যে কথা ভাবতে হবে
লিখেছেন লিখেছেন মহি আহমেদ ১৪ অক্টোবর, ২০১৩, ১১:০০:২৭ রাত
ইউরোপ আমেরিকায় প্রযুক্তির উন্নয়নে মানুষের বৈষয়িক জিবনে অনেক উন্নতী হয়েছে এবং পাদ্রী শাসনের অবসান করে রেনেসা অন্দোলনের ফলে যে সামাজিক ন্যয় বিচার ও ধনাঢ্যতার কারণে এখনও সামাজিক শৃঙ্খলা যেভাবে ঠিকে আছে তা যেমন সত্য তেমনি সত্য পশ্চিমা সভ্যতায় মানসিক অশান্তি গণজীবনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিরাজিত।
এখানে প্রশ্ন আসতে পারে পশ্চিমা দেশে তাদের সমাজ ব্যবস্থায় তো মুসলিম বিশ্বের মত এত অস্থিরতা নাই। বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ধর্মের মানুষ একে অন্যের সাথে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান করছে। পাশ্চাত্যের বৈষয়িক উন্নয়ন, তাদের দেশের আভ্যন্তরীণ ব্যবস্থা যেমন রাস্তার ট্রাফিক আইন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেভাবে আইনের শাসন, ন্যায়বিচার, সামাজিক শৃঙ্খলা, ভদ্রতা, শিষ্টাচার, পরমত সহনশীলতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ইত্যাদি সামাজিক কল্যাণকর রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা বিরাজমান করছে তা কিভাবে সম্ভব হচ্ছে? এ কথা কি অস্বীকার করা যায় আজ ইউরোপ আমেরিকায় প্রযুক্তির উন্নয়নে মানুষের বৈষয়িক জীবনে অনেক উন্নতি হয়েছে এবং সামাজিক ন্যায় বিচার ও সুস্থ সিভিল সমাজ প্রতিষ্ঠা হয়েছে তা কি কোন মুসলিম দেশে বিরাজ করছে? সম্পদ তো মুসলিম দেশে কম নাই। ওয়াজ নসিয়্যতও তো কম হয় না।
সত্যি বলতে কি এ প্রশ্নের উত্তর সঠিকভাবে জানতে হলে মুসলিম দেশের বর্তমান অবস্থার সাথে পাশ্চাত্যের তুলনামূলক আলোচনার আগে পশ্চিমা সভ্যতায় ইতিহাস জানা দরকার। জানা দরকার ১৭, ১৮ ও ১৯ শতাব্দীর ইউরোপিয়ান উপনিবেশবাদের (colonialism) সে ইতিহাসের কালো অধ্যায়, জানা দরকার আদিবাসী গণহত্যার ইউরোপিয়ানদের সে রেকর্ড (লিংক) ও জানা দরকার ক্রীতদাস ব্যবসা (লিংক) । আর এসব বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা না থাকলে যারা মনসিক গোলামে ভুগছেন তাদের হীনমান্যতার অবসান কখনও হবে না। আমেরিকার উদাহরণই দেখা যাক আজ সেখানে যে সামাজিক নিরাপত্তা বা আভ্যন্তরিন শান্তি সুশৃঙ্খলা যতটুক দেখা যায় তা রাতারাতি আসে নাই। তার পিছনে আছে অনেক করুণ ইতিহাস, (লিংক) আছে অনেক ভাল মানুষের আত্মত্যাগ, অক্লান্ত প্রচেষ্টার ইতিহাস (লিংক) যা আমরা অনেকেই জানিনা। এ কথা ঠিক আমেরিকাকে পৃথিবীর বুকে চিরদিন যারা একটি ন্যয়পরায়ন, মানবতাবাদী, সভ্য দেশ হিসাবে যারা গড়তে চেয়েছিলেন এবং গণতান্ত্রিক আমেরিকার রুপকার যারা ছিলেন তাদের স্বপ্নের আমেরিকা আর আজকের আমেরিকা এক নয় কেননা আজকের আমেরিকা প্রশাসন ও চালিকাশক্তিকে যারা হাইজ্যক করে নিয়েছে তাদের কাছে মানবতা নয় অর্থের লোভ হচ্ছে সবকিছুর উর্দ্ধে ।
দু:খের ব্যাপার হচ্ছে মুসলিম বিশ্বে সাম্রাজ্যবাদী ও আধিপত্যবাদীর প্রক্সি বা তাঁবেদারি শাসক গুষ্টির পরিচালিত যে শাসনব্যবস্থা চলছে তার অবসান করতে যারা চান তাদের অনেককেই দেখা যায় পাশ্চাত্যের বিরোধিতায় এত উগ্র ও চরমপন্থি যে মানব সভ্যতার উন্নয়নে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে যুগান্তকারী পরিবর্তন ও সফলতা এসেছে পশ্চিমা দেশে তার মূল্যায়ন বা ইতিবাচক দিক বিবেচনা করাটাকেও আদর্শ বিরোধী মনে করেন। তারা ভুলে যান মধ্যযুগীয় ইসলামী সভ্যতার অন্যতম সোপান ছিল প্রাচীন গ্রীক সভ্যতার বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা লব্ধ তথ্য ভাণ্ডারের অনুবাদ করা তা থেকে জ্ঞান অন্বেষণ। তৌহীদে বিশ্বাসী বলব কিন্তু পূর্ব পশ্চিমের মালিক যে আল্লাহ , পৃথিবীর সবকিছুর মালিক যে আল্লাহ এবং দুনিয়ার যেখানে মানুষ যে কিছুই করেনা কেন তা যে আল্লাহর অনুমতিতেই হয় সে অনুভূতি জাগে না! নবীর শানে ইসলামের আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে অনেক দফা দাবী আদায়ের আওয়াজ তুলতে দেখা যায় কিন্তু সে সব দাবীতে একটাও থাকেনা সমাজের শোষিত, নিগৃহীত হাওয়া মানুষের কথা। হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবীর সাথে পোশাক শ্রমিকদের নিরাপত্তা এবং নিরাপদ কর্ম-পরিবেশ নিশ্চিত করার আরেকটি দাবী নিয়ে ১৪ দফা দাবী করলে কি ভাল হত না? সাভারের রানা প্লাজা ধসে পড়ে সহস্রাধিক গার্মেন্টস শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনা তো হেফাজতে ইসলামের সে আন্দোলনের সময়কার ঘটনা। অথচ নবী বলেছেন শ্রমিকের ঘাম শুখবার আগে তার পারিশ্রমিক দিতে। ইসলামী আন্দোলনের সাথে গণ মানুষের কল্যাণের দাবী তোলা কোরআন হাদিসে নিষেধ আছে বলে তো দেখি নাই?
***************** বিস্তারিত লিংক এখানে
বিষয়: বিবিধ
১৩৬৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন