প্রিয় চরিত্র ২৯ ঝান্ডুদা
লিখেছেন লিখেছেন গোলাম মাওলা ০১ নভেম্বর, ২০১৫, ১০:৫০:৩৩ সকাল
প্রিয় সব চরিত্র -ছয়(৬)
*********************
২৯।ঝান্ডুদা
------------
*প্রিয় চরিত্র: ঝান্ডুদা
*স্রষ্টা : সৈয়দ মুজতবা আলীর
উতস:রসগোল্লা
স্কুলে থাকতে সৈয়দ মুজতবা আলীর একটি লেখা পড়েছিলাম। নাম রসগোল্লা। গল্পের বিষয়বস্তু ইউরোপীয় এক এয়ারপোর্টের কাস্টম পুলিশের রসগোল্লা চিনতে না পারা এবং গল্পের নায়ক ঝান্ডুদার প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব ও ব্যপক রসবোধ।মধ্যবিত্ত বাঙালির রগচটা মেজাজটাই তিনি তুলে ধরেছেন গল্পে। ঝান্ডুদা সারাজীবনের জন্য আমার মগজে গেঁথে গিয়েছিলেলে বিশেষ করে তাঁর চামড়ার ব্যাগটার কারণে। সেটায় নানান দেশের, নানান এয়ারপোর্টের আগমন ও বহির্গমনের টিকেট সাঁটা যে তাকে হঠাত ইয়ারপোটে দেখলে বুঝা মুশকিল যে তিনি বিদেশ থেকে এলেন না বিদেশে যাচ্ছেন।( সৈয়দ মুজতবা আলী ঝান্ডুদাকে বর্ণনা করেছেন ---,তাঁকে দেখে বোঝার উপায় নেই তিনি দেশে ফিরছেন না দেশের বাইরে যাচ্ছেন।) মাঝে মাঝে সৈয়দ মুজতবা আলীকেই মনে হত ঝান্ডুদা।
ইতালির ভেনিস বন্দরে নেমেছেন জাহাজ থেকে। হলুদ কাগজে ব্যবসায়ী ঝান্ডুদা বাক্সপেঁটরার যাবতীয় বিবরণ দেয়ার পর শেষে লিখলেন ‘এক টিন ভাকুয়াম পাকড ভারতীয় মিষ্টান্ন। মূল্য দশ টাকা।’ বন্দরে পদার্পণের কিছু সময়ের মধ্যেই কয়েক বোতল ‘কিয়ান্তি’ পরিচিত, অপরিচিত তথা চুঙ্গিঘরের সেপাই, চাপরাশি, কুলি, সবার মাঝে বিতরণ শেষ। লেখকের কথায়— ইতালির কিয়ান্তি বড়ই সরেস এবং সরস। গোল বাধালো চুঙ্গিওয়ালা। ঝান্ডুদাকে খুলতে বলল রসগোল্লার টিন। ঝান্ডুদা যতই বলে এতে ইন্ডিয়ান সুইটস, চুঙ্গিওয়ালার গোঁ ততই বেড়ে যায়। শেষটায় ঝান্ডুদাকে কাটতেই হয় টিন। সবার মাঝে বিতরণ করলেন রসগোল্লা। মেজাজ টঙে চড়িয়ে চুঙ্গিওয়ালাকেও সাধলেন। রসগোল্লা চুঙ্গিওয়ালার মুখের কাছে এগিয়ে নিলেই সে ঘাড়টা আরো পিছিয়ে নেয়। বাঁধ ভাঙে ধৈর্যের। একসময় ঝান্ডুদা সরেস ভুঁড়িখানা কাউন্টারে চেপে বাঁ হাতে চুঙ্গিওয়ালার কলার ধরে ডান হাতে এতটা রসগোল্লা থেবড়ে দিলেন ওর নাকের ওপর। সঙ্গে মোটা গলার অনুযোগ— ‘শালা, তুমি খাবে না! তোমার গুষ্টি খাবে। ব্যাটা, তুমি মস্করা পেয়েছ! পই পই করে বললুম, রসগোল্লাগুলো নষ্ট হয়ে যাবে...।’ এতে মিষ্টি বিতরণের মধ্য দিয়ে বাঙালির স্বভাবজাত আন্তরিকতার ছবির সঙ্গে অল্পতেই মেজাজ হারানোর গল্প তুলে ধরে।
বাঙালির শেষ পাতে মিষ্টির মতো ‘রসগোল্লা’ গল্পের রাশ টেনেছেন ছোট্ট এক কবিতা দিয়ে। চুঙ্গীওয়ালার কল্যাণেই রসগোল্লার স্বাদ নিতে পেরেছেন বড় কর্তা। কিন্তু আফসোসের বিষয়, চুঙ্গীওয়ালাই সেই সরেস খাবার থেকে বঞ্চিত। বড় কর্তা তাকে বলছেন, ‘তুমি ত একটা আস্ত গাড়ল। টিন খুললে আর ওই সরেস মাল চেখে দেখলে না?’
এখনও বাড়িতে গেলে বাবার প্রিয় রসগোল্লা কিনে রসগোল্লা হাতে নিলেই মনে হয় আড়াই মিনিট চোখ বন্ধ করে থাকি। তারপর চোখ বন্ধ করে আবার হাত বাড়াই আর একটির জন্য -- এটি মনে মনে প্রিয় ঝান্ডু দার জন্য ভালবাসা। সেই মুজতবা আলীর উত্তরসুরী হিসাবে আমরা একটু রস নিতেই পারি। আর গাইতেই পারি ---
ইতালির প্রখ্যাত মহিলা-কবি ফিলিকাজা গেয়েছেন,
‘ইতালি, ইতালি, এত রূপ তুমি কেন ধরেছিলে, হায়!
অনন্ত ক্লেশ লেখা ও-ললাটে নিরাশার কালিমায়।’
আমিও তার স্মরণে গাইলুম,
রসের গোলক, এত রস তুমি কেন ধরেছিলে, হায়!
ইতালির দেশ ধর্ম ভুলিয়া লুটাইল তব পায়!
**রসগোল্লা গল্প পড়তে :
https://mbasic.facebook.com/groups/604514299695434?view=permalink&id=776733955806800&refid=18&_ft_=qid.6212038992932394219%3Amf_story_key.776733955806800%3Atl_objid.776733955806800&__tn__=%2As
বিষয়: বিবিধ
১৩৮০ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন