বাংলা সাহিত্যে গদ্যের প্রাচীনতম নিদর্শন

লিখেছেন লিখেছেন গোলাম মাওলা ০৭ অক্টোবর, ২০১৫, ০২:৫৮:৩৩ দুপুর



বাংলা সাহিত্যে গদ্যের প্রাচীনতম নিদর্শন

------------------------------------

বাংলায় গদ্য-সাহিত্য-সূচিটর ইতিহাস নেহাত খুব পুরানো নয়। গদ্যের সৃষ্টি খুব প্রাচীন না হলেও তা নিয়ে সাহিত্য-সৃস্টির প্রয়াস নিতান্তই আধুনিক কালের ঘটনা। তাই দেখা যায়—দলীল-দস্তাবিজ, চিঠি পত্র ও কড়চা জাতীয় নিবন্ধসমূহে গদ্যের ব্যবহার খ্রিষ্টীয় ষোল শতক কিংবা তারও আগে থেকে মিললেও সাহিত্যিক গদ্যের পত্তন ফোট উইলিয়াম কলেজ প্রতিষ্ঠার পূর্বে হয়নি ( ১৮০০ খ্রীঃ ) এটি সর্বসম্মত মত ।

কিন্তু তাই বলে বাংলা গদ্য একেবারে অবহেলিত ছিল এমনও নয়। যুগে যুগে বিভিন্ন প্রয়োজনে গদ্যের ব্যবহার চালু ছিল দেখতে পাওয়া যায়। এই রকম গদ্যের প্রত্নরূপ খ্রিষ্টীয় তেরো-চৌদ্দ শতকের (কিংবা তার কিছু পরের ) শুন্যপুরাণ’ নামক গ্রন্থে পাওয়া গেছে বলে অনেকেই অনুমান করেন ।

>>শুন্যপুরাণ

শূন্যপুরাণে ব্যবহাত গদ্যের নমুনা নিম্নরূপঃ

পচ্চিম দুআরে চন্দ্র প্রহরীকে পড়িল হুকার । আশা বাঞ্ছা চন্দ্ৰ পহরি বাটায় তাম্বুল খাব ৷ রূপার রঞ্জিত ঘাটে নির্মাণ করি দিব।

>তালিবনাম ও দেহকড়চা

শূন্যপুরাণের পরে বাংলা গদ্যের বিশিষ্টট নমুনা মিলছে সতের শতকের কবি শেখ চাদের ‘তালিবনামা’ নামক চম্পু কাব্যে ও নরোত্তম দাসের ‘দেহ কড়চা’ নামক নিবন্ধে ।

বলা বাহুল্য, কড়চার ভাষা সওয়াল-জওয়াবের ভাষা । এ ধরনের নিবন্ধে সাহিত্যিক-গদ্যের আশা করা বৃথা। তবে প্রাচীনতম গদ্যের নমুনা হিসেবে এগুলো মূল্যবান। একটু নমুনা দেওয়া যাকঃ

>পুস্তক তালিবনামা

১. আল্লাহু গণী । মুহম্মদ নবী॥

তুমি আসিয়াছ কোথা হতে ? বাসা হতে ॥

বাসাতে রাখিয়াছ কারে ? আশা পহরী ॥

আশা পহরী কে ? দুনিয়ার উর্ধ্বেত যে ॥

দুনিয়ার বাড়িত আসিয়াছ কোথা হতে ? তৌজিপুর হতে ॥

রহিয়াছ কোন ঠাই ? সেই ঠিকানার নাম কি ? নিয়ামতপুর ॥

যাইবা কোন ঠাই ? সাজ গর্ভপুর ।।

তুমি তালিব হইছনি ? তালিব হইছি ।।

কার তালিব ? তলবের তালিব ।।

২।

তুমি কে । আমি জীব ।

তুমি কোন জীব । আমি তটস্থ জীব ।

থাকেন কোথা । ভাণ্ডে ।

ভাণ্ড কিরূপ হইল । তত্ব বস্তু হৈতে ।

তত্ব বস্তু কি ৷ পঞ্চ আত্মা ।

একাদশেস্ত্র । ছয় রিপু ইচ্ছা এই সকল একযোগে ভাণ্ড হৈল ॥

>>ব্রাক্ষ্মণ ৱোমান ক্যাথলিক সংবাদ ও কৃপাৱ শাস্ত্রর অর্থ, ভেদ

বাংলা গদ্যের উল্লেখযোগ্য নমুনা পাওয়া যায় এ দেশীয় পর্তুগীজ পাদরীদের পৃসতপোষকতায় রচিত দু’খানি গ্রন্থে ---

(১) দোম আন্তনিও রচিত “ব্রাহ্মণ রোমান ক্যাথোলিক সংবাদ” ও

(২) ম্যানুয়েল দ্য আসসুম্প সাও রচিত- কৃপার অর্থ ভেদ ( Creparxaxtrer orth bhed) গ্রন্থদ্বয়ে ।

প্রথমখানি রচিত হয় ভূষণার ( ফরিদপর জেলার ) মগদস্য-অপহীত ও খ্রীস্টধর্মে দীক্ষিত দোম আন্তনীয় নামক এক বাঙালী যুবক কতৃক ১৬৬৩ খ্রিষ্টীয় সালে সমকালে এবং দ্বিতীয়খানি রোমান হরফে লিসবন শহর থেকে ১৭৪৩ খ্রিষ্টীয় সালে মুদ্রিত হয়।

গ্রন্থ দুখানির গদ্য বাংলা বটে, তবে নানা কারণে তা প্রচারিত হয়নি , এবং তার ভাষাও নিতান্ত মামুলি।

১. “আর রামের দুই পুত্র লব আর কুশ সঙ্গে রামের বিস্তর যুধ করিলেন পুত্র না চিনিয়া। শেষ মুনিসিয়া ( - মুনি আসিয়া ? ) পরাজয় ( = পরিচয় ? ) করিয়া দিল’ ইতাদি ।"

>> সূত্রঃ বাংলা সাহিত্যের একটি হারানো ধারা- মুহাম্মদ আবু তালিব

১। ডঃ সুকুমার সেন – বাঙ্গালা সাহিত্যে গদ্য, পৃঃ ১০, ৩য় সং, ১৩৫৬৷

২। গোপাল হালদার-বাঙলা সাহিত্যের রূপরেখা, পৃঃ ৭১, ১ম সং, ১৩৬৫

বিষয়: বিবিধ

১৪৭৯ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

344861
০৭ অক্টোবর ২০১৫ সন্ধ্যা ০৭:০৪
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : এগুলি ছাড়াও মোগল আমলের বাংলা ফরমান এবং সুলতানি আমলে কিছু বাংলা শিলালিপিতে গদ্য পাওয়া গেছে।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File