একটি রোহিঙ্গা পরিবারের আত্মকাহিনী । ---------------------- ----------------------
লিখেছেন লিখেছেন ডব্লিওজামান ২৮ আগস্ট, ২০১৭, ০৭:২৯:৪৬ সন্ধ্যা
মা, আমরা কোথায় যাচ্ছি?
এইতো মা, ওপারে(বাংলাদেশে)!
ওরা কি মারবে না মা?
না মা, ওরা তোমার ভাই!
আমাদের শরীরে আগুন দেবে না তো?
– না রে মা! ওরা তোর বাবার মতো।
তোকে আদর করবে।
যখন খেলতে ইচ্ছে হবে তোর,
ঘুরতে নিয়ে যাবে ঐ দূর মাঠে।
.
.
গতরাত থেকে এত ঝড়-ঝাপটা
গিয়েছে যে কিছুই মনে ছিল না বাচ্চাটির।
হঠাৎ তার বাবার কথা মনে হল ।
.
– মাগো! বাবা কোথায় আমার?
দু'দিন ধরে দেখি না কেন বাবাকে?
.
অশ্রু জমে ওঠে মায়ের চোখে।
মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।
কপালে এঁকে দেয় আলতো চুমু –
"তোর বাবা নতুন বাড়ি ঠিক করতে
গেছে মা।"
.
মা জানে, মেয়ের বাবা আর ফিরবে না কখনো।
দু'দিন আগেই চলে গেছে না ফেরার দেশে।
তাঁর শেষ কথা ছিল - 'বাঁচতে চাইলে আমার
মেয়েকে নিয়ে পালাও।'
.
৭টি নৌকা এগিয়ে চলেছে সন্তর্পণে।
নাফ নদীর বুক চিরে।
ঐ তো বাংলাদেশ!
.
হঠাৎ কিসের যেন শোরগোল।
বিজিবি ঘিরে ধরেছে নৌকা।
ঢুকতে দেয়া যাবে না এদের।
"পুশব্যাক" করাতে হবে।
উপরের নির্দেশ।
.
অভুক্ত, অসহায় নৌকার যাত্রীরা উৎকন্ঠিত।
ফিরিয়ে দেবে না তো?
ইতোমধ্যে নৌকার বুকে গুঞ্জন
শোরগোলের রূপ নিয়েছে।
"আমাদের বাঁচতে দিন।"
"আপনারা তাড়িয়ে দিলে আল্লাহর দুনিয়ায়
আমাদের কোন স্থান থাকবে না
হয়তো।"
.
এক বৃদ্ধাকে হাউমাউ করে কাঁদতে দেখা গেল।
এগিয়ে এলেন সেই মা।
শুকিয়ে যাওয়া চোখে টলমল করছে অশ্রু –
"আমরা ফিরে যাচ্ছি। কিন্তু দয়া করা আমার
বাচ্চাটিকে নিয়ে যান।
ওকে বাঁচতে দিন।"
.
বিনিময়ে নির্মম, কঠোর চাহনি ফিরে পেলেন সেই মা।
কোলে তার সেঁটে যাওয়া ভীরু সন্তান।
নৌকা চললো ফের আরাকানের দিকে।
.
.
"মাগো! আমরা কোথায় যাচ্ছি?"
মা নীরব।
"ওরা কি আমার ভাই নয় ?
তুমি না বললে, ওরা আমার বাবার মতো!"
.
মায়ের চোখে নিথর দৃষ্টি।
চোয়াল শক্ত করে বললেন, "তোর ভাইয়েরা
মরে গেছে।
পৃথিবীর কোথাও তোর ভাই নেই।"
"বাবার নতুন বাড়ির কি হবে মা?"
"আমরা সেই বাড়িতেই যাচ্ছি মা।
তোর বাবার কাছে!"
.
.
টপটপ করে ঝরে পড়ছে অশ্রুমালা।
মায়ের এ অশ্রু শুকাবার নয় ।
------ ২৭.০৮.২০১৭
বিষয়: বিবিধ
৯৬৪ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
বাংলাদেশের এখন প্রতিদান দেবার সময় এসেছে আরেকজনের জন্য।
মন্তব্য করতে লগইন করুন