কুকুর ছানা সমাচার ও প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট

লিখেছেন লিখেছেন মোতাহারুল ইসলাম ২৩ আগস্ট, ২০১৩, ০৮:২৭:০৬ সকাল

'আনাস্তাসিও সোমোজা গার্সিয়া' পৃথিবীর ইতিহাসে একজন সারা জাগানো স্বৈর শাসকের নাম। যিনি সৈনিক না হয়েও নিজের জন্য জেনারেল পদবী খাস করে নিয়েছিলেন। আমি নিকারাগুয়ার সাবেক একনায়ক এর কথা বলছি, যিনি ১৯৩৭ সাল থেকে ১৯৪৭ সাল এবং আবার ১৯৫১ থেকে ১৯৫৬ সাল পর্যন্ত নিকারাগুয়ার প্রেসিডেন্ট ছিলেন। এই স্বৈরশাসকটি আমেরিকার অত্যন্ত প্রিয় পাত্র ছিলেন। একবার কোনো এক সাংবাদিক প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট কে প্রশ্ন করেছিলেন " আপনি কেন প্রেসিডেন্ট সোমোজা গার্সিয়া কে সমর্থন করেন, সে তো একটা কুত্তার বাচ্চা" প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট হেসে উত্তর দিয়েছিলেন, " আমি জানি সে একজন কুত্তার বাচ্চা, কিন্তু সেতো আমাদের কুত্তার বাচ্চা।"

না আমি আজ নিকারাগুয়া কিংবা প্রেসিডেন্ট সোমোজা গার্সিয়া কে নিয়ে কোনও নিবন্ধ লিখতে বসিনি। আমার লিখার বিষয় আজকের যুগের প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট রা এবং আজকের যুগের জেনারেল আনাস্তাসিও সোমোজা গার্সিয়ারা। আমি আজ মিশরের দিকেই দৃষ্টি নিবদ্ধ করব।

মিশরের সাবেক একনায়ক হোসনি মোবারক জেল থেকে মুক্তি পেয়েছেন। আর এ ঘটনা এমন এক সময় ঘটল যখন মোবারক পন্থিরা মিশরে একটি সেনা অভ্যুথ্থানের মাধ্যমে আরব বিশ্বে গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসিকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করেছে, শুধু তাই নয় মিশরের জনগণের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কেও এক রক্ত সাগরে নিমজ্জিত করেছে। প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাতের হত্যাকান্ডের পর ১৯৮১ সালে হোসনি মোবারক ক্ষমতাই আসীন হন এবং ১৯১১ সালে আরব বসন্ত বাতাসে ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত হয়ে কারাগারে ঠাঁই নেন।

তাহরির স্কয়ারের যে আন্দোলন ছিল মিশরের জনগনের নিজস্ব আন্দোলন যেখানে কোনও বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থার ভুমিকা সম্পর্কে তেমন কিছু জানা যায়না। গণতন্ত্রের ফেরিওয়ালা আমেরিকা এবং তার সহযোগী আরব বিশ্বের গণতন্ত্রায়নের স্বার্থে তাদের দীর্ঘ দিনের ঘনিষ্ঠ মিত্রের এই পরিণতি আপাতদৃষ্টিতে মেনে নিয়েছিলেন। আসলে তারা মানেননি তারা ঘাপ্টি মেরে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছিলেন এবং সময় ও সুযোগের অপেক্ষাই ছিলেন। মোবারকের পতনের পর তাদেরই সমর্থন পুষ্ট সামরিক পরিষদ দুই বছর দেশ শাসন করেছে তাদেরই দ্বারা পার্লামেন্ট নির্বাচন অবৈধ ঘোষনা করা হয়েছে যেখানে মুসলিম ব্রাদারহুড সঙ্খ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয় লাভ করেছিল। তাদেরই সমর্থন পুষ্ট সেনাবাহিনী এবং আমলাতন্ত্র নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মুরসির কাজ পদে পদে বাধা গ্রস্থ করেছে এবং মুরসিকে অজনপ্রিয় করার চেষ্টা করেছে [ মুরসির কিছু ভুল ত্রুটি এবং অনভিজ্ঞতাও অবশ্য এর জন্য কিছুটা দায়ী], তাদেরই অর্থে এবং প্ররোচনায় মিশরের জনগণের ভেতর অসন্তোষ সৃষ্টি করা হয়েছে যা দেশকে অরাজক পরিস্থিতির দিকে নিয়ে গেছে। এ গুলো সবই ছিল পুর্ব পরিকল্পিত যাতে করে সেই মাহেন্দ্রক্ষনের জন্ম হয় যখন মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করা যায়। আর তাইতো মুরসির ক্ষমতাচ্যুতিকে আমেরিকা এবং ইউরোপ ক্যু বলতে নারাজ।

হোসনি মোবারককে যখন মিশরের সামরিক পরিষদ বিচারের মুখোমুখি করে তখন এমন সব অভিযোগ দায়ের করা হয় তা প্রমাণ করা দুঃসাধ্য। তার নামে রাজনৈতিক দুর্নীতির কোনো অভিযোগ আণয়ণ করা হয়নি। তারই রেখে যাওয়া আইন ও বিচার ব্যবস্থায় তার বিচার হয়, একটি মামালাতে যাবজ্জীবন সাজা প্রাপ্ত হলেও, মামলাটি পুনর্বিচারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে জেলে রাখার কোনও সুযোগ নেই, তাই আদালত তাকে মুক্তি দিয়েছে, অবশ্য তাকে গৃহবন্দি করে রাখা হবে। জানিনা এ প্রক্রিয়া হয়ত তাকে পরিপুর্ণ ভাবে মুক্তিদানেরই একটা অংশ।

সম্প্রতি এক জরিপে মিশরের ৬৯ শতাংশ মানুষ ইখওয়ান এর পক্ষে থাকার কথা বলেছে। তবুও গণতন্ত্র প্রেমী আজকের রুজভেল্ট প্রেসিডেন্ট ওবামার কাছে আজকের জেনারেল গার্জেসিয়া [জেনারেল সিসি এবং মোবারকই] প্রিয়। কারন তারাতো তাদেরই কুত্তার বাচ্চা।

বিষয়: বিবিধ

১৫৩৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File