বাল্য বিবাহের পরিনতি কি ???
লিখেছেন লিখেছেন অচিন পথের পথিক ১৩ জুলাই, ২০১৩, ০৩:০০:০৮ রাত
আমি একটা গ্রামে বসবাস করি। আমার গ্রামটা খুব উন্নত না হলেও প্রায় পাঁচ বছর আগে পৌরসভার অন্তর্গত হয়েছে। সে হিসাবে আমি মোটামুটি উন্নতই বলতে পারি। যাহোক, আমার বাড়ির পাশে একটা খুবই পরিচিত বাড়ি আছে, যে বাড়িটার নাম জেলে বাড়ি। জেলে বাড়ি বললে একনামে সবাই চিনবে। জেলে বাড়ির প্রতিষ্ঠাতা ছিল মজিবর জেলে। কিন্তু সে যে কবে এই বাড়ির পত্তন করেছিল তা আমি সঠিক জানি না। মজিবর জেলের ছিল চার ছেলে এবং তিন মেয়ে। এদের ভিতর দুই নম্বর ছেলে (মানে ছেলেদের ভিতর) যার নাম হেলাল মিয়া। আমরা যথন ছোট ছিলাম তখন তার বিয়ে হয় বা করান হয় বিয়ের সময় তার বয়স ছিলো ১৫ বছর। সে আমাদের চোখের সামনেই বিয়ে করল । সে বিয়ে করল এমন সময়ে যখন তার কিশোর মন সবে মাত্র বেড়ে উঠতে শুরু করেছে। সে তার চোখের অদৃশ্য রঞ্জিন চসমা দিয়ে সবে মাত্র রুপ-রসে ভরপুর এই দুনিয়াকে দেখতে শুরু করেছে। সে তখনও দুনিয়া সম্পর্কে ততটা ওয়াকিবহাল নয়, যতটা একজন বিবাহ যোগ্য মানুষের থাকা উচিত। একেতো শারীরিক ভাবে অপরিপক্ক তারপর মানুষিক ভাবে অপরিপূর্ণ এবং মোটের উপর আর্থিক ভাবে একবোরে অযোগ্য। সে তখন ও রোজগার করতে শেখেনি, এ বিষয়ে তার মা-বাবার বক্তব্য ছিল যে, বিয়ে করিয়ে টাকা এনে (য়ৌতুক) ছেলে কে ব্যবসা ধরিয়ে দিবে। যাইহোক, বিয়েটা হোল। বিয়ের এক বছর যেতে না যেতেই যৌতুকের টাকা শেষ হয়ে গেলো, কিভাবে শেষ হল তা হয়তো খোদ হেলল মিয়াও বলতে পারবে না, তার আর ব্যবসা করা হোলনা। সেই অতটুকু বয়সে স্ত্রীকে ভরন পোষন করার দায়-দায়ীত্ব সম্পূর্ণ তার ঘারে এসে পড়ল। কারণ তার বাবা ছিলেন একজন অত্যান্ত দরিদ্র জেলে। তিনি ছোট একটা জাল দিয়ে মাছ ধোরতেন এবং তা দ্বারা যা দুই এক টাকা যা হত তাদিয়ে কোনমতে খেয়ে না খেয়ে সংসার চালাতেন। তাই হেলাল মিয়া রোজগার করার জন্য অবশেষে গেলো ট্রাকে দিনমজুরী করতে। এভাবে ট্রাকে দিনমজুরের কাজ করতে করতে সে এখন ট্রাক ড্রাইভার। আর তারসাথে এটাও বলতে হবে যে, সে এখন নেশাখোর, চরিত্রহীন, জুয়া খোর, ইত্যাদি । শুধু তাই নয় সে এখন তিন সন্তানের জনক ও বটে যাদের ভরন পোষন সে করতে পারেনা। যার যার খাওয়া তার তার যোগার করতে হয়। এমন কি তার বউকেউ তার নিজের ভাত-কাপর কামাই কোরে জোগার করতে হয়। এখন হেলাল মিয়ার বড় ছেলেও বড় হয়ে গেছে, তার বড় ছেলের নাম অমিত হাসান, তারও এখন ১৪ বছর বয়স তাকেও বিয়ে করানো হয়েছে কদিন আগে। যৌতুক হিসাবে পেয়েছে, নগদ ৩০ হাজার টাকা আর ১টা বাইসাইকেল। সেটা দিয়ে এখন ভাইল চলছে। দেখা যাক এরপর অমিত হাসান এর কপালে কি যোটে। ইতিহাসের পুণরাবৃত্তি নাকি নতুন কিছু ????
বিষয়: বিবিধ
১৬৪৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন