লাল টুকটুকে শাড়ী........ একটি ছোট গল্প!!!!!
লিখেছেন লিখেছেন অমি হাসান ০১ জুলাই, ২০১৩, ০৪:১৭:৪৮ রাত
কলেজ থেকে আসার পর কেন যেন খুব অস্থির অস্থির লাগছে। আজ স্বপ্নের জন্মদিন। বাবা বলেছে এবারের জন্মদিনে এমন একটা উপহার দিবে যার মূল্য অনেক বেশি। তাই স্বপ্নের তর সইছেনা। কলেজ থেকে এসে দেখে বাবা বাসায় নেই, তাই একটু পর পর মাকে জিজ্ঞাসা করে বাবা কোথায় গেছে? আসছে না কেন? মা বিরক্ত হয়ে একটু আগে ধমক দিয়ে রান্না ঘরে চলে গেল। মায়ের এমন আচরনে স্বপ্নের মনটা ভেঙ্গে গেছে। মন খারাপ করে স্বপ্ন নিজের রুমে এসে চুপচাপ শুয়ে শুয়ে কান্না করছে, সারাদিন ক্লাস করে ক্লান্ত স্বপ্ন কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে বুঝতেই পারেনি। ঘুম থেকে উঠে দেখে সন্ধ্যা হয়ে গেছে, স্বপ্ন অবাক হলো এই ভেবে যে বাবা, মা, কেউ ওকে ডাকেনি। কিন্তু কখনও এমন হয়েছে ওর জীবনে মনে করতে পারছে না। স্বপ্ন তাড়াতাড়ি উঠে লাইট জ্বালালো, পড়ার টেবিলে চোখ পড়তেই দেখলো লাল কাগজে মোড়ানো একটা কিছু। টেবিলে থেকে প্যাকটা নিয়ে খুলতে গিয়েও বাবার উপর অভিমান করে রেখে দিল। হঠাৎ করে সেই অস্থিরতা আবার ভর করলো। তাই আর দেরী না করে একটানে প্যাকেটটা ছিড়ে ফেলল। বেরিয়ে এলো একটি ডাইরী ও বাচ্চা মেয়েদের অনেক অনেক পুরনো ভাজ না খোলা একটি লাল টুকটুকে শাড়ী। কৌতুহলী হয়ে স্বপ্ন ডাইরীটা খুলে পড়তে শুরু করলো।
স্বপ্ন শব্দটা গঠিত মাত্র চারটি অক্ষরের সমেষ্টিতে, কিন্তু এর ব্যাপকতা এতই বেশি ক্ষুদ্র জীবনে লিখে শেষ করা সম্ভব নয়। কথা গুলো নিজ ডাইরীতে কেন লিখছে ফাহমিদ নিজেও জানেনা। হয়তো প্রিয় ছোট বোনটির নাম স্বপ্ন বলেই মনের অজান্তেই লিখছে । ছোট বোনটির দিকে চোখ পড়তেই কেন যেন আজ হঠাৎ করে বাবার কথা খুব মনে পড়ছে ফাহমিদের, আচ্ছা বাবা কেন ছোট বোনের এই নামটি রেখেছে? মনে মনে ঠিক করলো মায়ের কাছ থেকে জানতে হবে। গত জন্মদিনে ছোট চাচু ফাহমিদকে এই ডাইরীটা দিয়ে বলেছে, যখন খুব একা লাগবে ডাইরীতে মনের কথা গুলো লিখবে। তাহলে দেখবে একাকীত্বটা ঘুচে যাবে। আজও প্রথম ফাহমিদ ডাইরীতে লিখছে, স্বপ্ন এখন ঘুমাচ্ছে ফাহমিদের বিছানায়। কাল স্বপ্নের জন্মদিন। এইতো সেদিন স্বপ্নকে হাত ধরে ধরে হাঁটতে শিখিয়েছে ফাহমিদ, আর কাল স্বপ্নের ৫ পূর্ন হবে। স্বপ্ন ফাহমিদের চাইতে আট বছরের ছোট তাতে কি, স্বপ্ন যখন দুই হাত কমরে রেখে ফাহমিদকে ধমক দেয় তখন মনে হয় স্বপ্ন ফাহমিদের দাদী। ফাহমিদ ভাবছে কালতো স্বপ্নের জন্মদিন ওকে কি উপহার দেয়া যায়? আচ্ছা এক কাজ করলে কেমন হয়, স্বপ্নকে উদ্দেশ্য করে একটা চিঠি লিখলে কেমন হয়?
প্রিয় স্বপ্ন।
জন্মদিনের অগ্রিম শুভেচ্ছা, তুই এখন ঘুমিয়ে আছিস। তুই কি জানিস? তুই যখন ঘুমিয়ে থাকিস আমি লুকিয়ে লুকিয়ে তোকে দেখি। তুই যখন ঘুমিয়ে থাকিস তোকে দেখে মনেই হয় না তুই অনেক অনেক দুষ্ট। আল্লাহ তোকে দুষ্ট বলে ফেলেছি, লক্ষী বোন তুই রাগ করিস না। কাল তোর জন্য আমাদের জাম গাছে যে পাখির বাসাটা আছে সেখানে দুইটা পাখির বাচ্চার কথা তোকে বলেছি সেগুলো এনে দিব। মোন তুই যখন ঘুমিয়ে থাকিস মনে হয় পুরো বাড়ি ঘুমিয়ে গেছে। তুই যখন আমাকে দাদা ভাই বলে ডাকিস, আমার না খুব ভাল লাগে। আচ্ছা তোকে যখন আমি পাকনি বুড়ি বলি তোর তখন খুব রাগ হয়? এই যে কানে ধরেছি আর কখনো তোকে পাকনি বুড়ি বলবো না। কত কথা বলে ফেললাম তোকে এখনো আসল কথাটাই বলা হয়নি। বাব যে গত জন্মদিনে আমাকে ক্যামেরাটা কিনে দিছে, সেটা আজ আমার স্কুলের বন্ধু বেলালের কাছে বিক্রি করে তোর জন্য একটা লাল টুকটুকে শাড়ী কিনেছি। তোরোক মনে আছে? এইতো কয়দিন আগে আলাল ভাইয়ের বউ বিয়ের দিন যখন লাল টুকটুকে শাড়ী পরে বৌ সেজেছে, তুই বলেছিলি তোকেও একটা লাল টুকটুকে শাড়ী কিনে দিতে। শোন চিঠির শেষে সবাই ইতি লেখে, কিন্তু আমি তা করবো না। কেন করবো না জানিস? ইতি মানে লেখা শেষ, কিন্তু তোকে নিয়েতো আমার লেখা মাত্র শুরু।
শোন স্বপ্ন আমি ঠিক করেছি সবাই ডাইরীতে লেখার শুরুতে তারিখ দেয়, আর আমি দিব পেইজের নিচে। এটা কেন করছি জানিস? তুই সব সময় বলিস তোর দাদাভাই সবার চেয়ে আলাদা। আর সে জন্যই আমার ডাইরীতেও তোর কথা মনে করেই নিচে তারিখ দিলাম।
২৩/০৩/১৯৭১
উৎসর্গঃ প্রিয় ছোট বোন Jannatul Ferdous Punna
বিষয়: বিবিধ
১৯৮৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন