সংকর-জাতি
লিখেছেন লিখেছেন গোলাম মাওলা ০৯ অক্টোবর, ২০১৬, ১২:২৪:০৬ দুপুর
সংকর-জাতি
বাঙালি জাতি সম্পর্কে নৃবিজ্ঞানীদের ধারণা, এটি একটি মিশ্রিত জাতি এবং এ অঞ্চলে বসবাসকারী আদিতম মানবগোষ্ঠীসমূহের মধ্যে অন্যতম। পৃথিবীর বহু জাতি বাংলায় অনুপ্রবেশ করেছে, অনেকে আবার বেরিয়েও গেছে, তবে পেছনে রেখে গেছে তাদের আগমনের অকাট্য প্রমাণ।
বৃহত্তর বাঙালির রক্তে মিশ্রিত আছে বহু এবং বিচিত্র সব নরগোষ্ঠীর অস্তিত্ব। দীর্ঘকাল বিভিন্ন জন ও কোমে বিভক্ত হয়ে এ আদি মানুষেরা বঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় বসবাস করেছে, এবং একে অপরের সঙ্গে মিশ্রিত হয়েছে শতকের পর শতকব্যাপী। মনে করা হয় যে, বাংলার প্রাচীন জনগুলির মধ্যে অষ্ট্রিক ভাষীরাই সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশের সাঁওতাল, বাঁশফোড়, রাজবংশী প্রভৃতি আদি অষ্ট্রেলীয়দের সঙ্গে সম্পৃক্ত। এই আদি জনগোষ্ঠীগুলি দ্বারা নির্মিত সমাজ ও সামাজিক ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটে আর্যদের আগমনের পর। বাংলাদেশের জনপ্রবাহে মঙ্গোলীয় রক্তেরও পরিচয় পাওয়া যায়। বাঙালির রক্তে নতুন করে মিশ্রন ঘটল পারস্য-তুর্কিস্তানের শক জাতির আগমনের ফলে। বাঙালি রক্তে বিদেশি মিশ্রন প্রক্রিয়া ঐতিহাসিককালেও সুস্পষ্ট। ঐতিহাসিকযুগে আমরা দেখি ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এবং ভারতের বাহির থেকে আসা বিভিন্ন অভিযাত্রী নরগোষ্ঠী বাঙালি জাতি নির্মাণে অবদান রাখতে। গুপ্ত, সেন, বর্মণ, কম্বেজাখ্য, খড়গ, তুর্কি, আফগান, মুগল, পুর্তুগিজ, ইংরেজ, আর্মেনীয় প্রভৃতি বহিরাগত জাতি শাসন করেছে বঙ্গ অঞ্চল এবং রেখে গেছে তাদের রক্তের ধারা। এমনকি পাকিস্তান যুগেও আমরা দেখি রক্ত মিশ্রণে চলমান প্রক্রিয়া। বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে এ শংকরত্ব আরো বেগবান হচ্ছে। এক কথায় বাঙালি একটি শংকর জাতি।
বাঙালি সংকর জাতি: বিভিন্ন জাতির মিলন ও সমন্বয়ে বাঙালি জাতি গড়ে উঠেছে। এর মূল কাঠামো সৃষ্টির কাল প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে মুসলিম অধিকারের পুর্ব পর্যন্ত বিস্তৃত।
-----স্যার হার্বাট রিজলি, পণ্ডিত বিরাজশঙ্গর গুহ, রমাপ্রসাদ চন্দ্র, নীহাররঞ্জন রায় প্রমুখ পণ্ডিতগণ মনে করেন বাঙালি একটি নতুন মিশ্র জাতি বা সংকর জাতি।
১. অনার্য-আর্য নরগোষ্ঠী: বাঙালি আদি মানব বা পুরুষের দুই শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। যথা:
ক. প্রাক আর্য বা অনার্য নরগোষ্ঠী।
খ. আর্য নরগোষ্ঠী।
অনার্য নরগোষ্ঠী বাংলার আদি নরগোষ্ঠী, অনার্য নরগোষ্ঠীর উৎপত্তি হয় অম্বিক, দ্রাবিড়, আলপীয়, মোঙ্গলীয় এবং নেগ্রিটো ও আরো কয়েকটি জাতির মিশ্রণে।
২. নেগ্রিটো: বাঙালি জনগোষ্ঠীর প্রথম স্তর নেগ্রিটো জন। এরা খর্বাকৃতি, কালো বর্ণ চুল উনবিৎ, খাটো, বেটে পুরু ও উল্টানো।
৩. অস্টিক বা অস্ট্রায়েড: নৃবিজ্ঞানীদের মতে অস্টিক বা অস্ট্রালয়েড গোস্ঠী থেকে বাঙালি জাতির প্রধান অংশ গড়ে উঠেছে। নৃতাত্ত্বিক ভাষায় ভাষায় এর নাম অসস্ট্রালয়েড, অস্টিকাসের নিষাদও বলা হয়। বাঙালি জাতি সত্তার সর্বস্তরে কমবেশি এ ভেড্ডিদের রক্তের খোঁজ পাওয়া যায়। সাঁওতাল, মুণ্ডা, মালপাহাড়ি ইত্যাদি জাতি গোষ্ঠি অস্টেলীয়ডদের অন্তুর্ভুক্ত।
৪. আলপাইন: আলপাইন জাতি দ্রাবিড়দের পরে ভারতে প্রবেশ করে। বাঙালি গুজরাটি, মারাঠি, ওড়িশি জাতির পূর্বপুরুষদের অনেকেই আলপাইন গোষ্ঠীর লোক ছিল। এদের থেকে বাঙালি জাতির বড় একটি অংশ সৃষ্টি হয়।
৫. দ্রাবিড়: দ্রাবিড়রা এদেশের আদি অধিবাসীদের অন্যতম। পাঁচ হাজার বছর পূর্বে বাংলাদেশে দ্রাবিড়রা প্রবেশ করে।
৬. মঙ্গোলয়েড: বাঙালি জাতি সত্তার মিশ্রণে মঙ্গোলয়দের প্রভাব পাওয়া যায়। বাংলাদেশের পার্বত্য অঞ্চলে এ জনগোষ্ঠীর প্রভাব বেশী পরিলক্ষিত হয়। গারো, চাকমা, মণিপুরি, খাসিয়া, মুরং ইত্যাদি উপজাতী এ মঙ্গোলয়েডের অন্তর্গত।
----সংকর-জাতির উৎপত্তি সম্পর্কে মনু যা বলেছেন, নিম্নে তার একটি তালিকা দেওয়া হল—
পিতা-----মাতা----উৎপন্ন সংকর জাতি
ব্ৰাহ্মণ -----শূদ্ৰ -----নিষাদ
শূদ্ৰ -----বৈশ্য ------অয়োগব
ব্ৰাহ্মণ ----আয়োগবি -----ধিগন
নিষাদ ----শূদ্ৰ ------পুঙ্কস
শূদ্ৰ----- নিষাদ ----কুক্কুটক
নিষাদ ---বৈদেহ--- করবার
বৈদেহ---- করবার ---অন্ধ্র
বৈদেহ ---নিষাদ---- মেদ
নিষাদ-----বৈদেহ----অহিন্দিক
চণ্ডাল---- নিষাদ---অন্ত্যবিশায়ী
নিষাদ---অয়োগবি ---মার্গব, দাশ, কৈবর্ত
এই সমস্ত সংকর জাতির উৎপত্তি সম্বন্ধে মনুর এই মত। এই মতটি কিন্তু সৰ্বথা মেনে নেবার পক্ষে নানা অন্তরায় আছে। --(কৈতব্য জাগরণ—সমর পাল ,উইকি, ব্লগ ,পত্রিকা)
বিষয়: বিবিধ
৩৭৭৫ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন