New Yea.. নববর্ষ ও কিছু কথা
লিখেছেন লিখেছেন ডব্লিওজামান ০১ জানুয়ারি, ২০১৯, ০২:৫২:৫৬ দুপুর
New Year... নববর্ষ ও কিছু কথা
---------------------- ☀ -------------
নতুন বর্ষ এসেছে; জীবনে কোন পরিবর্তনই আসেনি, শুধু সন লিখার ক্ষেত্রে আট এর স্থলে নয় লিখা ব্যতীত। অথচ social network (fb, sms, email ইত্যাদি) আর মৌখিক শুভেচ্ছাবার্তাতে গোটা সমাজই ব্যতিব্যস্ত। মনে হয়, আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা এ কাজেই ব্যস্ত। লম্বা আলখাল্লা লাগানো মাওলানাও বাদ যাননি। ইসলামের কথা বলেন, নিজে দীনদার হিসেবে চলেন, এমন ব্যক্তিও আছেন এই কাতারে। ইসলামের শিক্ষার্থীগণও আছেন, অনেকাংশে বেশিই আছেন। অনেকে আবার বিগত বছরের কার্যাবলীর ফিরিস্তিও দিচ্ছেন সাথে সাথে, পাশাপাশি নতুন বছরে ভালো কিছুর আশা। আবার অনেকে নববর্ষ উদযাপনেও ব্যস্ত; নাচ, গান, হৈ-হল্লা আর মত্ততায়। আপাতদৃষ্টিতে এসব খুবই ভালো ও সুন্দর শোনায়। এগুলো করলে আধুনিক, অপরের কল্যাণকামী আর নিদেনপক্ষে প্রগতিশীল বুঝা যায়। কিন্তু মুসলিম ভাইগণ! কখনো কি একটু চিন্তা করেছেন, এসব কি হচ্ছে, কি করছেন আপনি নিজে?
একথায় দ্বিমতের অবকাশ নেই যে, নববর্ষ পালনের উৎসব অমুসলিম সভ্যতা ও সংস্কৃতি থেকেই নেওয়া। মুসলিমদের ইতিহাসে নববর্ষের সূচনা হয়েছে কিংবা পালিত হয়েছে এমন কিছুই পাওয়া যায়না। এমন নয় যে, নতুন বর্ষ আসেনি, এবারই বা এই নতুন সভ্যতাতেই নববর্ষ আসছে। কোন একটি হাদীস কিংবা ইতিহাসে কি পাওয়া যায়, সাহাবা আজমাঈন নববর্ষ উপলক্ষে নিজেদের মধ্যে কোন শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন, কোন উৎসব পালন করেছেন? অথচ সাহাবা আজমাঈনের (রা.) মত কল্যাণকামী বন্ধু বা ভাই আজ পর্যন্ত আসেনি, আসবেওনা।
তাঁরা (রা.) নিজেদের মধ্যে ‘সালাম’ই বলতেন। বিশ্বের মানুষ যে শান্তির জন্য হাহাকার করছে তা-ই অপরের জন্য কামনা করতেন। এর চাইতে বড় শুভেচ্ছা বার্তা আর কি হতে পারে? মনে রাখা দরকার, এর জন্য কোন নির্দিষ্ট দিনের অপেক্ষা তাঁরা (রা.) করতেন না। দরজার আড়াল হলেই আবারো এই কল্যাণ কামনা করতেন। আর আমরা? শুভেচ্ছা দিই- শুভ নববর্ষ। এর কতটুকু আন্তরিক নিজেদেরই প্রশ্ন করি?
ওহ, আরো একটা কথা, এই শুভেচ্ছা বার্তার কারণে আমরা সালামটাই ভুলে যাই। কোন সুন্নাতের বিপরীতে যা আসে তা কোন শরী‘আতে বৈধ আল্লাহই জানেন?
অনেকে বলবেন, নববর্ষে অনৈসলামী কিছু না করলেই তো হল। এমন নির্দোষ উদযাপনে বাঁধা কোথায়? তাদের চিন্তা-চেতনা সুন্দর, মানবিক তো বটেই। কিন্তু তারা এটা ভাবেন না যে, এই সংস্কৃতি কি আমাদের কোন ভালো করতে পেরেছে? নাকি শুধু পোশাকি আচরণেই আমাদের উৎসাহিত করছে? আমাদের পুর্বপুরুষগণ কি এসব না করে খুব অকল্যাণে ছিলেন? দ্বিতীয়ত, একটা দাবী, নববর্ষের এমন একটা উৎসব দেখান যেখানে অনৈসলামী কার্যকলাপ নেই। সত্যি হলো, এসবে ইসলামী কিছুই থাকে না, পুরোটাই অনৈসলামী। অনৈসলামী সব অনুষঙ্গ বাদ দিয়ে যদি কোন অনুষ্ঠান করেন সেখানে লোকজন যাবে তো? নাকি কুকুর আর কাক নিয়েই অনুষ্ঠান শেষ করতে হবে?
তৃতীয়ত, সবকিছুকে কি ইসলামী বানানো যায়, নাকি বানানো উচিত। অর্থনীতি, সমাজনীতির ন্যায় দৈনন্দিন অপরিহার্য বিষয়কে ইসলামীকরণ করা যায়, করা উচিতও। কিন্তু যা অন্য ধর্মের বা অন্য সংস্কৃতির তা ইসলামীকরণ কেন? পূজা-অর্চনাকে ইসলামীকরণ করা কি ভালো শোনায়? (অন্য ধর্মাবলম্বীদের মনে আঘাত দেওয়া উদ্দেশ্য নয়)। এটা কি ইসলামের পুর্ণাঙ্গতার প্রমাণ রাখে? স্বভাবতই প্রশ্ন উঠে, ইসলামের নিজস্ব কোন সংস্কৃতি কি নেই?
চতুর্থত, নববর্ষ মানে নতুন এক বছরের সূচনা। ভালো, আমাদের জন্য বৎসর কোনটা। খ্রিস্টীয়, বাংলা নাকি হিজরি। যদি তিনটাই মানি, তাহলে আমাদের বৎসর কত দিনে? নাকি এক বৎসরে তিনবার নববর্ষ? অনেকে হয়ত বলবেন, সবগুলোই আমাদের। সত্যিই, আসলেই আমাদের; আমাদের প্রয়োজনেই এগুলো সৃষ্ট। সেক্ষেত্রে আমাদের এই শুভকামনা হচ্ছে কিছুদিনের জন্য, একবছরের নয়; কারণ কিছুদিনের মধ্যেই আরেকটা আসবে।
এখানে আরেকটা কথা, তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম, যদি একটা মানতে হয় তাহলে তিনটার কোনটা মানব? বাঙ্গালী হিসেবে বাংলা সন মানাটাই স্বাভাবিক। আর মুসলিম হিসেবে, ইবাদাতের সুবিধার্থে, হিজরি সন। তাহলে খ্রিস্টীয় সন কেন ঘটা করে পালিত হয়? পাশ্চাত্যের অনুসরণে? পহেলা বৈশাখও ইদানীং আড়ম্বরেই পালিত হয়। অথচ পহেলা মহররম কোনোদিক দিয়ে চলে যায় আমরা কেন জানিনা? এরূপ পক্ষপাত কেন, তিনটাই তো আমাদের?
আসলে সত্য হলো, বর্তমান সভ্যতার (!) একমাত্র প্রতিপক্ষ হল ইসলাম। আধুনিকতা যেখানে ধ্বংস আর সবলের সুবিধার কথা শোনায় সেখানে ইসলামই একমাত্র গোটা মানবজাতির মুক্তির কথা বলে। সুতরাং, যা-ই করো ইসলামের বিপক্ষে কর। ইসলামের নামে বা বেনামে মুসলিম স্বকীয়তা নষ্ট করার এই সব প্রচারণা ও প্ররোচনা আমাদের সমাজে আজ ব্যাপকারে প্রচলিত। ছলে-বলে-কৌশলে ইসলামের বিরোধীতার এই উদ্দেশ্য আজ আমরা মুসলিমরাই, অনেকাংশে আলেমগণও, বুঝতে পারছি না।
আমাদের, মুসলিমদের, চিন্তা করা উচিত। নববর্ষে আল্লাহর রাসূল (স.) কি করতে বলেছেন আর সাহাবাগণ কি করতেন? নতুন চাঁদ উঠলে রাসূলুল্লাহ (স.) দু‘আ করতেন। নববর্ষে কিছু করতেন বলে আমি অন্তত জানি না। তারপরও যদি কিছু করতে হয়, দু’রাকাত নামাজ পড়ুন। বিগত পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন। গরীব দুঃখীদের খাবার দিন, সাহায্য করুন। অন্যের জন্য দু‘আ করুন- হেদায়াতের, কল্যাণের আর সফলতার। অন্তর থেকে অন্যকে মাফ করে নতুন করে আল্লাহর রাসূলের অনুসরণে জীবন গঠনের শপথ নিন।
তবে এক্ষেত্রেও কোন ইবাদতই এ দিনের জন্য নির্দিষ্ট করা যাবে না, এটাও শরী‘আত সমর্থিত নয়।
............ আমার দোস্ত Mustafa Monjur ২০১৭ সালে লিখেছিল .........
বিষয়: বিবিধ
৮১৫ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
এক বাকপ্রবাস (পোস্টে) আর আমি (কমেন্টে) চালিয়ে যাচ্ছি। ক্রিসমাসের ছুটির পর দ্যা স্লেভও ব্যস্ত হয়ে যাবে । তখন আর লোকই খুঁজে পাবেন না পোস্ট করে কমেন্ট পাবার।
মন্তব্য করতে লগইন করুন