গ্রামের নাম কুহুতান......................
লিখেছেন লিখেছেন স্বাধীনতা ২৪ জুলাই, ২০১৩, ০৮:০৫:২৫ সকাল
সবেমাত্র ইন্টার শেষ করেছি, তখনো নর্থ-সাউথে যাওয়া হয় নি। রেজাল্ট বের হতে দুমাস বাকি। শহরের কংক্রিট সভ্যতা ছেড়ে গ্রামের পথ আমার সব সময় পছন্দের। এইবার- সুযোগ বুঝে লম্বা সময়ের জন্য শহর ছেড়ে চলে এলাম গ্রামে, মাতুল রশুনের কোয়া নানাবাড়ী। গ্রামের নাম কুহুতান, ওরা বলে কুয়াতান। যমুনা পাড়ে শুনশান নিরব, নিভৃত অজপাড়া গাঁ এই কুহুতান, মিল্কভিটা খামারীদের এলাকা। নানা আমার ডাক্তার। জেলা শহরের সিভিল সার্জেন্ট চাকরী থেকে অবসরপ্রাপ্ত। শেষ বয়সে শহরের সবকিছু ভেংগে গ্রামে ফিরে গেছেন, খুলেছেন দাতব্য চিকিৎলয়। শুক্র/শনি দুদিন গ্রামের মানুষকে ঔষধ/ব্যবস্হাপত্র দেন। বাড়ীর সবচেয়ে দক্ষিনে পুকুর পাড়ে লম্বা দোচালা টিনের ঘরটির একপাশে ডাক্তারখানা, আরেকপাশে বসার ঘর এবং লাইব্রেরী। বসার ঘরে কবি নজরুল, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, বিজ্ঞানী আইনস্টাইন, কবি শেখ সাদি এবং হেকিম ইবনে সিনার বড় সাইজের ছবি কাঁচ দিয়ে বেঁধে ওয়ালে টাঙ্গিয়ে দেয়া হয়েছে, আর পড়ার ঘরের আলমিরা গুলো চিকিৎসা বিজ্ঞান এবং ইসলাম ধর্মবিষয়ক বইপুস্তকে ঠাসা। এই হছ্ছে নানা বাড়ী। যাক সে কথা।
এখন নিজের কথায় আসি। ডাক্তারখানার হেলপার সুবেদ আলী, সবাই বলে সুবেদালী, আমি বলি সুবেদ ভাই। সুবেদ ভাই নানার আশ্রয়ে থাকে। থাকা, খাওয়া, পকেট খরচ ফ্রী। বয়সে আমার চেয়ে এক বছরের বড়- ক্লাস টেন এ পড়ে, গরিবের ছেলে, সময় মত স্কুলে যেতে পারেনি তাই হয়তো। কিন্তু ভিষন মেধাবী, দেখতে শুনতেও দারুন, মারাত্মক ছেলে সুলভ। পড়াশুনায় ভাল হওয়ার সুবাদে নানার আদরের পাত্র। কেমন কেমন করে যেন সুবেদ ভাইয়ের সাথে মনের অজান্তে খাতির হয়ে যায়। দিনমান যমুনার চরে ধরাধরি, হুড়াহুড়ি, সখ্যতা। একদিন বৃষ্টিতে ভিঝেছি, হায়রে কাকা ভিঝা। আরেক দিন নদীতে সাঁতার কাটতে যেয়ে কি যে অবস্হা....................। আরেক দিন সন্ধায় দু জনে দুরে হাটতে হাটতে যাত্রাপালা দেখতে যাই। পালা শেষ রাত্রি তখন ঠিক তিনটা। মাথার উপড় হাজার নক্ষত্রের প্রদ্বিপ, সুনীলের কবিতার মতই আমরা তখন আমাদের আদর আর ভালবাসার কথা বলতে বলতে বাড়ি ফিরেছি। পরদিন সকাল তখন গড়িয়ে গেছে, আমি তখনো মগ্ন ঘহন ঘুমের ঘোরে, হটাত বলা নেই, কটা নেই মা এসে হাজির। আর ঐদিনই সন্ধায় কুহুতান ছেড়ে সোজা ঢাকা। এরপর অনেক দিন সুবেদের সাথে আর দেখা হয় নি, কিন্তু তাতে নদীর জোয়ার ভাটা থেকে থাকেনি। ঈদ, চাঁদ, পর্বনে কুহুতান গিয়েছি বটে কিন্তু ওর সাথে আর তেমন করে মেশা হয়নি, মেশার সুযোগও হয় নি। দিন যায় কথা থাকে, নানা গত হয়েছেন, বাবা গত হয়েছেন। নর্থ সাউর্থ ছেড়ে আমি হলাম প্রবাসি। আর কুহুতানের এক দুঃখিনি মায়ের এতিম ছেলে সুবেদ এখন ডাঃ মোহাম্মদ সুবেদ আলী, বউ, তিন বাচ্চা, অষ্ট্রেলিয়া প্রবাসি। আর আমি, এই তো ................................
বিষয়: বিবিধ
১৮৮১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন