ডাঃ জাকির নায়েকের ভ্রান্ত মতবাদ এবং শরয়ী বিধান
লিখেছেন লিখেছেন মুস্তফা আল কারীম ০৮ জুলাই, ২০১৩, ১০:৪৪:১৮ সকাল
আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ পাকের অনুগ্রহ যে ওলামায়ে দেওবন্দ ইসলামের এমন এক অতন্দ্র প্রহরী যারা শুধু ভারতীয় উপমহাদেশেই নয় বরং সারা বিশ্বে ইসলামের সঠিক রুপরেখা তুলে ধরে শরিয়ত মতে চলতে উম্মতের জন্য প্লাটফর্ম তৈরি করে দিয়েছেন এবং যখনই কোনো বাতিল শক্তি মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে তখনই তার দাঁত ভাঙ্গা জবাব দিয়ে জনগণের ঈমান আকীদা রক্ষা করেছেন। তাঁদের এই ত্যাগের বদৌলতে ভারতীয় উপমহাদেশে এখনো মুসলমানদের ঈমান আকীদা এবং দ্বীনের সহীহ ব্যাখ্যা বাকি রয়েছে। মূলত যারা হক্কানী উলামায়ে দ্বীন হবেন তাঁদের দায়িত্বই এটা যে, উনারা কারো সমালোচনা,হুমকি ধামকি এবং রক্ত চক্ষুকে পরোয়া করবেন না। বাতিলের মুকাবিলা করতে দ্বিধা ও ভয় করবেন না!
বাতিল ও ফিতনা কিয়ামত পর্যন্ত আসতেই থাকবে। আমার আলোচনা বর্তমানের অনেক বড় ফিতনা ডাঃ জাকির নায়েককে নিয়ে। প্রথম প্রথম যখন ডাঃ জাকির নায়েক তার লেকচার নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন, বিভিন্ন ধর্মের বিশ্লেষণ করে বিধর্মীদেরকে লাজওয়াব করে দিচ্ছিলেন, তখন উলামায়ে কিরাম তাকে সমর্থন করেছেন এবং প্রশংসাও করেছেন। কিছু ব্যাপারে সন্দিহান থাকলেও তার বিরুদ্ধে কিছু বলেননি। কারণ মৌলিক ভাবে তার দ্বারা উপকার হচ্ছে। কিন্তু যখন মাসয়ালা মাসায়েল নিয়ে অনধিকার চর্চা শুরু করলেন এবং সমাধান হওয়া বিরোধপূর্ণ মাসয়ালা নিয়ে মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা শুরু করলেন, তখন ওলামায়ে কেরাম জনগণকে সচেতন করার উদ্দেশ্যে কলম হাতে নিতে বাধ্য হয়েছেন।
উলামায়ে কিরামের হীনমন্যতা বা ব্যক্তিগত স্বার্থ নেই। তিনি যদি এখনো দ্বীনের দায়ী হিসেবে প্রচারের কাজে তার গন্ডির ভেতর ফিরে যান তাহলে তার সাথে আলেমদের আর কোনো মতবিরোধ থাকবে না।
অনেকেই এখানে প্রশ্ন করেন যে ডাঃ জাকির নায়েক আলেম না বলে কি মাসয়ালা মাসায়েল নিয়ে আলোচনা করতে পারবেন না? এগুলো কি শুধুমাত্র আলেমদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি??
এর উত্তর হলো: এটা নিতান্তই মুর্খতা বৈ কিছু না। যিনি সারাজীবন কোনো আলেমের সোহবতে যাননি, যিনি কখনো কোনো আলেমের কাছ থেকে ইলম হাসিল করেননি তিনি কিভাবে ধর্মের গুঢ় তত্ত্ব নিয়ে আলোচনা করবেন? আর করতে পারলেও তা কতটুকু সহীহ হবে তা বিবেকবান পাঠকের কাছে জিজ্ঞাসা রইলো।
ডাঃ জাকির নায়েকের লেকচার পিস টিভি সহ বিভিন্ন চ্যানেলে এবং সিডি আকারে প্রচারিত হয়েছে। বর্তমানে বই আকারে উর্দু ভাষায় "খুতুবাতে ডাক্তার জাকির নায়েক" এবং বাংলা ভাষায় বিষয় ভিত্তিক পুস্তক আকারে বাহির করার পর এখন ৬ টি ভলিয়মে "ডাঃ জাকির নায়েক লেকচার সমগ্র" নামে প্রকাশ করা হয়েছে।
ডাঃ জাকির নায়েক যখন আত্মপ্রকাশ করেন এবং বিভিন্ন চ্যানেলে তার প্রচার চলতে থাকে তখন আনন্দিত ও তার প্রতি সন্দিহানও ছিলাম। কারণ অতীতের একটা ইতিহাস মনে পড়ে যায়, ১৮৮৪ সালে গোলাম আহমদ কাদিয়ানী যখন মুজাদ্দিদ হওয়ার দাবী করলো, অনেক লোক তাকে সমর্থন করলো। কেননা কাদিয়ানী সাহেব তখন খৃস্টান মিশনারিদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন জায়গায় মুনাজারা করে তাদেরকে নাকানিচুবানি খাওয়াচ্ছিল, তাই সবাই তাকে সমর্থন করলো! কিন্তুু আল্লামা হাবীবুর রহমান লুধিয়ানবীর দাদা মুফতী আব্দুল্লাহ লুধিয়ানবী র. ঘোষণা করলেন যে, মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী কোনো মুজাদ্দিদ বা বুযূর্গ নয়। বরং সে একজন মুলহিদ এবং যিন্দীক! এর প্রতুত্তরে মির্জার ভক্তরা বলে বেড়াতে লাগলো যে,তুমি মির্জার জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে এসব বলে বেড়াচ্ছো! এরপর যখন মুফতি আব্দুল্লাহ, তাঁর ভাই মাওলানা মুহাম্মদ এবং মাওলানা শাহ আব্দুল আযীয লুধিয়ানবী সহ লুধিয়ানার অন্যান্য উলামায়ে কিরাম মির্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর আকীদা বিশ্বাস আর তার দৃষ্টিভঙ্গির কারনে তাকে কাফের হওয়ার ফতোয়া প্রদান করলেন তখন তাদের বিরোধীতায় নেমে এলো হাজার হাজার মানুষ!
মির্জার মতো এত বড় একজন তার্কিক;যার যুক্তির সামনে খ্রীস্টান পাদ্রিরা ময়দান ছেড়ে লেজ গুটিয়ে পালাচ্ছে, কত শত মানুষ মুসলমান হচ্ছে তার বিরুদ্ধে কুফরীর ফতোয়া কেইবা মেনে নিতে পারে? অতপর এই ফতোয়া সত্যায়নের জন্য পাঠানো হলো দারুল উলুম দেওবন্দে। হযরত মাওলানা রশীদ আহমাদ গাংগুহী রহ. মাওলানা ইয়াকুব নানুতুবী রহ. সহ উলামায়ে দেওবন্দের বড় বড় আকাবিররা তখন জীবিত। তাঁরা সবকিছু পর্যালোচনা করে যখন এই ফতোয়ায় দস্তখত করলেন তখন জনরোষ কিছুটা প্রশমিত হলো। এরপর কয়েক বছরের মাথায় মির্জা যখন নবী হওয়ার দাবি করে বসলো তখন স্পষ্ট হয়ে গেলো যে, উলামায়ে দেওবন্দের এই ফতোয়া কত বিজ্ঞজনোচিত ছিলো! এইজন্য কারো হঠাৎ জনপ্রিয়তা দেখে তাকে একেবারে পরম পূজনীয় বানিয়ে ফেলা বিবেক বিরোধী কাজ।
(ডাঃ জাকির নায়েকের ভ্রান্ত মতবাদ, পৃষ্ঠা ১৩)
ডাঃ জাকির নায়েককে নিয়ে আরেকটি সন্দেহ মনের মাঝে আগে থেকেই দানা বেধেছিলো যে, পুরো বিশ্বে যেখানেই মুসলমানদের উত্থান সেখানেই তাদের কে বর্তমানে বাধা প্রদান করা হচ্ছে। আর ডাঃ জাকির নায়েক ইসলামের সত্যতা প্রকাশ করতে গিয়ে বাতিলের বিরুদ্ধে এত কথা বলা সত্তেও তার বিরুদ্ধে কেউ কিছুই বলছেনা কেন? কুফরি শক্তির দেশে বসে থেকে তাদের সমস্ত অসাড়তা প্রমান করার পরেও ডাঃ জাকির নায়েকের পক্ষে বাতিল শক্তির অবস্থান এটাই বলে দেয় যে, জাকির নায়েককে নিয়ে তাগুতী শক্তি বড় কোনো প্ল্যান এটেছে! যেমন এটেছিলো মির্জাকে নিয়ে। তারা চায় বিশ্বের সকল মুসলমানের যাতে জাকির নায়েকের উপর অগাধ আস্থা সৃষ্টি হয়। বিশ্বের সবচেয়ে জ্ঞানী মানুষ হিসেবে যাতে সবাই জাকির নায়েককেই মেনে নেয়। উলামায়ে কেরামের উপর থেকে যাতে মানুষের আস্থা পূর্ণ রূপে উঠে যায়। মানুষ একথা মানতে যাতে বাধ্য থাকে যে ডাঃ যা বলবে সেটাই সঠিক। এর বিপরীতে আলেমরা যা বলবে তা বেঠিক। জনগণ যখন ডাঃ জাকির নায়েকের উপর যখন পরিপূর্ণ আস্থা প্রকাশ করবে তখনই সে সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে বিভ্রান্তিকর কিছু মাসয়ালা প্রচার করবে। যা ভেবেছিলাম তাই এখন বাস্তব হয়ে গেছে। তার ভ্রান্তি শুধু মাসয়ালা মাসায়িলের ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং দ্বীনের বহু মৌলিক বিষয়ে তিনি ভ্রান্ত মতবাদ সৃষ্টি করেছেন, যা মুসলমানদের দ্বীন ও ঈমানের জন্য মারাত্মক খতরনাক!
ইনশাআল্লাহ আগামী পোষ্ট থেকে উনার ভ্রান্তিগুলো আপনাদের সম্মুখে পেশ করবো। আশা করি সাথেই থাকবেন। আল্লাহ তায়ালা তাউফিক দান করুন। আমীন।
চলবে...
বিষয়: বিবিধ
২৫৬৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন