প্রিয় চরিত্র ৩০ বৃদ্ধ দাদু

লিখেছেন লিখেছেন গোলাম মাওলা ০৩ নভেম্বর, ২০১৫, ০১:২৩:৩১ রাত

প্রিয় সব চরিত্র -সাত (৭)

*********************

৩০।বৃদ্ধ দাদা

------------

*প্রিয় চরিত্র: বৃদ্ধ দাদা

*স্রষ্টা : পল্লী কবি জসীমউদ্দীন

*উতস: কবর কবিতা

জীবনে যে কবিতাটি না পড়লে প্রত্যেক পাঠকদের জীবনে একটি আধুরা অধ্যায় থেকে যাবে তা হল পল্লী কবি জসীমউদ্দীন এর কবর কবিতা।

এই খানে তোর দাদির কবর ডালিম-গাছের তলে,

তিরিশ বছর ভিজায়ে রেখেছি দুই নয়নের জলে।

এতটুকু তারে ঘরে এনেছিনু সোনার মতন মুখ,

পুতুলের বিয়ে ভেঙে গেল বলে কেঁদে ভাসাইত বুক।

এই কবিতা প্রথম যেদিন পড়েছিলাম সেদিন চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি, পরে যতবার পড়েছি ততবারি চোখের কোনে জলের আনাগোনা সব সময়ি হয়েছে। আর এতটা আবেগ আর কোন কবিতা পড়ে এসেছে বলে মনে আসছে না।

*কবি জসীমউদ্দীনের কলমের আঁচরে পল্লির জীবন-সংস্কৃতি-ইতিহাস-ঐতিহ্য ও কিংবদন্তি লাভ করে নবতর মাত্রা। পল্লির প্রকৃতি তাঁর কাব্যে নান্দনিক ও ঐশ্বর্যময় হয়ে ওঠে আধুনিক সৌন্দর্যচেতনার সংমিশ্রণে। গ্রাম-বাংলার চিরচেনা প্রকৃতি হয়ে ওঠে তাঁর উপমা-রূপক-প্রতীক ও চিত্রকল্প সৃজনের হাতিয়ার। আর এসব বৈশিষ্ট্য সুস্পষ্টভাবে ধৃত হয় তাঁর কবিখ্যাতি আনয়নকারী 'কবর' কবিতাটিতেই। শুধু 'কবর'নয়, এ ধারা অব্যাহত থাকে তাঁর পরবর্তী সকল সৃষ্টিকর্মের মধ্যে। সাহিত্যসাধনায় নিবেদিতপ্রাণ পল্লিদরদী এ কবি হাজার নদীর স্রোতধারায় বিধৌত রূপসী বাংলার রূপস্পর্শে অভিভূত হয়ে পল্লিপ্রকৃতির রূপ-মার্ধুয আকণ্ঠ পান করে ঘুরে-ফিরে বিচরণ করেছেন পল্লির মাঠে,ঘাটে ও প্রান্তরে। তাই বাইরের চাকচিক্যপূর্ণ নানা অনুকৃতির প্রাণহীন খেলার মধ্যে দিবস-যামিনী বুঁদ হয়ে থাকা ইটের পাঁজরে লোহার খাঁচায় বন্দি শহুরে মানুষ আজও পল্লিকবির সুর ও ছন্দে ভেসে চলে কৃত্রিমতার জীবন ছেড়ে দূর-দূরান্তে,পল্লির পর্ণকুটিরে।

*বাস্তব জীবন অভিজ্ঞতা, পারিপার্শ্বিকের অকুণ্ঠ স্বীকৃতি ও হূদয়ানুভূতির সার্থক সমাবেশে 'কবর' কবিতাটি দুর্লভ শিল্পসার্থকতার অধিকারী। পল্লি বৃদ্ধের দুঃসাহস বেদনার চিত্র যেন সকল পল্লিবাসীরই দুঃখ বেদনার আন্তরিক ও প্রতিনিধি স্থানীয় চিত্র। বৃদ্ধের মুখে সকল পল্লিবাসীর যুগ-যুগান্তের পুঞ্জিভূত শোক-বেদনায় যেন ভাষা পেয়েছে 'কবর' কবিতায়। ব্যক্তিগত সুখ এখানে সার্বিক শোক-চেতনায় রূপান্তরিত হযেছে। বাংলা কাব্যে সাধারণ মানুষের জীবনের দুঃখ-বেদনার এমন মহিমাময় শিল্পসম্মত প্রকাশ আর দেখা যায় না। তাই তো অচিন্ত্য কুমার সেনগুপ্ত 'কবর' কবিতাকে বাংলা কবিতার নতুন দিগদর্শন বলে চিহ্নিত করে এর অনন্য সৃষ্টি-মহিমারই স্বীকৃতি জানিয়েছেন।

>>'কবর' কবিতায় বৃদ্ধের জীবন-বাস্তবের রূপকে আমরা দেখতে পাই সাংসারিক স্নেহ-প্রেমের নিয়তি-নিহত আরক্তিম মূর্তি। তার অপরাধ সংসারে সে স্নেহ-ভালোবাসার নীড় বেঁধে সুখী হতে চেয়েছিল। স্নেহনীড় সে বেঁধেছিল, সুখের স্পর্শও সে পেয়েছিল। কিন্তু সে সৌভাগ্যের বিদ্যুত্-চমকের পেছেনেই চরম দুঃখের বজ্রাঘাত নেমে এসেছিল তার জীবনে। তারই চোখের সামনে একের পর এক মৃত্যুর হাত ধরে বিদায় নিয়েছে তার প্রেমময়ী স্ত্রী, উপযুক্ত পুত্র, লক্ষ্মী পুত্রবধূ, আদরের নাতনি এবং স্নেহের পুত্তলী মেয়ে। শুধু তাকে স্নেহস্মৃতি স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্যেই বোধহয় বেঁচে রইল বংশের একমাত্র প্রদীপ নাতিটি। তার স্নেহের নীড় ভেঙে গেল, জীবন হয়ে উঠলো দুঃস্বপ্নময়। চারদিকে দেখা দিল মরুর ঊষরতা। এক দুঃসহ বেদনায় তার অস্তিত্বকে বহন করে সে বেঁচে রইল। দিনরাত মৃত্যু কামনা তার সকল ভাবনার সার হরয় দাঁড়ালো।

>> কবর কবিতা পড়তে:

https://mbasic.facebook.com/groups/604514299695434?view=permalink&id=777395165740679&refid=18&_ft_=qid.6212627815946027674%3Amf_story_key.777395165740679%3Atl_objid.777395165740679&__tn__=%2As

বিষয়: বিবিধ

১০৩৮ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

348299
০৩ নভেম্বর ২০১৫ সকাল ০৮:০১
শেখের পোলা লিখেছেন : কবিতাটা সত্যই বড়বেদনার৷ স্কুল জীবনে পুরা কবিতাটা মুখস্ত করে লাঠি হাতে মুখে পাকা দাড়ি লাগিয়ে নাতির হাত ধরে স্টেজে অভিনয় করেছিলাম৷দীর্ঘদিন পর তা আবার চোখের সামনে ভেঁসে উঠল৷ধন্যবাদ৷

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File