নৌকায় ভোট চাইলেন প্রধানমন্ত্রী : ‘মুই ফির আসিম’

লিখেছেন লিখেছেন ইমরানখান ০১ আগস্ট, ২০১৩, ১২:২৭:৩২ দুপুর



শ্বশুরবাড়ি রংপুর সফরে গিয়ে নৌকার পক্ষে ভোট চাইলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রংপুরবাসীকে উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে আবারও জয়যুক্ত করবেন। কারণ, একমাত্র আওয়ামী লীগই উন্নয়ন করে। বাকি যারা আছে, তারা লুটে খায়। নির্বাচনে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ সব অসমাপ্ত কাজ করবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

গতকাল বুধবার রংপুরের পীরগঞ্জ সরকারি হাইস্কুল মাঠে এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে পরিচয় করিয়ে দিয়ে বলেন, আপনাদের সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয় এখানে আছে। তার জন্য দোয়া করবেন। এ সময় জয়কে আগামী জাতীয় নির্বাচনে পীরগঞ্জ থেকে প্রার্থী করতে স্থানীয় নেতারা দাবি জানালে জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সময় হলে সব জানতে পারবেন। আওয়ামী লীগ সব সময় রংপুরবাসীর পাশে আছে, জয়ও থাকবে।

বিরোধী দলের সমালোচনা করে তিনি বলেন, বিএনপি নেত্রী ও তার পরিবার শত শত কোটি টাকা লুটপাট করে নিয়েছে। তারা লুটপাট করার জন্য আছে। তারা জনগণকে কিছু দিতে পারে না। কেবল নিতে পারে। বিরোধীদলীয় নেতার ছেলেরা বিদেশে কোটি কোটি টাকা পাচার করেছে। আমরা তাদের ধরেছি। তাদের টাকা ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। বিচার শুরু হয়েছে।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন হয়। স্বাস্থ্যসেবা পায়, শিক্ষার হার বাড়ে। কৃষক উত্পাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য পায়, সার পায়। আগে উত্তরাঞ্চলে মঙ্গা ছিল, লঙ্গরখানা ছিল। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সেই মঙ্গা দূর করেছে। এখন লঙ্গরখানা নেই। দেশে মঙ্গা নেই। আর বিএনপি ক্ষমতায় এলে হত্যা, লুট, ষড়যন্ত্র ও জঙ্গিবাদের উত্থান হয়। মানুষ না খেয়ে মরে। সার আনতে গিয়ে কৃষক গুলি খেয়ে মরে।

হেফাজতে ইসলামের পেছনে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী রয়েছে দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, যারা ইসলামকে হেফাজতের নামে মসজিদে আগুন দেয়, কোরআন শরীফ পোড়ায়, তারা কোন ইসলাম কায়েম করতে চায়? কোরআন পুড়িয়ে এখন তারা আবার আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। তারা মসজিদে মসজিদে গিয়ে বলছে, দেশের সব ইমাম-মুয়াজ্জিনকে হত্যা করা হয়েছে। মসজিদে দাঁড়িয়ে যারা মিথ্যা কথা বলে তারা মুসলমান হতে পারে না।

তিনি বলেন, আগে প্রচারণা চালানো হয়েছিল আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে মসজিদে আজান হবে না, মানুষ মরলে জানাজা হবে না। কিন্তু এখন সব হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অপপ্রচারকারীদের প্রতিহত করারও আহ্বান জানান।

আগামীবার ক্ষমতায় এসে অসমাপ্ত সব কাজ শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি বলেন, এর মধ্য দিয়ে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করা হবে।

জনসভায় প্রধানমন্ত্রীর যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় বলেন, অনেকদিন পর পীরগঞ্জে এসেছি। আমার আনেক ভালো লাগছে। বিদেশে থাকার কারণে দেশে আসতে পারি না। আগেও আমি এসেছিলাম। পীরগঞ্জবাসীকে কথা দিয়েছিলাম আসব। আমি এখানকার মানুষের কথা ভুলিনি। আমি এসেছি। আমি ওয়াদা করেছিলাম রংপুর ডিভিশন হবে। ডিভিশন করেছি। বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে, পীরগঞ্জের উন্নয়ন হয়েছে।

নৌকার পক্ষে ভোট চেয়ে তিনি বলেন, আপনারা জানেন সামনে নির্বাচন আছে। আপনাদের জন্য উন্নয়ন আওয়ামী লীগ করেছে। বিএনপি সরকারের আমলে উন্নয়ন হয়নি, উত্তরবঙ্গের উন্নয়ন হয়নি। আওয়ামী লীগ এসে উন্নয়ন করেছে। আগে এ এলাকায় এতো উন্নয়ন হয়নি। প্রত্যেক বছর খাবারের অভাবে মানুষ মারা যেত। বিএনপি ক্ষমতায় এলে মানুষ মারা যায়। আমার ইচ্ছা ছিল মানুষ না খেয়ে মরবে না। শুধু উত্তরবঙ্গ নয়, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে দেশ থেকে মঙ্গা তাড়িয়ে দিয়েছে। সামনের নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দেবেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে ভোট দেবেন। মহাজোটকে ভোট দিলে উন্নয়নের কাজ চলতে থাকে। নৌকা মার্কায় ভোট দিলে আপনাদের এলাকায় মঙ্গা হবে না, ধানের শীষে ভোট দিলে মঙ্গা আসবে, বিদ্যুত্ আসবে না। শেষে জয় রংপুরের আঞ্চলিক ভাষায় বলেন, আপনারা ভালো থাকেন, মুই ফির আসিম (আমি আবার আসব)।

পীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতাহারুল হক বাবলুর সভাপতিত্বে জনসভায় আরও বক্তব্য রাখেন পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, সংসদ সদস্য আবদুল মান্নান, অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়া, আবুল কালাম আজাদ, টিপু মুন্সি প্রমুখ।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সফরসঙ্গীদের নিয়ে হেলিকপ্টারযোগে বেলা সাড়ে ১২টায় পীরগঞ্জে পৌঁছান। পরে প্রধানমন্ত্রী ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, পুত্রবধূ ক্রিস্টিনা ওভারমায়ারসহ অন্যদের নিয়ে স্বামী মরহুম ড. এমএ ওয়াজেদ মিয়ার কবর জিয়ারত করেন। বেলা ১২টা ৪০ থেকে ২টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন তিনি। বেলা আড়াইটার দিকে জনসভাস্থলের পাশেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ডিজিটাল পদ্ধতিতে ড. এমএ ওয়াজেদ মিয়া সেতু, পীরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ ডাকবাংলো, রংপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিস ও অফিসার্স ডরমেটরি, সার্কিট হাউস ভবন, বিভাগীয় কমিশনার কমপ্লেক্স, পীরগঞ্জ উপজেলা কমপ্লেক্স, মেরিন অ্যাকাডেমি, টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট ও পীরগঞ্জ পৌরসভার কার্যক্রম উদ্বোধন করেন। বেলা আড়াইটার দিকে জনসভা মঞ্চে আসেন তিনি।

বিষয়: বিবিধ

১০৮৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File