>সৌদি আইন বিধানঃ

লিখেছেন লিখেছেন গোলাম মাওলা ০১ জানুয়ারি, ২০১৬, ০৩:৩১:০৮ দুপুর

>>সৌদি আইন বিধানঃ

সৌদিআরব ফৌজাদারি আইন ইসলামি শরিয়াকে কড়াকড়ি ভাবে পালন করা হয়। ইসলাম অর্থ-আল্লাহর কাছে সম্পূর্ন আত্মনিবেদন। শরীয়া বা পথ ইসলামী ধ্যান-ধারনার মূল লক্ষ্য-যা আল্লাহ কর্তৃক নির্দেশিত জীবন ধারাকে পরিপূর্ন রূপে আচ্ছন্ন করে। ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত মানুষের আল্লাহর নবী মোহাম্মদ (সঃ) -এর সুন্নাহ মেনে চলার কথা। নবী মোহাম্মদ (সঃ) জনগ্রহন করেন ৫৭০ খ্ৰীঃ এবং ইন্তিকাল করেন ৬৩২ খ্ৰীষ্টাব্দে ।

কোরানের বিধান মতে মুসলমানরা তাদের-দৈনন্দিন জীবন যাত্রা পালন করছে কিনা, অধিকাংশ পশ্চিমা অমুসলিমদের কাছে বোধগম্য হওয়া কঠিন ব্যাপার। কোরআন এবং সুন্নাহ সৌদি আরবের আইনের ভিত্তি ।

(১) শরীয়া আইনের চারটি উৎস ঃ কোরআন, সুন্নাহ (হাদিস), ইজমা (উলেমাদের একমত) এবং কিয়াস (যুক্তি-তর্ক দ্বারা তুলনা করে কোন সিদ্ধান্তে পৌছানো -এনালজিক্যাল ডিকাকসন)

(২) সৌদি আরবের বাদশাও এই শরীয়া আইনের আওতা বহির্ভূত নয় ।

(৩) বিচার পদ্ধতি কিছুটা খটোমটো-অৰ্থাৎ কমপ্লিকেটেড। কিন্তু কোন রায়ের বিরুদ্ধে আপীল হলে, আপীল কোর্টে তা পূনর্বিবেচিত হয় । এই আদালতে সাধারনত তিনজন সদস্য থাকে; তবে পাঁচজন পর্যন্ত বর্ধিত হতে পারে, যদি সে-রায়ে মৃত্যুদন্ড বা অঙ্গ হানির সিদ্ধান্ত থাকে। বাদশা হলেন চূড়ান্ত বিচারক (আরবিট্রেটর) আপীল কোর্টরূপে; এবং একমাত্র তিনিই ক্ষমা প্রদানকারী।

(৪) অপরাধের ( ক্রাইম ) তিনটি ভাগ আছেঃ

(ক) হুদুদ

(খ) তাজির ও

(গ) কিসাস ।

হুদুদ হল সেই সব অপরাধ যা আল্লাহ কর্তৃক নিন্দনীয়। এর শাস্তির বিধান কোরআনেই বিধৃত। তাজির অপরাধের জন্য উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ শাস্তি বিধান করে থাকেন। আর কিসাস অপরাধের জন্য নিগৃহীত ব্যক্তিকে প্রতিশোধ নেয়ার অধিকার দেয়া হয় ।

>>হুদুদের অপরাধঃ

হুদুদের অপরাধ হল চুরি, মদ্যপান, ধর্ম নিন্দা, ধর্ষণ ও ব্যভিচার এবং লাম্পট্য । চুরির অপরাধে অপরাধী ব্যক্তির জরিমানা, জেল বা ডান হাত কর্তন করা হয় (বাম হস্ত কর্তন হয় যদি দক্ষিণ হস্ত পূর্বেই কর্তিত হয়ে থাকে) ।

মদ্যপান, বিক্রয় বা ক্রয়ের অপরাধে, অপরাধী ব্যক্তির নেশাদ্রব্য গ্রহন, ড্রাগ ইনজেকশন বা তাড়ি, ভাঙ ইত্যাদি সেবনের জন্য আশি ঘা বেত মেরে শাস্তি দেয়া হয়। ধর্ম নিন্দা, বা ইসলামের নামে কুৎসা করার জন্য অবস্থাভেদে শাস্তির ব্যবস্থা হয়। মুসলিম ও অ-মুসলিমদের জন্য শাস্তির মাত্রা ইতর বিশেষ হয়। মুসলমানের জন্য চাবুক মারাই হল সাধারন শাস্তি ।

লাম্পট্যের (ফরনিকেশন ) জন্য চাবুক মারা হয় । পুরুষদের দাঁড়িয়ে, মেয়েদের বসিয়ে । অপরাধী ব্যক্তিদের মুখ, মাথা ও নাজুক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে রক্ষা করা হয় । সাধারনত চল্লিশ চাবুক নিধারিত, তবে, অবস্থানুযায়ী ইতর বিশেষ হয়।

ব্যভিচার মারাত্নক অপরাধ। অপরাধী বিবাহিত হলে তাকে ( নারী বা পুরুষ ) পাথর মেরে হত্যা, শিরচ্ছেদ বা গুলি করে মারা হয়। সাধারণত পাথর মেরে হত্যা করা হয়। তবে এই অপরাধ প্রমাণে স্ব-স্বীকৃতি, কিম্বা চারজন প্রত্যক্ষদশী সাক্ষীর দরকার ।

তাজির অপরাধ ।

তাজির অপরাধ আমেরিকার ক্রিমিনাল অসামাজিক অপরাধ- যা অসদ আচরণ বলে গন্য। এই অপরাধের জন্য কোন নির্ধারিত শাস্তি নেই, কিন্তু ব্যক্তিবিশেষকে অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনা করে আদালত শাস্তি দিয়ে থাকে। অপরাধী দুঃখ প্রকাশ করে, অনুশোচনা করে আবেদন-নিবেদন করলে শাস্তির মাত্রা কমতে পারে।

>>কিসাসের অপরাধঃ

কোন ব্যক্তি যদি অন্য কোন ব্যক্তি বা তার পরিবার এর প্রতি তার কৃত কর্মের জন্য অপরাধী সাব্যস্ত হয়, তা হলে, ক্ষুব্ধ ব্যক্তি বা পরিবার অপরাধী ব্যক্তির উপর প্রতিশোধ নেয়ার অধিকার রাখে। অথাৎ ক, খ কে খুন করলে, খ-এর পরিবার বদলা নিতে পারে। ক্ষুব্ধ পরিবার শাস্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় গোপনে, এবং অপরাধীর উপর সে শাস্তি বর্তায় গোপনেই। অর্থাৎ নিপীড়িত ব্যক্তি বা পরিবার ( ভিকটিম ) শাস্তির মাত্রা নির্ধারণ করতে পারে।

যদি খুন হয়, তাহলে যে পরিবারের সদস্য খুন হয়েছে, সেই পরিবার অনুরূপ ভাবে খুন করার অধিকার পায় কিংবা অন্য উপায় দ্বারা খুনের বদলা নিতে পারে। যেমন, অর্থের ক্ষতিপূরণে খুনের বদলা নিতে পারে।

কোন পরিবারের সদস্য যদি রাস্তায় গাড়ী চাপা পড়ে মারা যায়, তাহলে সেই পরিবারকে 'রক্তপণ’ ( ব্লাড মানি ) দিতে হয় গাড়ীর মালিককে । প্রাচীণ কালে রক্তপণ হিসাবে উট ব্যবহার করা হত, এখন অর্থ দিতে হয়। অবস্থা বিশেষে ক্ষতিপূরণের অর্থও কম বেশী হয় । সৌদি রিয়াল ১২০,০০০ থেকে ৩০০,০০০ পর্যন্ত (আমেরিকান ডলার ঃ ৪৫,০০০ থেকে ৮০,০০০ হাজার ) যদি মেয়ে লোক মারা যায় তাহলে পুরুষের অর্ধেক ক্ষতিপূরণ দিতে হয়।

যদি কোন ব্যক্তি অন্য ব্যক্তির শরীরের কোন অংশ কেটে ফেলে তাহলে ভিকটিম বা তার পরিবার অপরাধী ব্যক্তি বা পার্টির প্রতি অনুরূপ আচরণ করতে পারে। অথাৎ অপরাধীর শরীরের অংশ কেটে নেয়ার অধিকার পায় ।

>>ফৌজদারি কার্যক্রমে (প্রসিডিংস্ ) কারা সাক্ষ্য দিতে পারে?

সাক্ষীকে অবশ্য সাবালক এবং সুস্থ মস্তিষ্কের মুসলিম হতে হবে। অ-মুসলিমদের ফৌজদারী ব্যাপারে সাক্ষ্য গ্রহন হয় না। ব্যক্তিগত ব্যাপার না হলে মেয়েদের সাক্ষ্য গ্রহণ হয় না, যদি হয়, পুরুষের দৃষ্টির বাইরে। আদালত সিদ্ধান্ত নেয় যে, সে সাক্ষ্য অবস্থা অনুযায়ী গ্রহন যোগ্য কিনা।

**সৌদি আদালতে চারটি কারণে মেয়েদের সাক্ষ্য গ্রহন যোগ্য হয়না । যেমনঃ

(১) পুরুষদের চেয়ে মেয়েরা বেশী আবেগ প্রবণ, ফলে তাদের সাক্ষ্য বিভ্রান্তিকর ।

(২) জনজীবনে মেয়েরা অংশ গ্রহন করে না, তাই তারা যা দেখে ( ঘোমটার ফাঁকে ) তা থেকে সম্যক ধারনার উপলব্ধি হয় না। অর্থাৎ যা দেখে তা থেকে ঘটনার পরিস্থিতি সম্বন্ধে অনুমান করতে অক্ষম |

(৩) মেয়েরা পুরুষদের দ্বারা পুরোপুরিভাবে অবদমিত কারণ, আল্লাহর ইচ্ছায় পুরুষরা মেয়েদের চেয়ে উৎকৃষ্ট জীব । তাই, পুরুষরা যা তাদের বলতে বলবে, তাই তারা সাক্ষ্য দিবে। অর্থাৎ পুরুষ দ্বারা প্রভাবিত সাক্ষ্য গ্রহণীয় নয়। মেয়েরা ঘটনা মনে রাখতে পারে না, ভুলে যায়; তাই তাদের সাক্ষ্য বিশ্বাস যোগ্য বলে বিবেচ্য নয়।

বিষয়: বিবিধ

১৪৫১ বার পঠিত, ৬ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

355935
০১ জানুয়ারি ২০১৬ সন্ধ্যা ০৭:৫৯
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : মেয়েদের সাক্ষ সংক্রান্ত বিষয়টি ঠিক নয়। বর্তমানে এই নিয়ম নাই।
০২ জানুয়ারি ২০১৬ রাত ০১:৩৬
295602
গোলাম মাওলা লিখেছেন : ভাই, আমি ইসলামি আইন বলিনি, বলেছি সৌদি আইন
355947
০১ জানুয়ারি ২০১৬ রাত ০৯:২৭
শেখের পোলা লিখেছেন : আল্লাহ বলেন, তোমরা কি আমার কিতাবের কিছু মানো আর কিছু অস্বীকার কর৷ যদি তা কর তবে তোমরা দুনিয়ায় নিকৃষ্ট পদদলিত হবে আর কেয়া মতে কঠিন আজাবে ফেলা হবে৷এ আয়াত তারা মানেনা, তাই আমেরিকা তাদের গুরু৷ ফিলিস্তীন মার খাচ্ছে, কোন রিফুজী আশ্রয় পায়না, শ্রমিক সময়ে বেতন পায়না৷সৌদী প্রীন্স খ্রীষ্টান বিয়ে করে৷ এমন অনেক কিছুই করে যা কোরআনে নিষেধ৷
০২ জানুয়ারি ২০১৬ রাত ০১:৩৭
295603
গোলাম মাওলা লিখেছেন : হাছা কথা
355977
০২ জানুয়ারি ২০১৬ রাত ০৪:৪২
কাহাফ লিখেছেন : সাউদি বিচার ব্যবস্থা এখনও তুলনামুলক ভাবে অনেক ন্যায় ও কল্যাণের কাছাকাছি!
বিচারে সাধারণঃ নিরপেক্ষতা বজায়ই থাকে!
ধন্যবাদ প্রাপ্য অবশ্যই এরা!
০৩ জানুয়ারি ২০১৬ রাত ০১:৩২
295651
গোলাম মাওলা লিখেছেন : হুম

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File