বর্তমান মুসলিম সংস্কৃতি ও সাওম

লিখেছেন লিখেছেন গালির রাজা ১১ জুলাই, ২০১৩, ১০:১৬:২৬ সকাল

বর্তমান মুসলিম সংস্কৃতি ও সাওম

বর্তমান মুসলিম সংস্কৃতিতে সাওম ধর্মীয় চিন্তা-ভাবনা এবং সংযমের পরিবর্তে পরিণত হয়েছে উৎসবের মাসে! রমযানের রাতগুলি পরিণত হয় পার্টি এবং ভোজের রাত্রিতে যা কিনা কোন কোন দেশে ভোর পর্যন্ত চলে। সেখানে রাত পরিবর্তিত হয় দিনে, দিন পরিবর্তিত হয় রাতে (বহু মানুষই রোযার সময়টুকু ঘুমিয়ে কাটায়)। সাধারণতঃ সেহেরীতে মানুষ হালকা খাবারের বদলে পেট ভরে খায়। ফলে সাওম অবস্থায় খুব কম মানুষই প্রকৃত ক্ষুধার তাড়না বোধ করে। আবার ইফতারীতে আরেক দফা ভরপেট খাওয়া চলে, সেই সাথে রয়েছে রকমারী খাবারের আয়োজন। ফলে অনেকেই রমযান শেষে ওজন বেড়ে যাওয়ার অভিযোগ করে!

সাওমের কাঙ্ক্ষিত প্রভাব ও রমযানের শিক্ষা

রমযানের সময়কাল অনেকটা বিদ্যালয়ের মত, যে সময়টিতে শেখার মত কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রয়েছে। কোন কারণে নামায ছুটে গেলে আমরা তা পরবর্তীতে আদায় করে নিতে পারি, কিংবা সাওমও পরবর্তীতে রাখতে পারি, কিন্তু রমযানের সময়টি সেরকম নয়, এ সময় যদি পার হয়ে যায় এমন অবস্থায় যে আমরা রমযানের গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা গুলো নিতে পারলাম না, তবে তা বিরাট ক্ষতি।

তাকওয়া সৃষ্টি

কুরআনের যে আয়াতে সিয়ামের আদেশ দেয়া হয়েছে, সে আয়াতেই এ কথা উল্লেখ করা হয়েছে:

“হে বিশ্বাসীগণ। তোমাদের জন্য সিয়াম পালনকে নির্ধারণ করা হল যেমনটি তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর করা হয়েছিল, যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার।” (সূরা আল বাক্বারাহ, ২ : ১৮৩)

এই তাকওয়া আল্লাহ সম্পর্কে সচেতনতা, তাঁর উপস্থিতির উপলব্ধি, এবং এটা জানা যে তিনি আমাদের দেখছেন – যা আমাদেরকে ব্যক্তিগত জীবনে উন্নততর মানুষ হতে সাহায্য করবে। এই তাকওয়াকে আলী (রাঃ) বর্ণনা করেছেন “আল্লাহর প্রতি ভয়, অল্পে সন্তুষ্টি এবং (পরবর্তী জীবনের পানে) যাত্রার প্রস্তুতি হিসেবে”। তাই ভয় তাকওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। একদল লোক কেবল আল্লাহকে ভালবাসার কথা বলে থাকে এবং দাবী করে যে আল্লাহকে ভয় করে তাঁর ইবাদত করা ঠিক নয়, বরং তাঁকে শুধুমাত্র ভালবেসে ইবাদত করাটাই ঈমানের উন্নততর শর্ত । কিন্তু এ কথা ঠিক নয়। কুরআনের পাতায় পাতায় আল্লাহকে ভয় করার কথা বলা হয়েছে। এই ভয়ের অর্থ তাঁর অবাধ্যতার কারণে যে শাস্তি রয়েছে, সেই শাস্তিকে ভয় করা। মানুষ আল্লাহর আদেশ পালনের জন্য সাধনা করার মাধ্যমে তাকে ভালবাসবে, একই সাথে তাঁর শাস্তির ভয়ও অন্তের পোষণ করতে হবে। এ দুটো অবিচ্ছেদ্য এবং প্রকৃত ঈমানের মৌলিক দুটি উপাদান। আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেন, “যে রোযাদার লাইলাতুল ক্বদর লাভ করবে, তার পূর্ববর্তী পাপসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হবে। এবং যে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ঈমান সহকারে রমযানে সিয়াম পালন করবে, তার পূর্ববর্তী গুনাহ সমূহকেও ক্ষমা করে দেয়া হবে“। এজন্য সিয়াম হতে হবে সঠিক পদ্ধতিতে এবং সঠিক প্রেরণার ভিত্তিতে। যেমনটি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন:

“যে রোযা অবস্থায় মিথ্যা বলা এবং মিথ্যার ওপর আচরণ করা থেকে বিরত হল না, তার ক্ষুধা এবং তৃষ্ণায় আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই।”

রোযা অবস্থায় আমাদের দিনগুলো রোযা না রাখা অবস্থায় আমাদের দিনগুলোর মত হওয়া উচিৎ নয় – এর মাঝে পার্থক্য থাকা উচিৎ। এই তাকওয়াই মানুষকে সর্বাবস্থায় অন্যায় থেকে বিরত রাখে, যদিও বা কেউ তাকে দেখতে না পায়।

বিষয়: বিবিধ

১২৬১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File