রাশিয়ার জার পরিবারের শেষ দিনগুলো
লিখেছেন লিখেছেন গোলাম মাওলা ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯, ০৩:২৩:০৬ দুপুর
রাশিয়ার জার পরিবারের শেষ দিনগুলো
রামানোভরা রাশিয়ার জার পরিবার ক্ষমতার তৃতীয় শতক পালনের উৎসবে তারা যখন বিভোর, তাদের অজান্তেই রাষ্ট্রের জনসাধারণের মনে ক্ষোভের কণা জমছিল। ঘরে ঘরে জুতাহীন অনেক কৃষক, যারা জীবনে কখনো ফসল খেতে আসা পাখিটাকেও মারেনি, তারা প্রস্তুত হচ্ছে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের জন্য। তাদের স্বজনদের হাহাকার আর ক্ষোভ কতটা ভয়ানক হয়ে দাঁড়াতে পারে, ভাবতে পারেনি রামানোভ পরিবার। তারা তখন আর সব দিনগুলোর মতোই দামি মাখন আর জেলিতে সকালের নাস্তা সারছে। কিংবা সূক্ষ্মভাবে বোনা ফিতায় চুল বেঁধে শৌখিন ক্যামেরার সামনে পারিবারিক ছবি তুলতে ব্যস্ত।
রাশিয়ার বিপ্লব শুরু হয় ১৯১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে, জার দ্বিতীয় নিকোলাস ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ানোর একমাসের মাঝেই। বলশেভিক দলের লোকেরা জারকে তার পরিবারসহ গৃহবন্দী করে। সেখানেই তাদের হত্যা করা হয়।
কেমন ছিল শেষের সে দিনগুলো? চলুন, জেনে নিই। দ্বিতীয় নিকোলাস তার বাবা তৃতীয় আলেকজান্ডারের মৃত্যুর পর ১৮৯৪ সালে সিংহাসনে বসেন। বিয়ে করেছিলেন রানী ভিক্টোরিয়ার আদরের নাতনি আলেকজান্দ্রাকে। বিয়েটা ছিল প্রেমের৷ তখনকার দিনে অন্য সব রাজপুরুষ যখন রাজ্যের সীমা বাড়াতে বা কূটনৈতিক সম্পর্কের উন্নতির জন্য বিয়ে করে যাচ্ছেন, তখন নিকোলাসের ভালোবাসা সেটিকে অন্য পর্যায়ে নিয়ে যায়। বউকে নিয়ে বেশ ঝামেলায় পড়তে হয়েছিল তাকে। আলেকজান্দ্রা যে পরিবেশে বড় হয়েছেন, তার একেবারেই মেলে না রাশিয়ার সাথে। বহু সাধনা করে রাশিয়ান ভাষা শিখতে শুরু করলেও উচ্চারণের আড়ষ্টতা ছিল স্পষ্ট। ফরাসি ভাষার মাথামুণ্ডুও বুঝতেন না। ফলে রাশিয়ার জার পরিবারের জারিনা হিসেবে তার সবার সাথে হেসে হেসে হ্যান্ডশেক করে কথা বলার দায়িত্বে ভাটা পড়ল। বাইরের লোকজন তো দূরের কথা, নিজের শাশুড়িও আলেকজান্দ্রার আচরণ পছন্দ করতেন। এসব থেকে তাকে বাঁচিয়েছিলেন নিকোলাস। নিকোলাস পারিবারিক ছিলেন বটে, তারচেয়ে বেশি ছিলেন অযোগ্য শাসক। গুরুত্বপূর্ণ মতামত দেওয়ার সময়েও তাকে খুঁজে পাওয়া যেত না। এসব নিয়ে দরবারে হাসিঠাট্টাও চলত। স্বভাবতই কঠিন সময়ে নিয়ন্ত্রণ করার যোগ্যতা জারের ছিল না।
১৯০৪ সালে জাপানের বিরুদ্ধে হারার পর ১৯০৫ সালে। স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে নিজ দেশেই বিপ্লবের মুখোমুখি হন জার। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে সৈন্যদের সাথে অসংখ্য চাষীকেও যুদ্ধে পাঠান। লাখ লাখ মানুষ মারা যায়। এতে দেশের সম্পদ কমতে থাকে, জনমনে বাড়ে ক্ষোভ। এতকিছুর পরেও জার নিজেকে ক্ষমতাশালী ও জনপ্রিয় ভাবতে থাকেন। তার ধারণা ছিল, ঈশ্বর তাকে ও তার উত্তরাধিকারীকে দেশ শাসনের দায়িত্ব দিয়েছেন।
আলেকজান্দ্রা-নিকোলাসের ঘরে জন্মায় ওলগা, তাতিয়ানা, মারিয়া ও আনস্থিসিয়া। সবার শেষ সন্তান আলেক্সেই পুত্রসন্তান, অর্থাৎ জারের উত্তরাধিকারী। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে আলেক্সেই জন্মেছিল হিমোফিলিয়া নিয়ে, যা তার মা উত্তরাধিকারসূত্রে বয়ে বেড়াচ্ছিল। মোফিলিয়া বংশগত রোগ, এই রোগের ফলে রক্ত ঠিকমতো জমাট বাঁধে না। ফলে কোথাও অল্প একটু কেটে গেলেও প্রাণনাশের আশঙ্কা থেকে যায়। আলেক্সেইর যেন কোনো দুর্ঘটনা না হয়, সেজন্য আমাদের সব কাজের লোক সহ তার বাবা মাকে ব্যস্ত থাকতে হতো। তখনকার সময়ে রাজপরিবারের শিশুরা বাবা মায়ের সাথে ঘনিষ্ঠ হতো না। কিন্তু আলেক্সেইয়ের নির্ভরতা তাকে পরিবারের কেন্দ্র করে তুলল। ওদিকে প্রজারা ভাবী জারের স্বাস্থ্য নিয়ে সন্তুষ্ট হতে পারেনি। আলেক্সেই মাঝে মাঝেই অসুস্থ হয়ে পড়ত। তখন এল ০০গ্রেগরী রাসপুতিন০০। সাইবেরিয়ায় জন্ম নেওয়া রাসপুতিন নিজেকে বিশেষ কিছু ক্ষমতার অধিকারী বলে ভাবতেন। যেভাবেই হোক, আলেক্সেইয়ের অসুখের কষ্ট কিছুটা উপশম করতে পেরেছিলেন তিনি। এভাবে জার পরিবার রাসপুতিনের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। রাসপুতিন জারকে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন আলেক্সেইর স্বাস্থ্যের সাথে তাদের শাসনকালের দৈর্ঘ্যের। সম্পর্ক। আর যেহেতু আলেক্সেইকে সুস্থ রাখতে রাসপুতিনকে দরকার, প্রাসাদে তার জায়গা পাকাপাকি হয়ে গেল। জারের পরামর্শকও ছিলেন তিনি।
ওদিকে রাসপুতিন আর আলেকজান্দ্রাকে নিয়ে রাজসভায় আর তার বাইরে গুজব ছড়ায়। তাদের দুজনার সম্পর্ক আসলেও কেমন ছিল, তা জানা না গেলেও, রাসপুতিন জারের সভার অনেক নারী কর্মচারীর সাথে জড়িয়ে পড়েছিলেন। রাসপুতিনকে ঘিরে সম্ভাবনার কথা ভাবার বদলে, আলেকজান্দ্রাকে নিয়ে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি আরো খারাপ হয়। বিপ্লবের শুরুর দিকে ১৯১৬ সালে রাসপুতিন খুন হন। ১৯১৫ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে দ্বিতীয় নিকোলাম সস্ত্রীক রাশিয়ার সৈন্যবহর পরিদর্শন করেছিলেন। আলেকজান্দ্রা বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে ঘুরে ঘুরে রাষ্ট্রের সম্পর্কে ব্যবহারিক জ্ঞান আহরণ করলেও জার পরিবারকে নিয়ে সন্তুষ্ট ছিল না খোদ সৈন্যরাও।
তিনশ' বছরের শাসন শেষে জারদের উৎখাত হলো। ১৯১৭ সালে বলশেভিকরা ক্ষমতায় আসার পর থেকে জার পরিবার রাষ্ট্রের জন্য বোঝা হয়ে দাড়ালো। লেনিন নারোদ্বাদী (নারোদবাদ- সহিংস বিপ্লবে বিশ্বাসের পক্ষে মতবাদ) ছিলেন না। কিন্তু জার প্ৰিবারকে নিয়ে কী করা যায় এই সিদ্ধান্তে জনগণ দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়ল। তারা বহু বিপ্লবের অর্জিত ফসল দেশটায় একনায়কতন্ত্রের ছিটেফোটাও রাখতে চায়নি। কেউ বলল তাদের। নির্বাসনে পাঠাতে, কেউ চাইলো তাদের কঠিন শাস্তি হক। কিন্তু বেশিরভাগের চাওয়া ছিল জারকে তার পরিবারসুদ্ধ শেষ করে দেওয়া হক, চিরতরে।
বন্দীদশার প্রথম দিনগুলো জার পরিবারের জন্য কঠিন ছিল না। ৩৯ জন পরিচারক সবসময় তাদের প্রয়োজনের হুকুম তামিল করতে বাধ্য ছিল। সবাই মিলে তখনো শখের ছবি তুলে দামি ফ্রেমে বাঁধাই করার বিলাসিতাও চালু আছে। সকালে দামি পানীয়, রাতে পালকের বালিশ, কী নেই? নিকোলামের মনেও এত চিন্তা নেই। অবস্থা একটু ঠাণ্ডা দেখলেই মে ইংল্যান্ড চলে গিয়ে পঞ্চম জর্জের কাছে গিয়ে উঠবে। অথবা ক্রিমিয়াতেও যাওয়া যায়। এত বড় দেশ রাশিয়া, কত পথ চারদিকে বের হওয়ার! কিন্তু তাদের অগোচরেই তাদের সব রাস্তা বন্ধ হয়ে খোলা থাকল সবচেয়ে খারাপ আশ্রয় ইয়েকাতেরিনবার্গ। জার জানতেন এখানকার মানুষজন জারকে দু' চোখে দেখতে পারে না। ইয়েকাতেরিনবার্গ যাওয়ার সময় জার বলেছিলেন, আর সবখানে যেতে পারি, উরালের দিকে না"।
পরিবারটিকে থাকতে দেওয়া হয়েছিল এক বিশাল বাড়িতে। নাম ‘ইপাতিয়েভ হাউজ'। কাঠের তৈরি উচু প্রাচীর বাকি এলাকা থেকে
বাড়িটাকে আলাদা করে দিয়েছিল। সবার দায়িত্বে ছিল আদিভ নামের এক লোক| বাড়ি পাহারা দেওয়ার জন্য স্থানীয় কারখানার লোকদের আনা হয়। এরা সবাই মিলে রামানোভদের জিনিসপত্র চুরি করত। চোর হলেও মনে দয়ামায়া বেশি ছিল তাদের। দিনদিন বন্দীদের বন্ধু হয়ে উঠছিল তারা। কিন্তু বলশেভিকদের উদ্দেশ্য আলাদা ছিল। তারা আভদীভ আর পাহারাদারদের সরিয়ে ইয়াকোভ ইউরোভস্কিকে দায়িত্ব দেয়। তার সাথে ছিল অভিজ্ঞ লোকজন। তারা জার পরিবারের সাথে কঠিন আচরণ না করলেও দুরত্ব বজায় রাখত।
জার পরিবারকে শেষ জীবিত দেখেছিল তাদের চারজন নারী পরিচ্ছন্নতাকর্মী। বাইরের এলাকা থেকে তাদের আনা হয়েছিল। জার। পরিবারের সাথে তাদের কথা বলা নিষেধ ছিল। বিস্ময় নিয়ে তারা দেখেছিল জারের দেবতা নয়, বরং মানুষ। আলেকজান্দ্রা একটু কথা বলার জন্য মানুষ খুঁজতে থাকেন, ছোট্ট আলেক্সেই করুণ অসুস্থ চোখে তাকিয়ে দেখে তাদের, বাড়ির মেয়েরা একটু বাইরের মানুষের সাথে কথা বলার আশায় তাদের সাথে ঘর মুছতে লেগে যায়। এতকিছু হয়ত সম্ভব হয়েছিল রামানোভদের দীর্ঘ বন্দীজীবন আর রাজকীয় পরিবেশ থেকে দুরে থাকার কারণে। পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা দেখেছিল ক'দিন পরেই আলেক্সেইকে খুন । করতে চলা ইউরোভস্কিকে সত্যিকার মমতা নিয়ে আলেক্সেইয়ের স্বাস্থ্যের খবর নিতে। ১৬ জুলাই রাতে মস্কোতে লেনিনের কাছে টেলিগ্রাম পৌছায়, সেখানে লেখা ছিল জার পরিবারকে সরিয়ে দেওয়ার দলীয় সিদ্ধান্তের কথা। রাত ১.৩০ এ ইউরোভস্কি পরিবারটিকে ঘুম থেকে জাগায় এবং বলে যে শহরে বিদ্রোহ তৈরি হয়েছে। নিরাপত্তার জন্য জার পরিবারের উচিত তাদের সাথে বেসমেন্টের ঘরে আশ্রয় নেওয়া জার বাধ্য হয়ে পরিবার নিয়ে পেছনে আসে।
ছোট সেই ঘরে দুটো চেয়ার রাখা ছিল আলেকজান্দ্রা আর আলেক্সেইয়ের জন্য। সবাই পৌছালে বিস্মিত শঙ্কিত পাঠকদের উদ্দেশ্যে ইউরোভস্কি আগে থেকে তৈরি রাখা কাগজ পড়তে আরম্ভ করে, “সোভিয়েতের আঞ্চলিক সভাপতিমণ্ডলী, বিপ্লবের উদ্দেশ্য পূরণে ধার্য করেছেন, অগণিত মানুষের কাছে অসংখ্য অপরাধ করার জন্য জার নিকোলাস রামানোভকে গুলি। করে হত্যা করা হবে।" কথা শেষ করেই তারা গুলি করতে শুরু করে৷ প্রধান লক্ষ্য জার ছিল, তাই তাকে বেশ কিছু গুলি খেতে হয়। হত্যাকারীদের মাঝে একজন নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে লাশগুলোতে বেয়নেট দিয়ে আক্রমণ করে।
রামানোভ পরিবারের দাফন নিয়ে অনেকদিন রহস্য ছিল। তাদের প্রথমে পুরোনো একটা মাইনে কবর দেওয়া হয়। তারপর ট্রাকে করে উঠিয়ে অন্যত্র নেয়া হয়। এক জায়গায় কবর দেয়া হয় মারিয়া অথবা আনাস্থাসিয়া আর আলেক্সেইকে। অনেকদিন পর্যন্ত এই কবর অনাবিস্কৃত ছিল। ফলে ধারণা করা হতো, জারদের ছেলে ও যেকোনো একটা মেয়ে পালিয়ে যেতে পেরেছিল। বাকিদের একটু দূরেই কবর দেওয়া হয়, এসিড ঢেলে পুড়িয়ে দিয়ে, যেন তাদের চিহ্নিত না করা যায়। কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞান ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে রামানোভদের অবশিষ্ট অংশ নিশ্চিত করেছে। ১৯২৬ সাল পর্যন্ত জারদের মৃত্যু আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করা হয়নি। যদিও মানুষ বুঝে গিয়েছিল তাদের নিয়তি। কবর অনাবিষ্কৃত থাকায় তাদের কিছু সদস্যের বেঁচে থাকার কাহিনী ছড়াতে থাকে। সবচেয়ে বিখ্যাত কাহিনী ছিল আনাস্থামিয়াকে নিয়ে। ১৯২০ সালে এক নারীকে উদ্ধার করা হয়, যে হাসপাতালে ডাক্তারদের কাছে নিজেকে অনাস্থাসিয়া বলে দাবি করে, বর্ণনা দেয় কীভাবে সে পালিয়েছে। পরে অবশ্য তার মানসিক রােগ ধরা। পড়ে। কিন্তু ১৯৮৪ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সে নিজেকে অনাস্থাসিয়া বলে দাবি করে গেছে। প্রথমে আবিষ্কৃত কবরে রামানােভদের দু'জন সদস্য ছিল না। আলেক্সেই, আর ছােট মেয়ে দুটির একজন। ফলে আনস্থাসিয়া যে বেঁচে আছে, এমন আশা কল্পকাহিনীর গোড়ায় মারপানি জোগায়। ২০০৮ সালে শেষ কবরটি আবিষ্কৃত হওয়ার পর আশাভঙ্গ হয়।
রামানোভদের দেহাবশেষ নিশ্চিত করার পর জারের যথাযথ মর্যাদায় তাদের দাফন সম্পন্ন করা হয়। নিকোলাস আর পাঁচটা রাজপরিবারের মতোই তার পরিবারের বাচ্চাদের সুন্দর সুন্দর ছবি আর রাজারাজড়ার গল্প দিয়ে আকৃষ্ট করতে চাইতেন মানুষকে। পেটে খাবার না থাকলে সৌন্দর্যের বিলাসিতা সহ্য হয় না। তাই তখনকার মানুষ জারকে নিতে পারেনি।
রাশিয়াতে সমাজতন্ত্রের পতন হয়েছে। জন্ম হয়েছে সাম্যের আড়ালে নব্য জারদের৷ সেই রাশিয়াতেই আজ রামানোভেরা মন্তের সম্মানে সম্মানিত হন। সকল মানুষের সমান অধিকারে বিশ্বাসী যে রাশিয়া জারকে। সপরিবারে হত্যা করেছিল, তারা একধরনের প্রমাণ, কত দ্রুত মানুষ তার ইতিহাস ভুলে যায়।
জার পরিবারের দাফন নিয়ে অনেকদিন রহস্য ছিল। তাদের প্রথমে পুরােনাে একটা মাইনে কবর দেওয়া হয়। তারপর ট্রাকে করে উঠিয়ে অন্যত্র নেয়া হয়। এক জায়গায় কবর দেয়া হয় মারিয়া অথবা আনাস্থাসিয়া আর আলেক্সেইকে। অনেকদিন পর্যন্ত এই কবর অনাবিস্কৃত ছিল। ফলে ধারণা করা হতাে, জারদের ছেলে ও যেকোনাে একটা মেয়ে পালিয়ে যেতে পেরেছিল। বাকিদের একটু দূরেই কবর দেওয়া হয়, এসিড ঢেলে পুড়িয়ে দিয়ে, যেন তাদের চিহ্নিত না করা যায়। কিন্তু আধুনিক বিজ্ঞান ডিএনএ
পরীক্ষার মাধ্যমে রামানােভদের অবশিষ্ট অংশ নিশ্চিত করেছে।
১৯২৬ সাল পর্যন্ত জারদের মৃত্যু আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করা হয়নি। যদিও মানুষ বুঝে গিয়েছিল তাদের নিয়তি। কবর অনাবিষ্কৃত থাকায় তাদের কিছু সদস্যের বেঁচে থাকার কাহিনী ছড়াতে থাকে। সবচেয়ে বিখ্যাত কাহিনী ছিল আনাস্থামিয়াকে নিয়ে। ১৯২০ সালে এক নারীকে উদ্ধার করা হয়, যে হাসপাতালে ডাক্তারদের কাছে নিজেকে অনাস্থাসিয়া বলে দাবি করে, বর্ণনা দেয় কীভাবে সে পালিয়েছে। পরে অবশ্য তার মানসিক রােগ ধরা। পড়ে। কিন্তু ১৯৮৪ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সে নিজেকে অনাস্থাসিয়া বলে দাবি করে গেছে। প্রথমে আবিষ্কৃত কবরে রামানােভদের দু'জন সদস্য ছিল না। আলেক্সেই, আর ছােট মেয়ে দুটির একজন। ফলে আনস্থাসিয়া যে বেঁচে আছে, এমন আশা কল্পকাহিনীর গােড়ায় মারপানি জোগায়। ২০০৮ সালে শেষ কবরটি আবিষ্কৃত হওয়ার পর আশাভঙ্গ হয়।
রামানােভদের দেহাবশেষ নিশ্চিত করার পর জারের যথাযথ মর্যাদায় তাদের
দাফন সম্পন্ন করা হয়। নিকোলাস আর পাঁচটা রাজপরিবারের মতােই তার পরিবারের বাচ্চাদের সুন্দর সুন্দর ছবি আর রাজারাজড়ার গল্প দিয়ে আকৃষ্ট করতে চাইতেন মানুষকে। পেটে খাবার না থাকলে সৌন্দর্যের বিলাসিতা সহ্য হয় না। তাই তখনকার মানুষ জারকে নিতে পারেনি।
রাশিয়াতে সমাজতন্ত্রের পতন হয়েছে। জন্ম হয়েছে সাম্যের আড়ালে নব্য জারদের৷ সেই রাশিয়াতেই আজ রামানােভেরা মন্তের সম্মানে সম্মানিত হন। সকল মানুষের সমান অধিকারে বিশ্বাসী যে রাশিয়া জারকে। সপরিবারে হত্যা করেছিল, তারা একধরনের প্রমাণ, কত দ্রুত মানুষ তার ইতিহাস ভুলে যায়।
বিষয়: বিবিধ
১০৮৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন