“শান্তির পাহাড়ে অশান্তির ঘনঘটা, পার্বত্ব চট্টগ্রাম কি বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন হতে যাচ্ছে..?” পর্ব--(১)

লিখেছেন লিখেছেন মন্টি পাগলা ১৫ জুলাই, ২০১৩, ০২:৪৫:৪০ রাত



গত ২৭ মে, ২০১৩ কেবিনেটে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের এক বৈঠকে ভূমি মন্ত্রণালয়ের প্রবল বিরোধীতা সত্বেও ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমিবিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইন ২০০১’-এর ৬টি ধারা সংশোধনের খসড়া নীতিগতভাবে অনুমোদন করেছে মন্ত্রিসভা । এর ফলে ভূমির মালিকানা হারিয়ে উদ্বাস্তু হতে যাচ্ছে পার্বত্যাঞ্চলে বসবাসরত বাঙালি লাখ লাখ পরিবার । পার্বত্য বাঙালীদের জোরালো অভিযোগ, পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে বাঙালিদের উচ্ছেদ করার পরিকল্পনারই অংশ হিসেবেই ভূমি কমিশন আইনের এ সংশোধনী আদায় করেছে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পাহাড়িদের সংগঠন জেএসএস ।

এই সংশোধনী কার্যকর হলে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত বাঙালিদের জীবনে যে ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে তা কল্পনারও অতীত । এর ফলে পার্বত্য ভূমিবিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন হয়ে পড়বে সন্তু লারমার ইচ্ছা বাস্তবায়নের হাতিয়ার । সরকারের দেয়া ভূমি বন্দোবস্ত ও মালিকানা অবৈধ বলে তা বাতিল করার ক্ষমতাও রয়েছে এ কমিশনের । তাছাড়া যেহেতু এ কমিশন কোন ভুল সিদ্ধান্ত দিলেও তার বিরুদ্ধে অন্য কোন আদালতে আপিল করা যাবে না তাই এর মাধ্যমে বাংলাদেশের এক দশমাংশ আয়তনের পার্বত্য চট্টগ্রামের ভূমির উপর সন্তু লারমার একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে । আর পার্বত্যাঞ্চলে বাঙালিদের অস্তিত্বে বিশ্বাসহীন সন্তু লারমার রাজত্বে বাঙালিরা তাদের ভূমি থেকে উচ্ছেদ হবে ।

ধারণা করা হচ্ছে যে, পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে বাঙালিদের উচ্ছেদের ব্যাপারে এতদিন যে ‘অলিখিত চুক্তি’র কথা বলা হচ্ছিল ভূমি কমিশন আইনের এ সংশোধনীর মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব এখন সন্তু লারমার হাতেই তুলে দিতে যাচ্ছে সরকার।

চলুন দেখি পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি কমিশন আইন সংশোধনের যে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে, তার মধ্যে কি কি বিষয় নিয়ে বিশেষ বিবেচনা করা প্রয়োজন......

*১) নিয়মানুযায়ী পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনে ৫ সদস্যের যে কমিশন গঠিত হবে তার প্রধান হবেন একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, এ কমিশনের অন্য সদস্যরা হবেনঃ সংশ্লিষ্ট পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, সংশ্লিষ্ট সার্কেল চীফ (রাজা), পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদের চেয়ারম্যান/প্রতিনিধি ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার/অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারের পদমর্যাদার নিচে নন, এমন একজন প্রতিনিধি । লক্ষ্য করুন কৌশলে এই কমিশনে ৫ জনের ৩ জনই পাহাড়ি উপজাতি প্রতিনিধি ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে এবং বাকি ২ জন সরকারী প্রতিনিধি, বাঙালীদের কোন প্রতিনিধি নেই ।

উল্লিখিত সংশোধিতব্য আইনে ৭নং ধারায় ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের চেয়ারম্যানের ক্ষমতা হ্রাস করে এমন এক পর্যায়ে নেয়া হয়েছে যে, ঐ একটি বিষয় দিয়েই বাঙ্গালীদেরকে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যায় । উক্ত সংশোধনীতে বলা হয়েছে যে, “কমিশনের সকল সদস্যের ভোট প্রদানের মাধ্যমে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হবে। সমান ভোটের ক্ষেত্রে চেয়ারম্যান নির্ণা্য়ক হিসেবে পূনঃ ভোট প্রয়োগ করবেন ।”

লক্ষ্যনীয় বিষয় হচ্ছে, কমিশনের চেয়ারম্যান ছাড়া বাকী ৪ জন সদস্যের মধ্যে ৩ জন সদস্যই সরাসরি পাহাড়ী হবেন ।

অধিকন্ত, চেয়ারম্যান বা অপর সদস্য অর্থাৎ বিভাগীয় কমিশনার দুজনই/একজন বাঙালী হবেন এমন বাধ্যবাধকতা নেই, অর্থাৎ যদি এমন হয় যে একজন পাহাড়ি বংশোদ্ভূত বিভাগীয় কমিশনার ঐ এলাকার দায়িত্বে থাকেন তবে ৫ সদস্য বিশিষ্ঠ কমিশনের ৪ জনই পাহাড়ি হয়ে যাবেন । অর্থাৎ এদের কারোরই বাঙালী হওয়া জরুরী না ।

এখন যেহেতু কমিশনের ৫ জনের ৩ জনই পাহাড়ি হবেন সেহেতু সমান সমান ভোট হওয়ার তেমন সম্ভাবনা নেই । যার ফলে, নির্ণায়ক ভোট হিসেবে চেয়ারম্যানের পূনঃ ভোট প্রয়োগের প্রশ্ন তেমন একটা আসবে না । ফলে এক পক্ষের সংখ্যাগরিষ্ঠতা দিয়ে সংশ্লিষ্ট বিরোধের রায়, সব সময় এক পক্ষের তথা পাহাড়ীদের পক্ষে যাবে । ফলে বিরোধ নিষ্পত্তিকালে উপজাতীয় সদস্যদের সংখ্যাগরিষ্ঠের কারণে বাঙ্গালীরা সব সময় ক্ষতিগ্রস্থ হবে । এ এক করুন বাস্তবতা...।

*২) সংশোধিতব্য আইনে বলা হয়েছে, সংখ্যাগরিষ্টের সিদ্ধান্তই চুড়ান্ত বলে গণ্য হবে এবং এ কমিশনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মহামান্য হাইকোর্টেও আপীল করা যাবেনা । যার ফলশ্রুতিতে সেহেতু গৃহিত রায়কে (যদি তা বিতর্কিতও হয়) শিরোধার্য হিসেবে মেনে নিতে এতদাঞ্চলের সকল বাঙালী বাধ্য থাকবে । যেহেতু কমিশনের চেয়ারম্যান ব্যতীত সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য উপজাতীয় প্রতিনিধি, তাই কমিশনের রায়ের মাধ্যমে যে বাঙালীরা তাদের দখলাধীন ভূমি থেকে উচ্ছেদ হয়ে যাবে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা ।

তাছাড়া কমিশনের চেয়ারম্যান ব্যতীত কেউই বিচারপতি নন, সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য উপজাতীয় প্রতিনিধি । তাই, একজন বিচারপতির ভোট এবং আইন বিষয়ে অনভিজ্ঞ সাধারণ সদস্যের ভোটাধিকার এক হতে পারেনা । এই ধারাটি সরকার কর্তৃক গৃহিত হলে, কমিশনের কার্যক্রম পরিচালনাকালে বিতর্কিত ফলাফলকেই সবার গ্রহন করতে হবে...।

*৩) সংশোধিতব্য আইনের ৬নং ধারায় "আইন" এর স্থলে "আইন ও রীতি" উল্লেখ করা হচ্ছে । আশংকার ব্যাপার হচ্ছে, রীতি শব্দটি পাহাড়ি নেতাদের চাপের ফলেই যুক্ত করা হয়েছে এবং গবেষণা করে জানা গিয়েছে রীতি বলতে পাহাড়িরা যা বোঝে তা হচ্ছে ইংরেজ আমল থেকে পাহাড়ি জমি ভোগ-দখলের সংস্কৃতি । এই পয়েন্টটি যুক্ত হওয়ায় পাহাড়ি জমির ১০০% এরই মালিক হবে পাহাড়ি উপজাতিরা, কারন ইংরেজ আমল থেকে পাকিস্তান আমলের পূর্ব পর্যন্ত এসব দুর্গম এলাকায় কেবল পাহাড়ি উপজাতিরাই বসবাস করতো ।

উল্লেখ্য, ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস)’র সাথে এক চুক্তি স্বাক্ষর করে । চুক্তি স্বাক্ষরের পর থেকে জেএসএস নেতা সন্তু লারমাকে বারবার জোর দিয়ে বলতে শোনা গেছে যে, পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত বাঙালিদের সরিয়ে নিয়ে সমতলে পুনর্বাসন করার ব্যাপারে আওয়ামী লীগ সরকারের সাথে তাদের এক ‘অলিখিত চুক্তি’ আছে ।

সে চুক্তি অনুযায়ী বাঙালিদের উচ্ছেদের ব্যাপারে জেএসএস-এর পক্ষ থেকে নানা সময় সরকারকে চাপ দেওয়া হয়েছে । এমনকি ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের পক্ষ থেকেও সরকারকে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল যে, পার্বত্য চট্টগ্রামকে বাঙালি মুক্ত করতে আর্থিক বা অন্য যত প্রকার সহায়তা লাগে তা তারা দিতে প্রস্তুত । শুধু তাই নয় ফেনী, নোয়াখালীসহ বিভিন্ন উপকূলীয় জেলার চরাঞ্চলে (ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে যেসব এলাকা ১০ থেকে ১৫ ফুট পর্যন্ত পানির নিচে তলিয়ে যায়) পার্বত্য বাঙালিদের পুনর্বাসনের জন্যও তাদের পক্ষ থেকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল! যদিও জনরোষের ভয়ে আওয়ামী লীগ বা আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার এ বিষয়টি কখনো স্বীকার করেনি। তাই তারা পার্বত্য চট্টগ্রাম থেকে বাঙালিদের উচ্ছেদের ব্যাপারে কোন পদক্ষেপও এতোদিন গ্রহণ করেনি ।

আওয়ামী লীগ সরকার এটা স্বীকার না করলেও জেএসএস তার অবস্থানে শুরু থেকেই অনড় রয়েছে এবং ক্রমাগত তারা এ ব্যাপারে সরকারকে চাপ দিয়ে এসেছে । শুধু তাই নয়, সরাসরি না হলেও পরোক্ষভাবে যাতে বাঙালিদের উচ্ছেদ করা যায় তার যাবতীয় আয়োজনও কৌশলে সরকারের কাছ থেকে আদায় করে নিচ্ছে । ভূমি কমিশনের আইন সংশোধন তারই একটি অংশ বলে মনে করা হয় ।

গত ২৭ মে সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভায় পার্বত্য ভূমি কমিশন আইনের সংশোধনী অনুমোদন সম্পর্কে বৈঠক শেষে মন্ত্রী পরিষদ সচিব এম মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া’র বরাত দিয়ে পরের দিন বিভিন্ন পত্রিকায় যে সংবাদ ছাপা হয়েছে তার উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে, “পার্বত্য চট্টগ্রামে অবৈধ দখলদারদের নিয়ন্ত্রণে থাকা ভূমি শান্তিচুক্তির আলোকে শরণার্থীদের ‘পুনর্বাসনে’ ব্যবহৃত হবে । এ ব্যাপারে মন্ত্রিসভায় নীতিগতভাবে পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিরসন কমিশন (সংশোধনী) আইন-২০১৩-এর খসড়া অনুমোদন করা হয়েছে। কমিশনকে আরও সক্রিয় এবং কার্যকর করার লক্ষ্যে এ আইনের খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে ।”

এখানে ‘পূনর্বাসন’ শব্দের মাধ্যমে যে বাঙালীদের উচ্ছেদের কথা বলা হয়েছে তা একেবারেই পরিষ্কার ।

আসলে ভূমিবিরোধ নিষ্পত্তি কমিশনের উদ্দেশ্য সরকারে নিকট যাই থাকুক উপজাতীয় নেতৃবৃন্দের কাছে এর উদ্দেশ্য পার্বত্যাঞ্চলে বসবাসরত বাঙালিদের ভূমিহীন করা। কেননা পার্বত্য বাঙালিদের ভূমিহীন করতে পারলে সংবিধান পরিপন্থীভাবে (পার্বত্য জেলা পষিদ আইন বলে) তাদের ভোটাধিকার হরণ করা যাবে। আর সেটা সম্ভব হলে বাঙালিরা পার্বত্যাঞ্চলে ভূমির অধিকার, ভোটাধিকার হারিয়ে এক সময় হতাশ হতে বাধ্য হবে। আর মৌলিক অধিকার বঞ্চিত এসব মানুষ হয়তো পার্বত্যাঞ্চল ছেড়ে যেতে শুরু করবে। ক্রমান্বয়ে বাঙালির সংখ্যা কমতে থাকলে তারা পার্বত্যাঞ্চলে জাতিসংঘের উপস্থিতিতে পূর্বতিমূরের মত স্বাধীনতার দাবিতে গণভোটের আয়োজন করবে। সে ভোটের ফলাফল কোন দিকে যাবে তা-তো আগে থেকেই নির্ধারণ করা থাকছে। অতএব পরিণতিটা সহজেই অনুমেয়।

সরকারের কর্তাব্যক্তিরা যত গালভরা যুক্তিই দেখাক না কেন, ভূমিকমিশন আইন সংশোধন, আদিবাসী স্বীকৃতি আদায়ের চেষ্টা, জেলা পরিষদের মাধ্যমে পুলিশের উপর নিয়ন্ত্রণ গ্রহণের প্রচেষ্টাসহ পার্বত্যাঞ্চলের উপজাতীয় নেতৃবৃন্দ প্রতিটি পদক্ষেপই নিচ্ছে সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই। ভূমিকমিশন আইন ২০০১-এর সংশোধনীর প্রতিটি প্রস্তাবই তাদের সেই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের ক্ষেত্র প্রস্তুতের জন্যই আনা হয়েছে। এখন সরকার যদি এসব বুঝতে অপারগ হয় তাহলে এর দায় শুধু তাদের ওপরই বর্তাবে তা নয়, বরং এদেশের প্রতিটি সচেতন নাগরিককেই ভবিষ্যতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে। অতএব সময় থাকতেই পার্বত্য চট্টগ্রাম সম্পর্কে যেকোন সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে ভাবতে হবে সরকারকে, ভাবতে হবে সচেতন দেশবাসীকেও।

কিন্তু প্রশ্ন উঠতে পারে যে শেষ সময়ে এসে সরকার কেন এসব বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিতে গেল? এ প্রশ্নের উত্তরে বলা যায়, শেষ সময়ে এসে দেশের ভেতরে এবং বাইরে সরকারের অবস্থান নাজুক হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় তারা সন্তু লারমার চাহিদা মিটিয়ে দাতাদের মন জয় এবং সামনের নির্বাচনে পাহাড়িদের সমর্থন আদায়ের কৌশল নিয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো দাতাদের মন জয় করতে দেশের সার্বভৌমত্ব এবং অখণ্ডতার প্রশ্নে কোনভাবেই আপস করা চলবে না।

তাই দেশবাসীকে এখনি দুর্বার প্রতিবাদ জানানো উচিত সরকারের বিরুদ্ধে যাতে এই ভূমি কমিশন আইন সংশোধন প্রস্তাব সংসদে পাশ না করা হয় । মনে রাখতে হবে পার্বত্য অঞ্চল নিয়ে বিরোধ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ- বিএনপি বলতে কোন কথা নেই, দেশের সকল মানুষকে এই বিষয়ে কঠিন প্রতিবাদ জানানো এখন সময়ের দাবি ।

(কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ পার্বত্য চট্টগ্রাম বাঙ্গালী অধিকার আন্দোলন C.H.T Bengali Rights Movement)

বিষয়: বিবিধ

১৬৫২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File