অর্থের লোভ হচ্ছে সবকিছুর উর্দ্ধে
লিখেছেন লিখেছেন মহি আহমেদ ১৪ অক্টোবর, ২০১৩, ০১:৩৬:৫৯ রাত
মত প্রকাশের অধিকার বিশ্বের প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকার। কিন্তু যুগে যুগে মানুষের এ অধিকার কেড়ে নিতে বা মানুষকে তার এ অধিকার প্রয়াগের কারণে তার উপর অত্যাচার চালাতে দেখা যায় এক বিশেষ মহলকে এরা হচ্ছে স্বৈরাচারী, সাম্রাজ্যবাদী ও সমাজের কায়েমি স্বার্থ-বাদী এবং ফ্যসিষ্ট মানসিকতার অশুভ শক্তি। এদের কাছে ন্যায় বিচার, ব্যক্তি স্বাধীনতা ও মত প্রকাশের অধিকার এ সবই আপেক্ষিক (relative) অর্থাৎ কেবল মাত্র তাদের স্বার্থে। এখন প্রশ্ন হতে পারে শাসকগোষ্টি ও তাদের অনুসারীরা কেন এ ফ্যসিষ্ট আচরণে নেশাগ্রস্ত? এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হবে। তবে এর অন্যতম কারণ হচ্ছে পরকালের জবাবদিহিতায় অবিশ্বাসী, জড়বাদী ও বস্তুতান্ত্রিক জীবনদর্শনে গড়ে উঠা মানুষেরা লোভ লালসা ও দুর্নীতির মাধ্যমে আনন্দ-বাদী তথা রিপু পূজারী (hendonisic) ভৌগ্যবাদের নেশায় লিপ্ত থাকা। এর ফলে এ মানুষদের বিবেক ও চরিত্র এমন এক পর্যায়ে পতিত হয় যাকে পবিত্র কোরআনের ভাষায় বলা যায় “আছফালা ছাফেলিন” অন্ধকারের অন্ত:স্থলে পতিত হওয়া।
আজ আমাদের দেশের দিকে তাকালে কি দেখতে পাই সরকার বিরোধী মত প্রকাশের অপরাধে পত্রিকার সম্পাদক বিনা বিচারে মাসের পর মাস জেলে বন্ধী, সাংবাদিক হত্যা, ভিন্ন মতের টিভি মিডিয়া বন্ধ করা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করতে কালো কানুন প্রনয়ন! সাম্প্রতিক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (২০০৬) আইনের সংশোধনীর ফলে মুক্তচিন্তার প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন আলোচকেরা। এ সবই কিন্তু স্বৈরাচারী, সাম্রাজ্যবাদী ও সমাজের কায়েমি স্বার্থ-বাদী এবং ফ্যসিষ্ট মানসিকতার অশুভ শক্তির দাপট।
আজ বাংলাদেশের রাষ্ট্রব্যবস্থা থেকে শুরু করে সমাজে যে বাঁধ-ভাঙ্গা অনৈতিকতা: চুরি, ডাকাতি, ধর্ষণ, সামাজিক বিপর্যয় ও পর্বতসম সমাজের অবক্ষয় যার ফলে মিথ্যা, পাপাচার, ঘুষ, দুর্নীতি, ধাপ্পা, প্রতারণা, ভেজাল, ফরমালিন, চুরি, ছিনতাই, হত্যা, ধর্ষণ, গণপিটুনি, যৌতুক, ব্যাঙ্ক লুট, স্টক-একচ্যাঞ্জ লুট, দেশের জনগণের নামে ঋণ লব্ধ অর্থায়নের প্রজেক্ট থেকে কমিশন খাওয়া, জাতীয় সম্পদের হরিলুট ইত্যাদি পাপাচারে সমাজ আকণ্ঠ ডুবে আছে তার কারণ সমাজে নৈতিকতা, আদর্শ এবং ধর্মবোধের অভাব। কিন্তু ধর্মের ও নৈতিকতার কথা তুললেই বিশেষ মহল চিৎকার শুরু করে আর এদের সাথে আছে তাদেরই মালিকানায় পরিচালিত তথাকথিত “মেইন স্ট্রীম” মিডিয়া মহল। তবে ধর্মের আনুষ্ঠানিকতা নিয়ে বা তোতা পাখীরমত ধর্ম অনুসারেও তাদের তেমন আপত্তি নাই কিন্তু যখনই ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার আসল উদ্দেশ্য (inner meaning), প্রকৃত শিক্ষা ও সত্য আদর্শ মানুষের ব্যবহারিক জীবনে প্রয়োগ করে সমাজ সংস্কারের কথা উঠবে তখনই তাদের আপত্তি। তাই এদের পরিচালিত মিডিয়া এক দিকে মানুষকে নিজের দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্বের কথা, মানবাধিকার, সামাজিক অবক্ষয়ের প্রতিরোধে মানবিক গুণাবলীসহ সম্মানজনক তথা মর্যাদাপূর্ণ জীবন যাপনের চিন্তাভাবনার কথা যাতে ভাবতে না পারে সেজন্য তাদেরকে ডুবিয়ে রাখা হয় বিনোদনের সাগরে। আর অন্যদিকে চলছে নানান আদর্শবাদী ভণ্ডামি ও তথাকথিত দিন বদলের চিৎকার। তাই ফেইসবুকে যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী কবি, সাংবাদিক, মাহবুব হাসানকে লিখতে দেখি: “আমি তথাকথিত মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারী নই এবং তার বিক্রেতাও নই। চেতনাধারীরা যে সেই চেতনার রাজনৈতিক বিক্রেতা এবং তাদের নীতি-নৈতিকতার কোনো বালাই নেই, সেটা আমি জানি এবং সে-জন্যই চেতনাধারীদের অপকর্মের বিরোধী আমি..” আসলে এসবই প্রচলিত সামাজিক ব্যবস্থার উপর মানুষের হতাশার বহি:প্রকাশ। আর এ খারাপ ব্যবস্থাপনার পরিণতিতে অবৈধ, অনৈতিক ও দুর্নীতির এবং সন্ত্রাসের মাধ্যমে অর্জিত হঠাৎ-প্রাপ্ত সম্পদের বিত্তশালী সন্ত্রাসীরা হয়ে যায় সমাজের লিডার।
উত্তরনের উপায় কি?
এ ব্যবস্থার পরিবর্তনে এবং অসৎ এ সমাজ ব্যবস্থার বিকল্প হিসেবে, নৈতিক ব্যবস্থা, শিক্ষা ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা । আর সে উদ্দেশ্যে প্রয়োজন সুযোগ্য সাহসী নেতৃত্বের কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে কোথায় পাবেন সে নেতৃত্ব আর কিভাবে আসবে সে সাহসী লিডারশীপ? এ প্রশ্নের উত্তরে যদি দাবী উঠে ইসলামি চরিত্রের লিডারশীপের তখনই কায়েমি স্বার্থ-বাদী মহল চিৎকার করবে, “এ কি বলেন দেশকে মধ্যযুগের চিন্তাভাবনায় নিয়ে যেতে চান? তারা বলবে এসব চিন্তা দেশকে সামনে নিয়ে যাবার পরিবর্তে নিয়ে যাবে অরো পিছনে।” অথচ আমরা সবাই জানি বিগত দুই শতাব্দীর ইতিহাস দেখলে মুসলিম ভূখণ্ডের কোথাও সত্যিকার ইসলামী নেতৃত্ব, ইসলামী আইন বা শাসন ব্যবস্থা কায়েম হয়েছিল বলে উদাহরণ নেই, তবুও ইসলামী নৈতিক শাসন ব্যবস্থার কথা উঠলেই ভয় ভীতি ছড়িয়ে দিয়ে বলা হয় দিনবদলের লক্ষ্য অর্জনে ও পশ্চিমা বিশ্বের আদর্শে সেক্যুলার স্বর্গ গড়ার জন্য এসব হচ্ছে বিরাট বাধা। আর সেক্যুলার স্বর্গ গড়ার সেই ভুয়া প্রতিশ্রুতি চালিয়ে মুসলিম সমাজের যুবসমাজকে ইসলামী বিশ্বজনিন আদর্শ থেকে দূরে সরিয়ে দাবিত করা হচ্ছে মরিচিকার পিছনে। তাই দেখা যায় নেতৃত্বের পরিবর্তন হয় বটে কিন্তু জনতার ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয়না। কারণ নেতৃত্বে আসেনা কোন গুনগত পরিবর্তন।
কেন প্রয়োজন এ গুনগত পরিবর্তন?
এ প্রশ্নর উত্তরে এম আহমেদ ভাইয়ে সাম্প্রতিকClick this link কিছু মৌলিক কথা এসেছে যা এখানে উদ্ধৃতি দিতে চাই, “ সৎ-চরিত্রবান, খোদা-ভীরু, বিজ্ঞ ব্যক্তিদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন, কারণ তারা নিজ স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠবেন, যারা ‘আমানতের’ হেফাজত করবেন এবং পরকাল-মুখি হয়ে ইহকাল দেখবেন।” এক জন বিশ্বাসীর কাছে ইহকালের প্রতিটি কাজ হচ্ছে পরকালের সফলতার জন্য। মর্তের এ অস্থায়ী জীবন হচ্ছে এক পরীক্ষা ক্ষেত্র, এক চ্যলেইন্জ তা হচ্ছে লোভ লালসার ও সংকীর্ণতার বিপরীতে ত্যাগ তিতিক্ষার, বদান্যতার ও মহানুভবতার। সেই সাথে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। তিনি আরো লিখেছেন “দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা, সিভিল সার্ভিস, জুডিসারি, আইন প্রয়োগ ও নিরাপত্তা বাহিনী সর্ব-ব্যাপী বিশ্বাস-হারা যে সেক্যুলার দৈন্যতা প্রবেশ করেছে সেই ধারা প্রতিরোধ করতে হবে।”
কিভাবে তা সম্ভব?
প্রশ্ন হচ্ছে উপরুক্ত উদ্দেশ্য হাছিলে মুসলিম দেশে ইসলামের নামে বা ধর্মীয় নামে একক কোন রাজনৈতিক দল করে তা অর্জন করা কি সম্ভব? উত্তর হচ্ছে না তা সম্ভব নয় বিশেষকরে বিশ্বর বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায়। কারণ বিশ্ব মোড়লরা তা করতে দিবে না। প্রতিটি মুসলিম দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে পরাশক্তি এমনভাবে গ্রাস করে আছে যে তারা যা চায় তাই হতে হয়। তাদের তাবেদারী না করলে কেউ ঠিকে থাকতে পারবে না। ৩য় বিশ্বে বিশেষ করে মুসলিমদেশে সত্যিকার গণতন্ত্র আসুক, আইনের শাসন কায়েম হউক, মানবাধীকার প্রতিষ্ঠিত হউক তা প্রকাশ্যে বললেও আসলে বাস্তবে তা কায়েম হউক তা যে তারা চায়না এটা এখন সবার কাছে পরিস্কার। তবে পশ্চিমা সেক্যুলার সভ্যতার অপসাংষ্কৃতির ডাষ্টবিন হিসাবে এ সব দেশ পরিনত হউক তাতে কোন আপত্তি নাই।
যে কথা ভাবতে হবে
ইউরোপ আমেরিকায় প্রযুক্তির উন্নয়নে মানুষের বৈষয়িক জিবনে অনেক উন্নতী হয়েছে এবং পাদ্রী শাসনের অবসান করে রেনেসা অন্দোলনের ফলে যে সামাজিক ন্যয় বিচার ও ধনাঢ্যতার কারণে এখনও সামাজিক শৃঙ্খলা যেভাবে ঠিকে আছে তা যেমন সত্য তেমনি সত্য পশ্চিমা সভ্যতায় মানসিক অশান্তি গণজীবনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিরাজিত।
এখানে প্রশ্ন আসতে পারে পশ্চিমা দেশে তাদের সমাজ ব্যবস্থায় তো মুসলিম বিশ্বের মত এত অস্থিরতা নাই। বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ধর্মের মানুষ একে অন্যের সাথে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান করছে। পাশ্চাত্যের বৈষয়িক উন্নয়ন, তাদের দেশের আভ্যন্তরীণ ব্যবস্থা যেমন রাস্তার ট্রাফিক আইন থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেভাবে আইনের শাসন, ন্যায়বিচার, সামাজিক শৃঙ্খলা, ভদ্রতা, শিষ্টাচার, পরমত সহনশীলতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ইত্যাদি সামাজিক কল্যাণকর রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা বিরাজমান করছে তা কিভাবে সম্ভব হচ্ছে? এ কথা কি অস্বীকার করা যায় আজ ইউরোপ আমেরিকায় প্রযুক্তির উন্নয়নে মানুষের বৈষয়িক জীবনে অনেক উন্নতি হয়েছে এবং সামাজিক ন্যায় বিচার ও সুস্থ সিভিল সমাজ প্রতিষ্ঠা হয়েছে তা কি কোন মুসলিম দেশে বিরাজ করছে? সম্পদ তো মুসলিম দেশে কম নাই। ওয়াজ নসিয়্যতও তো কম হয় না।
সত্যি বলতে কি এ প্রশ্নের উত্তর সঠিকভাবে জানতে হলে মুসলিম দেশের বর্তমান অবস্থার সাথে পাশ্চাত্যের তুলনামূলক আলোচনার আগে পশ্চিমা সভ্যতায় ইতিহাস জানা দরকার। জানা দরকার ১৭, ১৮ ও ১৯ শতাব্দীর ইউরোপিয়ান উপনিবেশবাদের (colonialism) সে ইতিহাসের কালো অধ্যায়, জানা দরকার আদিবাসী গণহত্যার ইউরোপিয়ানদের সে রেকর্ড (লিংক) ও জানা দরকার ক্রীতদাস ব্যবসা (লিংক) । আর এসব বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা না থাকলে যারা মনসিক গোলামে ভুগছেন তাদের হীনমান্যতার অবসান কখনও হবে না। আমেরিকার উদাহরণই দেখা যাক আজ সেখানে যে সামাজিক নিরাপত্তা বা আভ্যন্তরিন শান্তি সুশৃঙ্খলা যতটুক দেখা যায় তা রাতারাতি আসে নাই। তার পিছনে আছে অনেক করুণ ইতিহাস, (লিংক) আছে অনেক ভাল মানুষের আত্মত্যাগ, অক্লান্ত প্রচেষ্টার ইতিহাস (লিংক) যা আমরা অনেকেই জানিনা। এ কথা ঠিক আমেরিকাকে পৃথিবীর বুকে চিরদিন যারা একটি ন্যয়পরায়ন, মানবতাবাদী, সভ্য দেশ হিসাবে যারা গড়তে চেয়েছিলেন এবং গণতান্ত্রিক আমেরিকার রুপকার যারা ছিলেন তাদের স্বপ্নের আমেরিকা আর আজকের আমেরিকা এক নয় কেননা আজকের আমেরিকা প্রশাসন ও চালিকাশক্তিকে যারা হাইজ্যক করে নিয়েছে তাদের কাছে মানবতা নয় অর্থের লোভ হচ্ছে সবকিছুর উর্দ্ধে ।
দু:খের ব্যাপার হচ্ছে মুসলিম বিশ্বে সাম্রাজ্যবাদী ও আধিপত্যবাদীর প্রক্সি বা তাঁবেদারি শাসক গুষ্টির পরিচালিত যে শাসনব্যবস্থা চলছে তার অবসান করতে যারা চান তাদের অনেককেই দেখা যায় পাশ্চাত্যের বিরোধিতায় এত উগ্র ও চরমপন্থি যে মানব সভ্যতার উন্নয়নে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে যুগান্তকারী পরিবর্তন ও সফলতা এসেছে পশ্চিমা দেশে তার মূল্যায়ন বা ইতিবাচক দিক বিবেচনা করাটাকেও আদর্শ বিরোধী মনে করেন। তারা ভুলে যান মধ্যযুগীয় ইসলামী সভ্যতার অন্যতম সোপান ছিল প্রাচীন গ্রীক সভ্যতার বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা লব্ধ তথ্য ভাণ্ডারের অনুবাদ করা তা থেকে জ্ঞান অন্বেষণ। তৌহীদে বিশ্বাসী বলব কিন্তু পূর্ব পশ্চিমের মালিক যে আল্লাহ , পৃথিবীর সবকিছুর মালিক যে আল্লাহ এবং দুনিয়ার যেখানে মানুষ যে কিছুই করেনা কেন তা যে আল্লাহর অনুমতিতেই হয় সে অনুভূতি জাগে না! নবীর শানে ইসলামের আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে অনেক দফা দাবী আদায়ের আওয়াজ তুলতে দেখা যায় কিন্তু সে সব দাবীতে একটাও থাকেনা সমাজের শোষিত, নিগৃহীত হাওয়া মানুষের কথা। হেফাজতে ইসলামের ১৩ দফা দাবীর সাথে পোশাক শ্রমিকদের নিরাপত্তা এবং নিরাপদ কর্ম-পরিবেশ নিশ্চিত করার আরেকটি দাবী নিয়ে ১৪ দফা দাবী করলে কি ভাল হত না? সাভারের রানা প্লাজা ধসে পড়ে সহস্রাধিক গার্মেন্টস শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনা তো হেফাজতে ইসলামের সে আন্দোলনের সময়কার ঘটনা। অথচ নবী বলেছেন শ্রমিকের ঘাম শুখবার আগে তার পারিশ্রমিক দিতে। ইসলামী আন্দোলনের সাথে গণ মানুষের কল্যাণের দাবী তোলা কোরআন হাদিসে নিষেধ আছে বলে তো দেখি নাই?
ইতিহাস কি শিক্ষা দেয়?
আসলে অতীত সভ্যতার ইতিহাস চর্চা করলে দেখা যায় অতীতের সকল সভ্যতা তাদের প্রভাব বিস্তারে তথা সাফল্যর চূড়াতে উঠতে লেগেছে প্রচুর সময় কিন্তু পতন ঘটেছে দ্রুত সময়ে। তবে একমাত্র ব্যতিক্রম হচ্ছে ইসলামী সভ্যতার, যা সাফল্য অর্জন করেছে অতি অল্প সময়ে। তখনকার দুটা পরাশক্তিকে দ্রুত পরাজিত করে ইসলামী সভ্যতার প্রভাব ছড়িয়ে পড়ে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে। মহানবী মোহাম্মদ (সঃ) এর নেতৃত্বে ইসলামের যাত্রা শুরু হওয়ার সাথে সাথে অতি দ্রুত বিস্তার লাভ করে চর্তুদিকে। মহানবী মোহাম্মদ (সঃ) এর মৃত্যুর পর মাত্র ২০ বছরে ইসলাম ছড়িয়ে পড়ে সিরিয়া, প্যালেষ্টাইন, মিসর ও পারস্য পর্যন্ত। ইসলামের স্বর্ণ যুগ সাধারণত ৭ম শতাব্দী থেকে ১৩শ শতাব্দী পর্যন্ত ছিল। ঐতিহাসিক হাওয়ার্ড লিখেছেন মুসলিম শিল্পী এবং বিজ্ঞানী, যুবরাজ ও শ্রমিক সবাই মিলে গড়ে তুলেন এক অন্যন্য সংস্কৃতি যা পৃথিবীর সর্বত্র সমাজকে পরোক্ষ বা প্রতেক্ষ ভাবে প্রভাবিত করে।
বস্তুত ইসলামী সভ্যতার প্রদীপ আগের মতো আলোকিত নাই মনে হলেও নিভে যায়নি চিরতরে অর্থাৎ ইসলামী সভ্যতা বিলীন হয়ে যায়নি সম্পূর্ণরূপে। তবে পৃথিবীর বুকে বিশেষ করে মুসলিম বিশ্বে যে অন্যায় অবিচার চলছে ও সেকুলার সভ্যতার যে তাণ্ডব চলছে তার অবসানে ইসলামের বিকল্প নেই। সে জন্য আজ সবচেয়ে প্রয়োজন মুসলিম ঐক্যের, সমাজে শিক্ষার প্রসারের, মানব কল্যাণে ও সমাজের নির্যাতিত, শোষিত, নিগৃহীত মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসার। মুসলিম সমাজকে নিয়ে আজ যেভাবে একদিকে “বিভক্ত কর ও শাসন কর” এবং ইসলামের কথা বললেই কোন না কোন অপবাদ দেয়া, নিগৃহীত করা আর অন্যদিকে মুসলিমদের মন মানসিকতাকে বাক্সবন্দী করে রাখার যে চক্রান্ত চলছে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজন বুদ্ধি ভিত্তিক ও বাস্তব ভিত্তিক আন্দোলন। শত্রুকে শুধু শত্রু ভেবে প্রতিহত করার সংগ্রামের লিপ্ত হওয়ার আগে তাকে চিনতে হবে ভালভাবে, জানতে হবে সে কীভাবে কাজ করে, কি চিন্তা করে ইত্যাদির ব্যাপারে । কেননা শত্রু সম্পর্কে সুষ্ঠু ধারণা না থাকলে শত্রু মোকাবিলায় সফলতা আশা করা যায়না। ইসলামকে বিজয়ী যারা দেখতে চান কিংবা যারা ইসলামকে এগিয়ে নিতে চান তারা কেন সমাজে অযোগ্য ও অবহেলিত হতে হবে? সে চিন্তা করারও প্রয়োজন আছে।
শেষ কথা:
অত্যাচারের অত্যাচার দেখে হতাশ হওয়ার কারণ নাই কেননা মুসলিম হিসাবে অবশ্যই আস্তা রাখতে হবে মহান আল্লাহ্র উপর। একজন মুমিন যখন জালিমের অত্যাচার দেখে হতাশ বা দু:খীত হয় তখন তার উচিত মহান আল্লাহর সেই বানী স্মরণ করা ,
“তুমি কখনও মনে করিওনা যে যালিমরা যাহা করে সে বিষয়ে আল্লাহ গাফিল, তবে তিনি তাদেরকে সে দিন পর্যন্ত অবকাশ দেন যে দিন তাহাদের চক্ষু হইবে স্থির”
আর তখন তাদের অবস্থা কি হবে তার বর্ণনায় আল্লাহ বলেন,
“ভীত বিহ্বল চিত্তে অবকাশের দিকে চাহিয়া (আরবি শাব্দিক অর্থ মাথা তুলিয়া “মুক্ষনিয়ি রুউসিহিম”) উহারা ছুটাছুঠি করিবে, নিজেদের প্রতি উহাদের দৃষ্টি ফিরিবে না এবং উহাদের অন্তর হইবে উদাস” (সুরা ইব্রাহীম ১৪: ৪২-৪৩)বিজয় কোন পরাশক্তির কাছ থেকে আসে না আসবে একমাত্র আল্লাহর কাছ থেকে আর সাহায্য যখন অসবে কেউ তা রুখতে পারবে না। তবে সে সাহায্য পাওযার উপযুক্ত হতে হবে।
বিষয়: বিবিধ
১৭১৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন