আমি ও ডিজিটাল চেতনার মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন লিখেছেন ডব্লিওজামান ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৩, ০৬:২১:০৩ সকাল

আমি : আব্দুল কাদের মোল্লা তো স্বাধীনতার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফার্স্ট ক্লাশ ফার্স্ট হয়ে অনার্স-মাস্টার্স শেষ করেছেন। হাজার হাজার শিক্ষার্থী-শিক্ষক, ডিজিটাল চেতনাধারী … … … এই রাজাকারকে চিনতে পারেনি কেন?

ডিজিটাল চেতনার মুক্তিযোদ্ধা : ওরা পারে নাই। কিন্তু আমরা পারছি।

আমিঃ উনি তো উদয়ন স্কুল এন্ড কলেজের প্রিন্সিপাল ছিলেন। কেউ তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করেনি ?

ডিজিটাল চেতনার মুক্তিযোদ্ধা : তাতে কি ?

আমিঃ উনি তো রাইফেলস পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল ছিলেন। কেউ তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ করেনি।

ডিজিটাল চেতনার মুক্তিযোদ্ধা : হইতে পারে।

আমিঃ উনি তো দুইবার ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। সাংবাদিকদের মধ্যে বেশিরভাগই তো বাম প্রগতিশীল এবং আওয়ামী মনোভাবসম্পন্ন। তাদের ভোট ছাড়া তো নির্বাচিত হওয়া সম্ভব ছিল না।

ডিজিটাল চেতনার মুক্তিযোদ্ধা : তাতে হইছেডা কি?

আমিঃ শেখ মুজিব আমলে দালাল আইনে অনেক লোকের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের মামলা হয়েছিলো, কিন্তু কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ২০১০ সালের ১৩ জুলাইয়ের আগে বাংলাদেশের কোনো থানায় একটা জিডিও হয়নি।

ডিজিটাল চেতনার মুক্তিযোদ্ধা : তো ?

আমিঃ ট্রাইব্যুনালে কাদের মোল্লার পক্ষের সাক্ষীর সংখ্যা সর্বাধিক ৫ জন নির্দিষ্ট করে দেয়া হলেও রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষীর সংখ্যা ছিল ইচ্ছামত। রাষ্ট্রপক্ষ মোল্লার বিরুদ্ধে এমন একজন সাক্ষীও হাজির করতে পারেনি, যে বলেছে যে কাদের মোল্লাকে সে নিজের চোখে অপরাধ করতে দেখেছে।

ডিজিটাল চেতনার মুক্তিযোদ্ধা : মোল্লা রাজাকার।

আমিঃ আসল মোমেনা বেগমের ছবি মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে পাওয়া গেছে, যার সাথে রাষ্ট্রপক্ষের হাজির করা মোমেনা বেগমের কোনো মিল নেই।

ডিজিটাল চেতনার মুক্তিযোদ্ধা : মোল্লার ১৪ গুষ্ঠি রাজাকার।

আমিঃ কাদের মোল্লার আইনজীবীরা ট্রাইব্যুনালের তদন্ত কর্মকর্তাদের বলেছিল, "আপনারা কাদের মোল্লার গ্রাম, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে যান, তিনি যেসব প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করেছেন সেখানে যান, তার রেকর্ড ঘাঁটেন, তার পরিচিত মহলে যান। আপনারাই বুঝতে পারবেন যে উনি আসল 'কসাই কাদের' নন।" কিন্তু ট্রাইব্যুনাল এতে কর্ণপাত করেনি।

ডিজিটাল চেতনার মুক্তিযোদ্ধা : এত সময় নাই। মোল্লাই 'কসাই কাদের'। সোজা কথা।

আমিঃ কিভাবে?

ডিজিটাল চেতনার মুক্তিযোদ্ধা : সবাই কয়। আমাগো নেত্রী (হাসিনা) কয়, মিডিয়া কয়, জাফর ইকবাল স্যার কয়। মুনতাসির মামুন, শাহরিয়ার কবির, আনিসুল হক, আনোয়ার হোসেন, নাসিরউদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, আবেদ খান, সুলতানা কামাল... মঞ্চসহ অনেকেই কয়। তাই কোনো সন্দেহ নাই।

আমিঃ ও আচ্ছা !!! কিন্তু জানেন তো, একটা মিথ্যা কথা বারবার প্রচার করলে সেটা সত্য হয়ে যায়। আমাকে ১০টা টিভি চ্যানেল আর ১০টা পত্রিকা দিন। আমি কিছু বুদ্ধিজীবী আর সাক্ষী ভাড়া করে এনে প্রমাণ করে দিবো যে ৭১ এ শেখ মুজিবের নাম ছিল 'কসাই মুজিব' এবং লোকজন তাকে এই নামেই চিনতো।

ডিজিটাল চেতনার মুক্তিযোদ্ধা : চড় খাবি। বেয়াদব কোনহানকার।

আমিঃ কাদের মোল্লাকে প্রথমে যাবজ্জীবন দেয়া হলেও পরে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার উদ্দেশ্যে আইন সংশোধন করা হয়। কিন্তু রায় হয়ে যাবার পর আইন সংশোধনের নজির তো কোনো অসভ্য দেশেও নেই।

ডিজিটাল চেতনার মুক্তিযোদ্ধা : এইটা ছিল যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত। এর মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠিত হইছে।

আমিঃ উনার মৃত্যুদণ্ডের রায় রিভিউ করতে দেয়া হয়নি। ফাঁসি দেয়ার ক্ষেত্রে জেলকোডও মানা হয়নি।

ডিজিটাল চেতনার মুক্তিযোদ্ধা : রাজাকারের জন্য কোনো নিয়মই খাটে না।

আমিঃ ফাঁসির পর উনার বাড়িতে ছাত্রলীগ হামলা চালিয়েছে। উনার পরিবারের লোকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদেরকে উনার লাশটা দেখতে বা কবরে মাটি দেয়ার সুযোগও দেয়া হয়নি।

ডিজিটাল চেতনার মুক্তিযোদ্ধা : অর পরিবারের লোকজনও রাজাকার।

আমিঃ রাজাকারের জানাজায় দেশে - বিদেশে কত লোক হয়েছে দেখেছেন?

ডিজিটাল চেতনার মুক্তিযোদ্ধা : অরাও রাজাকার।

আমিঃ ও আচ্ছা !!!

ডিজিটাল চেতনার মুক্তিযোদ্ধা : আর কিছু ?

আমিঃ স্কাইপি কেলেংকারি ফাঁস হয়েছে, আসামি পক্ষের সাক্ষীকে গুম করে ভারতের জেলে আটকে রাখা হচ্ছে, রায়ের কপি আইন মন্ত্রনালয়ে পাওয়া যাচ্ছে।

ডিজিটাল চেতনার মুক্তিযোদ্ধা : যাইতেই পারে। বিচার হইতাছে, এইটাই আনন্দের বিষয়।

আমিঃ তার মানে কাকে কি দণ্ড দেয়া হবে, তা আগে থেকেই ঠিক করা আছে।

ডিজিটাল চেতনার মুক্তিযোদ্ধা : থাকতেই হইবো। অরা তো রাজাকার।

আমিঃ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত কর্মকর্তা, আইনজীবী, প্রসিকিউটর এমনকি বিচারক-- এদের প্রত্যেকেই কোনো না কোনোভাবে আ'লীগের সাথে জড়িত। কেউ ছাত্রলীগ, যুবলীগের সাথে জড়িত ছিলেন; কেউ আ'লীগের নেতা ছিলেন; কেউ আওয়ামী শাসনামলে আইন বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। এদেরকে প্রায়ই আ'লীগের সমাবেশ বা সেমিনারে উপস্থিত থেকে বক্তৃতাও করতে দেখা গেছে। কারো কারো আত্মীয়-স্বজন লীগের প্রতিষ্ঠিত নেতা। অর্থাৎ পুরোপুরি আ'লীগ সংশ্লিষ্ট লোকজন নিয়েই এই ট্রাইব্যুনাল গঠিত হয়েছে। এসব কারনে আন্তর্জাতিক গনমাধ্যমসহ জাতিসংঘ, ইইউ, মানবাধিকার কমিশনসহ পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলো এই ট্রাইব্যুনালকে এবং এর আইনকে 'অত্যন্ত ত্রুটিপূর্ণ' বলে একাধিকবার মন্তব্য করেছে এবং অভিযুক্তরা ন্যায় বিচার থেকে বঞ্ছিত হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। ট্রাইব্যুনালের নামের আগে 'আন্তর্জাতিক' শব্দটা থাকলেও এখানে আন্তর্জাতিকতার নাম-গন্ধও নেই।

ডিজিটাল চেতনার মুক্তিযোদ্ধা : এটার তুই বুঝবি কি ! সারা বিশ্ব দেখুক আমরাও আন্তর্জাতিক বানাতে পারি ! এত প্যাঁচাইতেছস কেন ?

আমিঃ ডেভিড বার্গম্যান, টবি ক্যাডম্যান সহ অনেক প্রখ্যাত আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ বিশেষজ্ঞও এই বিচারকে সাজানো বলে অভিহিত করেছেন।

ডিজিটাল চেতনার মুক্তিযোদ্ধা : অরা জামাতি ছাগু।

আমিঃ ট্রাইব্যুনালের এক ডজন কর্মকর্তা আগামী নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য আ'লীগের মনোনয়ন কিনেছে। এটা থেকে কি প্রমাণ হয় ?

ডিজিটাল চেতনার মুক্তিযোদ্ধা : এইটাই প্রমাণ হয় যে, তারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি।

আমিঃ ও আচ্ছা !!!

ডিজিটাল চেতনার মুক্তিযোদ্ধা : আর কিছু কইবি ?

আমিঃ শেখ মুজিব তো ১৯৫ জন প্রকৃত যুদ্ধাপরাধীকে 'সিমলা' চুক্তির মাধ্যমে ছেড়ে দিয়েছিলো। আর হাসিনা তো এককালে জামায়াত নেতাদের নিয়ে আন্দোলন করেছিল, তাদের কল্যাণে গদি পেয়েছিল তখন তো তারা রাজাকার ছিলেন না।

ডিজিটাল চেতনার মুক্তিযোদ্ধা : পুরানা প্যাঁচাল বাদ দে !

আমিঃ ৪৩ বছর আগের ঘটনা কি পুরানা প্যাঁচাল না ?

ডিজিটাল চেতনার মুক্তিযোদ্ধা : না। আইচ্ছা তুই কি কইতে চাস, একবারে ক ।

আমিঃ লীগেও তো অনেক রাজাকার আছে, তাদের না ধরে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ নির্মূলের ঘৃণ্য অপকৌশল হিসেবে দলীয় ট্রাইব্যুনালে বিরোধী জোটের নেতাদের দলীয় লোক আর মিথ্যা সাক্ষীর মাধ্যমে বিচারের নামে হত্যা করা হচ্ছে। কারন আ'লীগ জানে, বাংলাদেশে তাদের আসল রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হচ্ছে জামায়াত। বিএনপি নয়। লীগকে বাঁশ দেয়ার সামর্থ্য বাংলাদেশে কোনো দলের থাকলে সেটা জামাতেরই আছে। এইটাই ফাঁসির কারন ..... . .... .. আরে ভাই, কোথায় যাচ্ছেন। কথাটা শেষ করতে দিন।

ডিজিটাল চেতনার মুক্তিযোদ্ধা : শাহবাগে যাইতাছি। তোর সাথে কোনো কথা নাই। তুই হইলি রাজাকার, পাকিস্তানী, মৌলবাদী, স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি, মানবতাবিরোধী, জঙ্গি। তোর ফাঁসি চাই। তোর ফাঁসি চাই।

বিষয়: বিবিধ

৯৮৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File