শ্লোগানের রাজনীতি-রাজনীতির শ্লোগান

লিখেছেন লিখেছেন সামি২৩ ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪, ০১:৫৯:৫৪ দুপুর

বাংলাদেশের অস্থিতিশীল ও বিপদজনক রাজনীতির একটা মজার দিক হলো এর শ্লোগান।দেশ স্বাধীন হওয়ার পর গণতন্ত্র থেকে শুরু করে বাকশাল,সেনাশাসক থেকে পুনরায় গণতন্ত্র উত্তরণ সমকাল পর্যন্ত রাজনীতিতে শ্লোগান ছিল বেশ কার্যকর এবং সক্রিয় হাতিয়ার।তৎকালীন সময়ের রাজনীতির অবস্থা এবং সমকালীন মনস্তত্বও বোঝার ভালো উপায় তা।

স্বাধীনতা-উত্তর প্রথম দেয়াল লিখন ছিল:

অস্ত্র জমা দিয়েছি _ ট্রেনিং জমা দেয়নি। [ফলাফল স্পষ্ট]

এরপর দুর্ভিক্ষ এলো। ছাত্রলীগের বিদ্রোহী অংশ শ্লোগান দিল:

মুজিববাদ বস্তায় ভর_চালের দাম সস্তা কর।

ছাত্রলীগের সরকার সমর্থক অংশ তখন পাল্টা আওয়াজ দিল:

নিক্সন পেড়েছে ডিম,

মাও দিয়েছে তা,

তা থেকে বের হলো

বৈজ্ঞানিকের ছা।

ছাত্র ইউনিয়ন তখন সরকারের সমর্থক। জাসদ ছাত্রলীগ তাদের নিয়ে শ্লোগান দিল:

শেখ মুজিবের দুই শনি

শেখ মনি আর সিং মনি।

এরপর বড় ঘটনা ৭৫-এর নভেম্বর অভ্যুত্থান। জাসদ শ্লোগান দিল:

জিয়া তাহের লাল সালাম_ লাল সালাম,

রুশ-ভারতের দালালেরা হুশিয়ার সাবধান।

এক পর্যায়ে জাসদ ছাত্রলীগ ভাগ হলো। তৈরি হলো বাসদ। তাদের একটি শ্লোগান ছিল:

১৯৮০ সাল

জাসদ হইলো বাকশাল।

মান্না ভাই এসময় বাসদে ছিলেন। জাসদ ছাত্রলীগ তাই তার বিরুদ্ধে শ্লোগান দিল:

বংগভবনে আছে গাই

তার বাছুর মান্না ভাই

এস্ইউসি’র নাত জামাই

বলে নতুন পার্টি চাই

-১৯৭৩ সালে দ্বিতীয় ডাকসু নির্বাচনে একটি অতি উচ্চারিত শ্লোগান ছিল-

‘লেনিন-গামা

নূরা পাগলা থামা।‘

পটভূমি ও ফলাফল

লেনিন মানে নূহ উল আলম লেনিন, আর গামা মানে ইসমাত কাদির গামা। একজন ছিলেন ছাত্র ইউনিয়নের, অপরজন ছাত্রলীগের। যৌথ প্যানেল। জাতীয় রাজনীতিতেও তখন সিপিবি-আওয়ামী লীগ ত্রিদলীয় ঐক্যজোটের অংশ। আর ‘নূরা পাগলা’ বলে যাকে গালি দেয়া হচ্ছে তিনি হলেন জাসদ ছাত্রলীগের আ ফ ম মাহবুবুল হক। তিনি ছিলেন জাসদ ছাত্রলীগের প্যানেলের ভিপি ক্যান্ডিডেট। অসম্ভব জনপ্রিয়। ক্যাম্পাসে তার পোশাক আশাকও তখনকার তরুণরা নকল করতো। মুখ ভর্তি দাড়ি-গোফ ছিল। সেজন্য বিপক্ষ দলীয়রা তাকে নূরা পাগলা বলতে শুরু করে। ঐ সময় হাইকোর্টের মাজারে নূরু নামে একজন লোকপ্রিয় পাগল ছিলেন। সেই সূত্রেই এই তুলনা।

এই গল্পের শেষ অংশ অবশ্য রাজনীতির জন্য অতি করুণ হয়েছে। আসলেই ‘লেনিন-গামা পরিষদ’ নূরা পাগলাকে থামিয়েছিল। তবে তা ভোটের পথে নয়। ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন শেষে প্রথমে হলগুলোর ভোট গণনা শেষে যখন দেখা যায় মাহবুবের জনপ্রিয়তায় ভর করে জাসদ ছাত্রলীগ হলে একচেটিয়াভাবে জিতেছে তখন সন্ধ্যার দিকে ডাকসুর ব্যালট বক্সগুলো ছিনতাই করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সামনেই ঘটনাটি ঘটে। কেউ প্রতিবাদ করেছেন বলে শোনা যায়নি। তবে রাজনীতিতে, বিশেষত তখনকার সরকারী দলের জন্য এই ঘটনার ফলাফল হয়েছিল বিধ্বংসী।

রাজনীতির শ্লোগান-শ্লোগানের রাজনীতি ৩

এ আড্ডায় যেসব শ্লোগান নিয়ে আলোচনা হচ্ছে তার অধিকাংশ স্বাধীনতা-উত্তর সময়ের।

এ সময়ের একটি মুখ্য রাজনৈতিক ধারা ছিল সিপিবি। ছাত্র ইউনিয়ন ছিল তাদের ছাত্র সংগঠন। স্বাধীনতার পর এই ঘরানার একটি আলোচিত শ্লোগান ছিল:

‘লক্ষ শহীদের আত্মদানে

মুক্ত স্বদেশ

এসো দেশ গড়ি‘।

জাতীয় রাজনীতিতে এসময় সিপিবি-ছাত্র ইউনিয়ন ছিল আওয়ামী লীগ [ও পরে বাকশালের]-এর মিত্র। ফলে মুজিব বিরোধিদের তরফ থেকে এরা শ্লোগানে শ্লোগানে আক্রান্ত হয়। তেমনি একটি শ্লোগান ছিল:

‘আচলে আচল ধরি

এসো দেশ গড়ি।‘

ছাত্র ইউনিয়নের মিত্র হওয়ায় মুজিববাদী ছাত্রলীগও বিপক্ষ মহল থেকে, বিশেষত জাসদ ও পিকিংপন্থী কমিউনিস্টদের তরফ থেকে আক্রান্ত হয়েছে এসময়। তারই একটি নমুনা ছিল নিচের শ্লোগানটি:

ইন্দিরা পেড়েছে ডিম

কোশিগিন দিয়েছে তা

তা থেকে বেরিয়ে এলো

মুজিববাদের ছা।

বলাবাহু্ল্য, ছাত্র ইউনিয়ন ও সরকারী ছাত্রলীগও থেমে থাকেনি - পাল্টা আক্রমণ করেছে তারা নিম্নোক্ত শ্লোগানে:

ঐতিহাসিক পুরাতত্ত্ব

বের করেছি মহাশয়

মাও-নিক্সনের পাঠশালাতে

রব-সিরাজের শিক্ষা হয়।

তথ্য আহরণঃ ‘শ্লোগানে শ্লোগানে রাজনীতি’-আবু সাঈদ খান এবং

বিশেষ কৃতজ্ঞতা সাংবাদিক ও গবেষক আলতাফ পারভেজ

বিষয়: বিবিধ

১৪৭৯ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

181862
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ দুপুর ০৩:২৭
সজল আহমেদ লিখেছেন : ধন্যবাদ
181925
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ বিকাল ০৪:২২
বাংলার দামাল সন্তান লিখেছেন : চমতকার চমতকার আপনার জন্য নোবেল পুরুস্কার অপেক্ষা করছে।
182019
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:২৮
প্রবাসী আব্দুল্লাহ শাহীন লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ
182030
২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সন্ধ্যা ০৬:৪১
মাজহার১৩ লিখেছেন : ধন্যবাদ
182291
২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ রাত ০১:০৫

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File