বাংলায় ফরায়েযী আন্দোলনের ইতিহাস
লিখেছেন লিখেছেন গোলাম মাওলা ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৫, ০৫:২৩:২৮ বিকাল
বইঃ বাংলায় ফরায়েযী আন্দোলনের ইতিহাস
লেখকঃ ডঃমুঈন উদ-দীন আহমদ খান
অনুবাদঃ ডঃ গোলাম কিবরিয়া
প্রকাশনীঃ বাংলা একাডেমী/ ২০০৭
মূল্যঃ ১৪০ টাকা/ পেজ ১৪২
ফরায়েযী আন্দোলনের উপাদানসমূহ
০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০০
খ্রিষ্টীয় ১৮১৮ থেকে ১৯০৬ সময়ের মধ্যে ফরায়েযী আন্দোলনের উৎপত্তি ও বিকাশ সম্পর্কে জানতে এই বই এক মহামূল্যবান দলীল। এই বই এ ফরায়েযী আন্দোলনের সূত্রপাত থেকে শুরু করে ফরায়েষীদের শেষ প্রধান নেতা সাইদ উদ্দীন আহমদ পর্যন্ত সময় এখানে আলোচনা করা হয়েছে। তৎকালীন ফরায়েযী প্রধান রশীদ আলদীন আহমদ প্রকাশ বাদশাহ মিয়ার” পিতা ছিলেন সৈয়দ আলদীন আহমেদ । অন্যান্য ধর্মীয় সংস্কার আন্দোলন যেমন তরীকা-ই-মোহাম্মদীয়া এবং এর পরবর্তী উপদলসমূহের আন্দোলন ফরায়েয়ী আন্দোলনের পটভূমি হিসাবে আলোচনা করা হয়েছে।
খ্রিষ্টীয় ১৮৩০-১৮৭০ সালের মধ্যবর্তী সময়ে ফরায়েযী আন্দোলন গ্রামীণ জীবনে প্রভূত উত্তেজনার সৃষ্টি করেছিল। এই সময়ে বেশ কিছু সংখ্যক সামাজিক আন্দোলনের সৃষ্টি হয়। এই সকল আন্দোলন সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। মুসলিম আর্থ-সামাজিক জীবন সম্পর্কে কয়েকজন গবেষক আগ্রহ প্রদর্শন করেছেন। এদের মধ্যে জেমস ওয়াইজ, ডব্লিউ হান্টার এবং সৈয়দ আমীর আলী উল্লেখযোগ্য । লেখকবৃন্দ উনিশ শতকের শেষার্ধের মুসলিম সমাজ সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। ওয়াইজ মুসলিম সমাজের বিভিন্ন পেশাজীবী শ্রেণীর বিবরণ দিয়েছেন। এই সাথে ধর্মীয় সংস্কারে প্রভাব রেখেছেন এই ধরনের মুসলিম ব্যক্তিদের অবদান বিশ্লেষণ করেছেন।" হান্টার সংস্কার আন্দোলনসমূহের রাজনৈতিক চরিত্র বিশ্লেষণ করেছেন।”
সৈয়দ আমীর আলী মুসলিম উচ্চবিত্তের দ্রুত অবক্ষয়ের বিষয়টি পর্যালোচনা করেছেন। সাম্পপ্রতিক সময়ে দু'জন গবেষক উনিশ শতকের মুসলিম আর্থ-সামাজিক আন্দোলনসমূহ আলোচনা করেছেন। যদিও তাদের গবেষণা ভিন্নতর বৈশিষ্ট্যের ধারক । এই কর্মগুলোর মধ্যে একটি হল ড. এ.আর. মল্লিকের গ্রন্থ। এটি বাংলা এবং বিহার সম্পর্কিত। তিনি মুসলিম সমাজে আধুনিক শিক্ষার বিকাশ সম্পর্কে গবেষণা করেছেন।” অন্য গবেষণাকর্মটি সম্পন্ন করেছেন ড. মোহাম্মদ আবদুল বারি। তিনি ওয়াহাবী আন্দোলন সম্পর্কে গবেষণা করেছেন।” এগুলো ছাড়া বেশ কয়েকজন গবেষক ফরায়েযী আন্দোলন এবং অন্যান্য আর্থ-সামাজিক আন্দোলন সম্পর্কে প্রবন্ধ প্রকাশ করেছেন । এই প্রবন্ধ ও গবেষণাগুলোতে ফরায়েযী আন্দোলন সম্পর্কে যথেষ্ট মনোযোগ দেয়া হয়নি। যদিও ধর্মীয় সামাজিক ও ধর্মীয়-অর্থনৈতিক কারণে এই আন্দোলনটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। যে সকল গুরুত্বপূর্ণ উপাত্তসমূহ এখানে ব্যবহার হয়েছে তা নিম্নোক্তভাবে বিভক্ত করা যায় ।
ক. ফরায়েয়ী উপাত্তসমূহ,
খ. ফরায়েয়ী আন্দোলন সম্পর্কিত সমসাময়িক বিভিন্ন উপাত্ত,
গ. বাংলার মুসলিম সমাজের সামাজিক ও ধর্মীয় অবস্থার উপর লিখিত উপাত্ত,
ঘ. সরকারি নথি ।
ফরায়েষী উপাত্তসমূহ আমরা বর্তমান বাংলাদেশ অঞ্চলের বিভিন্ন অংশ থেকে ফরায়েজী আন্দোলন সম্পর্কিত উপাত্ত উদ্ধার করেছি। এগুলোর মধ্যে শিলালিপি, দলিল, ফতোয়া (আইনভিত্তিক সিদ্ধান্ত) এবং পুথি । এই সকল উপাত্ত ফরায়েয়ী আন্দোলনের বিস্তৃতি সম্পর্কে সাধারণ
নির্দেশনা দিয়েছে। এগুলো নিম্নে বর্ণিত হল।--
১ । প্রথমে হাজী শরীয়তুল্লাহর সমাধি স্থলে প্রাপ্ত শিলালিপি সম্পর্কে আলোচনা করা যায়। ১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দে গ্রন্থাকার শিলালিপিটি উদ্ধার করেন, যা গবেষকদের কাছে অজ্ঞাত ছিল। শিলালিপিটি হাজী শরীয়তুল্লাহর বংশধরদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়। এরপর শিলালিপিটি এশিয়াটিক সোসাইটি জার্নালে (ঢাকা) পরীক্ষিত ও সম্পাদিত হয়ে প্রকাশিত হয়।” আরবিতে লিখিত শিলালিপিটিতে দশটি বাক্যের একটি বিবরণ আছে।
এতে হাজী শরীয়তুল্লাহর জীবন ও চরিত্র সম্পর্কে বলা হয়েছে। এই বিবরণদ্বারা হাজী শরীয়তুল্লাহর জীবনী সম্পর্কে প্রথমবারেরমত সঠিক কালনির্ণয় করা সম্ভব হয়েছে। এর ফলে এনসাইক্লোপেডিয়া অফ ইসলামে’ লিখিত পূর্বের লেখকদের মতামত শুদ্ধ করা মৃত্যুর অল্প কিছুদিন পরই আঁড়িয়াল খাঁ (পদ্মা) নদী দ্বারা সমাধি স্থলটি ভাঙ্গনের শিকার হলে, শিলালিপিটি খসে পড়ে। তখন তার পুত্র দুদু মিয়া নিজ বাড়িতে এটি সংরক্ষণ করেন। ১৯৫৭ সালে বর্তমান লেখকের অনুরোধে শিলালিপিটি উপহার হিসাবে এশিয়াটিক সোসাইটি, ঢাকায় জমা দেয়া হয়। বর্তমান ফরায়েয়ী প্রধান মৌলবী আবু খালিদ রশিদ আল-দীন আহমদ প্রকাশ বাদশা মিয়া এটি উপহার হিসাবে প্রদান করেন । তিনি হলেন দুদু মিয়ার পৌত্র। তার পিতা খান বাহাদুর সাইদ উদ্দীন আহমদের কাছ থেকে তিনি এটি পেয়েছিলেন । ১৯০৬ সালে বাদশা মিয়া যখন ফরায়েযীদের নেতা নিবাচিত হন তখন তিনি শিলালিপিটি পান । এশিয়াটিক সোসাইটির পক্ষে ঢাকা মিউজিয়ামে রক্ষিত এই শিলালিপিটির যথার্থতা সম্পর্কে অনেকেই প্রশ্ন করেছেন। বিষয়টি আমাদের গোচরে এসেছে। আরও প্রশ্ন উঠেছে ফরায়েযীগণ সাধারণত কবরের উপর সমাধি নিমাণের বিরোধিতা করেছে, এই অবস্থায় শরীয়তুল্লাহর সমাধি নিৰ্মাণ করা হল কি করে ? তাছাড়া অনেকে শিলালিপিটি তাঁর মৃত্যুর অনেক পরে নির্মিত হয়েছে বলে মনে করেন। এটি সম্পর্কে পূর্বে বর্ণিত আমাদের আলোচনার সঙ্গে এটা যোগ করা যায় যে, এটি হাজী শরীয়তুল্লাহর মৃত্যুর পর তৈরি করা হয়েছিল এবং শিলালিপিটির ভাষা দ্বারা প্রমাণিত হয় যে তাঁর বংশধরগণ দ্বারা এটি অনেক দিন ধরে সংরক্ষিত ছিল ।
** দ্বিতীয়ত আমরা বাদশা মিয়ার বক্তব্য গ্রহণ করেছি। তার ভাষ্য অনুযায়ী শিলালিপিটি হাজী শরীয়তুল্লাহর পুত্র দুদু মিয়া কর্তৃক তৈরি হয়েছিল। এ ছাড়া এই বিষয়ে আর কোনো বিতর্কের প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। শরীয়তুল্লাহর মৃত্যুর সাল যেটি শিলালিপিতে উল্লেখিত হয়েছে সেটি আমরা গ্রহণ করেছি। এই তারিখটি সমসাময়িক লেখক জেমস টেইলর দ্বারা সমর্থিত হয়েছে। ১৮৩৯ লিখিত A Sketch of the Topography and Statistics of Dacca, তে তিনি লিখেছেন যে, ১৮২৮ সাল পরবর্তী দশ বছরে, ফরায়েষী আন্দোলন ব্যাপক প্রসার লাভ করে। তিনি আরও লিখেছেন যে, হাজী শরীয়তুল্লাহকে পুলিশের নজরে রাখা হয়েছে।” শিলালিপিতে তার মৃত্যুর তারিখ হল ১২৫৫ হিজরী, ১০ই জেলহজ্জ / ১৮৪০ খ্রি. ১২ই জানুয়ারি।” সুতরাং তারিখটির মধ্যে কোন অস্বাভাবিকতা নেই। যদি তার মৃত্যুর তারিখ নিয়ে তার বংশধরদের কেউ জালিয়াতি করে থাকে, তাহলেও আমাদের তার বংশধরদের সরবরাহকৃত তারিখটিই গ্রহণ করতে হবে। কারণ তার পুত্র বা পৌপুত্ৰগণই এই ক্ষেত্রে সবচেয়ে বিশ্বাসযোগ্য ।
** তৃতীয়ত এটা যথার্থ যে, ফরায়েয়ীগণ সমাধি সৌধ নির্মাণ বা কবর মাটি থেকে উচু করে দেয়ার বিরোধী। কিন্তু ফরায়েষীগণ কবরের চারপাশে দেয়াল নিমাণের বিরোধী ছিল নাএ এই ক্ষেত্রে বংশাল রোড ঢাকায়’ দুদু মিয়ার কবরটিকে নিদর্শন হিসেবে উল্লেখ করা যায়। এ ছাড়া ত্রিপুরা জেলার (কুমিল্লা) চাদপুরস্থ ফরায়েষী লেখক মুনির উদ্দীনের কবরটির কথাও বলা যায়।” তিনি ছিলেন সবচেয়ে পুরানো এবং প্রধান একজন ফরায়েযী নেতা । উক্ত কবরগুলো চ্যাপ্টা আকারের হলেও এগুলোর চার পাশে দেয়াল রয়েছে ।
২। একটি হাতে লেখা দলিলঃ স্ট্যাম্প কাগজে লিখিত এই দলিলে দুদু মিয়া স্বাক্ষর করেছেন ১৮৪৯ খ্রিস্টাব্দের ৪ঠা জানুয়ারি বা ১২৫৫ বঙ্গাব্দের ২২শে পৌষ এর দ্বারা মুনসী ফয়েজ উদ্দীন মোখতারকে আইন বিষয়ক এটনীর ক্ষমতা দেয়া হয়। দলিলটি দুদু মিয়ার বংশধরদের থেকে বর্তমান লেখক সম্পপ্রতি উদ্ধার করেছেন। ১৮৪৯ খ্রি. ১৫ই জানুয়ারি একটি আইন সম্পর্কিত দলিল হিসাবে এটি আদালতে রেজিস্ট্রি করা হয়। দলিলটি ৫৬ টি ছত্রে বাংলা ভাষায় লিখিত। দলিলটি মনোযোগসহকারে পরীক্ষা করে ইংরেজি অনুবাদ ও মন্তব্যসহ এশিয়াটিক সোসাইটি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।”
৩। একটি ফতোয়াঃ বাংলার গ্রামাঞ্চলে ঈদ এবং জুম্মার নামাজ আইনানুগ নয় বলে ফতোয়ায় উল্লেখ করা হয়। এটি উর্দু - আরবি ভাষায় লিখিত একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল। ফতোয়ার উর্দু অংশটি আরবি বাক্যগুলোর অনুবাদ । একটি বড় আকারের কাগজে ফতোয়াটি মুদ্রিত হয়েছে। কাগজটির আকার ১৬ বা ২৬ ইঞ্চি। এতে ৯১টি ছত্র রয়েছে, যেগুলোতে বক্তব্য ছোট অক্ষরে লিখিত আছে। ফরিদপুর জেলার বিখ্যাত ফরায়েয়ী ধর্মতত্ত্ববিদ খলিফা আবদুল জব্বারের পুত্র মৌলবী আবু ইয়াহিয়া মোহাম্মদ নূরুদ্দীন কর্তৃক ফতোয়াটি প্রকাশিত হয়।” ফতোয়াটি পূর্ববঙ্গের ২০ জন ফরায়েয়ী ধর্মতত্ত্ববিদ কর্তৃক অনুমোদিত ও স্বাক্ষরিত হয়। জুম্মা ও ঈদ সম্পর্কে সংক্ষেপে ফরায়েষীদের যুক্তি ও মতামত ফতোয়ায় প্রকাশিত হয়েছে। এটি ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দের পর সম্ভবত মুদ্রিত হয়। ফরায়েয়ী খলিফাদের মধ্যে বিলি করার জন্য এবং বিরোধীদের মোকাবেলা করার উদ্দেশ্যে এটি ব্যবহৃত হয়। ১৯৫৮ সালে ফতোয়াটির একটি কপি চাঁদপুর জেলার একটি গ্রাম থেকে বর্তমান লেখক সংগ্রহ করেন। এটি একটি দুষ্পপ্রাপ্য দলিল যা অদ্যাবধি অন্য কোথাও পাওয়া যায়নি। এটা বলা যায় যে, অপেক্ষাকৃত দেরীতে প্রস্তুত করা সত্ত্বেও দুটি কারণে ফতোয়াটির গুরুত্ব কমে যায়নি। প্রথমত ফতোয়াতে ১৮৬৭ সালে অনুষ্ঠিত ফরায়েয়ী খলিফা আবদুল জব্বার এবং মাওলানা কেরামত আলী জৌনপুরীর বিতর্কের বিবরণ রয়েছে যুা । জৌনপুরী লিপিবদ্ধ করেছেন।” ফতোয়া এবং পুথিগুলো শুক্রবারের জুম্মার নামাজ সম্পর্কে বিশদ বক্তব্য রেখেছিল। ফতোয়া দেরীতে প্রকাশের মাধ্যমে এটা প্রমাণিত হয় যে, ফরায়েষীদের সাথে তাদের বিরোধীদের সম্পর্কের অবনতি ঘটেছিল। এই ফতোয়া দ্বারা আমরা এই বিষয়ে তুলনামূলক আলোচনা করে ফরায়েযীদের মতামত জানতে পারি ।
৪ । দুরর ই মোহাম্মদ শিরোনামের পুথি (পৃ. ৯-১৩৮) বাংলা ভাষায় লিখিত। ফরায়েয়ী মতাদর্শ এবং ফরায়েয়ী নেতাদের জীবনী এই পুথিতে বিবৃত হয়েছে। পুঁথিটির প্রথম ৮ পৃষ্ঠা এবং শেষের কয়েক পৃষ্ঠা পাওয়া যায়নি। পুথিটির ভাষা এবং গঠন প্রকৃতি দ্বারা নিশ্চিতভাবে ধারণা করা যায় যে এটি ১৯০৩ সাল থেকে ১৯০৬ সালের মধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। এই সময়টি ছিল খান বাহাদুর সাইদ উদ্দীন আহমদের মৃত্যু পূর্ববর্তী সময় দুরর ই মোহাম্মদ পুথিটির ভনিতায় লেখকের নাম বেশ কয়েকবার উল্লেখিত হয়েছে। সম্ভবত দুরর ই মোহাম্মদ লেখকের ছদ্মনাম। যেহেতু পুথিটির প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা পাওয়া যায়নি সেহেতু এটির লেখক সম্পর্কে জানা সম্ভব নয়। । প্রথমত পুঁথিটির আর কোন কপি পাওয়া যায়নি এবং দ্বিতীয়ত অনেক পুরনো ফরায়েষী এমনকি বাদশা মিয়াও পুঁথিটির লেখককে শনাক্ত করতে পারেননি, তা সত্ত্বেও বলা যায় যে এটির লেখকের নাম সম্ভবত দুরর ই মোহাম্মদ । পুথিটি বাংলা ভাষায় লিখিত হলেও এটিতে আরবি ও ফার্সি শব্দের প্রাচুর্য লক্ষণীয়। এতে ধারণা করা যায় যে, লেখক একজন দক্ষ ধর্মতত্ত্ববিদ ছিলেন ; পুথিটিতে লেখকের যুক্তিগুলোও আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। প্রতিটি নতুন যুক্তি প্রদর্শনের ক্ষেত্রে লেখক শুরু করার সময় কোরআন থেকে আয়াত, হাদিস, ফতোয়া অথবা ধর্মীয় কোন গ্রন্থ থেকে উদ্ধৃতি ব্যবহার করেছেন। এগুলো আরবি, ফার্সি এবং উর্দু গ্রন্থ থেকে নেয়া। এগুলো বাংলা উদ্ধৃতিগুলোর পর সন্নিবেশিত হয়েছে। সব মিলিয়ে ৫৭ টি উদ্ধৃতি আমরা এই পুথিটিতে দেখি। এগুলোর দ্বারা ফরায়েয়ী মতাদর্শসমূহ আলাদাভাবে আমরা দেখতে পাই। পূর্বে উল্লেখিত মাওলানা কেরামত আলীর কার্যবিবরণীতে এই পুথির সারাংশ রয়েছে। তাছাড়া নিম্নোক্ত পুঁথিগুলোতেও তা পাওয়া যায় ।
৫। নাজিম উদ্দীন “পুথি" পৃষ্ঠা সংখ্যা, ১২০। বাংলা ভাষায় লিখিত ফরায়েয়ী মতাদর্শ সম্বলিত একটি পুথি। এটির প্রচ্ছদ, ভূমিকা ও শেষের দিকের কিছু পৃষ্ঠা পাওয়া যায় নি। পুথিটির মধ্যে অর্থাৎ প্রধান অংশটি (১৬ পৃষ্ঠা থেকে ১১১ পৃষ্ঠা পর্যন্ত) দুরর ই মোহাম্মদ লিখিত পুঁথিটি ৩২ পৃষ্ঠা থেকে ১৩৮ পৃষ্ঠা পর্যন্ত নেয়া হয়েছে। পুথির নিজের লিখিত কোন কিছুই উক্ত পৃষ্ঠাগুলোতে নেই। উপরন্তু দুরর ই মোহাম্মদের লিখিত পুঁথির শেষাংশ পাওয়া যায়নি এবং এটির অন্য কপিও না থাকায় এটা বলা যাচ্ছে না যে নাজিম উদ্দীনের পুথির ১১১-১২০ পৃষ্ঠার অংশটি দুরর ই মোহম্মদের পুথি থেকে নেয়া হয়েছে কি হয়নি । । নাজিম উদিনের পুথির প্রথম ৩১ পৃষ্ঠা ও তৎপরবর্তী পৃষ্ঠায় ইসতিহাদ'ও তকলিদ সম্পর্কে ফরায়েযী গণ প্রতিফলিত হয়েছে। সুতরাং আমরা ধারণা করতে পারি যে নাজিম উদিনের পুথিটি দুরর ই মোহম্মদ লিখিত পুথিটির প্রধান অংশ নিয়ে ভূমিকা সহকারে পুণর্লিখিত হয়েছে।
উক্ত প্রমাণ দ্বারা নাজিম উদ্দিন ও দুরর ই মোহাম্মদ সম্ভাব্য একই ব্যক্তি হতে পারেন মৰ্মে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। কিন্তু ফরায়েষীদের সময়কালীন প্রধান নেতা বাদশা মিয়া (১৯০৬ সালে নির্বাচিত) উক্ত ধারণা নাকচ করেছেন। বাদশা মিয়া মৌলবী নিজাম উদ্দিনকে একজন জ্ঞানী ধর্মতত্ত্ববিদ হিসাবে জানতেন। তাছাড়া নাজিমউদ্দিন তাঁর পিতা খাঁন বাহাদুর সাইদ উদিনের সার্বক্ষণিক সহচর ছিলেন। কিন্তু দুরর ই মোহাম্মদ নাজিম আলদীনের ছদ্মনাম ছিল কিনা সে বিষয়ে বাদশা মিয়া নিশ্চিত নন। খাঁন বাহাদুর সাঈদ উদ্দীনের জীবনী থেকে আমরা আরও জানতে পারি যে, মৌলবী নিজাম উদ্দিন তাঁর সাথে ১৯০৬ সালে বিহারের স্বাস্থ্য নিবাস মধুপুর গিয়েছিলেন। এ ছাড়া খাঁন বাহাদুর ঐ স্থানে যখন মৃত্যুবরণ করেন তখনও নিজাম উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন। উপরোক্ত দুটি পুঁথির ভাষার তুলনা করলেও পার্থক্য ধরা পড়ে। নিজাম উদ্দিন লিখিত পুথির ভূমিকাতে যে ভাষা ব্যবহৃত হয়েছে তার সঙ্গে দুরর ই মোহাম্মদের পুঁথির ভাষাতে বড় ধরনের পার্থক্য রয়েছে। দুরর ই মোহাম্মদের ভাষা নিজাম উদিনের চেয়ে অনেক বেশী সাবলীল ও উন্নত । সুতরাং নিজাম উদ্দিনের পুঁথি সম্পর্কে আমাদের বলতে হয় যে, এটি ছিল এক ধরনের নকল । তবে আমরা জানি যে নিজাম উদ্দিন একজন ফরায়েযী ছিলেন । আমাদের উদ্দেশ্য হল ফরায়েষী মতবাদ অনুধাবন করা। তাই এই ক্ষেত্রে উক্ত লেখকের চরিত্র জানার চেয়ে ফরায়েযী মতাদর্শ সম্পর্কে অধিকতর নিশ্চিত হওয়া যায়।
৬। ওয়াজির আলী : “মুসলিম রত্নহার" এই পুথিটিতে শুরু থেকে ১৩৩৫ বঙ্গাব্দ পর্যন্ত সময়ের ফরায়েয়ী নেতাদের জীবনী অংকিত হয়েছে। এটা এই বর্তমান গ্রন্থ রচনার ৩০ বছর পূর্বে প্রকাশিত হয়েছে। এই কর্মের কোথাও কোথাও অবিন্যস্ততা লক্ষ্য করা যায়। এই পুথিটির পৃষ্ঠা সংখ্যা ছিল ৩৫ । বর্তমান গবেষণায় এটি মাঝে মাঝে ব্যবহৃত হলেও অন্যান্য উপাত্তের সঙ্গে যাচাই করে ব্যবহার করা হয়েছে।
৭। মুনশী আবদুল হালিম : “হাজী শরীয়তুল্লাহ" হাজী শরীয়তুল্লাহ'র জীবনী সম্পর্কিত একটি পাণ্ডুলিপি। এটি ২২ ডবল পাতায় বাংলা ভাষায় লিখিত। লেখক ১৯২৮ অথবা ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে ৭০ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। তার বংশের পূর্ব পুরুষদের পারিবারিক ঐতিহ্যের উপর ভিত্তি করে এই পাণ্ডুলিপিটি তৈরি হয়েছে। তদানীন্তন ফরায়েয়ী প্রধানের মতে লেখকের পিতামহ মৌলবী ইহসান উল্লাহ ছিলেন হাজী শরীয়তুল্লাহর সমসাময়িক। এই দু’জনেই মক্কার ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সহপাঠী ছিলেন। শেষ জীবনে মৌলবী ইহসান উল্লাহকে হাজী শরীয়তুল্লাহ খলিফা মনোনীত করেন। মৃত্যুর পর তার পুত্র এবং অতঃপর পৌত্র মুনশী আবদুল হালিম খলিফা ছিলেন। বাদশা মিয়া বর্তমান গ্রন্থের লেখককে পাণ্ডুলিপিটি প্রদান করেন। পাণ্ডুলিপিটি একটি তথ্যবহুল রচনা যা হাজী শরীয়তুল্লাহর জীবনী সম্পর্কে আলোকপাত করেছে। আমরা পারিবারিক ঐতিহ্যসমূহ মূল্যবান তথ্য হিসাবে গ্রহণ করেছি।
৮ । মৌলবী আদিল উদ্দিন : “হালাত-ই-কারগুজারী” ১৯৫৮ সাল পর্যন্ত সময়ের হাজী শরীয়তুল্লাহ ও তার পরিবারের জীবনী সম্পর্কে লিখিত একটি পাণ্ডুলিপি। এটি ২৭ ডবল পাতায় ফার্সি ভাষায় লিখিত। লেখক একজন ফরায়েয়ী ধর্মতত্ত্ববিদ ও খান বাহাদুর সাইদ উদিনের শিষ্য ছিলেন। তিনি মাদারীপুরেব অধিবাসী ছিলেন। ১৯৫৮ সালে ৯০ বছর বয়সে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। লেখক ঢাকার মোহসিনিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষালাভ করেন এবং চাদপুর মাদ্রাসার শিক্ষক হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে তিনি সরকার কর্তৃক কাষী বা ম্যারেজ রেজিস্ট্রার নিযুক্ত হন এবং এই পদে ১৯৪৪ সাল পর্যন্ত কাজ করেন। ঐ বছরেই তিনি অবসর গ্রহণ করেন। তিনি একজন প্রখ্যাত ফরায়েী ধর্মতত্ত্ববিদ ও ফার্সি কবি ছিলেন । ফরায়েয়ী প্রধান বাদশাহ মিয়ার অনুরোধে আদিল উদ্দীন এই পাণ্ডুলিপিটি রচনা করেন। এই তথ্যটি পাণ্ডুলিপিটিতেও বলা হয়েছে। অন্যান্য উপাত্তসমূহের সাথে বেশী মিল না থাকায়, এই পাণ্ডুলিপিটি আমরা বেশী ব্যবহার করিনি ।
৯ । একটি হস্তলিখিত সনদ : এই সনদটি ফরায়েয়ী প্রধান আবু খালিদ রশিদ উদ্দীন আহম্মেদ কর্তৃক প্রদান করা হয়েছে। এই সনদ ১৯৩৬ সালে ত্রিপুরা (কুমিল্লা) জেলার বাজরীখোলা গ্রামের মুনশী ইরফান উদ্দীনের খিলাফত বংশানুক্রমিকভাবে প্রদান করেছে। ১৯৫৮ সালে বর্তমান লেখক উক্ত গ্রামের ফরায়েযী বসতি পরিদর্শনের সময় সনদটি পরীক্ষা করে দেখেছেন । উক্ত সনদের একটি সত্যায়িত কপি বর্তমান লেখকের কাছে রয়েছে। সনদটি দ্বারা
ফরায়েষী আন্দোলন সম্পর্কিত সমসাময়িক উপাত্তসমূহ নিম্নোক্ত বিবরণীতে আমরা ফরায়েয়ী আন্দোলন বিকশিত হওয়ার চিত্র দেখব। উপরন্তু এই সকল উপাত্তসমূহ ফরায়েষী আন্দোলনের বিরোধীরা সরবরাহ করেছে। ফরায়েয়ী বিরোধীরা এই সংস্কার আন্দোলনকে সন্দেহের চোখে দেখেছিল। তাই এই উপাত্তসমূহ দ্বারা আমরা ফরায়েষী উপাত্তসমূহকে যাচাই করতে সক্ষম হয়েছি।
(১) বেঙ্গল ক্রিমিনাল জুডিশিয়েল কনসালটেন্স (লোয়ার প্রভিসেস) ৩রা এপ্রিল, ১৮৩২ নং ৬ : ১৮৩১ সালের ২৯ শে এপ্রিলে প্রেরিত ঢাকা জালালপুর মেজিস্ট্রেটের রুবোকারি। এটি লণ্ডনের ইণ্ডিয়া অফিস লাইব্রেরীতে সংরক্ষিত আছে। রুবোকারি হলো ঢাকা-জালালপুর মেজিস্ট্রেটের একটি সরকারি প্রতিবেদন। ঢাকা- জালালপুর এলাকাটি বর্তমানের ঢাকা ফরিদপুর অঞ্চল। এই রিপোর্টটি ১৮৩১ সালের এপ্রিল মাসে হাজী: সম্পর্কিত ঢাকা জেলায় ফরায়েষী বিরোধী একটি গ্রাম আক্রমণ করে ফরায়েষীগণ যে নির্যাতন করে, তার উপর ভিত্তি করে মামলাটি দায়ের করা হয়। দলিলটি গ্রন্থাকার কর্তৃক সম্পাদিত হয়ে এশিয়াটিক সোসাইটি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।”
(২) জেমস টেইলরঃ . A Sketch of the topography and Statistics of Dacca, Calcutta, ১৮৪০, পৃ: ২৪৮-৫০। উক্ত পৃষ্ঠাগুলোতে হাজী শরীয়তুল্লাহ প্রবর্তিত সংস্কারের বিবরণ রয়েছে। হাজীর মৃত্যুর কয়েক মাস পূর্বে টেলর এই বিবরণ লিখেছেন ।
(৩) মি: ডাম্পিয়ারের পুলিশ রিপোর্টের অংশ। এই রিপোর্টে ১৮৪২ সালে একজন হিন্দু জমিদারের উপর ফরায়েষী কৃষকদের আক্রমণ সম্পর্কে তথ্য রয়েছে। এটি Calcutta Riview, vol i. A.D. ১৮৪৪. পৃ ১১৫-১৬ তে প্রকাশিত হয় । (৪) পার্লামেন্টারি নথিপত্র ঃ ১৮৬১, খণ্ড, XLIV ইণ্ডিগো কমিশন। বিভিন্ন সাক্ষী প্রমাণের বিবরণীর অংশ। পৃ-২৬৪ । এডোয়ার্ড ডি, লাটােরের দেয়া সাক্ষী প্রমাণ। ১৮৬০ সালের ৩১শে জুলাই একটি তদন্ত কমিটির কাছে উক্ত সাক্ষ্য প্রদান করা হয় । উত্তর নং ৩৯১৬, ৩৯১৭, ৩৯১৮ এবং ৩৯১৯ (ইণ্ডিয়া অফিস লাইব্রেরী, লণ্ডন) উল্লেখ্য যে, সাক্ষ্য দেওয়ার সময় এডোয়ার্ড ডি. লাটোর ছিলেন সিভিল ও সেশন জজ। কিন্তু এর পূর্বে তিনি নীল চাষের এলাকা মালদা ও দিনাজপুরে মেজিস্ট্রেট হিসেবে কাজ করেন। ১৮৪৭ সালে দুদু মিয়া ও তার অনুসারীদের ফরিদপুর সেশন কোর্টে বিচার করা হয়। মি. ডানলপের পাচচর নীলকুঠি আক্রমণের দায়ে তাদেরকে বিচারাধীন করা: হয়; এই সময় জয়েন্ট মেজিস্ট্রেট এবং ডেপুটি কালেক্টর হিসাবে ডিলাটোর ঐ স্থানে কর্মরত ছিলেন এবং এই মামলার বিষয়ে আগ্রহ সহকারে কাজ করেন । ইউরোপীয়দের নীলকরদের উপর নির্যাতন ও দুদু মিয়ার সঙ্গে ডানলপের বিরোধিতা সম্পর্কে তার মন্তব্য আমাদেরকে প্রাথমিক তথ্য সরবরাহ করেছে।
(৫) এইচ বিভারিজ : The District of Bakergonj its History and Statistics, london, AD. ১৮৭৬, পৃ. ৩৩৯-৩৪ ১৮৪৬ সালে মি ডানলপের নীল কুঠির উপর ফরায়েযীদের আক্রমণের বর্ণনা উক্ত গ্রন্থে পাওয়া যায়। ১৮৪৭ সালের ২০শে ফেব্রুয়ারি এবং ২০শে জুলাইতে লিখিত মেজিস্ট্রেটের ২ টি চিঠির উপর ভিত্তি করে উক্ত বর্ণনা লেখা হয় ।
(৬) জেমস ওয়াইজ : Notes on the Races, castes and Trades of Eastern Bengal, london. A.D. 1884, c-22-26: A sketch of the life and Career of Haji Shariat Ullah and Dudu Miyan.
(৭) Col–J.E.Gastrell Geographical and Statistical Report of the Districts of Jessore Faridpore - and Bakerganj, calcutta, ১৮৬৮. খৃ. পৃ. ৩৬ নং ১৫০-১৫১, ফরায়েয। বসতি সমূহের বিবরণ।
(৮) Hanter(ed), Imperial Gazetteer of India, London, and ed, Sb.b (t খ্রি:. খণ্ড, ৪র্থ, পৃ-৩৯৮-৪০০। ফরিদপুর শেষের দিকের ফরায়েষীদের সম্পর্কিত বিবরণ।
(৯) মাওলানা কেরামত আলী : তাজকিয়াত ই আকাইদ (উর্দু) কলকাতা, ৩৪৪ হিজরী, মাওলানা কেরামত আলীর রচনা সংকলন যখীরা ই কেরামত এ সন্নিবেশিত, এটি প্রকাশ করেছেন মোহাম্মদ সাঈদ, ভলিউম ১, পৃ. ৬৩-৮৪ : এটাতে ফরায়েষী, মতাদর্শের বিরুদ্ধে সমালোচনা করা হয়েছে।
(১০) মওলানা কেরামত আলী : হুজ্জাত ই কৃতি (উর্দু) কলিকাতা ১৩৪৪ হিজরী ঃ যখীরা ই কেরামত খণ্ড, ১, পৃ. ৮৫-১২৪ হাজী শরীয়তুল্লাহ এবং দুদু মিয়া সঙ্গে মওলানা কেরামত আলীর সাক্ষাৎ এবং ফরায়েষী ধর্মতত্ত্ববিদ খলিফা আবদুল জব্বার এর সঙ্গে বিতর্কের বিবরণ উক্ত গ্রন্থে রয়েছে।
(১১) নবীন চন্দ্র সেন ; আমার জীবন (বাংলা) কলিকাতা ১৩১৭ বঙ্গাব্দ খণ্ড ৩, পৃ. ১৪২-৪৬ এবং ১৪৯-৫৫ মাদারীপুরের হিন্দু জমিদারের সাথে ফরায়েষী কৃষকদের সংঘর্ষের বিবরণ এই অংশে রয়েছে।
>>সমসাময়িক মুসলিম বাংলার আর্থ-সামাজিক অবস্থার উপর যে সকল উপাত্ত আলোকপাত করেছে তার বিবরণ :
(১) মওলানা কেরামত আলী : মাকাশিফাত ই রাহমাত (উর্দু)কলিকাতা, ১৩৪৪ হিজরী ঃ যখীরা ই কেরামত সংকলিত, প্রাগুক্ত, খণ্ড-১ পৃপৃ ১-৩২ উনিশ শতকের মুসলিম সমাজে প্রচলিত বিদাত বা নব উদ্ভাবিত বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের বিবরণ।
(২) মওলানা কেরামত আলী : কুত্তআত আল সাবিত (উর্দু) কলিকাতা ১৩৪৮ যখীরা ই কেরামত এ সংকলিত খণ্ড-২, পৃ (১-১০৭) মুসলিম সমাজে প্রচলিত অনৈসলামিক বিশ্বাস ও আচার সম্পর্কিত ।
(৩) মওলানা কেরামত আলী : মাকামী আল মারতাদষ্টন (উর্দু) কলকাতা ১৩৪৮ হিজরী ; যখীরা ই কেরামত এ সংকলিত, খণ্ড-২, পৃ. (১৭৭-২০০) স্থানীয় আচার সমর্থকদের বিরুদ্ধে মওলানার বিতর্ক সম্পর্কিত ।
(৪) মওলানা কেরামত আলী : হক্কআল ইয়াকিন (উর্দু) কলিকাতা ১৩৪৮ হিজরী যখীরা ই কেরামত, খন্ড-২, খৃ: পৃ. (২০১-২২৪) : মুসলিম বাংলার ধর্মীয় সামাজিক আচার সম্পর্কিত বিবরণ।
(৫) হাফিজ আবদুল শাকুর : ইলান ওয়াজিব আল ইজান মিলাদ ওয়া কিয়ামপার (উর্দু) কলিকাতা, ১২৯৫ হিজরী ; মিলাদের সময়ে দাড়িয়ে কিয়াম করার ধর্মীয় আচার সম্পর্কিত সমালোচনা
(৬) মওলানা বিলায়েত আলী : আমল বিল হাদিছ (ফাসী) ১৮৩৭ সাল এশিয়াটিক সোসাইটি ঢাকা, এর কপি আছে। নবীজীর হাদিস পালনে অগ্রাধিকার রেখে মজহাব অনুসরণ সম্পর্কিত লেখকের উৎসাহ ব্যঞ্জক নীতির বিবরণ ।
(৭) মওলানা কেরামত আলী : কুত্তআত আল ঈমান (উর্দু) কলিকাতা, ১২৫৩ হিজরী । মওলানা কেরামত আলী কর্তৃক নবীজীর হাদিস ও মজহাব প্রদত্ত নিয়মাবলী স্বতন্ত্রভাবে পালনের নীতি সম্পর্কিত বিবরণ।
(৮) মৌলবী আবদুল জব্বার ; জওয়াব ই কুত্তআত আল ঈমান (উর্দু) ১৮৩৭ খ্রি। মওলানা কেরামত আলীর গ্রন্থ কুত্তআত আল ঈমানের সমালোচনা।
(৯) মওলানা আবদুল আলী : সাহিফাত আল-আমাল ওয়া সিরাত আল আহওয়াল (ফাসী) ১৩০২ হিজরী উনিশ শতকের শেষার্ধে বঙ্গীয় মুসলিম সমাজে ধর্মীয় ও সামাজিক বিভিন্ন দল সম্পর্কিত বিবরণ। এই গ্রন্থটি বিশেষ করে চট্টগ্রাম অঞ্চলে (১০) মৌলবী ফরিদ আহম্মদ ; ফার্সি ভাষায় ফাতেহা পাঠের বৈধতা সম্পর্কে ফতোয়া। (বর্তমান লেখক কর্তৃক চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে সংগৃহীত)। (১১) মৌলবী মোহাম্মদ আবদুল কাদির ; ফতহুল মুবীন ফি রাদ ই জাফর আল মোবিন (মিশ্র আরবি ও উর্দু) ১৩০০ হিজরী। সনাতন ধর্মীয় সামাজিক আচারের যৌক্তিকতা প্রসঙ্গে রচিত ।
(১২) মৌলবী সাইফুল্লাহ খান ; উর্দু ভাষায় লিখিত মিলাদ শরীফের যৌক্তিকতা সম্পর্কে ফতোয়া |
>> সরকারি নথিঃ
*নথিসমূহ বঙ্গীয় মুসলিম সমাজের ধর্মীয় সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থার উপর অনেক তথ্য প্রদান করে। সমসাময়িক ধর্মীয় সংস্কার আন্দোলন ও ফরায়েয়ী আন্দোলন সম্পর্কেও অনেক তথ্য এই নথিগুলোতে রয়েছে। - ঢাকা - জালালপুর জেলার একটি পুলিশ রিপোর্ট ১৭৯৯ সালে প্রেরিত এই রিপোটে এলাকার জনসাধারণের আচরণ এবং নৈতিকতা সম্পর্কে বলা হয়েছে। বঙ্গীয় সরকারের নির্বাচিত নথিসমূহ। নং xxx-III, বাংলায় নীল চাষ সম্পর্কিত নথিপত্র কলিকাতা, ১৮৬০ খ্রি. ১২১১ পৃষ্ঠা।
*বিখ্যাত ওয়াহাবী মামলা সম্পর্কিত প্যামৃফলেট আমীর খান ও হাশমদাদ খানের বিষয়ে কলিকাতা হাইকোটের কার্যবিবরণী | কলিকাতা ১৮৭০ সাল ।
*লুইস এ, ম্যানডেস ঃ আমীর খান ও হাশমদাদ খান সম্পর্কিত কার্যবিবরণীর উপর রিপোর্ট। ২য় অংশ কলিকাতা হাইকোর্টে তালিকাভুক্ত। আপিল মামলা নং-৩৭, কলিকাতা ১৮৭১ খ্রি.।
* হাফিজ আবদুল্লাহ গাজীপুরী : ইবরাই আহল ই হাদিছ ওয়াল কোরআন মিম্মা ফি জামি আল শাওয়াহিদ মিন আল-তোহমাত ওয়াল বুহতান (উর্দু) বেলারস। ১৩০৪ হিজরী হানাফী ও আহল-ই হাদিছ এর মধ্যে আনীত মামলার কার্যবিবরণীর পুনঃপ্রকাশ।
*১৮৪৭ সালে ঢাকা সেশন জজ কোর্টে অনুষ্ঠিত দুটি মামলার কার্যবিবরণীর অনুবাদ । এই মামলাগুলোতে দুদু মিয়া ও তার ৬৩ জন অনুসারীদের বিচার হয়েছিল। জখম, লুট ও অস্ত্রবহন করার দায়ে অভিযুক্ত করে একটি মামলা পরিচালিত হয়েছিল। অপরটি পাচচর নীলকুঠির মি. ডানলপকে আক্রমণ করার জন্য দুদু মিয়া ও তার ৬৩ জন অনুসারীকে অভিযুক্ত করা হয়েছিল। এই সাথে নীলকুঠির হিন্দু ম্যানেজারকে অপহরণের বিষয়টিও ছিল। কার্যবিবরণটি মিলিটার অরফেন প্রেস কর্তৃক মুদ্রিত। কলিকাতা, ১৮৪৮ খ্রি. ৩১৪+৪০১ এর পর থেকে এই গ্রন্থে এটি Trial of Dudu Mia রূপে ব্যবহৃত হয়েছে। এই শিরোনামেই এটি পরিচিত ।
*মুঈন উদ দিন আহমদ খান : Selections From Bengal Government Records on Wahhabi Trials ১৮৬৩-১৮৭০ নির্বাচিত অংশ।
*বাংলা বিহার ও মাদ্রাজে সৈয়দ আহমদ শহীদের অনুসারীদের সম্পর্কিত নথি ।
*ঢাকা, এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশ ১৯৬১, ৪২৯ পৃ।
*A Report of the Collector of Faridpure : 43 রিপোটে বিভিন্ন কর ও অবৈধ চাদার বিবরণ রয়েছে ১৮৭২(গ্রন্থের পরিশিষ্ট গ দেখুন)।
*A Report of the Collector of Faridpure : হিন্দু ও মুসলিম সমাজে বিভিন্ন জাত এর সংখ্যাগত রিপোর্ট। (দ্রষ্টব্য পরিশিষ্ট ক) ১৮৭২ ।
*A Report of the Collector of Faridpur : এই জেলার জমির খাজনা সম্পর্কিত রিপোর্ট ১৮৭২ সাল (দেখুন পরিশিষ্ট ঘ) ।
--------------------------------------------
বিষয়: বিবিধ
১৪৫৮ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন