অজাচার(Incest) গল্প , গ্রিক থেকে বাংলায় (প্রথম পর্ব)

লিখেছেন লিখেছেন গোলাম মাওলা ১৩ অক্টোবর, ২০১৫, ০২:১০:১৯ রাত

অজাচার(Incest) গল্প , গ্রিক থেকে বাংলায় (প্রথম পর্ব)

-----------------------------------------------------

>>ধর্ম বা সামাজিক প্রথা অনুসারে যাদের সাথে বিবাহ নিষিদ্ধ তাদের সাথে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করাকে অজাচার(Incest) বলে।

>>অজাচার হলো ঘনিষ্ঠ রক্তীয় সম্পর্ক আছে এমন আত্মীয়ের সঙ্গে যৌনকর্ম বা যৌনসঙ্গম. সাধারণত অজাচার তিনটি যৌনসম্পর্কে ইঙ্গিত করে; যথা: কন্যার সঙ্গে পিতার, পুত্রের সঙ্গে মাতার এবং বোনের সঙ্গে ভাইয়ের যৌনকর্ম বা যৌনসঙ্গম। সকল প্রধান ধর্মে অজাচার নিষিদ্ধ ও গর্হিত হিসাবে ধীকৃত। ইসলাম ধর্মে ১৪ শ্রেণীর সঙ্গে বিবাহ নিষিদ্ধ, অতএব এদের সঙ্গে যৌনসঙ্গম অজাচারের পর্যায়ভুক্ত।--উইকিপিডিয়া

>>Wikipedia:Incest is sexual activity between family members or close relatives. This typically includes sexual activity between people in a consanguineous relationship (blood relations), and sometimes those related by affinity, such as individuals of the same household, step relatives, those related by adoption or marriage, or members of the same clan or lineage.

>>The crime of sexual relations or marriage taking place between a male and female who are so closely linked by blood or affinity that such activity is prohibited by law.

>>Incest is intimate sexual contact between a child under the age of eighteen and a relative such as an uncle, aunt, brother, sister, stepbrother, stepsister, mother, father, stepmother, stepfather, or grandparent. In other words, someone you are not legally allowed to marry.

***শুরুর কথাঃ

ঈডিপাসের কাহিনি যখন পড়ি তখন বয়স কম ছিল, ঠিক বুঝিনি ব্যপারটা কি হল। বড় হয়ে রসময় গুপ্তে মহাশয়ের কল্যাণে কম বেশি এই সব বুঝতে শুরু করেছি। তখন হতেই এই সব ছাই পাশ পড়া বন্ধ। ধর্ম, সমাজিক রীতি নীতি এই সব হতে দূরে সরিয়েছে অনেক দূর। আরো বড় হয়ে নেটের কল্যাণে এই সব বার বার এসেছে সামনে। এড়িয়ে গেছি সব সময়।

** পরের কথাঃ

তখন মনে হয় ৪র্থ বর্ষে, এই সময় আবার হাতে এল ঈডিপাস। পড়ে যারপরনাই বিরক্ত। আরো বিরক্ত হই যখন দেখি ইহাই দেশের বড় বড় বিদ্যাপীঠের সিলেবাজ ভুক্ত। মহা সমারোহে বিদ্যাপীঠে অজাচার শিক্ষা দীক্ষা চলছে। কোন বিকার নেই সমাজের , আমাদের শিক্ষিত মানুষদের মাঝে।

এই কয়েকদিন আগে বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসের একটি বই পড়ছিলাম ।ইতিহাস আমাকে বার বারি টানে। তাই ইতিহাসের বই সংগ্রহ ও পড়া হবির মত দাঁড়িয়ে গেছে। পড়ছিলাম বাংলা সাহিত্যের একটি হারানো ধারা(১৭৬০-১৮৭০ )। লেখক মুহাম্মদ আবু তালিব ।

এটি পড়তে গিয়েই আক্কেল গুড়ুম । বাংলা সাহিত্যেও গ্রিক ধারার অজাচার সাহিত্য রচনা করার দুঃসাহস করেছে কোন লেখক ??

** আর সেটির নাম

রচনাঃ ৫ × ৪র্থ সাইজের হস্তলিখিত পুথি ।

নামঃ ‘পালাজুরের ইতিকথা” ।

রচনাকালঃ১২৬৯ সাল = ১৮৬১ খ্রীঃ ।

রচয়িতাঃকহোর সরকার ।

**মূল কথাঃ

আধুনিক ও সভ্য সমাজে অজাচার সম্পর্ক ঘৃণ্য। এটি ধর্ম, প্রচলিত আইন ও সামাজিক মূল্যবোধ এই তিন মাপকাঠিতেই নিষিদ্ধ ও পরিত্যাজ্য বিবেচিত । ঈডিপাসের কাহিনি ও পালাজ্বরের ইতিকথা বাংলা সাহিত্যে কেন, একমাত্র প্রাচীন গ্রীক উপকথা ঈডিপাসের কাহিনী ব্যতীত, অন্য কোন দেশের সাহিত্যে এই ধরনের সাহিত্য রচনার দুঃসাহসের প্রয়াস কেউ পেয়েছেন বলে জানা যায় না | অবশ্য ঈডিপাসের কাহিনীর সঙ্গে এ কাহিনীর কিছুটা মিল থাকলেও এর চরিত্র-সূচি ও কাহিনী-বিন্যাসের পার্থক্য সুস্পষ্ট। ঈডিপাস রাজা হলে সে দেশের রেওয়ায মুতাবিক তাঁকে সে দেশের রাণীর সঙেগ বিয়ে দেওয়া হয় এবং এই রাণী ষে শিশুকালে

মাতৃপিতৃ-স্নেহচু্যত ঈডিপাসের ভাগ্য বিড়ম্বিতা জননী ছিলেন, তা না ঈডিপাস না তার জননীর জ্ঞানগোচরে এসেছিল। পরে দৈবনিবন্ধে পরিচয় উদঘাটিত হওয়ায় মাতা আত্মঘাতিনী হয়ে জীবনের জ্বালা নিবারণ করেন ।

ঈডিপাসও মাতার গাত্রাবাস থেকে সোনার কাটা খুলে নিয়ে নিজের দু'চোখে বিধিয়ে অন্ধ হয়ে যান ।গ্রীক নাট্যকার সফোক্লিসের বিশ্ববিখ্যাত Triology : The Three Theban plays (১) King Oedipus (২) Oedipus at Colonus এবং (৩) Antigone --এই তিন খণ্ডে সমাপত ।

>>ইঈডিপাস নাটক ও অজাচার গল্প

--------------------------------

কিং ইঈডিপাস নাটকটি লিখেছেন বিখ্যাত গ্রীক নাট্যকার সফোক্লিস। ট্রাজেডি নাটক রচনায় যার সুনাম সারা বিশ্বে সমাদৃত।

>>কিং ইঈডিপাস

থিবিসের রাজা লেয়াস এক দৈববাণী পেয়ে ভীত হয়ে তার শিশুপুত্র ঈডিপাস কে নির্জন পর্বতে ফেলে দেওয়ার নির্দেশ দিলেন। কিন্তু রক্ষা পেল এডিপাস। স্থান পেল করিস্থের রাজার গৃহে। রাণী তাকে তার নিজের সন্তানের মত লালন পালান করলেন। ঈডিপাস যখন যুবকে পরিনত হল তখন তার বন্ধুদের মাধ্যমে জানতে পারল যে সে তাদের আসল ছেলে নয়।

ঈডিপাস তাই মনের দুঃখে করিস্থ ছেড়ে তার জন্ম স্থান থিবিস নগরীতে চলে আসলেন। কিন্তু ঈডিপাস জানতো না যে ইটিই তার জন্মভূমি। নগরীতে ঢুকে সে উত্তেজনা বসত কোন কারণে থিবিসের রাজাকে হত্যা করলো। এর পরে ভাগ্যবশত ঈডিপাস এক ভয়াল দানবীর এর প্রশ্নের জবাব দিয়ে এই রাজ্যের শ্রদ্ধাভাজন লোকদের একজন হলো। সে রাজ্যের এমন একজন হলো যে থিবিসের লোকেরা তাকে ঐ রাজ্যের রাজা বানাতে চাইল। একসময় তাই হল। রাজা হওয়ার পর প্রথানুযায়ী ঈডিপাস রাজা লেয়াস এর স্ত্রীকে বিয়ে করলেন। অবশ্য ঈডিপাস দস্যুদ্বারা নিহত তাই তার প্রিয়তমা সুন্দরী স্ত্রীকে ঈডিপাসের সাথে বিয়ে দিতে কেউ নারাজ হয়নি।

এদিকে ঈডিপাস রাজা হওয়ার পর দেশে ভয়াল মহামারী দেখা দিল। ঈডিপাস তখন দেশের অবস্থা জানার জন্য এক অন্ধ্য জ্যোতিষী ট্রেসিয়াস এর কাছে গেল। জ্যোতিষী তখন রাজা এডিপাসকে জানালো। থিবিসে পুর্বে যে রাজা ছিল তাকে যে খুন করেছে সে এখন এই রাজ্যেই আছে। এবং একথাও সত্য যে সে রাজা লেয়াসকে হত্যা করে তার প্রিয়তমা স্ত্রী জোকাস্টাকে বিয়ে করে সংসার করছে। আর এই কারণে এ রাজ্যে দূর্ভিক্ষ্য দেখা দিয়েছে। রাজা ঈডিপাস এর কারণ জানতে চাইলে জ্যোতিষী বলেন যে রাজা লেয়াসের স্ত্রীকে বিয়ে করেছে সে আর কেউ নয় তারই গর্ভের সন্তান। আর তিনি হচ্ছেন আপনি। থিবিসের নতুন রাজা ঈডিপাস।

ঈডিপাস জ্যোতিষীর কথা শুনার পর ভাবল তার শালা ক্রেয়ন ষড়যন্ত্র করে তার উপর জঘন্য অপবাদ চাপিয়ে তাকে সিংহাসনচ্যুত করার জন্য জ্যোতিষীকে এসব কথা বলাচ্ছে। কিন্তু এডিপাস তার জন্ম রহস্য খোঁজ করে জানতে পারে এ রাজ্যে প্রবেশকালে সে যাকে হত্যা করে সেই ছিল থিবিসের আগের রাজা লেয়াস। ঈডিপাস এর জন্মদাতা পিতা । আর ঈডিপাস যাকে বেয়ে করেছে সেই স্ত্রীই তার গর্ভধারীনী মা ।

এ ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর তার প্রিয়তমা স্ত্রী মানে তার মা লজ্জায় আত্ম হত্যা করে। আর ঈডিপাস নিজেই মাতার গাত্রাবাস হতে সোনার কাঁটা খুলে নিয়ে নিজের চোখ দুটি অন্ধ করে দেয়। এই ছিল কিং ইঈডিপাস নাটকের সারকথা।

>>সফোক্লিস (খ্রিস্টপূর্ব ৪৯৭/৪৯৬, – খ্রিস্টপূর্ব ৪০৬/৪০৫)

সফোক্লিস সবচেয়ে বিখ্যাত তিনজন প্রাচীন গ্রিক নাট্যকারদের একজন, যাঁদের লেখা নাটক আমাদের হাতে এসে পৌঁছেছে। অন্য দুইজন হলেন এসকাইলাস এবং ইউরিপিদেস। তাঁর লিখিত বিভিন্ন ট্র্যাজেডি বা বিয়োগান্ত নাটক, যেমন ''আন্তিগনে'' বা ''রাজা অয়দিপাউস'' আজও মঞ্চে অভিনীত হয় এবং সারা পৃথিবীতেই এই নাটকগুলি অত্যন্ত জনপ্রিয়।

এথেন্স নগর রাষ্ট্রে খ্রিষ্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে প্রতি বছর যে নাট্য প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হত, প্রায় ৫০ বছর ধরে সেই প্রতিযোগিতায় বিয়োগান্ত নাটকের ক্ষেত্রে জনপ্রিয়তম স্থানটি ছিল তাঁর জন্য বরাদ্দ। যদিও তিনি তাঁর জীবদ্দশায় সম্ভবত ১২৩টি নাটক রচনা করেছিলেন, আমাদের হাতে তার মধ্যে মাত্র ৭টি পূর্ণাঙ্গ অবস্থায় এসে পৌঁছেছে। এগুলি হল - ''আয়াক্স'', ''আন্তিগনে'', ''ত্রাখিসের মহিলারা'', ''রাজা অয়দিপাউস'', ''ইলেকট্রা'', ''ফিলোকতেতেস'' ও ''কলোনাসে অয়দিপাউস''। এছাড়াও তাঁর লেখা অনেকগুলি নাটকের কিছু কিছু অংশ পাওয়া গেছে।

আঙ্গিক হিসেবে নাটকের বিকাশের ক্ষেত্রে সফোক্লিসের অবদান অনস্বীকার্য। তাঁর লেখা নাটকেই আমরা প্রথম কোনও তৃতীয় চরিত্রের দেখা পাই। তাছাড়া কোরাসের ভূমিকাও তিনি সংকুচিত করেন। তাঁর লেখা নাটকে নাটকের ঘটনাবলী বর্ণনার ক্ষেত্রে কোরাস তার আগের গুরুত্ব অনেকটাই হারিয়ে ফেলে। নাটকে তাঁর চরিত্রগুলিও পূর্ববর্তী নাট্যকারদের তুলনায় অনেক বেশি বিকশিত।

>>জীবন ও কর্ম

সফোক্লিস ছিলেন আইসখুলোসের বয়ঃকণিষ্ঠ সমসাময়িক, এবং এউরিপিদিসের বয়ঃজ্যেষ্ঠ সমসাময়িক। তিনি আথিনা'র দেয়ালের বাইরে অবস্থিত কোলোনুস নামক গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন, যেখানে তার বাবা, সোফিলুস, একজন ধনী অস্ত্র নির্মাতা ছিলেন। সফোক্লিস নিজে বেশ ভালো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা পেয়েছিলেন। তার দৈহিক সৌন্দর্য্য, ক্রীড়া নৈপুণ্য, এবং সঙ্গীতে পরদর্শীতার কারণে তিনি ৪৮০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে, ১৬ বছর বয়সে, সালামিস এর নৌ-যুদ্ধে পারসিকদের বিরুদ্ধে নিরঙ্কুশ বিজয় উদ্যাপনের জন্য আয়োজিত পিয়ান (ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে বৃন্দগীতি) এর নেতৃত্ব দেয়ার জন্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। সফোক্লিসের নাগরিক জীবন সম্পর্কে প্রাপ্ত তুলনামূলক অপর্যাপ্ত তথ্য থেকে ধারণা জন্মে যে, তিনি জনগণের প্রিয়পাত্র ছিলেন, গোষ্ঠীগত কর্মকাণ্ডে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহন করতেন এবং অনন্যসাধারণ শৈল্পিক গুণে গুণান্বিত ছিলেন। ৪৪২ পূর্বাব্দে তিনি দিলিয়াকি লীগে আথিনা'র অধীনস্থ মিত্রদের কাছ থেকে পাওয়া সম্মাননামূলক অর্থ গ্রহন ও ব্যবস্থাপনার কাজে নিয়োজিত কোষাধ্যক্ষদের একজন হিসেবে কাজ করেন। ৪৪০ পূর্বাব্দে, তার বয়ঃকণিষ্ঠ পেরিক্লিসের সাথে, ১০ জন স্ত্রাতিগস (সেনাবাহিনীর দায়িত্বে নিয়োজিত উচ্চপদস্থ নেতৃস্থানীয় কর্মকর্তা) এর একজন হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। এরপর সম্ভবত আরো দুইবার সফোক্লিস স্ত্রাতিগস হিসেবে কাজ করেছিলেন।

*** সূত্রঃ

১।উইকিপিডিয়া

২।বাংলা সাহিত্যের একটি হারানো ধারা(১৭৬০-১৮৭০ )লেখক-- মুহাম্মদ আবু তালিব ।

>> পরের পর্বে আসছে ‘পালাজুরের ইতিকথা”।

বিষয়: বিবিধ

১০৮০৩ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

345469
১৩ অক্টোবর ২০১৫ সকাল ০৭:৪৬
অবাক মুসাফীর লিখেছেন : Porlam... Vallagse...
345486
১৩ অক্টোবর ২০১৫ সকাল ১০:০১
নাবিক লিখেছেন : ভালো লাগলো...
345496
১৩ অক্টোবর ২০১৫ সকাল ১১:৪৭
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ঈডিপাস কে ঠিক সেই শ্রেনিতে ফেলা যায়না। কারন ঈডিপাস তার পরিচয় জানত না। এমন একটি ঘটনা থাইল্যান্ড এর এক রাজপরিবারেও ঘটেছিল।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File