ভাসকো ডা গামার পাঁচশ বছর
লিখেছেন লিখেছেন গোলাম মাওলা ০৬ ডিসেম্বর, ২০১৫, ০১:৫১:৩৬ রাত
বইঃভাসকো ডা গামার পাঁচশ বছর
লেখকঃ সুরজিত দাশ গুপ্ত
প্রকাশনীঃমিত্র ও ঘোষ পাবলিশার্স,৯৮
ভাসকো ডা গামা ১৪৯৭ খ্রিস্টাব্দের ৮ জুলাই যাত্রা শুরু করে ১৪৯৮-এর ২৯ মে ভারতে প্রথম আগমন করেন । ঠিক তার পরদিনই ৩o মে কলম্বাস তাঁর তৃতীয় অভিযান শুরু করে ১ আগস্ট পশ্চিম গোলার্ধের মূল মহাদেশে প্রথম পদার্পণ করেন। দুজনেরই দুটি কীর্তি পাঁচ শ সাতাশ বছর হল এই ২০১৫ খ্রিস্টাব্দে । দুজনেই ইউরোপের মহান রেনেসাঁসের দুই কীর্তিমান । এই রেনেসাঁর একটা মাত্রা রূপে ইউরোপ সমুদ্রপথে দিকে দিকে নিজেকে বিস্তৃত করে । রেনেসাঁর একটা সৃষ্টিশীল দিক আছে যেখানে তা অতীত কালের সংস্কৃতি থেকে প্রেরণা সংগ্রহকারী ।
ইতিহাসের এক ঝলক পাওয়া যাবে এই বই এ। ভাসকো ডা গামার আগমনে ভারতের ইতিহাসে দেখা দেয় ভাঙাগড়ার নতুন প্রক্রিয়া। তেমনই কলম্বাসের পশ্চিম গোলার্ধে পদার্পণের ফলে ইউরোপ ও আমেরিকার মধ্যে গড়ে উঠতে থাকে এক অভিনব সম্পর্ক । তাঁদের যুগ থেকেই globalisation বা ভুবনীকরণ প্রক্রিয়ার সূচনা ।
কলম্বাস ছিলেন একজন অক্লান্ত লেখক। পক্ষান্তরে সমুদ্রাভিযানগুলি সম্বন্ধে পর্তুগালের নীতিই ছিল গোপনীয়তা । ফলে ডা গামার অভিযান সম্বন্ধে তথ্য অল্পই মেলে । তাঁর ভারতে আসার বা অনন্য তারিখ সম্বন্ধে সংশয় থাকলেও মোটামুটি কাছাকাছি ধারনা পাওয়া যায়।
১৪৯৮ খ্রিস্টাব্দের মে মাস, সেদিন বোধহয় ২৯ তারিখ । কেরালার মালাবার তটের বন্দর-শহর কালিকট থেকে মাইল আটেক দুরে অখ্যাত এক গ্রাম কাপুকড়। পূর্বের আকাশ ভরে গেছে নবীন সূর্যের আলোয়। পশ্চিমের রঙ্গমঞ্চ থেকে উঠে যাচ্ছে বিগত রজনীর কালো পর্দা। দেখা গেল আরব সাগরের জলে ভাসছে তিনটে নোঙর বাঁধা পাল নামানো জাহাজ । সেগুলো আরব বণিকদের জাহাজের তুলনায় অনেক বড়ো। ওই জাহাজ তিনটেতে কোনও অজানা জাতির সাদা চামড়ার সব মাঝিমাল্লা । পরে তাদের নেতা ভাসকো ডা গামা নামে ইতিহাসে প্রসিদ্ধ হন।
গামার অতীত জীবনের বিষয়ে বিশেষ কোনও খবর পাওয়া যায় না। শুধু এটুকু জানা যায় তিনি ১৪৬o সালে মাঝারি স্তরের কোন রাজকর্মচারীর ঘরে জন্মেছিলেন। সাহস ও নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতার জন্য যৌবনেই তিনি স্বদেশে খ্যাতি পেয়েছিলেন এটা সহজেই অনুমান করা যায়। তা না হলে এত বড় কাজের দায়িত্ব তাঁকে দেওয়া হত না । কাজটা ছিল ইউরোপের দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্ত থেকে আফ্রিকা প্রদক্ষিণ করে ভারত পৰ্যন্ত সমুদ্র-পথ আবিষ্কার করা । ভারতের মাটিতে গামার পদার্পণের ফলাফল ইতিহাসে বহু দূর প্রসারিত। গামার প্রদর্শিত পথ ধরে ইউরোপের আরও বহু জাতি পরবর্তী শতাব্দীতে ভারতে আসে, ভারতের জীবনযাত্রাকে আমলে পরিবর্তিত করে এবং ভারতের ধনরত্ন লুঠ করে নিয়ে যায় নিজেদের দেশে । ভারতের শত শত বছরের ইতিহাসে ভারত বিদেশীদের দিয়ে বহুবার আক্রান্ত হয়েছে, বিদেশীদের হাতে ভারতের বহন অধিবাসী হতাহত হয়েছে, কিন্তু কখনও তেমন ভাবে লুণ্ঠিত হয়নি যেমন ভাবে ইউরোপীয় জাতিগুলির হাতে হয়েছে । শোষণ ও লন্ঠনের এ এক নতুন অধ্যায়। ভাসকো ডা গামা প্রথমবার যখন ভারতে এসেছিলেন তখন অবশ্য ভারতীয় রাজার জন্য বহু উপহার সঙ্গে করেই নিয়ে এসেছিলেন । যে ভারতীয় রাজার দরবারে তিনি গিয়েছিলেন সেই রাজা পরিচিত ছিলেন জামোরিন বলে । জামোরিনরা ছিলেন কালিকটের রাজা । তৎকালীন জামোরিন প্রথমটাতে খুব সমাদরের সঙ্গেই ভাসকো ডা গামা ও তাঁর লোকজনদের গ্রহণ করলেন। সব রকম ব্যবস্থা করে দিলেন যাতে পর্তুগিজরা স্বচ্ছন্দে ব্যবসাবাণিজ্য করতে পারে তাঁর রাজত্বে । আরব সওদাগরদের সেই সময় খুব প্রভাব ছিল জামোরিনের উপরে । তাছাড়া দুনিয়ার হালচাল সম্বন্ধে তারা বেশি ওয়াকিবহালও ছিল । তারা জামোরিনকে বোঝাল যে অত দূরে দেশ থেকে অত বিপদ বাধা তুচ্ছ করে যারা এসেছে তারা শুধু ব্যবসাবাণিজ্যই করতে আসেনি, তাদের সুন্দর মুখের পেছনে আছে রাজ্যজয়ের দুদান্ত আকাঙ্ক্ষা ।
-------------- বাকিটা পড়েই জানতে হবে????
বিষয়: বিবিধ
১১৭৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন