ছাত্র শিবিরঃ অতীত ও বর্তমান
লিখেছেন লিখেছেন সাম্প্রদায়িক ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৩, ০৮:৫১:৪৪ রাত
এক,
আমার শ্রদ্ধেয় শিক্ষক একদিন আমাকে বলল ‘আমার ছেলেতো শিবিরকে তার আইডল মনে করছে।’ আমি বললাম, তাই নাকি? কেন? স্যার বলল-‘ঐদিন ওকে নিয়ে রাস্তায় বের হলাম। শ্যামলী শিশুমেলা মোড়ে চারজন ট্রাফিক দাড়িয়ে আ্ছে। অথচ গাড়িগুলো কোনো সিগনাল না মেনে ইচ্ছেমত যাওয়া চেষ্টায়রত। যার ফলে তীব্র যানজটের সৃষ্টি। তখন ও বলল এই পুলিশদেরকে শিবিরদের দেখিয়ে দেওয়া দরকার। তাহলে শিবির ওদের হাত-পা ভেঙ্গে দিত।’ অর্থাৎ সে মনে করছে পুলিশকে সায়েস্তা করার সাহস কেবল শিবিরের আছে।
দুই,
কয়েকদিন পূর্বে ভিসি স্যারের বাসায় গেলাম। তখন পাশের রুম থেকে তার নাতীর কান্নার আওয়াজ শুনতে পেলাম। সম্ভবত তাকে কিছুটা জোর করে খাবার খাওয়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছিল। তখন স্যারের স্ত্রী পিচ্চিটাকে উদ্দেশ্য করে বলল ‘দাদু, ঐ যে শিবির আসতেছে, তাড়াতাড়ি খাও। নইলে শিবির তোমাকে নিয়ে যাবে’। অর্থাৎ শিবিরের ভয় দেখিয়ে শিশু বাচ্চাটিকে খাবার খাওয়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
তিন,
একটা সময় দেখতাম অনেক নেতা বক্তৃতায় বলতেন ‘কিছুদিন পরে বাবা-মা টাকা দিয়ে তার সন্তানকে শিবিরে দিতে চাইবে’! অবশ্য এখেনও অনেকে বলে থাকেন। কিন্তু বাস্তবতা হল ছাত্র শিবির আজ তরুনদের কাছে বিভ্রান্তির অপর নাম, কিশোরদের কাছে অনিশ্চয়তা আর শিশুদের কাছে মূর্তমান আতংকের নাম। অথচ হওয়া কথা ছিল . . ....?? শিবিরের নাম বলে আজকে বাবা মা বাচ্চাকে খাবার খাওয়ায়, ঘুম পাড়ায়। কেই বা জেমস বন্ডের সাথে তুলনা করে।
এয়ানতের নামে চাঁদাবাজির শরয়ী বৈধতার চেষ্টা করছে এরা। কেউ মনে হয় অস্বীকার করবেন না, যারা শিবিরকে এয়ানত দেয় কিন্তু শিবিরে সক্রীয় নয় তোদের টাকা দেওয়া পেছনে ভালবাসার থেকে ভীতি বেশী কাজ করে। কেউবা হলে সিটটি ঠিক রাখার জন্য। অথচ কথা ছিল..
যাকাতের টাকা নিয়ে কুরআনের নির্ধারিত আটটি খাতের মনগড়া ব্যাখ্যা দিয়ে খরচ করে। নতুন মডেলের মটর সাইকেল, ল্যাপটপ, মোবাইল কিনে নেতারা। আল্লাহর সন্তুষ্টির থেকে কেন্দ্রীয় নেতাদের সন্তুষ্টিই এখানে মুখ্য। এই সন্তুষ্টির পিছনে কাজ করে পদের লোভ। জনশক্তি বৃদ্ধির প্রতিযোগিতা করে শাখাগুলো। যার ফলে মানের ব্যাপারে প্রচুর আপস করে বর্তমান নেতারা। এমনকি নামায ক্বাযা রিপোর্টে না লিখে, তিন মাসের রিপোর্ট-ডায়েরী একদিনে লিখেও সদস্য হয়। ছাত্রজীবন শেষ করার পরেও কয়েকবছর পর্যন্ত নাম রেখে দেয়া হয়, যেন অন্য শাখার চেয়ে জনশক্তি বেশী করে কেন্দ্রকে দেখানো যায়।
প্রেম, ডেটিং, মোবাইলিং এর ইসলামীক ফরমেশন শিবিরেই পাওয়া যায়। সদস্য লেভেলের শতকরা পঞ্চাশ ভাগের উপরে প্রেম করে। প্রেমের স্টোরহাউস হিসেবে ছাত্রীসংস্থাতো আছেই। অনেককে পর্ণোগ্রাফীতে আশক্তও দেখা যায়।
অনেক নেতাই এহতেসাবকে ভালভাবে গ্রহণ করতে পারেন না। অনেকের কাছে শিবির একটি ভাল চাকরীর মাধ্যম। অনেকের কাছে ব্যাবসা সফল হওয়ার নিয়ামক। এ ধরনের ব্যবসায়ীদের মধ্যে সুদ মহামারীর আকার ধারন করেছে। এরা অর্থ লেনদেনের ব্যাপারে জাহেলীযুগের নিকৃষ্টতাকের হার মানায়। মুনাফার বন্টন, অর্থ-আত্নসাতের ব্যাপারে বিরোধ অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানে প্রকাশ পেতে শুরু করেছে।
এদের অধিকাংশের টার্গেট সংসদ সদস্য হওয়া। এভাবে চলতে থাকলে আগামী দশ বছরের মধ্যে প্রতিটি আসনে এদের সম্ভব্য প্রার্থী হবে কমপক্ষে পঞ্চাশজন করে। অবশ্য বিরোধ ইতমধ্যে দৃশ্যমান।
সর্বোপরি বিকল্প প্রয়োজন। এরা বিতর্কিত। নিজেদের মধ্যে, সাধারন মানুষের মধ্যে। আগামী দিনে যুব সমাজের নৈতিক মূল্যবোধ, ধর্মীয় চেতনা রক্ষায় নতুনভাবে ব্যক্তিক ও সামষ্টিক চেষ্টা জরুরী। এজন্য গুলেন মুভমেন্টের কিছু দিক কাজে লাগতে পারে।
বিষয়: বিবিধ
২২৬৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন