**কারকাসোনের (স্পেনের) মুসলিম নারী প্রথম গভর্নর কারাজন (কারকাস)

লিখেছেন লিখেছেন গোলাম মাওলা ১২ জানুয়ারি, ২০১৬, ০১:১৮:৪৫ রাত

**কারকাসোনের (স্পেনের) মুসলিম নারী প্রথম গভর্নর কারাজন (কারকাস)

কারকাসন স্পেন এবং ফ্রান্সের সীমান্তের মাঝে একটি প্রাচীন দেয়ালঘেরা সুরক্ষিত দুর্গ শহর। অডি নদীর ধারে একটি পাহাড়ের ওপর এই দুর্গ শহর। বর্তমানে ফ্রান্সের একটি জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র। এই শহরে এই নারী গভর্নর নিয়ে অনেক কাহিনী প্রচলিত রয়েছে, তবে মূলত সব কাহিনীতে প্রকাশ পেয়েছে ইনি একজন বীরাঙ্গনা মুসলিম নারী যিনি এ শহর রক্ষার জন্য যুদ্ধ করেছিলেন ।

এই শাসনের গোড়াপত্তন হয় ৭১১ খ্রি. হতে ১৪৯ খ্রি/ পর্যন্ত। যখন স্পেন আরব এবং আল আন্দালুসের মুরদের শাসনাধীনে ছিল। ৭২৫ খ্রি. বার্সেলোনার সারাসেনরা (স্পেনীয় আরব) কারকাসোন দখল করে। খ্রিস্টান রাজা পেপিন দ্য শর্ট ৭৫৯-৬০ খ্রি. দক্ষিণ ফ্রান্সের বেশিরভাগ সারাসেনদের হাত থেকে ছিনিয়ে নিলেও, দুর্ভেদ্য কারকাসোন দুর্গের ভেতরে ঢুকতে পারেননি।

কারকাস ছিলেন একজন মারুরিয়ান-আরব রাজকন্যা। প্রচলিত লোকগাথানুসারে ইনি ছিলেন আবদুর রহমান অথবা আনিস আল মোমেইন, বিশ্বাসীদের প্রভুর কন্যা। তার স্বামী ছিলেন কারকাসোন এবং নারবোন অঞ্চলের বাদশাহ আল বাবেল (বেলাল) মতান্তরে সারাসেন বালাক। তিনি যখন শহর থেকে দূরে শক্রর সাথে মোকাবেলা করছিলেন, তখন শহরের শাসনভার ছিল তার স্ত্রী কারকাসের হাতে ।

ডেইম কারকাসকে নিয়ে স্থানীয়ভাবে প্রচলিত অনেক কাহিনীর মাঝে একটি ভাষ্য রয়েছে, যেটি বর্ণনা করেছেন ফরাসি কবি/লেখক ব্ল্যাংকট ব্ৰেনার। তিনি এই শহরের একজন পুরনো বাসিন্দার কাছে ১৯ শতকে এ কাহিনী শোনেন।

**ফরাসি সম্রাট ফার্ল ম্যাইন (চার্লস দ্য গ্রেট) যখন শুনলেন এই শক্তিশালী দুর্গ শহর মুসলিম সারাসেনদের (স্পেনীয় আরব) অধীনে রয়েছে, তিনি এটি দখল করার জন্য ১২ জন ডিউক, ১২শ নাইটসহ বিশাল এক সেনাবাহিনী নিয়ে অগ্রসর হলেন । সৈন্যবাহিনী নিয়ে দুর্গ শহরের দেয়ালের বাইরে পৌছে দেখেন শহরের মাঝে ইতিমধ্যে স্পেনীয় আরবরা অবস্থান করছে।

দূর্গের অধিনায়ক প্রিন্স বালাক তার আরব সেনাদের জড়ো করে বললেন--

বীজ ঘন করে বুনলে ফসল ভাল হয়। ইনশাল্লাহ, বন্ধুগণ, আমরা যুদ্ধে জিতবো।’ কিন্তু প্রথম যুদ্ধেই বালাক এবং তার সেনানায়করা নিহত হলেন। খ্রিস্টান শিবির আরও শক্তি সঞ্চয় করে আনন্দে মেতে উঠল। কিন্তু দেয়ালঘেরা শহরে শোকের মাতম উঠলো। নেতা নিহত হবার পর তার বিধবা স্ত্রী কারকাস শহরের শাসনভার নিলেন। পুণ্যবতী এবং সাহসী এই নারী স্বামীর অসমাপ্ত কাজ হাতে তুলে নিয়ে বাকি যে কজন সারাসেন সৈন্য দুর্গের ভেতরে ছিল তাদের

নেতৃত্ব গ্রহণ করলেন। দেয়ালের ভেতরে শহরের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক নিয়মে চলছিল। চার্লস দ্য গ্রেটের সেনাবাহিনী দুর্গ অবরোধ করে বাইরের জগতের সাথে এর যোগাযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন করে ফেলে। কিন্তু এর বেশি কিছু ওরা করতে পারল না এর দুর্ভেদ্য প্রতিরক্ষা ব্যুহের কারণে। ছয় মাস, মতান্তরে পাঁচ বছর ধরে অবরোধ চললো ।

কারকাসের শেষ সৈন্যটি নিহত হলো। এরপর কারকাস খড়ের পুতুলের মাথায় টুপি পরিয়ে দুর্গের দেয়াল ঘেঁষে দাড় করালেন। চার্লস দ্য গ্রেট দূর থেকে দেখে ভাবলেন এখনও প্রচুর সৈন্য রয়েছে ভেতরে, তিনি হতাশ হলেন এ দৃশ্য দেখে।

পরদিন কারকাস একটি শূকরকে পেট ভরে মিষ্টি ভুট্টা খাইয়ে পেট মোটা করে দুর্গের দেয়ালের ওপর দিয়ে বাইরে ছুড়ে ফেললেন। মাটিতে পড়ে শুকরের পেট থেকে শস্যদানা মাটিতে ছড়িয়ে পড়ল। (শূকরের ব্যাপারটি অনেকে মানতে রাজি নন একজন মুসলিম নারীর সম্পর্কে)। এ দৃশ্য দেখে খ্রিস্টান সৈন্যরা মন্তব্য করতে লাগলো, এতো খাবার আছে ওদের যে, এই পশুটাকেও শস্য খাওয়াতে পারছে। এই খবর চার্লস দ্য গ্রেটের কানে পৌছলে তিনি তার বারোজন ডিউক, বারোশত নাইট এবং সমস্ত সৈন্যকে অবরোধ তুলে নিতে আদেশ করলেন।

এমন সময় হঠাৎ ভেতর থেকে শিঙ্গা বেজে উঠলো। দুর্গের উচু খিলান ভেঙ্গে পড়লো। এ দৃশ্য দেখে চার্লস দ্য গ্রেট আবার ফিরে এলেন সমস্ত সৈন্য নিয়ে

**আরেকটি ভাষ্য বর্ণনা করেছে, শহরের ভেতরে প্রকৃতপক্ষে মুষ্টিমেয় সারাসেন সৈন্য ছিল। কারকাস তার সব সৈন্যকে বললেন একটা একটা লাঠির ডগায় তাদের টুপি লাগিয়ে দুর্গের দেয়ালঘেষে মার্চ করতে, যাতে শক্ররা মনে করে ভেতরে অনেক সৈন্য রয়েছে। চার্লস দ্য গ্রেটের সেনাবাহিনী তবুও সামনে থেকে আক্রমণ না করে অপেক্ষা করতে থাকলো । তারপর হেমন্ত পেরিয়ে শীত এলো। শহরের পানির অভাব ছিল না, যেমনটি হয়েছিল ১২০৯ খ্রি. । কিন্তু খাদ্যভাণ্ডার ধীরে ধীরে নিঃশেষ হয়ে এল। অবরোধ নিশ্চিত পরিণতির দিকে এগুতে লাগলো।

কারকাস তার সৈন্যদের বললেন শেষ শস্য কণাগুলো আর বীজ কুড়িয়ে নিয়ে একটা শূকরকে পেট ভরে খাওয়াতে। পেট মোটা শূকরটাকে তারপর দুর্গের দেয়ালের উপর উঠিয়ে কারকাস চার্লস দ্য গ্রেটকে আলোচনা করার জন্য আহবান করলেন। রাজা তার নাইট এবং পরিচারকবর্গসহ সামনে এগুতেই প্রচণ্ড তুষারপাত শুরু হলো এবং পুরো উঠান ঢেকে গেল বরফে। কারকাস তখন তার লোকদের বললেন ঐ পেটমোটা শূকরটা ওদের দিকে ছুড়ে ফেলতে। শূকরটি ওদের সামনে মাটিতে আছড়ে পড়লো মুখভর্তি শস্যদানা নিয়ে।

কারকাস যেমনটি ভেবেছিলেন, তাই হলো। চার্লস দ্য গ্রেট সেখানে সেই মুহুর্তে এই শীতে কষ্টকর দুর্গ অবরোধ তুলে ফেললেন। তিনি তার সৈন্যবাহিনীকে আদেশ করলেন অবরোধ তুলে সেখান থেকে চলে যাওয়ার। ঠিক তখনই কারকাস তার ছোট্ট বাহিনীর বিজয় শিঙা ফুকে দিলেন। তিনি খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেলেন যখন দেখলেন তার বুদ্ধির মারপ্যাচে এতোবড় একজন যোদ্ধা হাল ছেড়ে দিয়েছেন। গ্রামের লোকজন খুশিতে চেচিয়ে উঠলো, কারকাস সোনে (কারকাস শিঙা ফুকছে)। তখন থেকে এই দুর্গ আর শহরের নাম কারকাসোন হলো ।

পরবর্তী সময়ে চার্লস নিশ্চিত করলেন এমন একজন মহৎ নারীর নামে শহরের নাম কারকাসোন রাখার ।

**সূত্রঃ যুগে যুগে মুসলিম নারীশাসক – কাজী আখতারুদ্দিন

বিষয়: বিবিধ

১১৬১ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

356711
১২ জানুয়ারি ২০১৬ রাত ০৪:০৭
দুষ্টু পোলা লিখেছেন : ভালো লাগলো ধন্যবাদ ভালো লাগলো
356723
১২ জানুয়ারি ২০১৬ সকাল ০৯:৪৬
গোলাম মাওলা লিখেছেন : ধন্যবাদ
356759
১২ জানুয়ারি ২০১৬ বিকাল ০৪:২২
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : আগে কখনও শুনি নাই এই কাহিনি
১২ জানুয়ারি ২০১৬ বিকাল ০৫:৩৮
296131
গোলাম মাওলা লিখেছেন : ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File