ডাঃ জাকির নায়েকের ভ্রান্ত মতবাদ এবং শরয়ী বিধান (প্রথম পর্ব)

লিখেছেন লিখেছেন মুস্তফা আল কারীম ০৯ জুলাই, ২০১৩, ০৪:০৬:০৮ রাত

(পূর্ব প্রকাশের পর)

প্রথম পর্ব

আমাদের মনে রাখা দরকারঃ

খুব কম মাসয়ালা এমন আছে যে,উলামায়ে কেরামের মতবিরোধ নেই। কিন্তুু পরবর্তীতে যখন উসূলে ফিকাহ্ ও উসূলে হাদীসের ভিত্তিতে একটি মতের উপর ইজমা হয়ে গেছে তখন অন্য মতগুলি ব্যক্তিগত মত হিসেবে রয়ে গেছে। যার উপর আমল করার সুযোগ নেই। যেমন আবু হুরায়রা রা. এর হাদীসের আলোকে এই মত পোষণ করতেন যে আগুনে পাকানো কোনো জিনিস খেলে অজু ভেঙ্গে যাবে। এখন যদি আপনি উনার মতামতকে মেনে নেন তাহলে সব আগুনে পাকানো জিনিস খাওয়া হারাম হবে। তদ্রূপ জাকির নায়েক ইজমার খেলাফ ব্যাক্তি। নিজস্ব মতকে টেনে নিয়ে উম্মতের মাঝে ফাটল সৃষ্টি করছেন!

কারো যদি কুরআন হাদীস বুঝার যোগ্যতা না থাকে তারা কারো চটকদার বক্তব্য বা বিভিন্ন রেফারেন্স শুনে একথা মোটেও উপলব্ধি করতে পারবেনা যে, তার বক্তব্য ঠিক না বেঠিক? ইয়াহুদী এবং খৃস্টানদের মধ্যে এমন অনেক বড় বড় পণ্ডিত আছে যারা আমাদের চেয়ে কুরআন হাদীস বেশী রিসার্চ করে। তাই বলে কি তাকে অনুসরণ করা যাবে? আসুন, ডাঃ জাকির নায়েকের কিছু ভ্রান্ত মতবাদ ও বাস্তবে সেই মতবাদের ইসলামী আকীদা কি তা জেনে নিই।

আল্লাহ্ তায়ালা সম্পর্কে ভ্রান্ত মতবাদঃ

ডাঃ জাকির নায়েক বলেন, আল্লাহ্ তায়ালাকে ব্রাহ্ম,বিষ্ণু নামে ডাকা যাবে তবে তা সুন্দর হতে হবে। (দ্রষ্টব্য: ডাঃ জাকির নায়েক লেকচার সমগ্র,ভলিয়ম নং-২,পৃষ্ঠা: ৩৮০)

ইসলামের হুকুমঃ

আল্লাহ্ তায়ালাকে তাঁর সত্তাগত নাম আল্লাহ বলতে হবে অথবা তাঁর গুনগত নাম যেগুলো তিনি নিজের জন্য নির্ধারণ করেছেন, যা ৯৯ নামরূপে হাদীস শরীফে আছে তা দিয়ে ডাকতে হবে। কিন্তুু ৯৯ নামের মধ্যে ব্রাহ্ম,বিষ্ণু নাম নেই। যা হিন্দু ধর্মমতে দেবতাদের নাম। এসব নামে আল্লাহ্ তায়ালাকে ডাকা হারাম! (সূরা হাশর:২৪/সূরা আরাফ:১৮০,আকায়েদুল ইসলাম-১/১৩৫)

তার লেকচার সমগ্র বইয়ে আল্লাহ্ বুঝাতে গিয়ে বহু স্থানে "ঈশ্বর" শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। যেমনঃ "ইসলাম ধর্মের বিশ্বাস মহান ঈশ্বর মানুষের রূপ ধারন করেন না" (লেকচার সমগ্র ভলিয়ম-৫ পৃষ্ঠা-১২৫,ভলিয়ম-১,পৃষ্ঠা-১৩২, ভলিয়ম-২ পৃষ্ঠা-৪৩৯)

আল্লাহ এমন একটি শব্দ, যার কোনো স্ত্রী লিঙ্গ নেই। কিন্তুু ঈশ্বরের স্ত্রী লিঙ্গ ঈশ্বরী আছে। এবং ঈশ্বর শব্দ বিধর্মীদের পরিভাষা। যে শব্দ বিধর্মীদের পরিভাষায় পরিণত হয় তা মুসলমানদের জন্য ব্যবহার করা জায়েজ নেই।

মহিলা নবী সম্পর্কে ভ্রান্ত মতবাদঃ

ডাঃ জাকির নায়েক বলেন, "উল্লেখিত দৃষ্টিকোণ থেকে ইসলামে চারজন মহিলা নবী এসেছেন। তারা হলেন- বিবি মরিয়ম আ:,বিবি আছিয়া আ:,বিবি ফাতিমা রা. এবং বিবি খাদিজা রা.। (লেকচার সমগ্র ভলিয়ম নং-১ পৃষ্ঠা: ৩৫৫)

ইসলামের হুকুমঃ

আল্লাহ তায়ালা দুনিয়ায় যত নবী রাসূল পাঠিয়েছেন সব পুরুষ। কোনো মহিলাকে তিনি নবী বানিয়ে পাঠাননি। যত বড় ওলী আওলিয়াই হোকনা কেনো তাকে নবী বলা কুফরি। (সূরা মু`মিন-আয়াত ৭৮)

ইসলামের পরিভাষায় নবী এবং ডাঃ জাকির নায়েকের মিথ্যাচারঃ

জনৈকা সায়মা কাদরি নামক এক মহিলা প্রশ্ন করলো যে, "ইসলাম ধর্মে কোনো নারী নবী কেন আসেননি?"

উত্তরে ডাঃ জাকির নায়েক যা বললেন তার খোলাসা হলো: তিনি নবীকে দুভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। তিনি বলেন: "নবী বলতে যদি আপনি এমন ব্যক্তি বুঝান যিনি আল্লাহর পক্ষ হতে বাণী প্রাপ্ত হন এবং যিনি মানবজাতির নেতা হিসেবে কাজ করেন।সে অর্থে নিশ্চিত যে ইসলামে কোনো নারী নবী আসেননি। কিন্তুু নবী বলতে যদি এমন ব্যাক্তি বুঝান, যিনি আল্লাহর পছন্দের এবং যিনি পবিত্র ও খাঁটি ব্যক্তি, তাহলে ইসলামে চারজন নারী নবী এসেছিলেন ১.মরিয়ম ২.আছিয়া ৩.ফাতিমা ৪.খাদিজা।"

অথচ বাস্তব কথা হলো- ডাঃ জাকির নায়েক যেই উদ্দেশ্যেই একাজ করেন না কেনো জ্ঞাতে কিংবা অজ্ঞাতে যেভাবেই হোক তিনি মুসলমানদের আকীদা পরিপন্থি কাজ করেছেন। নবী শব্দের উল্লেখিত দ্বিতীয় ব্যাখ্যাটি অভিধান ও পরিভাষা কোনো দৃষ্টিতেই শুদ্ধ নয়। এমনকি নবী শব্দটি রাসূল শব্দ থেকেও অধিক বৈশিষ্টমন্ডিত! কারণ আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত এই আভিধানিক দৃষ্টিকোণ থেকে জিবরাইল আ: কেও রাসূল বলা হয়। কিন্তু নবী? নবী বলা হয় আল্লাহর পক্ষ থেকে যেই মহামানবরা বাণী প্রাপ্ত হয়েছেন তাদেরকে। বা আল্লাহর পক্ষ থেকে বানী প্রাপ্ত মহান ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেই নবী শব্দ ব্যবহৃত হয়ে আসছিলো। বুখারী শরীফে এসেছে:

বারা ইবনে আজেব থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন -একদিন আমি বললাম হে আল্লাহ! আমি ঈমান আনয়ন করলাম তোমার কিতাবের উপর যা অবতীর্ণ করেছো এবং তোমার রাসূলের উপর যাকে তুমি প্রেরণ করেছো। অতপর রাসূল সা. তাকে নিষেধ করলেন এবং এভাবে বলার জন্য হুকুম করলেন- তোমার নবীর উপর যাকে তুমি প্রেরণ করেছো।

(নিবরাস, পৃষ্ঠা-৭)

সুতরাং ডাঃ জাকির নায়েক যে অর্থেই হোকনা কেনো নারীদের মাঝে নবী এসেছে বলে ইসলামী পরিভাষার চরম বিকৃতি সাধন করেছেন। তিনি এই মত ব্যক্ত করার পূর্বে কোনো অর্থেই আল্লাহর ওহী প্রাপ্তগন ব্যতীত কোনো নারী পুরুষের ক্ষেত্রেই এ শব্দটি ব্যবহৃত হয়নি।

আজ এ পর্যন্তই। চলবে..........

আগামী পর্বে যা থাকবেঃ

আমাদের নবীজী সম্পর্কে ভ্রান্ত মতবাদ।

রাম ও কৃষ্ণ নবী ছিলো বলে ভ্রান্ত মত।

পবিত্র কুরআন শরীফ সম্পর্কে ভ্রান্ত মতবাদ।

পবিত্র কুরআন শরীফ ওযু ব্যতীত স্পর্শ করা সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর মত।


আল্লাহ তায়ালা আমাকে ইস্তেকামাতের সাথে লিখার তাউফিক নসীব করুন আমীন।

বিষয়: বিবিধ

৪৫৭৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File