অভিনয় ওনারা করেন না। সেজন্যে ওনাদের বয়ান হল কৃত্রিমতা বিবর্জিত, সহজ সরল, সোজা সাপ্টা। তাত্বিকভাবে নারীপুরুষের সম্পর্কের ক্ষেত্রে ইসলামের যে বিধিনিষেধ আছে একজন ওলামা হিসেবে তার গতিপ্রকৃতি ও ব্যাখ্যা তুলে ধরতে গিয়ে 'ইসলামের বাইরে' উনি কিছু বলেছেন কি না সেইটা বিবেচ্য। সুশীল সমাজ যে আগাগোড়াই ভন্ড সেটা সবাই জানে, আদতে 'প্লেটোনিক লাভ' বলে বুড়ো বয়েসেও যে ইসলাম অনুমোদন করে না এমন ধরণের সম্পর্কে জড়ানোর সুযোগ নেই এটা বোঝাতে গিয়েই এ কথা বলেছেন।
মাওলানা শফির ওয়াজ সাধারণ ইসলামপ্রেমী মানুষের জন্য। উনি আঞ্চলিক ভাষায় ওয়াজ করেন। ইসলামে যা আছে তাই বলেছেন বাড়তি কিছু বলেন নি। আঞ্চলিক ভাষায় করা সাবলীল এই ওয়াজটি 'উচ্চশিক্ষিত' রুচিবান' 'শহুরে' মানুষদের জন্য নয়, যেহেতু না মানতে না মানতে ইসলামের খুব কম হুকুম মানার যোগ্যতাই এখন সাধারণভাবে তাদের অবশিষ্ট আছে। আল্লাহর দ্বীনকে তারা মোটামুটি খেলতামাশার বস্তু বানিয়ে ফেলেছে যেটুকু ইচ্ছা হয় মানে, যেটুকু ইচ্ছা হয় না মানে না। এই ওয়াজ তাদের মত মানুষদের জন্য না, যারা মানতে অভ্যস্ত ও মানতে পারেন সেইসব কম শিক্ষিত কিন্তু অনুগত সহজ সরল সাধারণ মানুষদের জন্য। শহুরে আধুনিক শিক্ষিত মধ্যবিত্তদের জন্য সহজপাচ্য ওয়াজ ও ফতওয়াও কিন্তু মাওলানা শফি দিয়েছেন। যেমন 'মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যেটুকু পর্দা করেন বা পোষাক পরেন, সেটুকু পর্দা করলে বা পোষাক পরলেও গ্রহণযোগ্য হবে।' মনে পড়ে এই কথাও শফি সাহেব বলেছিলেন ?
আগের যুগে পুঁথি পড়া হত, নামতার সুরে গ্রামবাংলার অজ পাড়াগেঁয়ে মানুষের কথ্য 'প্রাকৃত' ভাষায় যেসব অপভ্রংশনির্ভর পালাগান রচনা করা হত _ যার প্রতিফলন যাত্রা-পালাগানেও আমরা এখনো দেখতে পাই, সেটি আবহমান বাংলার গ্রামীণ লোকায়ত সংষ্কৃতির আবহের সাথে যতটা সাযুজ্যপূর্ণ, উপভোগ্য, ইন্টারএ্যাকটিভ _ শহুরে আধুনিক নগরসভ্যতার ঘুণচক্করের পাঁচমিশালি মিশ্রশংকর বাকপটু জটিল সংষ্কৃতি প্লাস কোলকাতার বাবুসংষ্কৃতির কুটিল মিশ্রণে 'গোছানো' কথাবার্তায় অভ্যস্ত শহরবাসীদের মানসিক গঠনের কাছে ততটাই দূর্বোধ্য, বিরক্তিকর। এখন শহুরে ভাষায় ওয়াজ করলে তা হবে গ্রাম্য মানুষদের কাছে দূর্বোধ্য _ তাদের জীবনযাপন-রঙ্গরসিকতা-বোধগম্যতা কিছুই শহরের মানুষদের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এখন পালাগান গায়কই হোক বা ধর্মজ্ঞানী আল্লামা শফিই হন _ যার যার যে মেসেজ গ্রাম্য মানুষদের কাছে পৌঁছাতে চাইছেন সেটি তাদের মত করেই তাদের কাছে পৌঁছাতে হবে। আমার ধারণা আল্লামা শফি এই ক্ষেত্রে মূল বক্তব্যটি পৌঁছাতে পেরেছেন।
বলা বাহুল্য আজকের দিনে পুঁথিপাঠ-পালাগান গ্রামের সহজিয়া সংষ্কৃতির ধারক কৃষক-শ্রমিকদের কাছে এখনো যে আবেদন রাখে, রাত জেগে পরম আগ্রহ নিয়ে সরলমনে যেভাবে তারা শোনে _ শহরের মানুষ পাঁচ মিনিট শুনলেই হাই তুলতে শুরু করবে, বিরক্তি প্রকাশ করবে। পুঁথিপাঠ-পালাগানের মতই সহজিয়া সংষ্কৃতির আরেকটি অনুসঙ্গ হচ্ছে 'ওয়াজ মাহফিল', যে লিংকটি দিয়েছেন সেটি গ্রামের ওয়াজ মাহফিল যাতে আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহার করে সাধারণ গ্রামবাংলার মানুষের কাছে সহজ সরল ভাষায় কিন্তু ‘তাদের মত করে’ 'উপভোগ্য' করে 'সহজবোধ্য' করে ধর্মের বাণী পৌঁছানোর চেষ্টা করা হয়েছে। এখন এই গ্রাম্য অডিয়েন্সের সামনে আঞ্চলিক ওয়াজকে যদি আপনি 'আধুনিক শহুরে রুচির' পাল্লায় মাপেন তাহলে সেটি ‘অবিচার’ হবে।
সুশীল সমাজে মাওলানা শফিকে 'বুড়ো পারভার্ট' বলে একে অন্যের গায়ে বিদ্রুপে ঢলে পড়ার ধুম পড়ে গেছে, বিচিত্র নয় কারণ ইসলামের বিপক্ষে একটি 'তিল' খুঁজে পেলেও সেটিকে বৃহদাকার 'তাল' বানানোর চেষ্টায় দলবদ্ধভাবে প্রাণপণে নেমে পড়েন এইসব ইসলামবিদ্বেষী আধুনিক মুক্তমনার দল।
'পারভারশন' এর ডেফিনেশন যদি মুখের কথা দিয়ে করতে হয় তাহলে সরকারদলীয় সমর্থক-শাহবাগি মঞ্চ সমর্থক যারা তাদের ফেসবুক-ব্লগের কমেন্টে যে পরিমাণ বীভৎস অশ্লীলতা মহামারির আকারে ছড়িয়ে পড়েছে তার তুলনা জগৎ সংসারে পাওয়া যাবে না। তারপরেও তারা অন্ধ সমর্থকদের কাছে পারভার্ট না। অন্তহীন সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করার পরও ছাত্রলীগ-যুবলীগ যেমন 'সোনার ছেলে', তাদেরটা সন্ত্রাস নয় 'বীরত্ব', কখনো মাত্রা ছাড়ালে বড়জোর 'দুষ্টুমি' _ লীগের নেতারা শত অপকর্ম করলেও তারা 'মুক্তিযোদ্ধা'।
সুশীল সমাজের ভন্ডামির চিত্র এখানেই সুস্পষ্ট। তারা গাছেরও খাবে তলারও কুড়োবে। ফেসবুকে ব্লগে অশ্লীলতা তুবড়ি ছোটাবে কিন্তু গণমাধ্যমে শুদ্ধ বাংলা ভাষায় মুখে সুন্দর 'বিবৃতি' দেবে, ব্যক্তিজীবনে করবে লিভটুগেদার ও যথেচ্ছ ফ্লার্ট-পরকিয়া, তারপরও তারা 'সুশীল' 'সভ্য'। এরশাদ অশ্লীল কথা বলেন না, কিন্তু ব্যক্তিজীবনে উনি পারভার্ট শিরোমণি। গণজাগরণের ২য় উদ্যোক্তা গোলাম রসুল মারুফ ওরফে 'শনিবারের চিঠি' র অসংখ্য নারীদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে মিথ্যাচার ও প্রতারণার কাহিনী নিয়ে প্রতারিত মেয়েরাই এখন ব্লগ ফেসবুকে শনিবারের চিঠিকে নগ্ন করে পোস্ট দিচ্ছে। এই শনিবারের চিঠি শুদ্ধ শান্তিনিকেতনী ভাষায় সুললিত ভঙ্গিতে রাবীন্দ্রিক ঢঙে কথা বলেন, ঐসব বলেই মুন্ডু চিবিয়ে-পটিয়ে সর্বনাশ করেন মেয়েদের, পরে আর চিনতে পারেন না। দীপুমণি সমকামিতাকে দলীয় নৈতিক সমর্থন দিয়ে বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি উজ্বল করে আসেন। জনমনে আল্লামা শফিদের পায়ের ধূলোর যে মর্যাদা সেটাও কোনদিন এসব সুশীলদের ভাগ্যে জুটবে না। মদ্যপায়ী, খুনি, লুটেরা, মিথ্যাচারিতায়, চাটুকারিতায় অভ্যস্ত রাজনৈতিক নেতাদের সাথে আল্লামা শফির তুলনা করা যায় না। মজলুম জননেতা মাওলানা ভাসানিও গ্রামবাংলার সাধারণ জনসভাগুলোতে কথাবার্তায় সহজ-সরল, সাদাসিধা বক্তব্য রাখতেন। ব্যক্তিজীবনে ছিলেন অনাড়ম্বর, সদা অনটনক্লিষ্ট। বাংলাদেশের মানুষ পারভারশন বিবেচনা করে 'ব্যক্তিজীবন' দিয়ে, মুখের ২/১ টা কথায় কেউ পারভার্ট হয় না।
(সংগ্রীহিত)
বিষয়: রাজনীতি
৩৫২২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন