আল্লামা শাহ আহমদ শফি সাহেব দা:বা: হুজুরের তেতুল বর্ণনার এপিঠ ওপিঠ!

লিখেছেন লিখেছেন মুস্তফা আল কারীম ১১ জুলাই, ২০১৩, ০২:৩৩:৪৯ দুপুর

আল্লামা শাহ আহমদ শফি সাহেব হুজুরের ইউটিউবে আপলোডকৃত ভিডিওয়ের বক্তব্য নিয়ে ইদানিং খুব মাতামাতি হচ্ছে।

"উনি নারীকে ঘরের ভেতর থাকতে বলেছেন। নারীদের তেতুলের সাথে তুলনা করেছেন। এর দ্বারা নাকি তিনি বহুত কুরুচীপূর্ণ মন্তব্য প্রদান করে ফেলেছেন! এটাই মাতামাতির কারন।"

তিনি ভুল কি বলে ফেলেছেন তা খুঁজে পাচ্ছিনা! তিনি দেশের শীর্ষস্থানীয় মাদ্রাসার একজন স্বনামধন্য শাইখুল হাদীস। কুরআন হাদীস উনার বেশি জানা থাকতেই পারে। উনি নসীহত করতেই পারেন। যেহেতু আলেম হিসেবে সদুপদেশ দান করা উনার কর্তব্য।

উনার বক্তব্যের বাস্তবতা তুলে ধরা যাক। নারীর ঘরে থাকা কেনো প্রয়োজন? আল্লাহ তায়ালা নারীদেরকে সৃষ্টি করেছেন বহু মর্যাদা প্রদান করে। নারীদের জন্য কোনটা উপকারী আর কোনটা অপকারী তা তিনি বাতলিয়ে দিয়েছেন। অথচ আজ আমরা ভোগ্যবাদী সমাজের প্ররোচনায় সবকিছু উল্টো ভাবছি। নারীদের পন্যে পরিণত করেছি। তাদের লোভাতুর চাকচিক্যের মোহে পড়ে অসংখ্য নারী আজ সমাজে অবহেলিত। অস্বচ্ছ ধারণা প্রদান করে সরলমনা নারীদের রাস্তায় নামিয়ে এনেছে ভোগবাদীর আরেক ছায়া পুজিবাদি সমাজ! আড়ালের প্রবঞ্চনা না বুঝে নারীরাও তাদের চিত্তাকর্ষক কথায় ভুলে গেছেন। তাদের মর্যাদা ভুলে গেছেন। এরপর অত্যন্ত সুক্ষভাবে পুজিবাদি সমাজের ভোগ্যে পরিণত হয়েছেন। এটাকি অবাস্তব? মিডিয়ায় কি প্রতিনিয়ত অবাস্তব জিনিস আসছে? যদি বলেন অবাস্তব তাহলে আপনার বিবেকে মরিচা ধরেছে। অন্তর কালো হয়ে গেছে। ভালো কথা আপনার কাছে কখনোই ভালো লাগবেনা।

সমাজের হাজারো লাঞ্চনার ঘটনা আজ চোখের সামনে বিদ্যমান! আপনি পরিসংখ্যান করে দেখুনঃ যেই মেয়েটা সাধারণত বেশি বাহিরে বের হয়না তাকে ইভটিজারদের হাতে কখনও কি লাঞ্চিত হতে হয়? ধর্ষিতা হতে হয়? তার মুখে কি এসিড মারা হয়? হয়না।

পক্ষান্তরে যেই মেয়েটি বেপর্দা চলাফেরা করে তার প্রতি শুভ দৃষ্টি সমাজের কয়জন করবে? আরে ভাই যতই বলেন, রাস্তাঘাটে বের হলে তো আপনাদের অবস্থা নজরে পড়ে! আপনাদের চোখের সভ্য পালকগুলো মুহুর্তেই অসভ্য হয়ে উঠে। ঘাড় ঘুড়িয়ে ঘুড়িয়ে দেখতে থাকেন। যারাই বলেন নারীদের ঘরে থাকার কথা বলে ইসলাম তাদের উপর জুলুম করেছে এরাই নারীদের প্রতি উগ্র নজর বেশি দেয়! যদিও ইসলাম নারীদের একেবারেই ঘরে আটকে থাকতে বলেনি। জরুরতে পর্দা সহকারে বের হতে ইসলাম নারীদের নিষেধ করেনি!

তো পার্থক্য করেন নারীদের ঘরে থাকার মাঝে বেশি কামিয়াবী নাকি বাহিরে অবাধ চলাফেরা করায় বেশি কামিয়াবী?

না না! আমি একেবারেই ঘরের বাহিরে যেতে নিষেধ করছিনা। এটা হক্কানী কোনো আলেম করতে পারেন না। কেননা জরুরতে ঘর থেকে বের হওয়া ইসলাম স্বয়ং নিষেধ করেনি, উলামায়ে কিরাম কিভাবে করবেন? বের হোন তবে পর্দার সাথে বের হোন। শালীনতা বজায় রাখুন। আধুনিক আমার মা বোনরাও কম না। কিন্তুু আধুনিকতার মাঝে নগ্নতা নিয়ে আসতে হবে কেনো? আধুনিকতা আর অশ্লীলতা কি সমার্থক শব্দ? নাহ এমন তো নয়। তাহলে কেনো এমন আধুনিকতা? এটা কেমন সভ্যতা? যার মাঝে ভব্যতা নেই!!

এই পর্যায়ে এসে বলতে পারি আল্লামা শফি সাহেব হুজুর মা: আ: নারীদের ব্যাপারে যা বলেছেন তা হিতাকাংখী হিসেবেই বলেছেন। বাস্তবতা তুলে ধরার মধ্যে কোনো অশ্লীলতা থাকতে পারেনা। নারীদের তেতুলের সাথে তুলনা তিনি করতেন না যদি সভ্য (?) সমাজের অসভ্য লোকগুলো না থাকতো! তেতুল দেখলে জিভে যেমন পানি আসে তেমনি এইসব সভ্য বখাটেরা যখন সল্প বসনা আধুনিক সরলমনা নারীদের পথে ঘাটে দেখে তখন তাদের কামাতুর চোখগুলো থেকে অদৃশ্য কামরস ঝরতে থাকে। আর এর জন্য নারীরাও কম দায়ী না। বরং তাদের দোষের পাল্লাই ভারী!

সুতরাং ভুল না ধরে কথার মর্ম উপলব্ধি করুন। হুজুরদের বিরোধিতা করা পরজীবী সভ্য ব্যক্তিদের অভ্যাসে পরিনত হয়েছে। অভ্যাস চেঞ্জ করুন। অভ্যাসে পরিনত হওয়ার কথা এজন্যই বললাম যে আল্লামা শফি সাহেব হুজুরের বক্তব্যটি অনেক আগের। বছরখানেক আগের তো হবেই। অর্থাৎ হেফাজতে ইসলামের সাম্প্রতিক উত্থানের আগেরকার বক্তব্য। যদি হুজুরদের প্রতি এলার্জি না থাকতো তাহলে এর বিরোধিতা আগে কেন করা হয়নি?হেফাজতের উত্থানের পরে কেন? আর হুজুরেরা মেয়েদের পর্দায় থাকার কথা, ঘরে থাকার কথা তো আরো বহুকাল আগে থেকেই বলে আসছেন কিন্তুু এতদিন কোথায় ছিলো ঐসব সভ্য ব্যক্তিরা? তাহলে উত্তর আরো আগেই পেয়ে যেতো!

সবশেষে এটাই বলতে চাই, ইসলাম সার্বজনীন ধর্ম। ভবিতব্য কোনো উটকো ঝামেলাকেই ইসলাম প্রশ্রয় দেয়নি। তাই যুগের চাহিদা মেটাতে ইসলামে রয়েছে অত্যন্ত সচেতন উপস্থিতি। এর বাহ্যিক প্রকাশ হলো ইসলাম নারীদের ঘরে আটক থেকে অশিক্ষিত মুর্খ থাকতে উৎসাহ যেমন দেয়নি তেমন অবস্থাভেদে ঘর থেকে বাহির হতেও ইসলাম অনুৎসাহিত করেছে। দেশ এবং দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা, কর্মস্থল যদি নারীদের উপযোগী হয় তাহলে ইসলাম কখনো একে নিষেধ করবেনা। অবশ্যই না। আর আলেমরা তো পারবেন না এটা আগেই বলেছি। বিপরীতে যদি দেশ, দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা, কর্মস্থল নারীবান্ধব নাহয় তাহলে ইসলাম এস্থলে অবশ্যই নিষেধ করবে। সুতরাং ইসলাম এবং ধর্মীয় পণ্ডিত আলেমদের হিতাকাংখী ভাবুন। শয়তানের ফাঁদে পা দিয়ে ইহকাল পরকাল ধ্বংস করবেন না। আল্লাহ তায়ালা আমাদের কে কবুল করুন। সহীহ বুঝ নসীব করুন। আমীন....

বিষয়: বিবিধ

১৫২৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File