কলম্বাসের পর আমেরিকা
লিখেছেন লিখেছেন গোলাম মাওলা ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৫, ১২:৩৮:০৯ দুপুর
>>বইঃ কলম্বাসের পর আমেরিকা
>>লেখক: সুমিত দাস
>>প্রকাশনী: পিপলস বুক সোসাইটি, কলকাতা।
বিগত শতাব্দীর একেবারে প্রথম দিকে অসামান্য তীক্ষ্ণধী এবং কিছুটা খেয়ালি জর্জ সোরেল রচনা করেছিলেন ‘দি ইলিউশন অফ প্রগ্রেস (১৯০৮)। সাম্রাজ্য আহৃত বুজোয়া অস্তিত্বের মেদুর বোধগুলির (বিজ্ঞান, আলোকপ্রাপ্তি, মানসিকতা, যুক্তিবাদ প্রভৃতি) প্রাসঙ্গিকতা সম্পর্কে সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছিল তারই পূর্বাপর এক আলোকপাত ঘটেছে সোরেলের রচনায়। কিন্তু তা ছিল ইউরোপীয় মধ্যবিত্তের বুদ্ধি বিভাসিত সংশয়। আটলান্টিকের অপর পারে কলম্বাস-উত্তর আমেরিকার জনগোষ্ঠীগুলি বাধ্য হয়েছিল মৃত্যুবিভীষিকার এক দুর্মর দুঃস্বপ্নের মধ্যে দিয়ে এই সংশয়ের বাস্তবতা উপলব্ধি করতে। চীনের কম্পাসের উৎকর্ষসাধন, তাদের বারুদের প্রাণঘাতী আগ্নেয়াস্ত্রে রূপান্তর, টলেমির ভূগোল বা মানচিত্রের নব্য চর্চা, মার্কোপোলো রচিত এশীয় সম্পদের অস্থির কামনা— রেনেসাসের এই উদ্দীপনাগুলি নিয়ে পণ্ডিতরা চর্চা করেছেন অনেক। কিন্তু কলম্বাস-পরবর্তী আমেরিকার জনগোষ্ঠীগুলির কাছে তা কোন অব্যবহিত জ্ঞানশলাকা বা মায়াকাজল নিয়ে আসেনি। তাদের কাছে ইউরোপীয় সম্প্রসারণের অর্থ ছিল হত্যা, লুণ্ঠন, আগ্রাসন, বিনাশ এবং সর্বোপরি ‘মুছে দেওয়া সভ্যতার ইতিহাস’ ।
সমুদ্রপথে ইউরোপীয় সম্প্রসারণের সূচনা পর্ব পঞ্চদশ শতকের শেষ ভাগে। ১৪৫৩ সালে কনস্তাস্তিনোপল চলে যায় তুর্কিদের হাতে। ভূমধ্যসাগর পরিণত হয় ‘তুর্কি জলাশয়ে’। স্থলপথে পূর্ব ভূমধ্যসাগর অঞ্চলে আরব বণিকদের নিয়ে আসা এশীয় পণ্য এইসময় দুর্মুল্য হতে থাকে, ইউরোপের সোনা ও রুপোর নির্গমন বৃদ্ধি পেতে থাকে। শুরু হয় প্রাচ্যে উপনীত হওয়ার এক বিকল্প সমুদ্রপথের সন্ধান। এ ব্যাপারে এগিয়ে ছিল পর্তুগাল ও স্পেন। পর্তুগিজরা দক্ষিণ ও পূর্বের পথে এগিয়ে পৌঁছোল ভারত মহাসাগরে। স্পেনের হয়ে কলম্বাস এগোলেন আটলান্টিকের পথে পশ্চিমে। উদ্দেশ্য একই, প্রাচ্যের বৈভবের হদিশ পাওয়া। পরে বিশাল ভারত সাগরের ঘাটা-আঘাটায় পর্তুগিজরা হারিয়ে গেল কিছু বিক্ষিপ্ত বাণিজ্যবন্দর ও দুর্গ রেখে। কলম্বাস বাহামা দ্বীপপুঞ্জে পৌছেছিলেন ১৪৯২-এ। অবশ্য জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত বিশ্বাস করতেন তিনি পৌছেছেন দূর প্রাচ্যে। মূলত ক্যারিবিয়ানদের দ্বীপগুলিতেই সীমিত ছিল কলম্বাসের আসা যাওয়া। কিন্তু মাত্র পঞ্চাশ বছরের মধ্যে সেখানে গড়ে তুলেছিলেন এক বিশাল সাম্রাজ্য— বর্তমান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ অংশ থেকে আরও দক্ষিণে চিলির মধ্যভাগ পর্যন্ত। গ্রন্থটির প্রথম পর্বে বর্ণিত হয়েছে এই আগ্রাসনের অধ্যায়।
‘নতুন বিশ্বে’ স্পেনের অঞ্চলগত, রাজনৈতিক এবং বসতি বিস্তারের ক্রমে নির্ধারক হয়েছে সোনা রুপো এবং দাস শ্রমের লভ্যতা। কলম্বাসের আগ্রাসনের অঞ্চল ছিল হিসপানিওলা এবং পরে কিউবা ও পুর্তো রিকো। এই এলাকায় পাহাড়ি অঞ্চলগুলিতে প্রাচুর্য ছিল কোয়ার্টজ কন্দরে স্থিত অপর্যাপ্ত সোনা। কলম্বাস-পূর্ববর্তী সঞ্চিত স্বর্ণভাণ্ডার লুষ্ঠিত হল নির্মমভাবে। সেই সঙ্গে স্থানীয় অধিবাসীদের জবরদস্তি দাসশ্রম কাজে লাগিয়ে সোনা উত্তোলনে বাধ্য করা। এর পর শুরু হল মূল ভূখণ্ডে অনুপ্রবেশের চেষ্টা। মূল ভূখণ্ডে আজটেক ও ইনকা শক্তিকে পরাজিত করে স্পেনীয়রা এই আগ্রাসনকে আরও বিস্তৃত করে। হারনাল্ডো কর্তেস কিউবা থেকে মেক্সিকোয় অভিযান চালালেন।
>>১৫৩২-এর মধ্যে স্পেনের দখলে এল মধ্য মেক্সিকোর আজটেক সংস্কৃতির মূল কেন্দ্র। ফ্রান্সিসকো পিজারো ইনকাদের রাজধানী কুসকো দখল করেন। স্পেনের দখলে এল মহাদেশের সবচেয়ে জনবহুল অঞ্চল। কলম্বাস-পরবর্তী মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার ২০/২৫ মিলিয়ন অধিবাসীর প্রায় ৯০ শতাংশ স্পেনের কর্তৃত্বাধীনে এল। আজটেক ও ইনকাদের সঞ্চিত সোনা ও রুপোর বিপুল ভাণ্ডার পৌঁছোল ইউরোপে। কর্তেস, পিজারো-র মত ‘রেনেসাঁসে-র সস্তানেরা লুণ্ঠন আর হত্যার মধ্য দিয়ে পরিণত হলেন নবাবে।
>>ইউরোপের কাছে এই কনকুইস্তার সবচেয়ে বড় গুরুত্ব ছিল নব্য স্পেন, পেরু, জাকাটেকাস, গুয়ানাজুয়াডো প্রভৃতি এলাকার ১৫৪৩ থেকে ১৫৪৮-র মধ্যে রুপোর খনিগুলি। দখলদার অর্থনীতির প্রাথমিক উপাদানই হয়ে দাঁড়াল এই রুপোর খনিগুলি। ষোড়শ শতাব্দীতে পোতোসি ছিল সর্ববৃহৎ খনি। এই খনিকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছিল ১২০,০০০ জনসংখ্যার এক বৃহৎ শহর, যা ছিল স্পেনের যে কোন শহরের চেয়ে বড়। পোতোসি এবং জাকাটেকাস হয়ে ওঠে স্পেনের যে কোন শহরের চেয়ে বড়। পোতোসি এবং জাকাটোকাস হয়ে ওঠে স্পেনের দখলদার অর্থনীতির সবচেয়ে বড় কেন্দ্র। এই খনিগুলির প্রয়োজনেই আসতে থাকে বিপুল সংখ্যক জার্মানরা, কারণ ইউরোপে রুপোর খনি সংক্রান্ত দক্ষতায় তারা ছিল অনেক এগিয়ে। ১৫৩৫-এর পর থেকে সোনার বদলে রুপেই হয়ে ওঠে লুণ্ঠনের প্রাথমিক বস্তু।
>>১৫৭০-এ সেভিলে পাঠানো ধাতুর মধ্যে সোনার অংশ ছিল মাত্র তিন শতাংশ, বাকিটা রুপো । ১৫৪০-এর দশকে প্রতি বছর ইউরোপে পাঠানো হত ১.৫ মিলিয়ন আউন্স রুপো, ১৫৯০-এর দশকে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১০ মিলিয়ন। এর থেকেই অনুমিত হয় লুণ্ঠনের তীব্রতা ও প্রকৃতি। যে নির্মমতার সাথে আদিম পুঁজি সঞ্চয়ের অধ্যায় রচিত হয়েছিল তার প্রধানতম উৎসই ছিল লুণ্ঠন। যেটা বিশেষভাবে অনুধাবনের দাবি রাখে তা হল শুধু আদিম পুঁজি সঞ্চয়ের পর্যায়েই নয়, ধনতন্ত্রের সমগ্র পর্যায় জুড়েই এই লুণ্ঠনের ধাঁচ অব্যাহত থেকেছে এবং স্বনির্ভর কোনও অর্থনীতি নয়, আজও তা সাম্রাজ্যবাদের জিয়নকাঠি।
>>দ্বিতীয় পর্বে আলোচিত হয়েছে ‘নতুন বিশ্বের লুঠ করা সম্পদ কীভাবে পাল্টে দিল ইউরোপের জীবন। ইউরোপে রুপো উৎপাদনের পরিমাণ যত কমতে থাকে আমেরিকা থেকে লুষ্ঠিত রুপোর পরিমাণ ততই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। এশিয়ায় বাণিজ্যের জন্য প্রয়োজনীয় বুলিয়ন-এর যোগান এল এখান থেকেই। বিভিন্ন সূত্রে সমগ্র ইউরোপে ছড়িয়ে পরা রুপোর অভিঘাতে শুরু হল ‘মূল্য বিপ্লব, যা শিল্প বিপ্লবের অন্যতম প্রাকশর্ত হিসাবে কাজ করেছে। আমেরিকায় বিস্তারের সূত্রেই এল ইউরোপের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতির বিস্তার।
>>কলম্বাসের পর আমেরিকার ইতিহাস এক সর্বগ্রাসী লুণ্ঠন, গণহত্যা, তঞ্চকতা, দখলদারিত্ব ও ধ্বংসের ক্রুর ইতিহাস। এই ব্যাখ্যানের সঙ্গে একই সঙ্গে উন্মোচিত হয়েছে ইউরোপের আগ্রাসন যুক্তিসিদ্ধ করার জন্য যে সব অতিকথন ও নিরিখগুলি চারিয়ে দেওয়া হযেছে সেগুলির স্বরূপ। ইউরোপীয় সাম্রাজ্য বিস্তারের অনুষঙ্গ হিসাবে উন্নত/অনুন্নত, সভ্য/অসভ্য, প্রগতি/পশ্চাদপদতার যে ধারণাগুলি বদ্ধমূল করে দেওয়া হয়েছে সমগ্র আখ্যান জুড়ে তার যথার্থতা নিয়ে যুক্তিসিদ্ধ নিরীক্ষণ করেছেন সুমিতা দাস। আমেরিকা বলতে পাখির পালকের ভত ‘ রেড ইন্ডিয়ান, ‘কুমারী ভূমি’ আর এক পিছিয়ে থাকা স্থবির সমাজ– সুচতুরভাবে আলোকিত খণ্ড চিত্রের সমাহারে মসীলিপ্ত ইতিহাসের কুযুক্তিগুলি খণ্ডন করা হযেছে অনায়াস দক্ষতায়। কলম্বাস এবং কলম্বাস পরবর্তী লুঠেরারা প্রকৃতপক্ষে মুখোমুখি হয়েছিল এক সুসংহত ও সুস্থিত সমাজের। এই সমাজটা একরৈখিক ছিল এমনও নয়। হিসপানিওলার যুথবদ্ধ জনসমাজের পাশাপাশি ছিল আজটেকদের নগরকেন্দ্রগুলির সমাহার যা একই সঙ্গে করদরাজ্য ও মিত্ৰশক্তির সমন্বয়ে গঠিত ছিল। হিসপানিওলায় প্রথম অভিযানের পর কলম্বাস লিখেছিলেন, “ওদের যা কিছু আছে সব কিছুই ওরা স্বেচ্ছায় হস্তান্তরিত করল।” আর ঠিক তখনই কলম্বাসের আগ্রাসী প্রতিক্রিয়া, “পঞ্চাশ জন লোক নিয়ে আমরা এদের পরাজিত কতে পারব, এদের দিয়ে আমাদের যা ইচ্ছা তাই করাতে পারব।” প্রশ্ন ওঠে সভ্যতার নিরিখ কী ? স্বেচ্ছা সমন্বয়ের আবাহন না আগ্রাসনের উন্মত্ত মানসিকতা ? এই আগ্রাসন আমেরিকার জনগোষ্ঠীগুলি অনায়াসে মেনে নিয়েছে এমনও নয়। লুণ্ঠন ও অরাজকতার স্বরূপ যতই উন্মোচিত হয়েছে ততই বেড়েছে প্রতিরোধ ও প্রত্যাখ্যান। তাইনোদের যে নিষ্ঠুরতার সঙ্গে ওভানদো দমন করেছিলেন তাতে প্রায় সমগ্র তাইনো জনসংখ্যাই অবলুপ্ত হয়ে যায়। প্রতিরোধের কারণেই তেনোচতিতলান থেকে স্পেনীয়দের পালিয়ে যেতে হয়েছিল। ইনকা বিদ্রোহ ছিল পর্যায়ক্রমিক ও দীর্ঘস্থায়ী। পিজারোকে নিহত হতে হয়েছিল আলমাগরো অনুগামীদের হাতে।
>> প্রমাণ করে এলাম, দেখলাম ও জয় করলাম— আমেরিকায় ইউরোপীয় বিস্তারের এরকম চিত্র সম্পূর্ণ অনৈতিহাসিক।
গ্রন্থটির দ্বিতীয় পর্বে আলোচিত হয়েছে এই আগ্রাসনের অভিঘাতে কীভাবে সম্পূর্ণ বিপরীতধর্মী প্রক্রিয়ায় পরিবর্তিত হল ইউরোপ ও আমেরিকা। লুঠ করা এই অনজিত সম্পদে সমৃদ্ধ হল ইউরোপ, এশীয় বাণিজ্য ও উৎপাদন শিল্পে প্রয়োজনীয় বুলিয়নের সংস্থান হল, স্পেন থেকে সারা ইউরোপে সোনা রুপো ছড়িয়ে পড়ে জীবনযাত্রার মান উন্নত হল। বিপরীতে আমেরিকা প্রত্যক্ষ করল ব্যাপকতম ধ্বংস, মৃত্যু, দাসশ্রম, জনজীবনে সুস্থিতি-বিনাশ এবং বিলোপ। আগ্রাসন বিরোধী আবেগের সঙ্গে যুক্তি-পরম্পরার সহজ সমন্বয় করে একই বিবরণ ছড়িয়ে রয়েছে সমগ্র গ্রন্থটিতে। ইউরোপীয়রা কোন প্রজ্ঞা ও আলোক দিয়ে আমেরিকায় উপস্থিত হয়নি। তাদের সঙ্গী ছিল ধনী হওয়ার উদগ্র কামনা, জলদসু্যর নিষ্ঠুরতা এবং ক্রুসেডজাত ধর্মীয় উন্মত্ততা। প্রাচীন জনপদগুলি তারা ধ্বংস করেছে নির্মমভাবে। এর অনিবার্য পরিণতি জনসংখ্যার ব্যাপক হাস। গণহত্যা ও দাসশ্রমের নিপীড়নে উজাড় হয়ে যাওয়ার বর্বরতা কমিয়ে দেখাতে ইউরোপীয় পণ্ডিতেরা বড় করে দেখিয়েছিল মেক্সিকো, পেরু ও অন্যত্র গুটিবসন্ত মহামারীকে। সুমিতা আলোচনা করেছেন এই মহামারীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধহীনতার বৈজ্ঞানিক কারণ সেইসঙ্গে অতিরঞ্জনও।
>>হিসপানিওলায় ১০ লক্ষ জনসংখ্যার প্রায় সম্পূর্ণটা বিলুপ্ত হয়েছিল গুটি বসন্ত আসার আগেই। বিপর্যস্ত অর্থনীতি, আগ্রাসনের ফলে খাদ্যাভাব, খনিতে দাসশ্রম, যৌন নিপীড়ন, গণহত্যা, এমনকি উপায়াস্তর না পেয়ে আত্মহত্যা তাইনোদের অবলুপ্তি ঘটায়। একইভাবে মেক্সিকোর জনসংখ্যা কমে দাঁড়ায় মাত্র দশ ভাগে। এনকোমিয়েন্দা বস্তুত এক নব্য দাসপ্রথার প্রবর্তন করেছিল। একই সঙ্গে চলেছিল চুড়ান্ত সাংস্কৃতিক অবদমন। লাস কাসাস-এর মত দু-একজন ব্যতিক্রমী ছাড়া ফ্রান্সিসকান বা ডমিনিকান যাজকেরা ছিলেন এই আগ্রাসনের সাংস্কৃতিক নজরবরদার। আদি আমেরিকান জনসংখ্যা কমে গেলে বসবাসকারী স্পেনীয়রা কৃষিকাজ বিশেষত আখচাষে নিয়োগ করতে থাকে আফ্রিকা থেকে ধরে আনা ক্রীতদাসদের। এ আর এক কলঙ্কিত অধ্যায়। লেখক নির্মোহভাবে আলোচনা করেছেন কেন হেরে গেল আমেরিকার বৈচিত্র্যময় সভ্যতাগুলি।
উপর ছিল চুড়ান্ত নির্ভরতা, গরু-ঘোড়ার মত পশুশক্তি ব্যবহারের অপ্রতুলতা, অভ্যস্তরীণ দ্বন্দু— এ সব কিছুই। সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি মায়া ক্যালেন্ডার, ইনকাদের আমেরিকার বৈচিত্র্যময় ইতিহাস ও তার বর্ণময় সংস্কৃতির জীবন্ত পরিচয়
**স ম য় পঞ্জি
*১৪৯২ঃ ১২ অক্টোবর, ক্রিস্টোফার কলম্বাস আমেরিকার ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে একটি দ্বীপে পদার্পণ করলেন। দ্বীপটি খুব সম্ভবত বাহামা দ্বীপপুঞ্জের দ্বীপ, গুয়ানাহানি
*১৪৯২ঃডিসেম্বর, কলম্বাস হিসপানিওলায় কলম্বাস হাইতিতে পা দিলেন এবং দ্বীপটির নাম দিলেন হিসপানিওলা ৩৯ জনকে রেখে স্পেনের উদ্দেশে যাত্রা করলেন
*১৪৯৩ঃজানুয়ারি, কলম্বাস স্পেনে ফিরলেন ও বিজয়ীর সম্বর্ধনা পেলেন
*১৪৯৩ঃসেপ্টেম্বর, কলম্বাসের দ্বিতীয় যাত্রা, সঙ্গে তেরোটি জাহাজ, ১২০০ লোক, ফিরে গিয়ে তারা দেখলেন হিসপানিওলায় রেখে আসা ৩৯ জনই মৃত
*১৪৯৪-৯৬ঃকলম্বাস কর্তৃক হিস্পানিওলার তাইনোদের অধীনে আনার ও কর হিসাবে সোনা আদায়ের প্রচেষ্টা
*১৪৯৫ঃকলম্বাস স্পেনে ফিরে যান, নেতৃত্ব দিয়ে যান তাঁর ভাই বাতোলোমিউকে, সান্তো দমিঙ্গোর পত্তন
*১৫০১ঃ স্পেনীয়দের নিজেদের মধ্যে বিবাদ, কলম্বাস সরকারের পতন
*১৫০১ঃনতুন গভর্নর নিকোলাস দে ওভানদো এলেন, সঙ্গে ৩০টি জাহাজ ও ২৫০০ জন লোক
*১৫০২-৯ঃ নতুন গভর্নর ওভানদো তাইনোদের নিষ্ঠুরভাবে প্রশমিত করার কাজ শুরু করলেন, সোনার খোজ শুরু হল *১৫১০-১২ঃদমিনিকান পাদ্রিরা তাইনোদের ওপর নিষ্ঠুরতা নিয়ে সরব হলেন ভাস্কো নুয়েনেজ বালবোয়া পানামা যোজক পেরিয়ে প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূলে উপস্থিত হলেন
*১৫১৪ঃহিসপানিওলায় আদমসুমারি করে দেখা গেল মাত্র ২৬০০ তাইনো বেঁচে আছে, বাহামা থেকে ধরে আনা আদি আমেরিকানরাও দ্রুত মৃত্যুর পথে
*১৫১৬-১৯ঃহিসপানিওলায় গুটি বসন্তের সূত্রপাত, তাইনোদের আরো সংখ্যাহাস
*১৫১৯-৩০ঃ তাইনোদের বিলুপ্তি, হিসপানিওলায় স্বর্ণসন্ধানের অবসান, সেখানে আফ্রিকা থেকে আনা ক্রীতদাস দিয়ে আখ বাগিচাচাষ শুরু, স্প্যানিশরা হিসপানিওলা ছেড়ে কিউবায় যেতে শুরু করল।
*১৫১৯-২০ঃ কিউবা থেকে কর্তেসের মেক্সিকো অভিযান, আজতেক রাজধানী তেনোচতিলানোতে প্রবেশ।
মনতেজুমার মৃত্যু, তেনোচতিতলান থেকে স্প্যানিশদের পলায়ন, গুটিবসন্ত মহামারী
*১৫২১ঃ আজতেকদের রাজধানি তেনোচতিলানোর পতন
*১৫২২ঃস্প্যানিশদের মেক্সিকো দখল, কর্তেসের হন্ডুরাসে আগমন,আ লভারদের গুয়েতমালা অভিজান।
*১৫২৪-২৫ঃ প্রশান্ত মহাসাগরের উপকুলে পিজারোর অভিজান,
ইনকা হুয়ায়ানা কাপাকের মৃত্যুর পর তার দুই পুত্ৰ হুয়াসকার ও আতাহুয়ালপার মধ্যে সম্রাজ্যের জন্য লড়াই,
*১৫৩২ঃ পিজারোর পেরু প্রবেশ, ইনকা আতাহুয়ালপাকে বন্দি করা
*১৫৩৩ঃআতাহুয়ালপার মুক্তির জন্য তিনঘর ভর্তি সোনা ও রূপা মুক্তিপণ আদায় ও আতাহুয়ালপা হত্যা, পিজারোর ইনকা রাজধানী কুসকোয় প্রবেশ, পুতুল-সম্রাট মানকো কাপাকের অভিষেক
*১৫৩৫ঃদিয়েগো দে আল্মাগরোর চিলি অভিযান
*১৫৩৬ঃইনকা বিদ্রোহ, কুসকোয় স্পানিশ ঘেরাও
*১৫৩৭-৯ঃইনকা বিদ্রোহ অব্যাহত
*১৫৩৮ঃপিজারোর হাতে আলমাগরো নিহত
*১৫৪০ঃআলমাগরো অনুগামীর হাতে পিজারো নিহত
*১৫৪২—৩ঃ নয়া আইন প্রবর্তন, এনকোমিয়েন্দা মালিকদের বিরোধিতা ,
*১৫৪৪ঃ মানকো কাপাক হত্যা
*১৫৪৫-৪৬ঃপোতোসি রূপা খনি আবিষ্কার, মেক্সিকোয় মহামারী (সম্ভবত টাইফাস)
*১৫৫২ঃ লাস কাসাস-এর এ ব্রিফ হিস্ট্রি অফ ডেস্ট্রাকশন অফ দ্য ইন্ডিজ’ প্রকাশ
*১৫৫৯ঃ হুহানকোভেলিকায় পারদ আবিষ্কার
*১৫৬৪-৭০ঃ ভিলকাবাম্বার জঙ্গলে আশ্রয় নেওয়া ইনকাদের অধীনস্থ করার প্রচেষ্টা
*১৫৭২ঃ ভিলকাবাম্বা যুদ্ধ ও ইনকা তুপাক আমারু হত্যা
*১৫৭৬-৮০ঃ মেক্সিকোয় মহামারী
*১৫৮৬ঃ পেরুতে মহামারী
বিষয়: বিবিধ
১৩১৬ বার পঠিত, ৫ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন