আমার দেখা অলৌকিক এক বিয়ে !
লিখেছেন লিখেছেন ডব্লিওজামান ২৪ জানুয়ারি, ২০১৪, ১০:২০:১৮ সকাল
ওয়াহিদুজ্জামান :
দেশের এ পরিস্থিতিতে বিয়ে নিয়ে লেখা আসে না । তারপর ও মহাফেজখানা থেকে লেখাটা প্রকাশ করলাম যেন সৃষ্টিকর্তা এমনি অলৌকিকভাবে সবুজ – শ্যামল মায়া ভরা আমাদের প্রিয় দেশের প্রতি করুণা করেন ।
সে অনেক দিন আগের কথা । যখন সামাজিক মান মর্যাদার মাপকাঠি এ যুগের মত ছিল না । ছেলে-মেয়েরা লোক চক্ষুর আড়ালেও নিজেদের মধ্যে ভাল লাগা একে অন্যকে প্রকাশ করতো না। যদি কেউ জেনে ফেলে উভয়েরই নয় ; পরিবার, বংশের, এমনকি গ্রামের মান - সম্মান ও যাবে । কিন্তু তারপর ও ভাল লাগা, ভালবাসা - বাসি ছিল । এমনি দুটি নাম রাজু ও সেতু ! তারা একে অন্যকে ভালবাসত কিন্তু কেউ কাউকে সরাসরি বলেনি । তবে মেয়েটি ভাব - ভঙ্গিতে কিছু প্রকাশ করত । আর ছেলেটি তার সবটাই হৃদয়ের গভীরে পোষণ করে রাখত । ওহ হো ; বলাই হয়নি এদের মধ্যে গ্রাম্য আত্মীয়তার সম্পর্ক ও ছিল । ছেলেটি গরীব এবং মেয়েটি ধনী পরিবারের সন্তান । তবে মেয়েটির মা -বাবা মারা যাওয়ায় ভাই-ভাবীদের অনেক আদরে বড় হয় । এক সময়ে আদুরে এ বোনকে বিয়ে দিয়ে অন্যের ঘরে তুলে দিতে হবে এ চিন্তায় ভাইগণ বিষণ্ণ হয়ে পড়ে । অভিজাত ঘরের ভাল উপযুক্ত ছেলে খোঁজ করতে থাকেন । অবশেষে সবটুকু চাহিদামত না হলে ও বেশ খানিকটা পূরণের মধ্যে পেয়ে যান । দিন ক্ষণ দেখে মহা ধুমধামে পুরো গ্রাম মাতিয়ে বিয়ের আয়োজন করা হয় । উল্লেখ্য, এ আয়োজনের প্রায় সব দিকের দায়িত্ব পালন করতে থাকে রাজু । তার এ সব পরখ করতে থাকে সেতু কিন্তু মুখে কিছু বলছে না । রাগে ক্ষোভে ফেটে যাচ্ছে তবুও সরাসরি প্রকাশ করছে না ! আর রাজু ; সেতো তার ভালবাসার গভীরতা আরও গভীরে নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সব দিক সামলে নিচ্ছে, কাউকে কিছু বলাতো দূরের কথা বুজতেও দিচ্ছে না ! অন্যদিকে সেতুকে তার খুব কাছের বন্ধুরা এ নিয়ে নানা খুনসুটি করছে …………………… ! নীরবে অসহ্য যন্ত্রণায় সে অঙ্গার হচ্ছে ! আশেপাশের কয়েক এলাকা মাতিয়ে বরযাত্রী চলে এসেছে । সে কি উৎসব ! আকাশ বাতাস মর্ত্য মাতিয়ে তুলছে সব !!! ………………… ……… ……
কিন্তু ভাইগণ ঘরে বসে কাঁদছে বোনের বিয়ে নামক বিদায়ে ! শেষে তাদের বউরা এসে নানা যুক্তি দিয়ে বলছে, তোমরা এমন করলে অভিভাবকের দায়িত্বের দিক কে দেখবে ? তারা বলে, রাজু আছে না ! তখন বউরা বলে রাজু আমাদের কে ? তারপর তারা যান বিয়ের নানা দিক দেখতে । যান বর পক্ষের লোকদের কাছে । বরের অভিভাবক তাদের চাওয়া পাওয়া বুঝিয়ে দিতে বলেন । কনে পক্ষ দাবির চেয়ে তাদের আদুরে বোনের জন্য আরও বেশী দেন কিন্তু বরের অভিভাবক এতে কিছুটা বিশেষ করে স্বর্ণালঙ্কারের ব্যাপারে সন্দেহ করলেও তা বিচারে টিকেনি । এ আচরণে ভাইগণ বলে, আমাদের একমাত্র বোনকে এ ঘরে বিয়ে দিতে পারিনা ! চরম ক্ষোভ প্রকাশ করে বিয়ে ভেঙ্গে দিয়ে তাদের বের হয়ে যেতে বলেন । এতে ছেলের পক্ষ উঠে যেতে থাকেন। তখন রাজু উভয় পক্ষকে বুঝানোর চেষ্টা করেন । ছেলের পক্ষ রাজুকে বলে, মেয়ের ভাইগণ ক্ষমা না চাইলে এ বিয়ে হবে না । রাজু ভাইদের কাছে গেলে তারা বলেন, ওদের চলে যেতে বল ! ওদের চলে যেতে বল ! …………… না হলে ………………না হলেলেলেল ……………
দুই পক্ষ থেকে রাজু ব্যর্থ হয়ে অবশেষে অস্থির হয়ে কনের কাছে গিয়ে বলে, তোমার ভাইদের বুঝাও ! তুমি ছাড়া তাদের বুঝানো সম্ভব নয় ! এ বিয়ে ভেঙ্গে গেলে মান - সম্মান সব যাবে । আর যে মেয়ের বিয়ে ভেঙ্গে যায় তাকে আর কেউ সহজে বিয়ে করতে চায় না । তখন সেতু খুশীতে আত্মহারা হয়ে বলে, কেন তুমি আছ না ! রাজু বলে, এ সব কি বলছো ! কেন তুমি আমারে ভালবাস না ! এ কথা বলে সেতু তার বুকে মাথা রেখে ………… ……… …
রাজু ও পরম আদরে জড়িয়ে ধরে ……………………………
বোনের এ অব্যক্ত ভালবাসাকে চির বন্ধনে অটুট করে পরম আনন্দে আত্মহারা গোটা পরিবার, এলাকা ………… …… … …
বিষয়: বিবিধ
১৪৪২ বার পঠিত, ১৭ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন