বাংলার লৌকিক দেবতা

লিখেছেন লিখেছেন গোলাম মাওলা ২১ নভেম্বর, ২০১৫, ১২:৩০:৩২ দুপুর

*বইঃ বাংলার লৌকিক দেবতা

*লেখকঃ গোপেন্দ্র কৃষ্ণ

*প্রকাশনীঃ দেজ পাবলিশিং/১৯৬৬

*মূল্যঃ ১০০ টাকা( বাংলাদেশি টাকায় ২০০ টাকা)

পল্লীবাসী, স্বাভাবিক কারণে লোক-সংস্কৃতির প্রতি একটা অনুরাগ সবসময়। সুযোগ পেলে নিজ গ্রামের আশপাশে, লোক-সংগীত শুনেছি । গেছি বিভিন্ন যায়গায়। চেষ্টা করেছি জানার আর বই পড়ার। বাংলার লৌকিক দেবতা বইটা পেয়ে হাতে চাঁদ পাবার মত অবস্থা। এ জন্য স্পেশাল ধন্যবাদ রুম্মান ভাই কে, যে তিনি পড়ার জন্য বইটা আমাকে দিয়েছেন। ছোটতে গ্রামের মানুষদের কাছে শুনে শুনে বড় হয়েছি বার মাসে তের পার্বন। আর তখন শুনতাম হিন্দুদের ৩৩ কোটি দেবতা। আর এ কথা সত্য মনে হত যখন দূর্গা, কালি, স্বরস্বতি ইত্যাদি বড় পূজার পাশাপাশি এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের মাঝে( এই লৌকিক দেবতার দু একজনের ) নাম অজানা বিভিন্ন দেবতার পূজা করতে দেখতাম। তা যাই হোক এবার আসি মূল কথায়।

--লৌকিক দেবতাদের পূজা-পার্বণ মূলত শহর থেকে দূরে পল্লী এলাকার হিন্দু মানুষদের মাঝে প্রচলিত বিশ্বাস। উচ্চবর্ণের ব্যক্তিরা লৌকিক দেবতাদের প্রতি খুব কমই শ্রদ্ধান্বিত । তাদের দু’একজন সময় বিশেষে লৌকিক দেবতাদের কোন কোনটিকে পূজা দিতেন, কিন্তু তাদের ধারণা ছিল, যেহেতু অশাস্ত্রীয় এবং নিম্নবর্ণের দ্বারা অধিক-পূজ্য অতএব ইহারা চাষা-ভূষাদের দেবতা।

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ এ বিষয়ে যে বলেছেন--- দেশের লোক-সংস্কৃতির মধ্যে অতীত যুগের সংস্কৃতির এমন বহু নিদর্শনাদি সংগুপ্ত আছে যেগুলি আমাদের জাতির পূর্ণাঙ্গ ইতিহাস রচনার মূল্যবান উপকরণ হতে পারে,।

ভারতবর্ষে বসবাস রত প্রত্যেক জাতি ছিল ধর্মপ্রবণ । আর অতীত দিনে প্রায় সকল সংস্কৃতি, সমাজ-ব্যবস্থা, শিল্প-সাহিত্য প্রভৃতি ধর্মকে কেন্দ্র বা আশ্রয় করে সৃষ্ট ও পুষ্ট হয়েছে। উচ্চ ভাবাদর্শে অতীতকালের সংস্কৃতির মৌলিক রূপ বর্তমানে উন্নত বা ব্রাহ্মণশাসিত সমাজে মিশ্রিত বা নষ্ট হয়ে গেছে,-পল্লী অঞ্চলেও যে উন্নততর বহিরাগত সংস্কৃতির প্রভাব বিস্তারলাভ একেবারে করেনি, সে কথা বর্তমানে আর বলা যায় না, তবে তা হয়েছে ধর্মেতর (secular) দিকটার উপর। কিন্তু পল্লী-সমাজে ধর্মাচরণ বিষয়ে অতিমাত্রার রক্ষণশীল, বা আপোষ বিরোধী। ধাৰ্মিক ব্যাপারে পল্লীর জনসাধারণ লোকায়ত বিধান বা অনুশাসন মেনে চলেছে বর্তমানেও।

শ্রদ্ধেয় মনীষী শ্রীরাধাগোবিন্দ বসাক বলেছেন,—“যে পর্যন্ত না কেহ এদেশের লৌকিক দেবতার বিষয় লিখছেন সে পর্যন্ত বাংলার সংস্কৃতির একটা গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় অলিখিত থাকবে। অনুরূপ মন্তব্য লোক-সংস্কৃতির অগ্রগণ্য গবেষক-শ্রীআশুতোষ ভট্টাচার্য, তার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘বাংলা মঙ্গল-কাব্যের ইতিহাসে করেছেন।

লৌকিক দেবতা ও তাদের পূজাচার প্রসঙ্গে আশুবাবু বলেছেন—“..ইহাদের সহিত পৌরাণিক হিন্দুধর্মের

কোন সম্পর্ক নাই...কিন্তু আলোচনা দ্বারা বাংলার সামাজিক ইতিহাসের একটি মূল্যবান অধ্যায় সংযোজিত হইতে পারে..বাংলার নৃতত্ত্ব, জাতিতত্ত্ব, ভাষাতত্ত্ব আলোচনায়ও ইহার মূল্য অপরিসীম।

আর পল্লিতে প্রচলিত এই সব লৌকিক দেবতারা হলেন---

মাকাল ঠাকুর,

পাচু ঠাকুর,

বনবিবি,

আটেশ্বর,

কালুরায়,

মুণ্ডমুর্তি,

ওলাইচন্ডি,

বাবাঠাকুর,

বড় খা গাজি,

বাসলি,

যোগাদ্যা,

বড়াম,

জ্বরাসুর,

রাজবল্লভী,

ঢেলাইচন্ডী,

নারায়নী,

হাড়িঝি,

সাত বোন,

পীর গোরাচাদ,

বসন্ত রায়,

দেবী উত্তরবাহিনী,

ইদপূজা,

রংকিনী,

টুসু,

ভৈরব,

করম রাজা,

সিনি দেবি,

দক্ষিণরায়,

ভাদু,

মানিক পীর,

ক্ষেত্রপাল,

ঘাটু দেবতা,

ওলাবিবি (মুসলিম সমাজেও প্রচলিত ছিল- হাজার বছর উপন্যাসে এ বিষয়ে এসেছে),

ধর্মঠাকুর,

সত্যনারায়ণ—সত্যপীর(মুসলিম সমাজেও প্রচলিত ছিল

বইটাতে এই সব প্রচলিত অপ্রচলিত দেবতাদের ছবি সহ সরস বর্ননা লেখক দারুন ভাবে উপস্থাপনা করেছেন। লেখকের ভাষায়-- -প্রায় পনের ষোল বৎসর যাবত বিভিন্ন জেলার বিভিন্ন পল্লী ভ্রমণ, গেলাম ; দেখতে পেলাম বহু লৌকিক দেবতার মূর্তি, প্রতীক ; লক্ষ্য করলাম তাদের পূজাচার। পুরোহিত, পূজক কারা এবং পূজ্য স্থানের প্রাচীন ইতিহাস সম্বন্ধে বিবরণও সংগ্রহ করলাম। তখন ভাল ফটো তুলতে জানতাম না। তাই সম্ভবপর ক্ষেত্রে স্থানীয় ঐতিহ্যবাহী পটুয়া দ্বারা থানের দেবতার অনুরূপ ক্ষুদ্রাকৃতি মূর্তি গঠন করিয়ে আনলাম, যদিও উক্ত পটুয়ারা সবক্ষেত্রে থানের মূর্তির হুবহু করতে পেরেছে তা নয়, তাহলেও কতকটা করতে সক্ষম হয়েছে। নানা জেলার ঐরূপ মূর্তি নিয়ে আমি একটা সংগ্রহশালার পত্তন করলাম, আমার পল্লী-বাসভবন-মজিলপুর গ্রামে।

বিষয়: বিবিধ

৩২৮০ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

350613
২১ নভেম্বর ২০১৫ দুপুর ১২:৩৮
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : এই ধরনের আঞ্চলিক দেবতা শুধু পল্লিতে নয় অনেক শহুরে হিন্দু বাড়িতেও পূজিত হয়। ভাল লাগল।
350678
২১ নভেম্বর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৬:৪৩
গোলাম মাওলা লিখেছেন : হা ঠিক, তবে এখন খুব কমে গেছে।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File