দেবলোকের যৌনজীবন

লিখেছেন লিখেছেন গোলাম মাওলা ০৬ ডিসেম্বর, ২০১৫, ০২:৩৬:৩০ দুপুর

বইঃ দেবলোকের যৌনজীবন

লেখকঃ ডঃ অতুল সুর

প্রকাশনীঃ জোছনালোক, কলকাতা ১৯৮৩

গ্রীকরা তাদের দেবতাদের নিজেদের মত মানুষের প্রতিরূপেই কল্পনা করত । আর তাইতো গ্রীকপুরাণে দেবতাদের যৌন জীবন নিয়ে নানা ঘটনা পাওয়া যায়। গ্রীকরাদের মত হিন্দুরাও তাদের দেবদেবীদের মানুষের প্রতিরূপেই কল্পনা করে। আর সেজন্য মনুষ্য সমাজে নারীপুরুষের আচরণে যে সব দোষ-গুণ গ্রীক বা হিন্দু পুরানের দেবদেবীদের মধ্যেও আমরা তাই দেখি। মনুষ্যসমাজে পুরুষ অপরের স্ত্রীর প্রতি লালসা প্রকাশ করে বা অপরের স্ত্রীকে অপহরণ ও ধর্ষণ করে বা নারী-পুরুষ অজাচার ও ব্যভিচারে লিপ্ত হয় । গ্রীক ও হিন্দু দেবদেবীদের মধ্যেও তাই আমরা দেখি।

গ্রীকদের সবচেয়ে বড়ো দুই দেবদেবী ছিল জ্যুস ও ডিমিত্রাস। এ দুজনেই আদর্শ চরিত্রের দেবতা ছিলেন না। জুসি তার অনুঢ়া ভগিনী ডিমিত্ৰাসে উপগত হয়ে কৃষিদেবী পারসিফোনের জন্ম দিয়েছিল। আবার পড়ি নিজ দুহিতা মিরহাতে উপগত হয়ে তার পিতা অ্যাডোনিস-এর জন্ম দিয়েছিল । এই অজাচারের জন্য মিরহাকে বৃক্ষে পরিণত হতে হয়েছিল । আবার পড়ি অ্যাক্টিয়ন নামে এক পৌরানিক শিকারী আর্টেমিসকে নগ্ন অবস্থায় স্নান করতে দেখেছিল বলে সে মৃগীতে পরিণত হয়েছিল । আবার অ্যালকিন্তু তার নিজ ভগিণী এরিট্রকে বিয়ে করেছিল । এরূপ অজাচারের অনেক দৃষ্টান্তই গ্রীকপুরাণে আছে। তার মধ্যে সবচেয়ে বীভৎস হচ্ছে ইডিপাসের নিজ মাতাকে বিয়ে করে তার গর্ভে চারটি সস্তান উৎপাদন করা। প্রণয়ের দেবী অ্যাফ্রোডিটিকে আমরা ব্যভিচারে লিপ্ত হতে দেখি এবং ওই ব্যভিচারের ফলে তার অনেকগুলি সন্তান হয়েছিল । অ্যাপোলোকে আমরা দেখি ড্রাইওপি নামক পরীকে অপহরণ করতে। টিটিয়াসকে আমরা দেখি লিটোকে ধর্ষণ করতে উদ্যত হতে। আবার আর্টেমিসকে

দেখি সতীত্বের প্রকৃষ্ট প্রতীক হিসাবে। যদিও আর্টেমিসের সঙ্গে আটলাণ্টাকে একীকরণ করা হয়েছিল তা হলেও আটলাণ্টা কুমারী অবস্থায় মেলিয়াগারকে প্রসব করেছিল । গ্রীক পুরাণে আরও আছে যে দেবতারা যৌনলিন্সার বশীভূত হয়ে পৃথিবীতে আসতে মর্ত্যের মানবীদের সঙ্গে মিলিত হতে ।

এই বইয়ে হিন্দুদের দেবলোকের যৌনজীবনের যে চিত্র অঙ্কিত করা হয়েছে তাতে আশ্চৰ্য্য হবার কিছু নেই।

*মানুষ গোড়া থেকেই তার দেবতাকে নিজের স্বরূপে কল্পনা করে নিয়েছিল । সেজন্য মানুষের যে সব দোষ-গুণ আছে, তার দেবতাদেরও তাই ছিল । এটা বিশেষ করে লক্ষিত হয় দেবতাদের যৌনজীবনে । যৌনজীবনে মানুষের যে সব গৰ্হিত আচরণ আছে, দেবতাদেরও তাই ছিল । যৌনজীবনে সবচেয়ে গৰ্হিত আচরণ হচ্ছে ইনসেক্ট' বা অজাচার। ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ের মধ্যে যে যৌনসংসর্গ ঘটে, তাকেই অজাচার বলা হয় । তবে যে সমাজের মধ্যে এরূপ সংসর্গ ঘটে, সেই সমাজের নীতি-বিধানের ওপরই নির্ভর করে কোনটা অজাচার, আর কোনটা অজাচার নয়। দৃষ্টান্তস্বরূপ বলা যেতে পারে যে ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের কোন কোন উপজাতির মধ্যে বিধবা বিমাতা ও বিধবা শাশুড়ীকে বিবাহ করার প্রথা আছে । অন্যত্র এটা অজাচার। উত্তর ভারতে বিবাহ সপিণ্ড-বিধান ও গোত্র-প্রবর-বিধি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত । সেখানে ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ের মধ্যে অজাচার ঘটবার উপায় নেই। আবার দাক্ষিণাত্যে মামা-ভাগ্নী ও পিসতুতো-মামাতে ভাই-বোনের মধ্যে বিবাহ সামাজিক নিয়ম-কানুন দ্বারা স্বীকৃত। সেখানে এরূপ যৌন সংসর্গ অজাচার নয়। আবার প্রাচীনকালে ভ্রাতা ও ভাতৃবধূর মধ্যে যৌন-সংসর্গ অজাচার বলে গণ্য হত না । ভ্রাতা অস্বীকৃত হলে, অপরকে ডেকেও বিধবা বধূদের গর্ভসঞ্চার করানো হত। এরূপ গর্ভসঞ্চারের ফলেই মহাভারতের দুই প্রধান কুলপতি ধৃতরাষ্ট্র ও পাণ্ডুর জন্ম হয়েছিল ।

* অথর্ববেদে (৮৬৭) পিতা-পুত্রী ও ভ্রাতা-ভগিনীর মধ্যে যৌনমিলনের উল্লেখ আছে । নহুষ তার ‘পিতৃকন্যা’ বিরজাকে বিবাহ করেছিল ও তার গর্ভে ছয়টি সন্তান উৎপাদন করেছিল ।

*মানুষের এরূপ যৌনাচারের প্রতিফলন আমরা দেবতাদের জীবনেও লক্ষ্য করি । মানুষের যৌনজীবনে যেমন সংযমের অভাব দেখা যায়, দেবতাদের ক্ষেত্রেও ঠিক তাই ছিল । বস্তুতঃ দেবতাদের আমরা ইন্দ্রিয়পরায়ণ, কামাসক্ত, অজাচারী, বহুপত্নীক ও ব্যভিচারীরূপে দেখি । আর ইন্দ্রের দেবসভা, মর্ত্যের রাজারাজড়াদের অনুকরণেই কল্পিত হয়েছিল। সেই দেবসভার সঙ্গে আমরা পরবর্তীকালের মোগল বাদশাহদের দরবারের বা জমিদার-তালুকদারদের বৈঠকখানা ও বাগানবাড়ীর নাচঘরের কোন প্রভেদ দেখি না । দেবসভায় আমরা যখন অপ্সরাদের নাচতে দেখি, তখন আমাদের মনে হয় তারা যেন নাচছে মহারাজ নবকৃষ্ণ দেব বাহাদুরের শোভাবাজারের রাজবাড়ীর হলঘরে ব। রাজ রামমোহন রায়ের মানিকতলা বাগানবাড়ীতে । বস্তুত দেবসভা মুখরিত হয়ে থাকত অঙ্গরাদের নাচগানে। নামজাদা অঙ্গরাদের মধ্যে ছিল উর্বশী, মেনকা, রম্ভ, তিলোত্তম, ঘৃতাচী, সুকেশী, মঞ্জুঘোষা, অলম্বুষা, বিদ্যুৎপর্ণ, স্ববাহু, মুপ্রিয়া, সরসা, পঞ্জিকাস্থল ও বিস্বাচী । মৃত্যকলায় এরা সকলেই ছিল পারদর্শিনী। তাদের সৌন্দর্য ও যৌন আবেদনের কথা সব সময়ই বিশেষভাবে উল্লিখিত হয়েছে। তারা ছিল স্বর্গের স্বাধীন নারী। তার মানে মর্ত্যলোকের বারযোযিতদের সঙ্গে ৩াদের কোন প্রভেদ ছিল না ।

**সূচী

অঙ্গরাদের যৌন আবেদন , দেবদেবীর ব্যভিচার, দেবদেবীর অজাচার, শিব সংযমী দেবতা , রাজমহীষীদের আশ্বসঙ্গম , নারীসঙ্গম ও তন্ত্রধর্ম , বিদ্যাধর ও বিদ্যাধরীদের আচরণ , মহাদেবের অনুচর , দেবদেবীর কুলজী , মুনি ঋষিদের যৌন জীবন , মৈথুনের মল্লবীর , হিন্দুদের কামশাস্ত্র, হিন্দুমন্দিরে মিথুনমূর্তি , বেদপুরাণের ইতিবৃত্ত , দেবলোকের পরিচিতি , পৌরাণিক উপাখ্যান ।

বিষয়: বিবিধ

৩২০১ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

352902
০৬ ডিসেম্বর ২০১৫ বিকাল ০৫:৪৭
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভালো লাগলো অনেক ধন্যবা!
352904
০৬ ডিসেম্বর ২০১৫ বিকাল ০৫:৪৯
গোলাম মাওলা লিখেছেন : বইঃ দেবলোকের যৌনজীবন (HQ পিডিএফ)
লেখকঃ ডঃ অতুল সুর
প্রকাশনীঃ জোছনালোক, কলকাতা ১৯৮৩
সাইজঃ ৮.৫ মেগাবাইট
http://www.pdf-archive.com/2015/12/06/davloker-juno-jibon/
http://www.pdf-archive.com/2015/12/06/davloker-juno-jibon/

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File