ভুট্টা র--হস্য
লিখেছেন লিখেছেন গোলাম মাওলা ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৫, ০২:০২:০৫ রাত
ভুট্টা র-হস্য
--------------
ভুট্টা (ইংরেজি Maize, বৈজ্ঞানিক নাম Zea mays) একপ্রকারের খাদ্য শষ্য। ভুট্টা কীভাবে আবিষ্কার করা হলো তা নিয়ে পণ্ডিতদের চুল খাড়া। কেউ বলছেন, ভুট্টা একটা নতুন সৃষ্টি, প্রায় শূন্য থেকে সৃষ্টি। কেউ বলছেন, ভাগ্যের অসম্ভব সাহায্য লেগেছে এই সৃষ্টিতে। আবার কেউ বলছেন, এটা সবচেয়ে প্রাচীন জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং।
ব্যাপারটা কী? বর্তমানের ভুট্টার শিষে দানাগুলি মঞ্জরীপত্র দিয়ে ঢাকা থাকে, ফলে ভুট্টার দানা পেকে গেলেও নিজে থেকে মাটিতে পড়ে বংশবৃদ্ধি করতে পারে না— মানুষের সাহায্য লাগে। এরকমটি, বলা বাহুল্য, প্রকৃতিতে ছিল না। আসলে, বুনো গম বা ধান গাছ যেমন প্রকৃতিতে পাওয়া যায়, তা দেখতে ও খেতে গম বা ধানের মতোই, বুনো ভুট্টা গাছ কিন্তু প্রকৃতিতে পাওয়া যায় না। সত্যি বলতে কি, নিজে থেকে বংশবিস্তার করতে পারে না এমন কোনো গাছ প্রকৃতি থেকে পাওয়া সম্ভবই নয়।
বেশিরভাগ বিজ্ঞানী ভুট্টার পূর্বপুরুষ হিসাবে যে গাছটিকে চিহ্নিত করেন, সেই টিওসিন্টে বা জিয়া ঘাসের দানার সঙ্গে ভুট্টার তফাত বিস্তর। ঘাসজাতীয় এ গাছ দেখতে ভুট্টা গাছের মতো নয়। তার এক একটি শিষ লম্বায় মাত্র ইঞ্চিখানেক, তাতে পাথরের মতো শক্ত ৭-১২টি দানা থাকে। দানাগুলো
খাওয়া যায় না, খেলে তার খাদ্যমূল্য হত এক দানা ভুট্টারও কম, এবং এগুলি যথারীতি পাকলেই ছড়িয়ে পড়ে। শুধু তাই নয়, গম বা বালির ক্ষেত্রে তাদের জিনে (প্রাকৃতিকভাবে) একটিমাত্র পরিবর্তন (মিউটেশন) ঘটলেই দানা-না-ছড়ানো গম বা বালি পাওয়া যেত, সেগুলি সংগ্রহ করতে পারলেই সমস্যা অনেকটা মিটে গেল, টিওসিন্টের ক্ষেত্রে তা নয়। এপর্যন্ত কোনও দানা-না-ছড়ানো টিওসিন্টে প্রকৃতিতে পাওয়া যায় নি।
তাহলে কী করে সৃষ্টি হলো ভুট্টা? এ নিয়ে মূলত দুটি মত।
>> এক, আদি আমেরিকানরা হয়ত ভুট্টার কোনো এক বুনো পূর্বপুরুষের সঙ্গে একটি ঘাসের মিলন ঘটিয়ে সংকর ভুট্টার সৃষ্টি করে, আর তারপর বীজ বাছাই করে প্রজনন নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আধুনিক ভুট্টার সৃষ্টি করে।
>>দুই, টিওসিন্টেতে প্রাকৃতিকভাবে অদ্ভূত অনেকগুলি পরিবর্তন (মিউটেশন) পরপর ঘটে যায়, আর তারপর আদি আমেরিকানরা তার থেকে প্রজনন নিয়ন্ত্রণ করে ভুট্টা সৃষ্টি করে। এবং তৃতীয় একটি মত হল, টিওসিন্টের মধ্যে থেকে পছন্দের গুণগুলি খুঁজে খুঁজে বের করে নিয়ন্ত্রিত প্রজননের মাধ্যমে ভুট্টার সৃষ্টি করে আদি আমেরিকানরা।
যেভাবেই হোক, ভুট্টা আবিষ্কার হয়। আবিষ্কার হয় দক্ষিণ মেক্সিকোয়। সেখানে ভুট্টার বৈচিত্র্যও দেখবার মতো। লাল, নীল, হলুদ, কমলা, কালো, গোলাপি, প্রায় সাদা, নানা রঙের। ছোট্ট ভুট্টা, যার দানাগুলো চালের দানার আকারের এবং লাল। দু ফুট লম্বা ভুট্টা। কোনও ভুট্টা থেকে রুটি-জাতীয় খাদ্য ততিয়া তৈরি হয় ভালো, কোনোটা থেকে আবার এক ধরনের পানীয় বানানো হয়, কোনো থেকে পপকর্ন। মেক্সিকোতে এখনও অন্তত ৫০ রকম ভুট্টা পাওয়া যায়।
আমেরিকার অনেক জায়গাতেই প্রধান খাদ্য ছিল ভুট্টা। মায়া সৃষ্টিকাহিনী পোপোল ভু-তে বলা হয়েছে, মানুষ সৃষ্টি হয়েছে ভুট্টা থেকে। মানুষ সৃষ্টি না করলেও মধ্য আমেরিকার মানবসভ্যতা সৃষ্টিতে ভুট্টার ভূমিকা প্রধান।
দক্ষিণ মেক্সিকোতে ভুট্টা আবিষ্কার হয়। তার পর সেখানে তৈরি হয় ওলমেক সভ্যতা। মধ্য-আমেরিকার প্রথম সভ্যতা।
***সূত্র: কলম্বাস পূর্ব আমেরিকার মুছে দেওয়া সভ্যতার ইতিহাস -- সুমিত দাস
বিষয়: বিবিধ
১২২২ বার পঠিত, ১০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
তাছাড়া সৃষ্টির রহস্য তো আপনি লিখেছেন , ভাল লাগলো পড়ে ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন