কিয়ামতের আলামত সমূহ (টুডে থেকে টুমোরো)

লিখেছেন লিখেছেন মোতাহারুল ইসলাম ২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ০৬:৪৯:৩০ সন্ধ্যা

কাফেররা বলে আমাদের উপর কেয়ামত আসবে না। বলুন কেন আসবে না? আমার পালনকর্তার শপথ-অবশ্যই আসবে। তিনি অদৃশ্য সম্পর্কে জ্ঞাত। নভোমন্ডলে ও ভূ-মন্ডলে তাঁর আগোচরে নয় অণু পরিমাণ কিছু, না তদপেক্ষা ক্ষুদ্র এবং না বৃহৎ-সমস্তই আছে সুস্পষ্ট কিতাবে।

[আল কুরান - সুরা সাবাঃ আয়াত-৩]

নীচের তথ্যগুলো জনাব গারামাল্লাহ আল-গামদি নামক জনৈক স্কলারের বক্তৃতার সারাংশ। উনি ১৯৯১ সালে রিভার সাইডে এই বক্তৃতা দিয়েছিলেন, বন্ধনীর ভেতরে সম্পাদকের এবং অনুবাদকের বক্তব্য। []

এটা নিশ্চিত করে বলা মুস্কিল যে, কোনও কোনও ঘটনা ইতিমধ্যে সংঘটিত হয়েছে বা কখন সঙ্ঘটিত হবে। আল্লাহ সর্বজ্ঞ।

কিয়ামতের দিন-ক্ষণ যদিও একমাত্র আল্লাহি ভালো জানেন, এর নিকটবর্তি হওয়ার ব্যাপারে উনি পবিত্র কুরাণে এবং তাঁর প্রিয় রসুলের মাধ্যমে আমাদের কিছু ইঙ্গিত দিয়েছেন।

এই আলামত গুলোকে গুরু আলামত এবং লঘু আলামত এই দুইভাগে ভাগ করা যায়। এই নিবন্ধে সকল আলামত অন্তর্ভুক্ত হয়নি, শুধু গুরুত্বপূর্ণ গুলোর কথায় বলা হয়েছে। এই আলামত গুলো কুরান-হাদীসের উপর ভিত্তি করেই বর্ণিত হয়েছে, বিশেষ করে হাদীসে বিস্তারিত বলা আছে।

লঘু আলামত ( কোনও ক্রমানুসারে নয়)

১। শেষ নবী হজরত মোহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ সাল্লাল্লাহুয়ালায়হিয়াসসাল্লাম এর আগমণ [ এটি অতি অবশ্যই সংঘটিত হয়েছে ]

২। দাসেরা প্রভু বণে যাবে। [ বর্তমান যুগে দাস প্রথা বিলুপ্ত হয়েছে, ইতিহাসে অনেক মুক্তি প্রাপ্ত দাস পরবর্তীকালে বহু গুরুত্বপূর্ণ পদে এমনকি শাসন ক্ষমতায় অধিষ্টিত হয়েছে, দিল্লি সালতানাতের ৩য় শাসক সুলতান ইলতুতমিশ সুলতান কুতুবুদ্দীন আইবেকের মুক্তিপ্রাপ্ত কৃতদাস ছিলেন। অধুনা আমেরিকার আফ্রিকান জনগোষ্ঠি সেখানে কৃতদাস ছিল।দাস প্রথা উচ্ছেদের পর তারা নাগরিকত্ব পেয়েছে, তাদেরই একজন সদস্য প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বর্তমান পৃথিবীর সর্বাপেক্ষা ক্ষমতাধর ব্যাক্তি, অবশ্য এ আলামতের ব্যাখা অন্য কিছু হওয়া অস্বাভাবিক নয় - অনুবাদক]



৩। মরুচারী নগ্নপদী ভেড়ার রাখালরা উঁচু অট্টালিকা নির্মাণে প্রতিদ্বন্দিতা করবে [ আরব বিশ্বের বেদুইনরা এর বড় উদাহরণ। বুর্জ আল আরব এবং বুর্জ আল দুবাই এর মত দুইটি সুউচ্চ অট্টালিকার দিকে দৃষ্টিপাত করলে আরো সব কিছু পরিস্কার হয়- অনুবাদক]



বুর্জ আল আরব



বুর্জ আল দুবাই

৪। দ্বীনের জ্ঞান তুলে নেওয়া হবে, অজ্ঞতা বৃদ্ধি পাবে। দ্বীনের জ্ঞানের দৈন্যতা এ কারণে বৃদ্ধি পাবে যে, পুরনো আলেমদের মৃত্যুর পর তাদের শুন্যস্থান পুরণের জন্য স্বল্প থেকে স্বল্প সংখ্যায় যোগ্য আলেম তৈরী হবে। মূর্খরা মুসলমানদের নেতা হবে এবং তাদের খেয়াল খুশীমত আধিনস্থদের শাসন করবে। [ মুসলিম বিশ্বের আধিকাংশ স্থানে বর্তমান যুগে দ্বিনী শিক্ষাকে নিম্ন শ্রেনীর এবং এ শিক্ষায় শিক্ষিত ব্যাক্তিকে নিম্ন সামাজিক মান-মর্যাদায় নিম্ন গোত্রীয় মনে করা হয়। মুসলিম বিশ্বের নেতারা রাজনৈতিক ও সামরিক শক্তির মাধ্যমে জনসাধারণকে নিপীড়নমূলক শাসনে অভ্যস্ত, তারা ইসলামিক জ্ঞান গরিমা বা বিধানের কমই পরোয়া করেন।]

৫। মদ্যপাণ এবং ব্যাভিচার অত্যাধিক পরিমাণে বেড়ে যাবে। [মাদকের ভয়াল ছোবল আর ব্যাভিচারের ব্যাপারে মন্তব্য করার কিছু আছে কি? পত্রিকার পাতা খুল্লেই তার প্রমাণ মিলে। উন্নত বিশ্বের দিকে তাকালে কি দেখা যায়, পাঠকরাই লেখকের চাইতে হয়ত অধিক অবগত আছেন- অনুবাদক ]

৬। পুরুষের সংখ্যা কমে যাবে এবং নারীর সংখ্যা এমন ভাবে বৃদ্ধি পাবে যে, একজন পুরুষ অনুপাতে নারীর সংখ্যা হবে ৫০ জন। [ অনুপাত উল্লেখিত পর্যায়ে না পৌঁছলেও পৃথিবীতে নারীর সংখ্যা পুরুষের চাইতে বেশী এবিং তা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে, ২০০২ সালে ব্রাজিলে গিয়ে ব্রাজিলিয়ান দের কাছে জানতে পারি যে, সেখানে প্রতি ৭ জনের জন্য একজন পুরুষ- অনুবাদক]

৭। ত্রিশজন ভণ্ড ব্যাক্তি নবুয়তের দাবী করবে এবং এর পর ভন্ড মসীহ দাজ্জালের আবির্ভাব হবে।

৮। ধন-সম্পদ এমনভাবে বৃদ্ধি পাবে যে, মানুষ যাকাত দেবার জন্য কাউকে খুঁজে পাবেনা।

৯। হত্যাকান্ড বৃদ্ধি পাবে।

১০। সময়ের দৈর্ঘ্য ছোট হয়ে আসবে যাতে এক বছর সময় মনে হবে এক মাস, এক মাসকে মনে হবে এক দিন আর এক দিন কে মনে হবে এক ঘন্টা। [ সময় সংক্ষিপ্ত হওয়ার ধারণা এখন খুবই দৃশ্যমান, বিশেষ করে উন্নত বিশ্বে ]

১১। দুইটি বড় রাষ্ট্র যুদ্ধে লিপ্ত হবে এবং একে অপরকে হত্যা করবে, প্রত্যেকে একই জিনিস নিজেদের বলে দাবি করবে।

১২। ভুমিকম্পের সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পাবে।

১৩। একজন মানুষ কবরের পাশ দিয়ে যখন যাবে, তখন হতাশায় তার সব কিছু বিক্রি করে দিতে চাবে।

গুরু আলামত ( মোটামুটি একটি ক্রমানুসারে)

১। দাজ্জালের আবির্ভাব হবে, সে নিজেকে খোদা বলে দাবি করবে এবং জান্নাত ও জাহান্নাম দুই হাতে ধরে রাখবে। তার উদ্দেশ্য মানুষ কে প্রতারিত করা, অবিশ্বাসীরা তার অনুসারী হবে। সে হবে খাটো, লালাভ চেহারা, ডান চোখ অন্ধ এবং সে খাড়া চুলের অধিকারী হবে। সে সমস্ত পৃথিবী ভ্রমণ করবে, কিন্তু মক্কা এবং মদীনাতে প্রবেশ করতে পারবেনা। [ অনেক সংখ্যক হাদীসে এ ব্যাক্তির ব্যাপারে বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে]

২। দাজ্জালের সময় ইমাম মাহদীর আবির্ভাব হবে, সে মানুষ কে সত্য ইসলামের পথে দাওয়াত দেবে এবং সামরিক নেতা [ যোদ্ধা ] হবেন। তার নাম রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহুয়ালায়হিয়াসসাল্লাম এর নামের অনুরূপ ‘মোহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ’, তার বাবার নামও রাসুলুল্লাহ সাল্লাহুয়ালায়হিয়াসসাল্লাম এর বাবার নাম এর অনুরূপ হবে। উনি ফাতিমা বংশীয় হবেন।

৩। ইমাম মাহদী এবং দাজ্জালের সময় হযরত ইসা আলায়হিয়াসসাল্লামএরও আবির্ভাব হবে, উনি ফজরের নামাজের সময় সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কের এক মসজিদে অবতরণ করবেন। উনি হবেন মাঝারি গড়নের, মুখ-মন্ডল হবে লাল বর্ণের, তার চুল দেখে মনে হবে উনি এই মাত্র গোসল করলেন। উনি মানুষকে ইসলামের দিকে আহবান করবেন, উনিও একজন সামরিক নেতা হবেন। আহলে কিতাবের সবাই ইসলামের দিকে প্রত্যাবর্তণ করবে, সম্পদের প্রাচুর্য্য হবে। ইসা আলাইহিয়াসসাল্লাম ক্রুশ ভাংবেন, শুকর হত্যা ও ধ্বংস করবেন, এবং ব্যাক্তিগত ভাবে উনি দাজ্জাল কে বধ করবেন। উনি পৃথিবীতে অনেক সময় অবস্থান করবেন তার পরে মৃত্যু বরণ করবেন।

৪। দাব্বাতুল আ’রদ নামে একটি প্রাণীর আবির্ভাব হবে, তা মানুষের মত কত৫হা বলবে এবং মানুষকে ইসলামের দিকে আহবান করবে। [ প্রানীটির আংশিক বর্ণনা হলো, এটা খুবই লোমোশ হবে, লোম এত বেশী হবে যে , কেউ এর সম্মুখ ভাগ এবং পশ্চাদ ভাগ নির্ণয় করতে পারবেনা। ]

৫। ইয়াজুজ এবং মাজুজ নামে দুটি জাতি তাদের প্রাচীর ভেঙ্গে বেড়িয়ে আসবে এবং লুটতরাজ, বিশৃংখলা এবং ধ্বংস সাধনে লিপ্ত হবে। তারা সকল পানি খেয়ে ফেলবে এবং মানুষ কে হত্যা করতে থাকবে, যতক্ষণ পর্যন্ত না আল্লাহ তাদের বিরুদ্ধে এক ধরনের পোকা প্রেরণ করবেন যা তাদের দংশন করবে এবং ধরার বুক থেকে নিশ্চিহ্ন করবে। [ এটা মোটামুটি ইসা আলাইহিয়াসসাল্লাম এর সময়ই ঘটবে, যদিও তা পুরোপুরি পরিস্কার নয়, আল্লাহ ভালো জানেন]

৬। পৃথিবীর তিনটি স্থান ভূ-গর্ভে তলিয়ে যাবে, স্থান গুলোর একটি হবে পাশ্চাত্যে, একটি হবে প্রাচ্যে এবং অপরটি হবে আরব উপদ্বীপে [ এটা কিছু বৃহৎ ভূমি কম্পনের পরে হতে পারে]

৭। ইয়েমেনের এডেনে একটি বৃহৎ অগ্নিকান্ডের সূচণা হবে এবং তা উত্তর দিকে ধাবিত হবে। [ অনেকে দাবি করেন, মধ্যযুগে এ অগ্নি কান্ড সংঘটিত হয়েছে ]

৮। সুর্য পশ্চিম দিক থেকে উদিত হবে [ এটি কোনো প্রতীকি বর্ণনা নয়, কিন্তু এটি সর্ব শেষ অথবা শেষের দিকের আলামত হিসাবে পরিচিত ]

৯। পৃথিবীর সর্বত্র ধোঁয়ায় ঢেকে যাবে, যারা বিশ্বাসী তাদের সামান্য সর্দি- কাশি হবে, তবে কাফিররা এর দ্বারা মারাত্মক ভাবে আক্রান্ত হবে। পরিশেষে শৈত্য প্রবাহ আসবে এবং সমস্ত বিশ্বাসীরা মৃত্যু বরণ করবে। এর পর শুধু মাত্র কাফিররা শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত জীবিত থাকবে এবং কিয়ামত প্রত্যক্ষ করবে।

ঈস্রাফিল ফেরেশতা শিঙ্গায় ফুঁক দেবেন এবং মানব জাতির পুনরুত্থানের সূচনা হবে [ এ পর্যায়ে পুনরুত্থান দিবসের সূচনা হবে এবং আল্লাহ সুবহানাতাআ’লা আকাশ ও পৃথিবী ধ্বংস করবেন]

এই তালিকা কোনও মতেই সম্পূর্ণ তালিকা নয়, এ ছাড়াও অনেক আলামত আছে, আরো দুইটি কৌতুহল উদ্দীপক হলো রোমের আগে কনস্টান্টিনিপল (ইস্তানবুল) মুসলমানদের পদানত হবে। [ এর অর্থ রোমও মুসলমানদের দ্বারা বিজিত হবে] এবং অপরটি হচ্ছে, মুসলমান্দের রাজনৈতিক পদ্ধতি নবুয়ত থেকে খিলাফত থেকে রাজতন্ত্র থেকে জবরদস্তিমূলক শাসন থেকে আবার খিলাফতে প্রত্যাবর্তন করবে। এ থেকে মনে হয় আমরা শিকলের প্রায় শেষ প্রান্তে অবস্থান করছি। এখনি মুসলমানদের ইসলামী রাষ্ট্র পুনস্থাপন এবং খিলাফতের পুনঃপ্রবর্তনের কাজের জন্য শ্রেষ্ঠ সময়।

পরিশেষে এটা অবশ্যই প্রণিধান যোগ্য যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাহুয়ালায়হিয়াসসাল্লাম বলেছেন যে, আলামত গুলো যখন প্রকাশ পাবে তখন এমন ভাবে তা আসতে থাকবে যেমন কোনো মালা থেকে একটি পুঁতি খসে পরলে আর পরবর্তি পুঁতি গুলো একের পর এক পুর্ববর্তি গুলোর অনুগামী হয়।

এবং আল্লাহ সর্বজ্ঞ।

ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত

অনুবাদ ও সম্পাদনাঃ মোতাহারুল ইসলাম

বিষয়: বিবিধ

২৭৬১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File