বই:আল বিরুনি
লিখেছেন লিখেছেন গোলাম মাওলা ১৫ অক্টোবর, ২০১৫, ০৬:০৫:২০ সন্ধ্যা
বই:আল বিরুনি
লেখক: এম.আকবর আলী
প্রকাশক: ইসলামি ফাউন্ডেশন /১৯৮০
মূল্য: ১৩টাকা( কিনেছি ৩০ টাকায়)
মুসলিম জাহানে অতীত ঐতিহ্য যে কত মহিমান্ডিত কত মমনীষীর অবদান পুষ্ট তা ইতিহাস সাক্ষ দেয়। কিন্তু আমরা কয় জন সেই বিষয়ে ওয়াকিফহাল। সেই অতীতে আমাদের পথ দেখানো মনীষীদের মাঝে আবু রায়হান আল বিরুনি অন্যতম।
আবু রায়হান আল বিরুনি বা আবু রায়হান মোহাম্মদ ইবনে আহমদ আল বিরুনি (৯৭৩- ১০৪৮ খ্রি) ছিলেন মধ্যযুগের বিশ্বখ্যাত আরবীয় শিক্ষাবিদ ও গবেষক। তিনি অত্যন্ত মৌলিক ও গভীর চিন্তধারার অধিকারী ছিলেন। তাঁর পূর্ণ নাম "আবু রায়হান মোহাম্মদ ইবনে আহমদ আল বিরুনি"। শহরের বাইরে বসবাস করতেন বলে সাধারণভাবে তিনি আল-বেরুনি নামে পরিচিত। রুশীয় তুর্কিস্তানের খিওয়ায় এটি অবস্থিত ছিল। শহরটি খাওয়ারিজিমের রাজধানীর কাছে ছিল। বর্তমানে শহরটি নদীতে বিলীন হয়ে গিয়েছে। এখন এ স্থানটি আল-বিরুনি শহর নামে অভিহিত। তিনি ছিলেন গণিত, জ্যোতিঃপদার্থবিদ, রসায়ন ও প্রাকৃতিক বিজ্ঞানে পারদর্শী। অধিকন্তু ভূগোলবিদ, ঐতিহাসিক, পঞ্জিকাবিদ, দার্শনিক এবং চিকিৎসা বিজ্ঞান, ভাষাতত্ত্ববিদ ও ধর্মতত্ত্বের নিরপেক্ষ বিশ্লেষক। স্বাধীন চিন্তা, মুক্তবুদ্ধি, সাহসিকতা, নির্ভীক সমালোচক ও সঠিক মতামতের জন্য যুগশ্রেষ্ঠ বলে স্বীকৃত। হিজরি চতুর্থ শতাব্দীর শেষার্ধ ও পঞ্চম শতাব্দীর প্রথমার্ধকে আল-বেরুনির কাল বলে উল্লেখ করা হয়। তিনি সর্বপ্রথম প্রাচ্যের জ্ঞানবিজ্ঞান, বিশেষ করে ভারতের জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রতি মুসলিম মনীষীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন। অধ্যাপক মাপা বলেন, "আল-বেরুনি শুধু মুসলিম বিশ্বেরই নন, বরং তিনি ছিলেন সমগ্র বিশ্বের শ্রেষ্ঠ জ্ঞানী ব্যক্তিদের এক জন।
তিনি একটি অতি সাধারণ ইরানি পারিবারে ৪ঠা সেপ্টেম্বর, ৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে জন্ম গ্রহণ করেন। জীবনের প্রথম ২৫ বছর তিনি নিজের জন্মভূমিতে অতিবাহিত করেন।
অধ্যয়নকালেই তিনি তার কিছু প্রাথমিক রচনা প্রকাশ করেন এবং প্রখ্যাত দার্শনিক ও চিকিৎসাশাস্ত্রজ্ঞ ইবন সিনার সঙ্গে পত্র বিনিময় করেন। আল বিরুনির মাতৃভাষা ছিল খাওয়ারিজিম আঞ্চলিক ইরানি ভাষা। কিন্তু তিনি তাঁর রচনাবলি আরবিতে লিখে গেছেন। আরবি ভাষায় তাঁর অগাধ পাণ্ডিত্য ছিল। তিনি আরবিতে কিছু কবিতাও রচনা করেন। অবশ্য শেষের দিকে কিছু গ্রন্থ ফারসিতে অথবা আরবি ও ফারসি উভয় ভাষাতেই রচনা করেন। তিনি গ্রিক ভাষাও জানতেন। হিব্রু ও সিরীয় ভাষাতেও তাঁর জ্ঞান ছিল।
তিনি ১০০৮ খ্রিস্টাব্দে নিজ দেশে প্রত্যাবর্তন করেন এবং শাহ আবুল হাসান আলি ইবন মামুন কর্তৃক সম্মানে গৃহীত হন। তিনি আলি ইবন মামুনের প্রয়াণের পর তাঁর ভ্রাতার পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করেন এবং অনেক রাজনৈতিক কার্যকলাপ ছাড়াও রাজকীয় দৌত্যকার্যের দায়িত্বেও নিয়োজিত থাকেন। মামুন তাঁর সৈন্যবাহিনী কর্তৃক ১০১৬-১৭ খ্রিস্টাব্দে নিহত হওয়ার পর সুলতান মাহমুদ খাওয়ারিজম দখল করে নেন। গণিতবিদ আবু নাসের মানসুর ইবন আলি ও চিকিৎসক আবুল খায়ের আল-হুসায়ন ইবন বাবা আল-খাম্মার আল-বাগ দাদদির সঙ্গে গজনি চলে যান। এখানেই তাঁর জ্ঞানচর্চার স্বর্ণযুগের সূচনা হয়। তখন থেকে তিনি গজনির শাহি দরবারে সম্ভবত রাজ জ্যোতির্বিদ ছিলেন। তিনি কয়েক বার সুলতান মাহমুদের সঙ্গে উত্তর-পশ্চিম ভারতে এসেছিলেন। গজনির সুলতানের পৃষ্ঠপোষকতায় তিনি ভারতে প্রায় ১২ বছর অবস্থান করেন। এখানে সংস্কৃত ভাষা শেখেন এবং হিন্দু ধর্ম, ভারতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতি, দেশাচার, সামাজিক প্রথা, রীতিনীতি, কুসংস্কার ইত্যাদি বিষয়ে গভীর জ্ঞান অর্জন করেন। তিনি ভারতীয় কিছু আঞ্চলিক ভাষাতেও জ্ঞান লাভ করেছিলেন। তিনি এই এক যুগের অধ্যায় ও অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান দ্বারা রচনা করেন তার বিশ্ববিখ্যাত গ্রন্থ কিতাবুল তারিকিল-হিন্দ।
আল-বিরুনি ৬৩ বছর বয়সে গুরুতর রোগে আক্রান্ত হন। তার পরও তিনি ১২ বছর বেঁচেছিলেন। ১৩ই ডিসেম্বর ১০৪৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি মারা যান।
আল-বিরুনির সর্বমোট ১১৩টি গ্রন্থের উল্লেখ রয়েছে। এর মধ্যে ১০৩টি গ্রন্থ সম্পূর্ণ হয়েছে এবং ১০টি অসম্পূর্ণ গ্রন্থের উল্লেখ রয়েছে। বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য হতে প্রতীয়মান হয়, তার রচিত গ্রন্থের সর্বমোট সংখ্যা ১৮০টি।
বইটিতে ১১৩ টি গ্রন্থতালিকার পূর্ণ তালিকা দেওয়া রয়েছে, যা অনেক ভাল লেগেছে।
** পরের কথা : নিজেদের জানতে অতীত জানতে পড়তে হবে। আর ইতিহাসের কাছ থেকে শিক্ষা নেবার চমতকার পদ্ধতি জীবনী গ্রন্থ পাঠ।
বিষয়: বিবিধ
১২৩৫ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
বইটি পড়েছি এখন যদিও এটি দুস্প্রাপ্য বই।
মন্তব্য করতে লগইন করুন