কীভাবে বা কেন মাহমুদ ভারত আক্রমণ শুরু করেন

লিখেছেন লিখেছেন গোলাম মাওলা ২৭ জানুয়ারি, ২০১৭, ০৭:১৮:২৮ সকাল

ভারত বর্ষ ও ইসলাম

ইতিহাস যা বলে এবং বলে না।

ইতিহাসের সত্যাসত্য ব্যাপারটা প্রায়শই ঐতিহাসিক কোন মানসিকতা থেকে ঘটনাবলিকে দেখছেন তার উপরে নির্ভর করে। পত্ৰলেখক সুলতান মাহমুদ-এর অপরাধ প্রমাণের জন্য হেনরি এলিয়ট এবং রোমিলা থাপার-এর নাম উল্লেখ করেছেন। কিন্তু এলিয়ট কোথায় তঁর মত জাহির করেছেন তা জানাননি। আমি যত দূর জানি এলিয়ট ও ডওসন আট খণ্ডে History of India as told by its Own Historians লিখেছিলেন এবং এস এইচ হোডিওয়ালা Studies in Indo-Muslim History-Critical Commentary on Elliot and Dowson's 'History of India as told by its Own Historians’ নামে বই লিখে দেখিয়েছেন ওইসব ঐতিহাসিকদের মূল ভাষায় অজ্ঞতার ফলে এলিয়ট-ডওসন কী ভয়ানক সব কাণ্ড করেছেন।

রোমিলা থাপার লিখেছেন, "Mahmud's interest in India was based on the proverbial wealth of the country and the fertility of the Punjab plains, which appeared even more rich and lush from the barren mountains of the Hindu Kush. (A History India vol I Penguin Books 1966 pp. 229-32)

তবে ভারতিয় বিদ্যাভবন প্রকাশিত ও রামেন্দ্র মজুমদার সম্পাদিত History and Culture of the Indian Peopleas এর ৫ম খন্ডে দেখিয়েছেন---

“The Hindus entertained a belief that Mahmud could demolish so many idols in Northern India simply because these deities had forfeited the sympathy and support of Somnatha. It is stated that when Mahmud heard of its belief of the Hindus he decided to destroy Somnath with a view to striking at the root of their faith in the divinity of their chief idol. (Bombay 1966 p. 19)

একই গ্রন্থ থেকে আমরা জানতে পাই---

যে মাহমুদ তথা গজনি প্রথমে জয়পাল বা পঞ্জাব আক্রমণ করেননি, পঞ্জাবের জয়পালই প্রথম আক্রমণ করেছিলেন, পরাজিত হয়ে সন্ধি করে স্বদেশে ফিরে আবার অন্যান্য রাজাদের সংঘবদ্ধ করে গজনি আক্রমণ করেন, আবার পরাস্ত হন, আবার সন্ধি করেন, এবং আবার সন্ধিভঙ্গ করে গজনি অভিযান করেন। ইতিহাসের এই ঘটনাবলি সত্য না অসত্য তা ঐতিহাসিকরা আপন আপন মানসিকতা দিয়ে বিচার করেছেন।

এই একই গ্রন্থে আছে----

‘Even making allowances for the flattery of the court historians, his repeated invasions of India, carried out with consuminate ability and succeess, and his brilliant victories mark him out as the

greatest general of his age, comparable with the military leaders of the first rank that have appeared in the world from time to time. His patronage of art and literature in his own kingdom also distinguishes him as a great king.' (ibid p. 22)

স্বাধীন ভারতে রাজনীতি ও ধর্মের খিচুড়ি দেশবাসীর খাদ্য এবং সাধু-সন্ন্যাসিনীরাও জনসভায় সংসদে সর্বত্র সক্রিয়। ব্রিটিশ ভারতের কারাগারে বসে এক রাজনীতিবিদ একাদা লিখেছিলেন----

'Mahmud was far more a warrior than a man of faith and like many other conquerors he used and exploited the name of religion for his conquests. In the intervals of his fighting Mahmud was interested in encouraging cultural activities in his own homeland and he gathered together a number of eminent men." (The Discovery of India, Nehru OUP 1988, p. 235)

কীভাবে বা কেন মামুদ ভারত আক্রমণ শুরু করেন। সে প্রসঙ্গে আরও ঐতিহাসিকের মত জানাই— নীলকণ্ঠ শাস্ত্রী ও শ্ৰীনিবাসচারি মিলিত ভাবে লিখেছিলেন--- The impulse for the convulsion that burst upon India was given in the year A.D. 979 by Jaipal, the prince of Lahore in the Punjab. তারপর মাহমুদ সম্পর্কে তারা লিখেছিলেন , From his Tartar father he had inherited tenacity and military prowess, while his Persian mother had given him a feeling of higher civilization. His outlook on life was essentially secular in spirit of the Persian Renaissance and he had a love of power and money.”

(Advanced History of India, Allied Publishers, 1989 pp. 332-3) এই গ্রন্থাগারের মতে "the devastation of the Indian temples was undertaken by Mahmud chiefly with the object of plundering the enormous treasures which had been gathered there in the course of centuries' (ibid. p 334)

মানবসংস্কৃতির উপর মহাপণ্ডিত আচার্য if its bogiritsyir firCar Mahmud was an efficient ruler, generous and chivalrous; and a great patron of the arts and sciences. (Select Papers, People's Publishing House, Delhi, 1979 p. 98)

তিনি আরো উল্লেখ করেছেন, হিন্দুস্তান থেকে মাহমুদ যেসব মুদ্রা প্রচলন করেছিলেন সেসবের এক পিঠে আরবিতে আর অন্য পিঠে সংস্কৃতে কলমা থাকত । বিজিতের ভাষার প্রতি এরূপ মনোভাবের দৃষ্টান্ত বিরল। ‘দেশ’-এর পত্রিকার বলতে চেয়েছেন যে ‘ধর্মীয় প্রেরণা’ থেকে মাহমুদ বারবার ভারত আক্রমণ করেছিলেন। আমি বলতে চাই—না, মাহমুদকে ভারত আক্রমণে প্ররোচিত করেছিল পঞ্জাব কৌনজ প্রভৃতি হিন্দু (?) শক্তিসঙেঘর পুনঃপুন গজনি আক্রমণ ও পুনঃপুন সন্ধিভঙ্গ, প্রলুব্ধ করেছিল মন্দিরে মন্দিরে সঞ্চিত ধনদৌলত এবং অনুমান করা যায় যে প্রোৎসাহিত করেছিল ধমীয় কারণ।

এই প্রসঙ্গে আরও বলতে চাই যে এক হাজার খ্রিস্টাব্দের আগের সংস্কৃত ভাষায় হিন্দু বা হিন্দুধর্ম শব্দটি ছিল না, মামুদ ও তীর সহচর ভারতবিদ্যাবিদ অলবিরুনিই প্রথম হিন্দুস্তানের অধিবাসীদের হিন্দু বলে এবং তাদের ব্রাহ্মণ্য ধর্ম, বৈষ্ণব ধর্ম, শৈব ধর্ম প্রভৃতিকে সম্মিলিতভাবে হিন্দু ধর্ম বলে উল্লেখ করেন এবং এই কারণে মামুদকেই হিন্দু ধর্মের প্রচলনকারী বা প্রবর্তক বলা উচিত। সব শেষে বলি যে মামুদের ব্যক্তিত্বের ও ভূমিকার সামগ্রিক মূল্যায়নেই ইতিহাসের সত্যাসত্য বিচার্য। পুনশ্চ : উপরের চিঠিতে শুধু সেই গ্রন্থগুলিরই উল্লেখ করেছি যেগুলি প্রায় সমস্ত কলেজের গ্রন্থাগারে পাওয়া যায়। মাহমুদ সম্বন্ধে বিশেষ জ্ঞানের জন্য দ্রষ্টব্য M. HabibÉ1 Sultan Mahmud of Ghaznin, Delhi 1951 এবং M. Nazim-এরলিখা The Life and Times of Sultan Mahmud of Ghazna, Delhi 1971 (Reprint). এ-দুটি ছাড়া ২০০৪—এ রোমিলা থাপার-এরও সোমনাথ মন্দিরের ইতিহাস সম্বন্ধে একখানি বই বেরিয়েছে, বইটির নাম Somnath : The Many Voices of History

ভারত বর্ষ ও ইসলাম---সুরজিত দাশ গুপ্ত

বিষয়: বিবিধ

১০২৯ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

381518
২৭ জানুয়ারি ২০১৭ সকাল ১০:৩১
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ।History and Culture of the Indian Peopleas এর লেখক ঐতিহাসিক এর নাম রমেশচন্দ্র মজুমদার। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ছিলেন।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File