পিস টিভি ও আমরা !
লিখেছেন লিখেছেন ডব্লিওজামান ১১ জুলাই, ২০১৬, ০৪:৫৫:২১ রাত
------ -------- -------
আজ ভারতের ন্যায় আমাদের বাংলাদেশেও, শতকরা প্রায় ৯০ ভাগ মুসলিম (নামমাত্র) এর দেশে, পিস টিভির সম্প্রচার বন্ধ করা হলো। এতে অনেকেই হতবাক, হতাশ ও মর্মাহত। কিন্তু আমি নই। নির্বাক নই, হতভম্ভ নই, নই আশ্চার্যান্বিত। কারণ, আমাদের এই দেশে এরূপ না হলেই বরং বিস্মিত হতাম। ইসলাম যেখানে পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র সব স্থান থেকেই নির্বাসিত; সেখানে মিডিয়াতে এতদিন কিভাবে ছিল সেটাই বিস্ময়ের ব্যাপার !!!
তাছাড়া আরো একটা বিষয়ও আজকের বাস্তবতাকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়। আমাদের আলেমদের (!) মধ্যেই যেখানে যাকির নায়েককে নিয়ে মতদ্বৈততা সেখানে প্রশাসন আর ক্ষমতাবান কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে বিস্মিত হওয়ার কিছুই নেই। বরং এই বাস্তবতা না বুঝে যারা হতবাক হচ্ছেন তাঁদের নিয়েই আমি বেশি চিন্তিত। তাঁরা কি আশা করেছিলেন যে, ইসলাম এমনিই প্রতিষ্ঠিত হবে অথচ আল্লাহ তা‘আলা কোন পরীক্ষাই নেবেন না। তাঁদের ইলম ও ঈমানের এই দুরবস্থাই আমাকে বেশি ভাবায়।
মানলাম, যাকির নায়েক সালাফী মতাদর্শে প্রভাবান্বিত। কিন্তু তিনি সন্ত্রাসবাদ, ইয়াহূদীবাদ - এর দালাল এরূপ ধারণা ওলামায়ে কেরামদের সাথে একেবারেই যায় না। কিছুদিন আগেও একবার এদেশে পিস টিভি বন্ধের জন্য কতিপয় ওলামার আন্দোলন ও প্রয়াস দেখেছিলাম। (এদের ওলামা বলছি বাধ্য হয়ে; যেহেতু সমাজে তারা এভাবেই পরিচিত এজন্য। আমার নিকট এরা জ্ঞানপাপী বৈ কিছুই নয়। কারণ হাদিসের বর্ণনা মতে সর্ব নিকৃষ্ট সৃষ্টি হলো স্বার্থান্ধ ওলামা।)। তাদের আন্দোলনের কারণ আমার নিকট মোটা দাগে দুইটি – ১. পার্থিব স্বার্থ লাভ । ২. ইলমের স্বল্পতা। এই দ্বিতীয় কারণটাই বেশি মারাত্মক। কেননা এরা নিজেরাও জানেন না যে তারা এই সমস্যায় আক্রান্ত। এছাড়া শুধু দীনের জ্ঞানই নয় তারা দুনিয়ার হাল হাকিকত আর মুসলিমদের বর্তমান অবস্থা, ইসলাম ও মুসলিমদের প্রতি অমুসলিমদের চ্যালেঞ্জ কোন কিছু সম্বন্ধেই অবগত নন। ফলে সার্বিক ক্ষেত্রে দীনের বর্তমান চাহিদা বাদ দিয়ে, তারা শুধু খণ্ড চিত্র নিয়েই লম্ফঝম্ফ করছেন। অবশ্য তাদের এই সমস্যা মেটানোর ক্ষেত্রে আমি অন্তত আশাবাদী নই। কারণ রোগী যদি নিজেকে রোগী মনে না করে, তাহলে তার রোগ সারাবে কে?
ফিকহী মাস’আলায় যাকির নায়েকের সাথে অনেকেরই মতবিরোধ থাকতে পারে। এই মতবিরোধ ইসলামের সকল যুগেই ছিল। তাই বলে ইসলাম ও মুসলিমের কথা বলা একজনকে দাবিয়ে রাখার ক্ষেত্রে মুসলিমদের যে উৎসাহ আর ভূমিকা আজ দেখলাম, এটা কোন মুসলমানের কাজ হতে পারে বলে মনে হয় না। সারা বিশ্বের মুসলিমগণ আজ যেখানে একজন বলিষ্ঠ কন্ঠস্বরের প্রতীক্ষায় সেখানে ইসলামের কথা বলার সুযোগ বন্ধ করে দিয়ে আমরা, মুসলমানরা কি চাচ্ছি আল্লাহই ভালো জানেন।
তবে যাই হোক, পিস টিভি বন্ধের দু’একটা প্রভাব বলতে চাই। সমাজতাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায়, দমন পীড়নের মাধ্যমে সকল যুগেই সাময়িক সুবিধা লাভ করা যায়। আদর্শের মৃত্যু কখনোই হয় না। আর তা যদি ইসলামের মত দীনের ক্ষেত্রে হয় তাহলে তো কথাই নেই। বিশ্বের ইতিহাসই এর সাক্ষী। আর ইসলামের দিক থেকে বলতে গেলে, প্রকৃত মুসলমানের জন্য এরূপ বাঁধা কোন বাধাই নয়। এতে ঈমান বা আমলের কমতি নয় বৃদ্ধিই হয়। এসব ঘটনার শিক্ষা মুসলিমদের ভালোই আনে। তাছাড়া মুসলিম নামধারী কিছু লোকের পরিচয় ও অবস্থাও এতে পরিস্ফুট হল। ঈমান আর ইসলামের স্বার্থেই এসব লোকের পরিচয় প্রকাশ হওয়া জরুরী ছিল। আল্লাহ তা‘আলা তা-ই করে দেখালেন। এবার আমাদের অবস্থা আমাদের নিজেদেরই বিচার করা উচিত।
M M
বিষয়: বিবিধ
১২৮৯ বার পঠিত, ৮ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
সুন্দর লিখেছেন।
তথাকথিত যে আলেমদের দিকে ইংগিত করলেন, আবদুল্লাহ ইবনে উবাই আজকে বেঁচে থাকলে তাকে এ দেশে আরো বড় আলেমে দ্বীন বলেই মানুষ মনে করত।
আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই রাসুল সঃ বক্তব্য দেবার আগে মানুষকে রাসুল সঃ এর বক্তব্য মনোযোগ দিয়ে শোনার আহ্বান জানাতো। সে মদীনায় মেইন স্ট্রীম মসজিদের বাহিরে দ্বিতীয় একটি মসজিদ নির্মান করেছিল - শুধুমাত্র বিভাজন ও মুসলিমদের কনফিউজড করার জন্য তথা বিভাজন সৃষ্টির নিমিত্তে।
আজকের বাংলাদেশের ঐ শ্রেনীর আলেমদের কপালে এখনো ঐ স্ট্যান্ডার্ড এর কাজ করার সুযোগ হয়নি।
আর জাকির নায়েক এর ব্যাপারে ব্যাক্তিগতভাবে আমি মনে করি - আজকের বিশ্বে ওনার প্রয়োজন ফুরিয়েছে, ওনার যে মিশন তা ও উনি সম্পন্ন করেছেন - সো ওনার ফারদার ফিউরিফিকেশান ও ইলিভেশান এর জন্য - সময় হয়েছে ওনার জেল খাটার (যেমন ইতোপূর্বে অনেকে খেটেছেন)। আল্লাহ ওনাকে ওনার জন্য যা মংগলকর তা কবুল করুক।
উনার এবং উনার পিস টিভির অনুপস্থিতিতে সাধারণ মানুষ এখন আবারও পীর মাজারিদের খপ্পড়ে পড়ে কি না সেটাই দেখার বিষয়।
"যারা মুমিনদের পরিবর্তে অবিশ্বাসীদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করে,তারা কি ওদের কাছে সম্মান আশা করে? না,সকল সম্মানের মালিক আল্লাহ। সূরা নিসা-১৩৯ ডঃ জাকির নায়েকের সম্মান আল্লাহ বাচাবেন।
মন্তব্য করতে লগইন করুন