একটু ইতিহাস জানার চেষ্টা করি ^^ ^^ ^^
লিখেছেন লিখেছেন রাজনৈতিক ভূতুড়ে ডাইরি ২৮ জুলাই, ২০১৩, ১১:৪২:৩৬ সকাল
৬৬-৬৯ এ গনআন্দোলন আর বাংগালি জাতিয়তাবাদের উন্মেষের মধ্য দিয়ে ১৯৭০ এর নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামিলীগ পূর্ব পাকিস্তানের একমাত্র সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। আর বংগবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংগালির অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে স্বিকৃতি লাভ করলেন। কিন্তু পাকিস্তানী সামরিক সরকার ও পশ্চিম পাকিস্তানের নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টি ক্ষমতা হস্তান্তরে অস্বিকার করায় অসহযোগ আন্দোলোন দানা বেধে উঠে। এর পরবর্তী ধাপে পাকিস্তানীদের গনহত্যার প্রতিরোধে বাংগালির মুক্তির সংগ্রাম গড়ে উঠে। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় হয়। বাংলাদেশ স্বাধিন হওয়ার পর তাজউদ্দীন আহমেদ ও সৈয়দ নজরুল ইসলামের নেতৃত্বাধীন অস্হায়ী সরকার ক্ষমতা গ্রহন করেন। পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে ১৯৭২ সালের ১০ ই জানুয়ারী শেখ মুজিবুর রহমান প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা সৈয়দ তাজউদ্দীন আহমেদের হাত থেকে গ্রহন করেন। কি ছিল সেই সরকার সাফল্য আর ব্যার্থতা?
সাফল্য
প্রথমত: তৎকালীন আওয়ামিলীগ সরকারের অন্যতম সাফল্য ছিল ভারতীয় সেনাবাহিনীকে সে দেশে ফেরত পাঠানো। ১৬ ই ডিসেম্বর রেসকোর্স ময়দানে পাকবাহিনী ভারতীয় বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পন করে এবং সেই সাথে ৯৩ হাজার যুদ্ধ বন্দী ও তাদের অস্ত্র সামগ্রি ভারতে নিয়ে যাওয়া হয়। জেনারেল ওসমানির নেতৃত্বে সেক্টর কমান্ডাররা একদিন পর ঢাকায় আসেন এবং তারা তৎকালীন পাকিস্তানের ১৪ ডিভিশনের হেডকোয়ার্টারকে বাংলাদেশে সেনাবাহিনির হেডকোয়ার্টারে রুপান্তরীত করেন। জেনারেল ওসমানী ও তার উপপ্রধান গ্রুপ ক্যাপ্টেন গোলাম তৈয়ব ১৯৭২ সালের ৭ ই এপ্রিল পর্যন্ত্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কমান্ডে থাকেন। কিন্তু আভ্যন্তরীন দলাদলির মাধ্যমে এ কে খন্দকার এবং যুদ্ধের প্রায় এক মাস পর কলকাতা ফেরত আোয়ামিলীগের নেতাদের মাধ্যমে তৈয়বকে সরিয়ে দেয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধের সকল সেক্টরকে ডিমোবিলাইজড করে ভারতীয় সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রনে নেয়ার নির্দেশ জারি করা হয়। ১৯৭২ সালের ২৯ জানুয়ারী ওসমানি সকল সেক্টর কমান্ডারদের সাথে তার শেষ সভা করেন যেখানে সেই বিখ্যাত ছবিটি তোলা হয়। বিজয়ের তিন মাস পরেও স্বাধীন বাংলাদেশ ভারতীয় বাহিনীর নিয়ন্ত্রনে থাকে। এমনকি বিভিন্ন সরকারী পদে ভারতীয় সিভিল সার্ভিসের লোকেরা দায়িত্ব গ্রহন করে। অবস্হার গুরুত্ব অনুধাবন করে শেখ মুজিবুর রহমান ভারতীয় প্রধামন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধির নিকট ভারতীয় সেনাবাহিনীর দ্রুত নিঃশর্ত প্রত্যাহার দাবি করেন। এর পর দুই দিনের মধ্যে ১৭-১৯ এ মার্চের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে সকল ভারতীয় সেনা প্রত্যাহার করা হয়। এটি স্বাধিনতাউত্ত শেখ মুজিব সরকারের একটি অন্যতম সাফল্য।
দ্বিতীয়ত আওয়ামিলীগ সরকারের একটি অন্যতম সাফল্য ছিল স্বাধীন দেশে একটি সংবিধান উপহার দেয়া। ১৯৭২ সালের ১০ই এপ্রিল ডঃ কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ৩৪ সদস্যের সংবিধান রচনা কমিটি গঠন করা হয়। ১৭ এই এপ্রিল এই কমিটি তার প্রথম মিটিং করে। এটি সমাজের সর্বস্তর থেকে এ বিষয়ে মতামত আহবান করে। ৭৪ টি সভা করার পর ১০ ই জুন এই কমিটি খসড়া সংবিধান প্রনয়ণ করে। সংসদীয় সরকার ব্যবস্হা প্রবর্তনের লক্ষ্যে কমিটি প্রধান ডঃ কামাল হোসেন ভারত ও যুক্তরাজ্যের সরকার ব্যবস্হার সরাসরি পর্যবেক্ষনের জন্য সেসব দেশে ভ্রমন করেন। মূলত ভারত ও যুক্তরাজ্যের সংবিধানের আলোকেই বাংলাদেশের সংবিধান রচনা করা হয়। ১১ ই অক্টোবর সংবিধানের পরিপূর্ন খসড়া অনুমোদিত
হয়। ১২ ই অক্টোবর এটি সংসদে বিল আকারে উপস্হাপন করা হয়। ১২-১৯ তারিখ পর্যন্ত্য সরকার ও বিরোধি দলের দুজন সদস্য ( সুরন্জিত সেন গুপ্ত ও মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা) এই বিলের উপর ালোচনায় অংশগ্রহন করেন।
সর্বমোট ১৬৩ টি সংশোধনী প্রস্তাব পেশ করা হয় যার মধ্যে ৮৪ টি গৃহিত হয়। এগুলোর বেশীরভাগই ছিল ভাষাগত ভূল। ৪ঠা নভেম্বর এই সংবিধান সংসদে পাশ হয়। বিজয়ের এক বছর পূর্তিতে ১৯৭২ সালের ১৬ ই ডিসেম্বর এই সংবিধান কার্যকর হয়। যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশে এক বছরের মধ্যে একটি হাতে লিখিত পরিপূর্ন সংবিধান উপহার দেয়া আওয়ামিলীগ সরকারের আরেকটি অনন্য সাফল্য।
ব্যার্থতা:
প্রথমত: আওয়ামিলীগ সরকারের সবচেয়ে বড় একটি ব্যার্থতা ছিল যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশের অর্থনীতিকে স্হবির করে দেয়া। যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশটাকে নিজের মত করে গড়ে নেয়ার একটা সূবর্ন সুযোগ শেখ মুজিবুর রহমান পেয়েছিলেন ১৯৭২ সালে। জাপান বা কোরিয়া তাদের নিজ নিজ দেশের যুদ্ধের পর যেভাবে নিজেদেরকে অর্থনৈতিক সুপার পাওয়ার হিসেবে গড়ে তুলেছিল আমাদের সামনেও সেই যুযোগ ছিল। কিন্তু নিজের অদক্ষতা, স্বজনপ্রীতি আর নিকটজনদের দুর্নীতির কারণে সেই সুযোগ তিনি নষ্ট করেন। তার নিজের বক্তব্যেই সেটা ফুটে উঠে। " মানুষ পায় সোনার খনি আমি পেয়েছি চোরেক ক্ষনি।" "আমি সাহায্য আনি আর চাটার দল সব খেয়ে ফেলে"। তিনি সব জানার পরেও একজন দক্ষ শাসকের মত পারেননি এসব দুর্নীতি বন্ধ করতে। দেশের শিল্প কারখানাগুলোকে তিনি ব্যাপকভাবে জাতীয়করন করেন ও এদের নির্বাহী পদগুলোতে দলীয় বিবেচনায় অদক্ষ ও অসৎ লোকদেরকে নিয়োগ দেন। জাতীয়করন বিদেশী ও দেশীয় বিনিয়োগকারিদেরকে ভুল সিগনাল দেয় আর এসব অযোগ্য লোকদেরকে নিয়োগ দেয়ার ফলে এসব শিল্প সম্পূর্ন ধ্বসংস হয়ে যায়। এসময়েই দেশের সবচেয়ে বেশী বৈদেশিক মুদ্রা আহরনকারী পাটশিল্প ধ্বসংসের সূচনা হয়। শুধু তাই নয় তিনি দলীয় ও ব্যাক্তিগত অনুগত্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন ডিলারশিপ ও এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট লাইসেন্স প্রদান করেন। এসব লোকজন বিভন্ন রকম চোরাচালানের সাথেও পরে যুক্ত হয়ে পড়েন। দেশে রাতারাতী একটি নব্য ধনিক শ্রেণীর উৎপত্তি হয় যারা সম্পদ আহরন ও বিলাশ ব্যাসনে ব্যাস্ত হয়ে পরেন। প্রধানমন্ত্রীর পরিবারের ঘনিষ্ঠ গাজি গোলাম মোস্তফা রেডক্রসের চেয়ারম্যান হিসেবে সারা দেশে কম্বলচোর হিসেবে কুখ্যাতি লাভ করেন। শেখ মুজিবুর রহমানের একমাত্র ভাই শেখ নাসের খুলনার সকল শিল্প কলকারখানার নিয়ন্ত্রন নিজের হাতে নিয়ে নেন এবং চোরাকারবারি চক্রের সাতেও যুক্ত হয়ে পরেন। তার ভাতিজা ও ভাগিনা শেখ মনি, আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহ, শেখ শহিদ শুধু রাজনৈতিক নয় বরং অর্থনৈতিকভাবে অত্যন্ত শক্তিশালী হয়ে উঠেন। এই ধরনের অরাজকতার মধ্যে কোন রকম রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক অর্জন একরকম অসম্ভবই ছিল বলা যায়। ১৯৭৩ সালের ৩০শে ডিসেম্বর পর্যন্ত্য বাংলাদেশ ১.৪ বিলিয়ন ডলার সাহায্য গ্রহন করেন। কিন্তু দুর্নীতি আর অব্যাবস্হাপনার জন্য এর কোনটাই আমরা কাজে লাগাতে পারিনি। এজন্য বাংলাদেশ এসময়ই বটমলেস বাসকেট বা তলাবিহীন ঝুরি উপাধি লাভ করে।
ষাটের দশকে পূর্ব-পাকিস্তানের প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৪ শতাংশের মত। স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলাদেশের এক পন্চমাংশ অর্থনীতি ধ্বংস হয়ে যায়। দেশ স্বাধীনের পর সেই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি শ্লথ হয়ে যায়। ৯০ এর পর এটি আবার গতি লাভ করে। তারপরেও নিচের চার্টগুলোতে দেখা যায় ৭২ - ৭৫ ছিল বাংলাদেশের অর্থনীতির সবচেয়ে অন্ধকারাচ্ছন্ন শাসনামল।
দ্বিতিয়ত: ৭৪ এর দুর্ভিক্ষ, ৭২ - ৭৫ সালের অর্থনৈতিক অব্যবস্হাপনার চুড়ান্ত দলিল। বন্যা এবং বিভিন্ন স্হানে মজুদদারির ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য মানুষের লাগালের বাইরে চলে যায়। মানুষ একবেলা ভাত বা রুটি খেয়ে জীবন কাটাতো। যার ফলশ্রুতিতে আসে ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ। দুর্ভিক্ষ শুরু হয় ৭৪ সালের এপ্রিলে আর মে-জুলাই মাসে উজান থেকে নেমে আসা পানিতে বাংলাদেশে বন্যা দেখা দেয়। আওয়ামিলীগের সুহৃদ ভারত সরকারও এ ব্যাপারে কোন প্রকার সাহায্য করতে অপারগতা প্রকাশ করে। সরকারের তরফে যথারীতি বন্যাকে দোষারোপ করা হলেও এই দুর্ভিক্ষের আগাম ভবিষ্যত বানি করা হয়েছিল। এর মধ্যে কিউবাতে পাট রপ্তানীর জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে খাদ্য সাহায্য বন্ধ করে দেয়। যতদিনে মার্কিন চাপের কাছে নতি স্বিকার করে পাট রপ্তানী বন্দক করে ততদিনে অনেক দেরী হয়ে গিয়েছে। তাছাড়া অমর্ত্য সেন সহ অনেক গবেষক খাদ্যের অপ্রতুলতা নয় বরং খাদ্যের অপ্রাপ্যতাকেই মূলত দায়ী করেছিলেন। আঔামিলীগ সরকার সম্পূর্ন ব্যার্থ হয় মানুষের হাতে সুলভে খাদ্য পৌছে দিতে। এই দুর্ভিক্ষ ১৯৭৪ সালের ডিসেম্বরে শেষ হয়। এই সময়ে প্রায় সাড়ে চার লক্ষ মানুষ মারা যায়। দুর্ভিক্ষ পরবর্তী আরও অসুস্হতা ও অপুষ্টিজনিত কারণে প্রায় ১৫ লক্ষ মানুষ মারা যায় বলে অনেক গবেষক দাবি করেন।
তৃতীয়ত আওয়ামিলীগ সরকারের একটি চরম ব্যার্থতা ছিল দলীয়করণ যার ফল বাংলাদেশ আজও ভোগ করছে। সেসময় সারা দেশের মানুষ একজন নেতাকেই মানত এবং দলও ছিল মূলতঃ একটি। তাদের সামনে সুযোগ ছিল সবাইকে নিয়ে একসাথে দেশকেগড়ে তোলা। কিন্তু তা না করে তারা নিজ দলের লোকদেরকে বিভন্ন পদে নিয়োগ দিতে থাকে। বাংলাদেশের সংবিধানের ২৯ ধারা অনুযায়ী রাষ্ট্রের সকল নাগরিক যোগ্যতার ভিত্তিতে যে কোন সরকারি পদ গ্রহনের অধিকার রাখে। ধর্ম, গোত্র, লিন্গ বা জন্মস্হান নাগরিকের এই অধিকারে কোন প্রকার বাধার সৃষ্টি করতে পারবে না। ১৯৭২ ও ৭৩ সালের মুক্তিযোদ্ধা ও অমুক্তিযোদ্ধাদের জন্য দুটি আলাদা পরীক্ষা হয়। শেখ মুজিবের রাজনৈতিক সচিব তোফায়েল আহমেদ ব্যাক্তিগত যোগাযোগ আর দলীয় বিবচেনার ভিত্তিতে মুক্তিযোদ্ধাদেরকে সরকারি চাকরিতে নিয়েোগ দেন। এছাড়া সময়েরও ভৌগলিক সীমারেখার ভিত্তিতে কোটার প্রচলন করা হয় যা বাংলাদেশের সংবিধানের ২৯ ধারার সাথে সাংঘর্ষিক। শেখ মুজিব সরকারের শুরু করে দিয়ে যাওয়া এই দলীয় করণের বীজ বাংলাদেশের সরকারি প্রশাসনকে দিনে দিনে অযোগ্য আর অদক্ষ করে দিয়েছে যার ফল বাংলাদেশ এখনও হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। এই অদক্ষ প্রশাসন ও ক্রমান্বয়ে তার মানের নিম্নোমুখিতা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রাকে নানাভাবে বাধাগ্রস্হ করেছে। তাই স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে আোয়ামিলীগের শুরু করে দেয়া এই দলীয়করনকে আমি দেশের জন্য চরম ক্ষতিকারক মনে করি।
চতুর্থতঃ ৭২-৭৫ আওয়ামিলীগ সরকারের একটি কলংকময় অধ্যায় হলো রক্ষীবাহিনী গঠন। ১৯৭২ সালের ৭ ই মার্চ প্রেসিডেন্টের আদেশ বলে মূলত পুলিশের সাহায্যকারি আধা সামরিক বাহিনী হিসেবে রক্ষি বাহিনী গঠন করা হয়। এর সদস্যরা মূলত মুজিব বাহিনী বা বিএল এফ থেকে আগত এবং এরা শুধুমাত্র মুজিবেরই অনুগত ছিল। বাংলাদেশে থেকে ভারতীয় বাহিনী চলে গেলেও রক্ষী বাহিনীর আড়ালে র তার প্রভাব বিস্তার করতে থাকে। শেখ মুজিবুর রহমানের অনুরোধে মেজর জেনারেল উবান এই রক্ষি বাহিনীর প্রশিক্ষন কার্যক্রম গঠন করেন। মেজর রেড্ডি নামের একজন ভারতীয় সামরিক কর্মকর্তা ছিলেন সাভারে এই রক্ষী বাহিনীর প্রধান ক্ষমতাবান। এখানে তার তত্ত্বাবধানে তিনটি ব্যটালিয়ন ছিল যাদেরকে তিনি প্রাথমিক প্রশিক্ষন প্রদান করতেন। বিশেষ প্রশিক্ষনের জন্য তাদেরকে ভারতীয় মিলিটারি একাডেমি দেরাদুনে প্রেরন করা হতো। পক্ষান্তরে সামরিক বাহিনী চরম অবহেলার স্বিকার হয় যা তাদের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দেয়। ১৯৭৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে রক্ষীবাহিনীকে দেশের বিভিন্ন অন্চলে মোতায়েন করা হয়। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই এটি একটি চরম অজনপ্রিয় বাহিনীতে পরিণত হয়। এটিকে অনেকে হিটলারের নাজি বাহিনীর সাথে তুলনা করেন। এসময় দেশের বিভিন্ন এলাকায় জাসদ ও আরও বামপন্হি দল মাঠা চারা দিয়ে উঠে। রক্ষি বাহিনীর হাতে প্রায় ৩০ হাজার রাজনৈতিক কর্মী হত্যার অভোযোগ আছে। বর্তমানে যে গুম সংস্ক্বতি চালু হয়েছে এটি সেই সময়ে শুরু হয়। অনেক সময় পরিবারের সদস্যদের সামনে হতে পুরুষদেরকে ধরে নিয়ে যাওয়া হতো শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ বলে পরে যাদের আর কোন খোজ পাওয়া যয়নি।
ময়মনসিংহে পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টির বিরুদ্ধে পরিচালিত একটি অভিযানে প্রায় ১৫০০ কিশোরকে এই রক্ষি বাহিনী হত্যা করে। যশোরের কালিগন্জে রক্ষীবাহিনী চলে যাওয়ার পর গনকবর আবিষ্কৃত হয়। ৭৩ এর শেষের দিকে এবং ৭৪ সালের শুরুর দিকে যখন দুর্ভিক্ষের সূচনা সে সময়ে গ্রাম থেকে জীবিকার প্রয়োজনে অনেক মানুষ ঢাকায় ছুটে আসে। সরকার তখন বিদেশীদের সামনে বিব্রতবোধ করছিলেন বলে জোর করে ২ লাখা মানুষকে ঢাকা থেকে বের করে দেন । রক্ষীবাহিনী এদেরকে হয় গ্রামে নচেত শহরের বাইরে ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেয়।
সর্বশেষ যে বিষয়টি ৭২-৭৫ আওয়ামী শাসনের কফিনে পেরেক ঠুকে দেয় তা হলো বাকশাল (বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামি লিগ)। ১৯৭৫ সালের ২৫শে জানুয়ারী কলমর একটি খোচায় শেখ মুজিব গনতন্ত্রকে হত্যাকে একদলীয় বাকশাল প্রতিষঠা করেন। তিনি এর মাধ্যমে মানুষের স্বাধীন মত প্রকাশের স্বাধিনতা ও তাদের সকল মৌলিক রাজনৈতিক অধিকার হরন করেন। ১৯৭৫ সালের জুন মাসে আওয়ামিলীগ ও কৃষক শ্রমিক পার্টি মিলে বাকশাল গঠন করে এবং এর মাধ্যমে বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক দলকে অবৈধ ঘোষনা করা হয়। স্বাধীনতা পুর্ব সময়ে গনতন্ত্র ও জনানুষের অধিকারের কথা বলে আসা শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধিনতার পরপরই মূলতঃ একজন একনায়ক সৈরাচারের মত আচরন করতে থাকেন। ১৯৭৩ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আওয়ামিলীগ সরকারের জোরপূর্বক ভোট জালিয়াতি করা বা মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেয়া জ্বনাব তাজউদ্দীন আহমেদকে অপমানজনকভাবে সরিয়ে দেয়ার মধ্যে তার এই সৈরাচারি মনোভাবের প্রকাশ আমরা দেখতে পাই আর এর চুড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ হলো বাকশাল। তিনি বাকশালের মাধ্যমে নিজেই এর প্ড়ধান ঘোষনা করেন এবং দেশের মন্ত্রীসভা সংসদের সকল সদস্যকে বাকশালের সদস্য হিসেবে ঘোষনা দেন। বংগবীর এম এ জি ওসমানি ও ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন এর প্রতিবাদে সংসদ থেকে পদত্যাগ করেন। ৮ জন বিরোধী দলের সদস্যের মধ্যে ৪ জন বাকশালে যোগদান করেন। বাকশালে দেশের সকল মত ও পথের অংশগ্রনের কথা বলা হলেও তৎকালীন বামপন্হী ও বিরোধিদলগুলতে বটেই শেখ মুজিবের দির্ঘদিনের সহচর এই তাজউদ্দীন আহমেদও এতে ছিলেন না।
দেশের অর্থনীতির স্হিতাবস্হা ও যুদ্ধবিধ্স্ত দেশ পুনর্গঠনের কথা বলে ১৯৭৫ সালের ২৫শে জানুয়ারী সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনির মাধ্যমে বাকশালকে দেশের একমাত্র বৈধ রাজনৈতিক দল ও শেখ মুজিবকে তার নেতা ঘোষনা করা হয়। বাকশাল দেশের সকল রাজনৈতিক দল এমনকি সরকারি চাকুরে এবং বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যদেরকেও এতে যোগদানের আদেশ দেয়। বাকশাল বা দ্বিতীয় বিপ্লবের নামে শেখ মুজিব ঘোষনা দিলেন বাকশালের সদস্য ছাড়া কেউ সংসদ সদস্য হতে পারবেন না। অনেকগুলো কালো আইনের একটি হচ্ছে দেশে চারটি বাদে সকল সংবাদপত্র নিষিদ্ধ করা। এর মাধ্যমে রাজনৈতিক দলতো বটেই অরাজনৈতিক মাধ্যমেও তার কোন কাজের সমালোচনার পথ রুদ্ধ করেন। বাকশালে ১৫ সদস্যের মন্ত্রীর পদমর্যাদায় নির্বাহি কমিটি ও ১১৫ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করেন। বাকশাল দেশের প্রশাসন ও স্হানীয় সরকারকেও ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা করে। আমলাতন্ত্রের বদলে বাকশালের সদস্যদেরকে প্রশাসনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ন পদে পদায়নের পরিকল্পনা করা হয়। দেশের জনসাধারনের মতামত এমনি সংসদেও কোন আলোচনা ছাড়াই চাপিয়ে দেয়া বাকশালের এসব নিয়ম নীতি দেশের প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে চরম অসন্তোষ তৈরী করে। শেখ মুজিবুর রহমান বাকশালের মাধ্যমে দেশের বিচারকদের নিয়োগ ও বরখাস্তের পূর্ন ক্ষমতাও নিজের হাতে নিয়ে নেন। দেশের বিচারবিভাগের পরিপূর্ন নিয়ন্ত্রন নিজ হাতে নেয়ার মাধ্যমে শেখ মুজিব দেশে আইনের শাসনের কবর রচনা করেন। বাকশালে অনেক সুন্দর সুন্দর প্রতিশ্রুতিও ছিল কিন্তু বাস্তবে বাকশাল কোনদিনও পূর্নরূপে বাস্তবায়িত হয়নি। বাংলাদেশের মানুষ রাজনৈতিকদের কাছ থেকে নানা রকম সুন্দর সুন্দর প্রটিশ্রুতি শুনে অভ্যস্ত কিন্তু বাস্তবে তারা বার বার প্রতারিত হয়েছে। বাকশালও ছিল তেমনি একটি শাসন ব্যবস্হা যেটি একজন একনায়কের চিরস্হায়ী ক্ষমতা নিশ্চিত করে। দেশের মানুষের একসময়ের একক নেতা স্বাধীনতার সাড়ে তিন বছর পর দেশের মানুষের বিশ্বাসযোগ্যতা হারান এবং মানুষ বাকশালকে একজন একনায়কের চিরস্হায়ী ক্ষমতারোহন হিসেবেই দেখে। এই বাকশাল বিষয়ে শেখ মুজিব কারও মতামতকেই গ্রহন করেননি, বরং তিনি নিজেকে সবজান্তা মনে করতে থাকেন। আতাউর রহমান খান প্রশাসনকে বাকশালের অধীনে আনার বিরোধিতা করেন। কিন্তু শেখ মুজিব মেধার থেকেও বাকশালের বিবেচনায় বা মনোনয়নে প্রশাসনে নিয়গের উপর জোর দেন। দল ও সরকারের মধ্যে কি পার্থক্য এটি অনুধাবন করতে তিনি সম্পূর্ন ব্যার্থ হন। এজন্যই হয়ত তিনি বাংলাদেশের সবচেয়ে সফল রাজনৈতিক হলেও সবচেয়ে ব্যার্থ প্রশাসক বা সরকার প্রধান হিসেবে ইতিহাসে নিজের নাম লিখে গেছেন।
১৯৭২-৭৫ সালের আওয়ামীলীগের শাসনামলকে মোটা দাগে দেখলে একটি ব্যার্থ শাসনামল। স্বাধিনতাপূর্ব বাংগালীর অবিসংবাদিত নেতা স্বাধীনতার মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে সবচেয়ে ব্যার্থ প্রশাসকে পরিনত হন। যা তার জনপ্রিয়তা ও গ্রহনযোগ্যতাকে শুধুমাত্র নিজ দলের মধ্যে নিয়ে আসে। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট একটি মর্মান্তিক ও রক্তক্ষয়ী সামরিক অভ্যথ্যানের মাধ্যমে তার প্রায় সাড়ে তিন বছরের শাসনামের করুন পরিসমাপ্তি ঘটে। বাংলাদেশে একদলীয় বাকশালের বদলে বহুদলীয় গনতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। দেশ আবার ধীরে ধীরে সমৃদ্ধী আর উন্নয়নের পথে যাত্রা শুরু করে।
Mohmmad Sazedur Rahman
বিষয়: বিবিধ
১৬২১ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন