ভৌগলিক মানচিত্র ও অন্যান্য: (প্রথম পাঠ)

লিখেছেন লিখেছেন গোলাম মাওলা ২৬ এপ্রিল, ২০১৬, ১০:৩৭:৩০ রাত

ভৌগলিক মানচিত্র ও অন্যান্য: (প্রথম পাঠ)

>‘লাইফ অব অ্যাপোলোনিয়াস অব টায়না” গ্রন্থে ফাভিয়াস ফিলোস্ট্রাটাস-এর এক উক্তি প্রাচীনকালের মানুষের ভৌগোলিক জ্ঞানের বিস্ময়কর তথ্য প্রকাশ করে । ফ্রাভিয়াস (এ, ডি, ১৭৫-২৪৯) বলেছেন -‘পৃথিবীর সমগ্র জলভাগের সঙ্গে যদি স্থলভাগের সম্পর্কের তুলনা করা হয় তলে দেখা যাবে দুটোর মধ্যে স্থলভাগ ক্ষুদ্রতর।’

>সে সময়কার মানুষরা যদি আটলান্টিক বা প্রশান্ত মহাসাগর পাড়ি না দিয়ে থাকে তবে ফাভিয়াস কি ভাবে জেনেছিলেন এই গ্রহের উপরি-পৃষ্ঠের বেশিরভাগ দখল করে আছে মহাসমুদ্রসমূহ ?

>প্লেটো নিশ্চয় আমাদের এই পৃথিবী এবং মহাদেশগুলোর বিশালকৃতি সম্পর্কে জ্ঞাত ছিলেন । কারণ তিনি বলেছেন, ‘ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের অধিবাসীরা এই পৃথিবীর একটি ক্ষুদ্র অংশ মাত্র দখল করে রেখেছে ?

>খৃষ্টপূর্ব প্রথম অব্দে স্টাবো লিখেছিলেন, “আমরা যে ভূ-ভাগে বাস করছি, সেটা ছাড়াও এক কিংবা আরো অধিক ভূ-ভাগ রয়েছে যেখানে আমাদের চেয়ে ভিন্ন ধরনের মানুষের বাস । তিনি আরো বলেছিলেন —‘এথেন্সকে যদি সমান্তরাল করে আরো পশ্চিমে বাড়িয়ে দেওয়া হয় তবে হয়তো আটলান্টিক ছাড়িয়ে এক নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে সেই ভিন্ন ধরনের মানুষ বা জাতির বাস।

এই উক্তির মধ্যে উত্তর আমেরিকার প্রত্যক্ষ উল্লেখ লক্ষণীয়। অথচ কলম্বাসের সময় প্রায় সবারই এরকম ধারণা ছিলো যে পৃথিবী হচ্ছে সমতল ।

নিনা পাণ্টা এবং সান্ত মারিয়া নামের জাহাজগুলো যদি অনেক দূরে চলে যায় তবে সেগুলো নিশ্চয় এই সমতল এলাকার কিনারা ডিঙ্গিয়ে উল্টে পড়ে যাবে ।

ধারণা যখন এরকম ছিলো, তখন সহজে অনুমান করা যায় যে, প্রথম আন্ত আটলান্টিক যাত্রার সময় নাবিক জোগাড় করা খুব কষ্টকর ব্যাপার ছিলো । এসব ঐতিহাসিক তথ্য থেকেই অনুমিত হয় যে পঞ্চদশ শতাব্দীর ইউরোপ-বাসীর তুলনায় প্রাচীন ব্যক্তিদের ভৌগলিক জ্ঞান অনেক উন্নতমানের ছিলো ।

>হেরোডোটাসের বর্ণনা অনুযায়ী খৃষ্টপূর্ব ৫০০ অব্দে মিলেটাসের সম্রাট অ্যারিস্টাগোরাসের ব্রোঞ্জের তৈরি এক ট্যাবলেটের ওপর অনেক সমুদ্র, পথ-ঘাট এবং পাহাড়-পর্বত খোদাই করা ছিলো ।

>বাবিলনের কাদামটির ট্যাবলেটের মতো এটাও হয়তো বিশ্বের প্রাচীন ম্যাপের একটি । যদি প্রাচীনকালের মানুষ নিজেরাই দূরবর্তী অঞ্চলসমূহ আবিষ্কার করে থাকে, তবে একমাত্র তখনই তাদের পক্ষে সেসব অঞ্চল সম্বন্ধে এমন নিখুঁত বর্ণনা দেওয়া সম্ভব ।

>মার্সেলাইস-এর প্রাচীন ভূগোলবিদ এবং জ্যোতির্বিদ পিথিয়াস (খৃষ্টপূর্ব ৩৩০ অব্দ) আটলান্টিকের আর্কটিক সার্কেল পর্যন্ত প্ৰমণ করে মাপ-রাত্রির সূর্যের বিজ্ঞান সম্মত ব্যাখ্যা দিয়ে গিয়েছিলেন ।

অতীতের জ্ঞানী ব্যক্তিরা কি আমেরিকা সম্বন্ধে জানতেন ? তাই অনুমান দৃঢ় হয় প্রথম শতাব্দীর ট্রাজেডি নাটক লেখক সেনেকার বিখ্যাত পদ্যাংশে:—

দেয়ার শ্যাল কাম এ টাইম

হোয়েন দি ব্যাণ্ডস অব ওশেন

শ্যাল বি লুজেণ্ড,

অ্যাণ্ড দি ভাষ্ট আর্থ শ্যাল বি লেইড ওপেন,

অ্যানাদার টিফীজ শ্যাল ডিসক্লোজ নিউ ওয়াল্ডস,

অ্যাণ্ড ল্যাণ্ড শ্যাল বি সিন বিয়ণ্ড থুল,

*থুল কিংবা আইসল্যাণ্ড ছাড়িয়ে নতুন প্রদেশ বলতে শুধুমাত্র গ্রিনল্যান্ড এবং উত্তর আমেরিকাকেই বোঝায়। টিফীজ ছিলে উপকথার জাহাজ আরগস-এর চালক । কয়েক শতাব্দীর পর যা নতুন পৃথিবী হিসেবে আবিষ্কৃত বা পরিচিত হয়েছিলো, সেনেকার এই লাইমগুলোয় তারই স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে। আমাদের এই কাল গণনা আরম্ভ হওয়ার পাঁচ শতাব্দী আগে প্লেটো আটলান্টিক মহাসাগর এবং আমেরিকা সম্বন্ধে লিখেছিলেন । তার বক্তব্য অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ আড়াই হাজার বছর কিংবা তারও আগে তারা আমেরিকার অবস্থান সম্পর্কে অবগত ছিলেন ।

------ক্রমশ---

বিষয়: বিবিধ

১২৭২ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

367247
২৭ এপ্রিল ২০১৬ সকাল ১০:৫২
দ্য স্লেভ লিখেছেন : অনেক ভালো লাগল। এসব লেখা পড়তে ভালো লাগে

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File